সারাক্ষণ রিপোর্ট
নির্বাচনে নীতির চেয়ে মুখটাই বড় কথা
ফিলিপাইনে ১২ মে অনুষ্ঠিতব্য মধ্যবর্তী সংসদ নির্বাচন ঘিরে যখন নীতিনির্ধারণ ও আইনি সংস্কারের কথা হওয়ার কথা, এ সময়ে বাস্তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দুই প্রধান রাজনৈতিক পরিবারের—মার্কোস ও দুতার্তে—মধ্যকার বিরোধ। এই প্রেক্ষাপটে দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
দুর্বল প্রবৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সংকটে সাধারণ মানুষ
২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে দুর্বল ভোক্তা ব্যয় এবং ঘন ঘন টাইফুনের কারণে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। ৬ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না করে প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় মাত্র ৫.৪ শতাংশে। একই সঙ্গে, পরপর দুই বছর ধরে মাথাপিছু আয় স্থবির অবস্থায় রয়েছে।
দাবাও সিটির বাজারে স্মুদি ও প্যানকেক বিক্রি করা র্যান্ডি মার্টিনেজের মতে, “মানুষ চায় মূল্যস্ফীতি ও আয় হ্রাসের মতো বাস্তব সমস্যার সমাধান, কিন্তু রাজনীতিকেরা ব্যস্ত নিজেদের ক্ষমতা নিয়ে টানাটানিতে।”
মার্কোস বনাম দুতার্তে: রাজনৈতিক যুদ্ধের মঞ্চ সংসদ
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের সরকার যদি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়, তাহলে আগামী তিন বছর তার প্রশাসনের জন্য কঠিন হয়ে উঠবে। অপরদিকে, ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতার্তে জুলাই মাসে সিনেটে অভিশংসনের মুখোমুখি হচ্ছেন, এবং এই নির্বাচন তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতি ও অভিবাসন নীতির শঙ্কা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির কারণে ফিলিপাইনের রপ্তানিকারকরা তুলনামূলক কম শুল্কের মুখোমুখি হলেও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বেড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে অভিবাসন কঠোরকরণ নীতির শঙ্কা, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ফিলিপাইনিরা ও তাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি মুখে, বাস্তবে দায়বদ্ধতা নেই
মার্কিন ডলারে ৭২ মিলিয়ন মূল্যের নির্বাচনী বিজ্ঞাপন খাতে ব্যয় করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই টিভিতে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রচারণায় মূলত জনপ্রিয় গান, নাচ আর মুখচেনা প্রার্থীদের নিয়েই হট্টগোল, বাস্তব নীতিমালা বা পরিকল্পনার জায়গা নেই বললেই চলে।
দাবাওয়ের রিস ডিভা, একজন তরুণ শ্রমিক, ভোট দিচ্ছেন দুতার্তে পরিবারের প্রার্থীদের, কারণ তারা “পরিচিত” এবং “পরিবারের অভিজ্ঞতা আছে।” তার মতে,“ভোটের আগে অনেক কিছু বলা হয়, কিন্তু পরে কেউই তা মানে না।”
জনতার চাহিদা স্পষ্ট, কিন্তু ভোট আচরণ ভিন্ন
জনমত জরিপে ফিলিপাইনিরা অর্থনৈতিক স্থিতি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার মান এবং দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপকে অগ্রাধিকার দেয়। কিন্তু ভোট দিতে গিয়ে তারা পরিচিত মুখ, রাজনৈতিক বংশগত প্রভাব বা তারকাখ্যাতিকে গুরুত্ব দেয়, কার্যকর নীতির খোঁজের বদলে।
ডি লা সাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্লিও কালিমবাহিন বলেন, “মানুষ নির্বাচনে উৎসাহী হলেও, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চায় না। এজন্যই তাদের প্রয়োজন-ভিত্তিক ভোট নির্বাচন মানসম্মত সেবায় রূপ নেয় না।”
অর্থনৈতিক বাস্তবতায় মুখোমুখি সংকট
বিশ্লেষক অ্যান্থনি লরেন্স বোরহা বলেন, “সাধারণ মানুষ এখনও আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সঙ্গে নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের সম্পর্ককে পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারে না, যতক্ষণ না তা মূল্যস্ফীতিকে সহ্যসীমার বাইরে নিয়ে যায়।”
শিক্ষণীয় বার্তা: ভোগান্তির দায় শাসকের
স্মুদি বিক্রেতা মার্টিনেজের মতে, মার্কোস প্রশাসনের ব্যর্থতা থেকে দুতার্তেদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। “এই দামে জিনিসপত্রের চাপে মানুষ এখনই মার্কোসদের সমালোচনা করছে। দুতার্তেরা যদি ঠিকভাবে শাসন করতে পারে, তাহলে এই সমস্যাগুলো মুছে যাবে।”