০৯:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন: চীনের তৈরি পোশাক খাতে বড় ধাক্কা- আমেরিকায় কর

  • Sarakhon Report
  • ১০:০০:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫
  • 50

সারাক্ষণ রিপোর্ট 

আমেরিকায় কর ছাড় শেষ: থেমে যাচ্ছে চীনের সস্তা পণ্যের প্রবাহ

চীনের গার্মেন্টশিল্পে বড় ধরনের মন্দার সূচনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে কর সুবিধা বাতিল হওয়ার পর। গত কয়েক বছর ধরে আমাজন, শিইন ও টেমুর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে লাভবান হচ্ছিল গুয়াংজুর অসংখ্য ক্ষুদ্র কারখানা। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির ফলে এই খাতটি এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত।

গুয়াংজুর পোশাক প্রস্তুতকারক লিউ মিয়াও বলছেন, “যুক্তরাষ্ট্রে এখন কিছুই বিক্রি করা যাচ্ছে না, শুল্ক খুব বেশি।” তিনি আগে প্রতি পোশাকে ১ ডলার লাভ করতেন, এখন তা নেমে এসেছে ৫০ সেন্টে, যা দিয়ে খরচই উঠছে না।

কম খরচে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ ছিল করমুক্ত রপ্তানি

চীনা পোশাকশিল্পের সফলতার পেছনে ছিল যুক্তরাষ্ট্রে ৮০০ ডলারের নিচের পণ্যে কর না থাকার সুবিধা। এর ফলে কারখানা ও প্ল্যাটফর্মগুলো খুব কম দামে পণ্য পাঠিয়ে বিপুল মুনাফা করছিল। শিইন ও আমাজনের মতো প্ল্যাটফর্মে চীনের লক্ষাধিক কারখানা পণ্য পাঠিয়ে ব্যবসা করছিল।

তবে নতুন শুল্কনীতির ফলে এসব কর ছাড় শেষ হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে করমুক্ত পণ্যের প্রবেশ বন্ধ হয়েছে।

গুয়াংজুর রপ্তানিনির্ভর পোশাক কারখানার সংকট

চীনের গার্মেন্ট খাত বিশাল কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র, যেখানে প্রতি দিন মাত্র ৬০ ডলার পারিশ্রমিকে কাজ করেন শ্রমিকরা। শিইনের মতো প্ল্যাটফর্মে পোশাক সরবরাহের জন্য এই শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করতেন। কিন্তু রপ্তানি কমে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক কারখানা, কমছে উৎপাদন, চাকরি হারাচ্ছেন বহু শ্রমিক।

ফ্যাক্টরি মালিক লিউ বিন বলেন, “অর্ডার অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমি এখন উৎপাদন সরিয়ে নিচ্ছি জিয়াংসি প্রদেশে, কারণ গুয়াংজুতে ভাড়ার টাকা তোলা সম্ভব নয়।”

গার্মেন্ট ব্যবসা নিয়ে অস্থিরতা: বিকল্প খুঁজছে মালিকরা

গুয়াংজুর নয়জন ফ্যাক্টরি মালিক ও ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, কেউ কেউ কারখানা অন্য প্রদেশে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন। কেউ আবার ভিয়েতনামে কারখানা স্থানান্তরের চিন্তায়, যেখানে এখনো তুলনামূলক কম শুল্কে রপ্তানি সম্ভব।

তবে সমস্যা এখানেই শেষ নয়—ভিয়েতনামের ওপরও সম্প্রতি উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে মালিকদের অনেকেই এখন টিকটক বা টেমুতে অর্ডার খুঁজছেন, কিন্তু সেখানেও অর্ডার কমে গেছে।

চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি: বড় চ্যালেঞ্জ

বেইজিং সরকার ছোট ব্যবসাগুলোকে অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রিতে উৎসাহ দিচ্ছে। তবে রিয়েল এস্টেট খাতের ধসের পর দেশটির জনগণ খরচে বেশ সংযমী হয়ে পড়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ছে না।

হুবেই প্রদেশের পোশাক ব্যবসায়ী ঝাং চেন জানান, “২০২০ সালে ব্যবসা ফেরেনি। ২০২১, ২০২২—তখনো না। তাই সব দোকান বন্ধ করেছি।” এখন তিনি দৈনিক ১০০ ডলার আয় করেন শিইনের ডেলিভারির কাজ করে।

বাণিজ্য আলোচনায় আশার আলোকিন্তু অগ্রগতি অনিশ্চিত

এই সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কর্মকর্তাদের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। যদিও উভয়পক্ষই শুল্ক হ্রাসে আগ্রহ দেখিয়েছে, কেউই এখনো প্রথম পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত নয়। আলোচনায় অগ্রগতি হলেও কতটা দ্রুত চুক্তি হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

চাহিদা কমলেও কিছু পণ্যের বিক্রি চলবে

শিইন ও টেমুতে মোজা বিক্রেতা হান জুনশিউ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন চার মিলিয়নের মতো ছোট প্যাকেজ ঢোকার ওপর একযোগে শুল্ক বসানো বাস্তবসম্মত নয়।

তিনি বলেন, “এই পণ্যগুলো আমেরিকানরা কোথা থেকে কিনবে?” বিশেষ করে ‘পাজামা পার্টির মোজা’র মতো সস্তা কিন্তু জনপ্রিয় পণ্য—যেগুলোর বিকল্প এখনও তারা চীনের বাইরে খুঁজে পায়নি।

এই সংকট চীনের পোশাক খাতে এক গভীর পুনর্বিবেচনার সময় তৈরি করেছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রে কর সুবিধা শেষ, অন্যদিকে চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারেও ভোক্তার আস্থা দুর্বল। ফলে শিল্পটি এখন নতুন পথ খুঁজছে টিকে থাকার জন্য।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন: চীনের তৈরি পোশাক খাতে বড় ধাক্কা- আমেরিকায় কর

