ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
যুদ্ধবন্দী দাস
নানা প্রথা আচার: লোকাচার উৎসর্গপ্রথার অন্য একটি দিকও উল্লেখ করার মত। এই লোকরীতিটি গড়ে উঠেছে যুদ্ধবন্দীদের কেন্দ্র করে। আজতেক জনগোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধবন্দীদের খুব উঁচু স্তরের উৎসর্গ বলে মনে করা হয়। যতটা সম্মান উঁচু স্তরের ততটাই কম উৎসর্গ করা হয় তাদের।
সাধারণভাবে অনাড়ম্বর ও ছোটখাটো উৎসবে এই দাসদের উৎসর্গ করা হয়। এছাড়া মেয়ে এবং শিশুদের উর্বরতা উৎসবে উৎসর্গ করার রীতি আছে। তবে খুবই কম অনুষ্ঠানে এদের বলি দেওয়া হয়। এছাড়া মাঝে মধ্যে নরবলি দেওয়াও হয়। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেন যে এই বলি দেওয়া মানুষের রক্ত বা মাংস খেলে খাদকের মধ্যে খাদ্যের সব ভাল গুণ প্রবেশ করে যায়।
এই বিশ্বাসকে লোকাচারের মধ্যে সীমিত না রেখে সহানুভূতি জাদুবিদ্যা বলা যায়। তবে আজতেক সমাজে এই জাদু লোকরীতি বা আচারকে খারাপ বা অমঙ্গলসূচক বলা হয় না। আবার বলি বা উৎসর্গীকৃত প্রাণী বা মানুষের নিজের শরীর থেকে তাজা রক্ত ঝরানোও এক লোকরীতি। অনেক সময় গরীব, রোগগ্রস্ত বা বিপদগ্রস্ত সাধারণ মানুষ নিজের শরীরের জিভ, নাক কেটে রক্ত দেবতাকে স্মরণ করে উৎসর্গ করে।
এই ধরনের প্রথা বা লোকাচার-এর অর্থ হল এর ফলে দেবতারা খুব সন্তুষ্ট ও খুশী হন। রোগ, বিপদ সব কিছু থেকে মুক্ত করেন। এই ধরনের অতিপ্রাকৃত বা অলৌকিক বিশ্বাস ছিল আজতেকদের জীবনযাত্রার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
(চলবে)