সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
১. লস্কর-ই-তৈয়বার কথিত সদর দপ্তর মুরিদকেতে আঘাত হানার পরিকল্পনা
২. পাকিস্তানের সেনাপ্রধান সেনাপ্রধান আসিম মুনির তার পূর্বসূরীর থেকে অনেক বেশি প্রতিক্রিয়াশীল
৩. উভয় দেশের কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে
পুরোনো শত্রুতা, নতুন বাস্তবতা
ভারত ও পাকিস্তান—দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ক সবসময়ই উত্তপ্ত থেকেছে, বিশেষত কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে। তবে ২০২৫ সালের এপ্রিলের ভয়াবহ হামলার পর পরিস্থিতি যে দ্রুত যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে, তা নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। এখনকার প্রেক্ষাপট শুধু পুরোনো শত্রুতার ধারাবাহিকতা নয়, বরং এতে যুক্ত হয়েছে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ, আন্তর্জাতিক মেরুকরণ, এবং দুর্বল কূটনৈতিক সংযম।
রাজনৈতিক চাপ ও জনমত: মোদির সামনে কঠিন চাপ
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ ভিত্তিক রাজনীতির ধারাবাহিকতায় ২০১৬ ও ২০১৯ সালে যেমন আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, এবারও তার কাছ থেকে তেমনই পদক্ষেপের প্রত্যাশা করছে ভারতের জনগণের একটি বড় অংশ। একইসঙ্গে, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর মোদি সরকারের দাবি ছিল, এতে শান্তি এসেছে—কিন্তু এই সাম্প্রতিক হামলা সেই দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
সীমান্ত উত্তেজনা ও সামরিক কৌশল
ভারতের কাছে এখন বিভিন্ন সামরিক বিকল্প খোলা—বিমান হামলা, ড্রোন স্ট্রাইক, মিসাইল ব্যবহার বা সরাসরি মাটি থেকে আক্রমণ। আলোচনায় রয়েছে লস্কর-ই-তৈয়বার কথিত সদর দপ্তর মুরিদকেতে আঘাত হানার পরিকল্পনা। তবে এই ধরনের আক্রমণ বেসামরিক হতাহত বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াকে নেতিবাচক করে তুলতে পারে।
পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান: আরও কঠোর অবস্থান?
সেনাপ্রধান আসিম মুনির আগের সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার চেয়ে অনেক বেশি প্রতিক্রিয়াশীল। তিনি কাশ্মীরকে ‘জীবনের শিরা’ বলেছেন এবং অভ্যন্তরীণ সমালোচনার মুখে পড়ে হয়তো আরও আক্রমণাত্মক কৌশল নিতে পারেন, বিশেষত সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি রক্ষায়।
কৌশলগত ভারসাম্য: আমেরিকা দুর্বল, চীন দ্বিধাগ্রস্ত
২০১৯ সালের তুলনায় এখন আন্তর্জাতিক পরিবেশ অনেক বদলেছে। আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে সরে যাওয়ার পর পাকিস্তানের উপর তার প্রভাব অনেক কমে গেছে, আর ভারত এখন ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ফলে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, এমনকি আইএমএফ ঋণ বন্ধের মতো উদ্যোগ নিতে পারে।
অন্যদিকে, চীন উভয় দেশের মধ্যে সংযমের আহ্বান জানালেও পাকিস্তানের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক অংশীদার। যদিও ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধে কিছুটা বরফ গলেছে, তবে ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ সেই সম্পর্ককে আবার উত্তেজিত করতে পারে।
চুক্তিভিত্তিক কাঠামো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা
১৯৬০ সালের ইন্ডাস পানি চুক্তি ও ১৯৭২ সালের সীমান্ত চুক্তির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। ভারত চুক্তি স্থগিত করেছে এবং পাকিস্তান বলছে, পানি মোড়ানো হলে তা যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য হবে। এসব পদক্ষেপ শুধু উত্তেজনাই বাড়ায় না, বরং দীর্ঘমেয়াদে আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোকেও দুর্বল করে।
পারমাণবিক ছায়া: যুদ্ধ নাকি আত্মবিনাশ?
ভারত ও পাকিস্তান—উভয় দেশের কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। অতীতে, ২০১৯ সালে, উভয় দেশকেই যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্ত হতে হয়েছিল। এবার তেমন একটি কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ সময়মতো হবে কিনা, সেটাই বড় প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “পরিস্থিতিকে পরীক্ষা করে দেখা বুদ্ধির কাজ হবে না।”
উপসংহারঃ কূটনৈতিক সংযম ছাড়া পথ নেই
সীমান্তে উত্তেজনা, রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণ চাপ, আন্তর্জাতিক মেরুকরণ—সব মিলিয়ে উপমহাদেশ এখন এক মারাত্মক সংঘর্ষের মুখোমুখি। উভয় পক্ষের জন্যই সঠিক তথ্য ও কৌশলের ভিত্তিতে বিবেচিত প্রতিক্রিয়া জরুরি। যুদ্ধ পরিস্থিতি ঠেকাতে শুধু কূটনৈতিক ব্যাকচ্যানেল নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা এখন সময়ের দাবি।