১১:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫
সপ্তাহান্তের ছোটখাটো খুশি—ঢাকার হোটেলে একটি পরিবারের ডিনার পরিকল্পনা ট্রাম্প রাশিয়ার উত্তেজক বিবৃতির পর দুইটি পারমাণবিক সাবমেরিন স্থানান্তরের নির্দেশ দিলেন হিউএনচাঙ (পর্ব-১৬১) ড্রাগ বা ডায়েট ছাড়া কীভাবে চীনে এক ইনফ্লুয়েন্সার পাঁচ বছরে ৬০ কেজি ওজন কমিয়েছেন ট্রাম্পের ট্যারিফে আফ্রিকা চীনের কোলে মাশরাফি বিন মর্তুজা: বাংলাদেশের এক মহান ক্রিকেটারের জীবনগাথা ট্রাম্পের শুল্ক ভারতের ৪০ বিলিয়ন ডলারের রফতানির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে ফেডারেল তহবিল কাটা যাওয়ায় পাবলিক ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন বন্ধ, স্থানীয় গণমাধ্যমে বড় ধাক্কা ট্রেড আলোচনা স্থবির, শুল্ক হুমকি বাড়ছে: যুক্তরাষ্ট্র–ভারত অংশীদারিত্বে টানাপোড়ন  বাংলাদেশে দুই কোটি হিন্দুর ও প্রগতিশীল মুসলিমদের ভবিষ্যত কি?

গণতন্ত্রের অনিশ্চয়তা ও অধ্যাপক ইউনূসের অবস্থান ও মেজর হাফিজের বক্তব্য

  • Sarakhon Report
  • ০৩:০৫:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
  • 82

সারাক্ষণ রিপোর্ট

অস্থির রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত

বাংলাদেশে চলমান অন্তর্বর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই অস্বচ্ছ ও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তা, ক্ষমতার কেন্দ্রের ভেতরকার মতভেদ এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জনমনে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদের সাম্প্রতিক বক্তব্য এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা এই সংকটের গভীরতা এবং সম্ভাব্য পথনির্দেশনা সামনে নিয়ে এসেছে।

হাফিজের বক্তব্য: নির্বাচনহীনতার আশঙ্কা

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে এক বক্তব্যে হাফিজ অভিযোগ করেছেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন চায় না।” তিনি আরও বলেন, “গত ১৭ বছর ধরে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লড়াই করলেও কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।” তাঁর মতে, সরকারের পরামর্শদাতাদের কথাবার্তা ও অঙ্গভঙ্গিই প্রমাণ করে, গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ তারা আর চায় না।

ইউটার্ন ও বিভ্রান্তি: নির্বাচন নিয়ে দ্বিধান্বিত ঘোষণা

হাফিজের ভাষ্যমতে, ফেব্রুয়ারিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর বলা হয়েছিল, ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। এক সপ্তাহের মাথায় সে ঘোষণা প্রত্যাহার করে বলা হয়, নির্বাচন হবে আগামী বছরের জুনে। হাফিজ এ অবস্থাকে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক ধরনের ‘রাজনৈতিক খেলা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

গণতন্ত্রের প্রশ্নে ইউনূসের অবস্থান

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরেও রয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক ও জন-উৎকণ্ঠা। হাফিজ বলেন, “বিএনপি অধ্যাপক ইউনূসকে পূর্ণ সমর্থন জানায়।” কিন্তু একইসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “তাঁদের মনোজগতে কী চলছে, তা বুঝে ওঠা যাচ্ছে না।” এই বক্তব্যে বিএনপির সমর্থন থাকলেও কিছুটা অস্পষ্টতা ও অনিশ্চয়তা স্পষ্ট—যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে আরও জটিলতা বাড়াচ্ছে।

অধ্যাপক ইউনূস একজন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং অতীতে ‘নিরপেক্ষ নেতৃত্বের’ প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হলেও তাঁর কার্যকর অবস্থান এবং নির্বাচনের পক্ষে স্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ এখনও পর্যন্ত সামনে আসেনি।

মানবিক করিডোর ও যুদ্ধজড়ানোর আশঙ্কা

হাফিজ একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন উদ্বেগও তুলেছেন—দেশের জনগণের সম্মতি ছাড়াই কি বাংলাদেশ কোনো আঞ্চলিক যুদ্ধ বা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে? তিনি বলেন, “জনগণ উদ্বিগ্ন, আমরাও তাই।” মানবিক করিডোর ইস্যুতে সরকারের স্পষ্ট ব্যাখ্যার অভাব পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলছে।

একটি মাত্র দাবি: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন

হাফিজের বক্তব্যে বারবার উঠে আসে একটি মূখ্য দাবি—অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। তিনি বলেন, “জনগণ যার প্রতি আস্থা রাখবে, তাকেই ক্ষমতায় আনা হোক। ফলাফল যাই হোক, আমরা তা মেনে নেব।” এই বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে, বিএনপির বর্তমান অবস্থান কোনো জোট বা রেজাল্ট নয়, বরং নির্বাচনের পদ্ধতিগত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

বিশ্লেষণ: কেন এখনই নির্বাচন প্রয়োজন?