১০:০০:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট 

আমেরিকায় কর ছাড় শেষ: থেমে যাচ্ছে চীনের সস্তা পণ্যের প্রবাহ

চীনের গার্মেন্টশিল্পে বড় ধরনের মন্দার সূচনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে কর সুবিধা বাতিল হওয়ার পর। গত কয়েক বছর ধরে আমাজন, শিইন ও টেমুর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে লাভবান হচ্ছিল গুয়াংজুর অসংখ্য ক্ষুদ্র কারখানা। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির ফলে এই খাতটি এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত।

গুয়াংজুর পোশাক প্রস্তুতকারক লিউ মিয়াও বলছেন, “যুক্তরাষ্ট্রে এখন কিছুই বিক্রি করা যাচ্ছে না, শুল্ক খুব বেশি।” তিনি আগে প্রতি পোশাকে ১ ডলার লাভ করতেন, এখন তা নেমে এসেছে ৫০ সেন্টে, যা দিয়ে খরচই উঠছে না।

কম খরচে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ ছিল করমুক্ত রপ্তানি

চীনা পোশাকশিল্পের সফলতার পেছনে ছিল যুক্তরাষ্ট্রে ৮০০ ডলারের নিচের পণ্যে কর না থাকার সুবিধা। এর ফলে কারখানা ও প্ল্যাটফর্মগুলো খুব কম দামে পণ্য পাঠিয়ে বিপুল মুনাফা করছিল। শিইন ও আমাজনের মতো প্ল্যাটফর্মে চীনের লক্ষাধিক কারখানা পণ্য পাঠিয়ে ব্যবসা করছিল।

তবে নতুন শুল্কনীতির ফলে এসব কর ছাড় শেষ হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে করমুক্ত পণ্যের প্রবেশ বন্ধ হয়েছে।

গুয়াংজুর রপ্তানিনির্ভর পোশাক কারখানার সংকট

চীনের গার্মেন্ট খাত বিশাল কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র, যেখানে প্রতি দিন মাত্র ৬০ ডলার পারিশ্রমিকে কাজ করেন শ্রমিকরা। শিইনের মতো প্ল্যাটফর্মে পোশাক সরবরাহের জন্য এই শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করতেন। কিন্তু রপ্তানি কমে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক কারখানা, কমছে উৎপাদন, চাকরি হারাচ্ছেন বহু শ্রমিক।

ফ্যাক্টরি মালিক লিউ বিন বলেন, “অর্ডার অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমি এখন উৎপাদন সরিয়ে নিচ্ছি জিয়াংসি প্রদেশে, কারণ গুয়াংজুতে ভাড়ার টাকা তোলা সম্ভব নয়।”

গার্মেন্ট ব্যবসা নিয়ে অস্থিরতা: বিকল্প খুঁজছে মালিকরা

গুয়াংজুর নয়জন ফ্যাক্টরি মালিক ও ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, কেউ কেউ কারখানা অন্য প্রদেশে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন। কেউ আবার ভিয়েতনামে কারখানা স্থানান্তরের চিন্তায়, যেখানে এখনো তুলনামূলক কম শুল্কে রপ্তানি সম্ভব।

তবে সমস্যা এখানেই শেষ নয়—ভিয়েতনামের ওপরও সম্প্রতি উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে মালিকদের অনেকেই এখন টিকটক বা টেমুতে অর্ডার খুঁজছেন, কিন্তু সেখানেও অর্ডার কমে গেছে।

চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি: বড় চ্যালেঞ্জ

বেইজিং সরকার ছোট ব্যবসাগুলোকে অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রিতে উৎসাহ দিচ্ছে। তবে রিয়েল এস্টেট খাতের ধসের পর দেশটির জনগণ খরচে বেশ সংযমী হয়ে পড়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ছে না।

হুবেই প্রদেশের পোশাক ব্যবসায়ী ঝাং চেন জানান, “২০২০ সালে ব্যবসা ফেরেনি। ২০২১, ২০২২—তখনো না। তাই সব দোকান বন্ধ করেছি।” এখন তিনি দৈনিক ১০০ ডলার আয় করেন শিইনের ডেলিভারির কাজ করে।

বাণিজ্য আলোচনায় আশার আলোকিন্তু অগ্রগতি অনিশ্চিত

এই সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কর্মকর্তাদের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। যদিও উভয়পক্ষই শুল্ক হ্রাসে আগ্রহ দেখিয়েছে, কেউই এখনো প্রথম পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত নয়। আলোচনায় অগ্রগতি হলেও কতটা দ্রুত চুক্তি হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

চাহিদা কমলেও কিছু পণ্যের বিক্রি চলবে

শিইন ও টেমুতে মোজা বিক্রেতা হান জুনশিউ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন চার মিলিয়নের মতো ছোট প্যাকেজ ঢোকার ওপর একযোগে শুল্ক বসানো বাস্তবসম্মত নয়।

তিনি বলেন, “এই পণ্যগুলো আমেরিকানরা কোথা থেকে কিনবে?” বিশেষ করে ‘পাজামা পার্টির মোজা’র মতো সস্তা কিন্তু জনপ্রিয় পণ্য—যেগুলোর বিকল্প এখনও তারা চীনের বাইরে খুঁজে পায়নি।

এই সংকট চীনের পোশাক খাতে এক গভীর পুনর্বিবেচনার সময় তৈরি করেছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রে কর সুবিধা শেষ, অন্যদিকে চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারেও ভোক্তার আস্থা দুর্বল। ফলে শিল্পটি এখন নতুন পথ খুঁজছে টিকে থাকার জন্য।