সারাক্ষণ রিপোর্ট
সুইজারল্যান্ডে মুখোমুখি হবে দুই পক্ষ
এই সপ্তাহের শেষ দিকে সুইজারল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেবেন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এবং বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার। চীনের পক্ষের নেতৃত্ব দেবেন ভাইস-প্রিমিয়ার হি লিফেং। আলোচনার বিষয়বস্তু হবে মূলত বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনের পথ খোঁজা।
ট্রাম্পের শুল্ক নীতির পর প্রথম আলোচনা
মঙ্গলবার দুই দেশের সরকারি বিবৃতিতে এ সফরের ঘোষণা আসে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর শুল্ক নীতির পর এটি হবে প্রথম আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনা। সূত্র জানিয়েছে, আলোচনায় শুল্ক কমানো, নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর শুল্ক বাতিল, ‘ডি মিনিমিস’ নীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তালিকা নিয়ে আলোচনা হবে।
বেসেন্ট: “বড় চুক্তি নয়, আগে উত্তেজনা কমানো জরুরি”
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট বলেন, “এই আলোচনা কোনো বড় বাণিজ্য চুক্তি নয়, বরং উত্তেজনা প্রশমনের দিকেই আমাদের লক্ষ্য। আগে উত্তেজনা কমাতে হবে, তারপরই আমরা এগোতে পারব।”

চীনের অবস্থান: “সমতা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে আলোচনা চাই”
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনায় আন্তরিকতা দেখাতে হবে, ভুল আচরণ সংশোধন করতে হবে এবং উভয় পক্ষের উদ্বেগ সমতা ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।” তারা আরও যোগ করেছে, “যদি কথা একরকম হয় কিন্তু কাজ হয় উল্টো, বা চাপে ফেলার চেষ্টা চলে, তাহলে চীন কখনোই সম্মত হবে না।”
বিনিয়োগকারীদের আশাবাদ
এই আলোচনা বিশ্ববাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের বহু পণ্যের ওপর ১৪৫% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, যার পাল্টা হিসেবে চীনও ১২৫% শুল্ক বসিয়েছে। বেসেন্ট বলেন, “এই হার কার্যত এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা। আমরা বিচ্ছিন্নতা চাই না, চাই ন্যায্য বাণিজ্য।”
মার্কিন বাজারে প্রভাব
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কযুদ্ধের ফলে আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি, পোশাক, খেলনা প্রভৃতির দাম বাড়তে পারে, যা মার্কিন ভোক্তাদের জন্য চাপের কারণ হতে পারে। বেসেন্ট স্বীকার করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘কৌশলগত অনিশ্চয়তা’ বাজারে উদ্বেগ তৈরি করতে পারে, কিন্তু এটি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক ধরনের কৌশলগত সুবিধা।
ট্রাম্পের মন্তব্য: “চীনের সঙ্গে বাণিজ্য না করেও ক্ষতি নেই”
সম্প্রতি ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বাণিজ্য না করেও কিছু হারাচ্ছে না। তিনি দাবি করেছেন, চীনা জাহাজগুলো প্রশান্ত মহাসাগর থেকেই ফিরে যাচ্ছে। তার মতে, আমেরিকানরা কিছুটা দাম বাড়া এবং কম পণ্যের বৈচিত্র্য মেনে নিতে রাজি থাকবে যদি তা চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার পথ হয়।
তিনি বলেন, “ছোট মেয়েদের ৩০টা পুতুল থাকার দরকার নেই, ৩-৪টাও যথেষ্ট।”

অন্য দেশের সঙ্গে আলোচনা চললেও চীনের সঙ্গে দেরি
বেসেন্ট জানান, অন্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি এই সপ্তাহেই চূড়ান্ত হতে পারে, তবে চীনের সঙ্গে আলোচনা এখন শুরু হচ্ছে।
পল টিউডর জোনসের সতর্কবার্তা
বিলিয়নিয়ার বিনিয়োগকারী পল টিউডর জোনস বলেন, ট্রাম্প চীনের ওপর শুল্ক অর্ধেক করে দিতে পারেন, তবে এতেও হয়তো বাজার পতন ঠেকানো যাবে না। তার মতে, “যেখানে ট্রাম্প শুল্কে অনড়, আর ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমাবে না—এমন পরিস্থিতি শেয়ারবাজারের জন্য মোটেই শুভ নয়।”
সুইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও বৈঠক
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ এবং বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিস জানিয়েছে, বেসেন্ট ও গ্রিয়ার সুইজারল্যান্ড সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট কারিন কেলার-সুটারের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
Sarakhon Report 



