১. গণতান্ত্রিক শূন্যতা পূরণে নির্বাচন অনিবার্য – দীর্ঘ নির্বাচনহীনতা দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। রাজনৈতিক স্থবিরতা শুধু বিরোধী দল নয়, জনগণকেও হতাশ করছে।

২. বিশ্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি – অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জনের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই।

৩. সুশাসনের রূপরেখা স্পষ্ট করতে হবে – ইউনূসের মতো একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের আস্থা ফেরাতে পারত, যদি একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ এবং সময়সীমা নির্ধারণ করা হতো।

সংকট থেকে উত্তরণের উপায়

বাংলাদেশ এখন এক জটিল রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে। অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচন স্থগিত রাখা কিংবা বিভ্রান্তিকর বার্তা প্রদান একদিকে গণতন্ত্রকে দুর্বল করছে, অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অধ্যাপক ইউনূসের মতো নেতার কাছে জনগণের প্রত্যাশা একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সময়মতো নির্বাচনের নিশ্চয়তা। আর তা না হলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা শুধু দীর্ঘায়িতই হবে না, বরং দেশব্যাপী অনাস্থা ও অস্থিরতা আরও বাড়বে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সপ্তাহান্তের ছোটখাটো খুশি—ঢাকার হোটেলে একটি পরিবারের ডিনার পরিকল্পনা

গণতন্ত্রের অনিশ্চয়তা ও অধ্যাপক ইউনূসের অবস্থান ও মেজর হাফিজের বক্তব্য

০৩:০৫:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

অস্থির রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত

বাংলাদেশে চলমান অন্তর্বর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই অস্বচ্ছ ও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তা, ক্ষমতার কেন্দ্রের ভেতরকার মতভেদ এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জনমনে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদের সাম্প্রতিক বক্তব্য এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা এই সংকটের গভীরতা এবং সম্ভাব্য পথনির্দেশনা সামনে নিয়ে এসেছে।

হাফিজের বক্তব্য: নির্বাচনহীনতার আশঙ্কা

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে এক বক্তব্যে হাফিজ অভিযোগ করেছেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন চায় না।” তিনি আরও বলেন, “গত ১৭ বছর ধরে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লড়াই করলেও কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।” তাঁর মতে, সরকারের পরামর্শদাতাদের কথাবার্তা ও অঙ্গভঙ্গিই প্রমাণ করে, গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ তারা আর চায় না।

ইউটার্ন ও বিভ্রান্তি: নির্বাচন নিয়ে দ্বিধান্বিত ঘোষণা

হাফিজের ভাষ্যমতে, ফেব্রুয়ারিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর বলা হয়েছিল, ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। এক সপ্তাহের মাথায় সে ঘোষণা প্রত্যাহার করে বলা হয়, নির্বাচন হবে আগামী বছরের জুনে। হাফিজ এ অবস্থাকে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক ধরনের ‘রাজনৈতিক খেলা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

গণতন্ত্রের প্রশ্নে ইউনূসের অবস্থান

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরেও রয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক ও জন-উৎকণ্ঠা। হাফিজ বলেন, “বিএনপি অধ্যাপক ইউনূসকে পূর্ণ সমর্থন জানায়।” কিন্তু একইসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “তাঁদের মনোজগতে কী চলছে, তা বুঝে ওঠা যাচ্ছে না।” এই বক্তব্যে বিএনপির সমর্থন থাকলেও কিছুটা অস্পষ্টতা ও অনিশ্চয়তা স্পষ্ট—যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে আরও জটিলতা বাড়াচ্ছে।

অধ্যাপক ইউনূস একজন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং অতীতে ‘নিরপেক্ষ নেতৃত্বের’ প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হলেও তাঁর কার্যকর অবস্থান এবং নির্বাচনের পক্ষে স্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ এখনও পর্যন্ত সামনে আসেনি।

মানবিক করিডোর ও যুদ্ধজড়ানোর আশঙ্কা

হাফিজ একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন উদ্বেগও তুলেছেন—দেশের জনগণের সম্মতি ছাড়াই কি বাংলাদেশ কোনো আঞ্চলিক যুদ্ধ বা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে? তিনি বলেন, “জনগণ উদ্বিগ্ন, আমরাও তাই।” মানবিক করিডোর ইস্যুতে সরকারের স্পষ্ট ব্যাখ্যার অভাব পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলছে।

একটি মাত্র দাবি: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন

হাফিজের বক্তব্যে বারবার উঠে আসে একটি মূখ্য দাবি—অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। তিনি বলেন, “জনগণ যার প্রতি আস্থা রাখবে, তাকেই ক্ষমতায় আনা হোক। ফলাফল যাই হোক, আমরা তা মেনে নেব।” এই বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে, বিএনপির বর্তমান অবস্থান কোনো জোট বা রেজাল্ট নয়, বরং নির্বাচনের পদ্ধতিগত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

বিশ্লেষণ: কেন এখনই নির্বাচন প্রয়োজন?

১. গণতান্ত্রিক শূন্যতা পূরণে নির্বাচন অনিবার্য – দীর্ঘ নির্বাচনহীনতা দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। রাজনৈতিক স্থবিরতা শুধু বিরোধী দল নয়, জনগণকেও হতাশ করছে।

২. বিশ্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি – অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জনের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই।

৩. সুশাসনের রূপরেখা স্পষ্ট করতে হবে – ইউনূসের মতো একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের আস্থা ফেরাতে পারত, যদি একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ এবং সময়সীমা নির্ধারণ করা হতো।

সংকট থেকে উত্তরণের উপায়

বাংলাদেশ এখন এক জটিল রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে। অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচন স্থগিত রাখা কিংবা বিভ্রান্তিকর বার্তা প্রদান একদিকে গণতন্ত্রকে দুর্বল করছে, অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অধ্যাপক ইউনূসের মতো নেতার কাছে জনগণের প্রত্যাশা একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সময়মতো নির্বাচনের নিশ্চয়তা। আর তা না হলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা শুধু দীর্ঘায়িতই হবে না, বরং দেশব্যাপী অনাস্থা ও অস্থিরতা আরও বাড়বে।