সারাক্ষণ রিপোর্ট
শুল্ক সত্ত্বেও রপ্তানি বাড়ল এপ্রিল মাসে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও, এপ্রিল মাসে চীনের রপ্তানি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার প্রকাশিত চীনের শুল্ক দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডলারে পরিমাপ করা চীনের রপ্তানি এপ্রিল মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.১ শতাংশ বেড়েছে। যদিও মার্চে এই হার ছিল ১২.৪ শতাংশ, তবুও এটি রয়টার্সের অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস ১.৯ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমেছে, তবে অন্য বাজারে বৃদ্ধি
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের প্রেক্ষিতে এপ্রিল মাসে চীনের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ২১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, আর আমদানি কমেছে ১৩.৮ শতাংশ। তারপরও চীন-আসিয়ান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি যথাক্রমে ২০.৮ শতাংশ ও ৮.৩ শতাংশ বেড়েছে, যা মার্কিন বাজারে ক্ষতির প্রভাব কিছুটা লাঘব করতে সাহায্য করেছে।
শুল্ক এড়াতে রপ্তানিকারকদের কৌশল
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীন বিষয়ক অর্থনীতিবিদ জিচুন হুয়াং জানান, “যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি আদেশে পতনের প্রভাব এখনও পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি এবং অনেক রপ্তানিকারক বিকল্প রপ্তানি পথ খুঁজে নিচ্ছেন। রেনমিনবির মান কমে যাওয়ার পাশাপাশি পণ্যের রপ্তানি পথ ঘুরিয়ে নেওয়ার প্রবণতা শুল্কের প্রভাব কমিয়ে দিচ্ছে।”
অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল, রপ্তানি নির্ভরতা অব্যাহত
চীনের রপ্তানি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ আবাসন খাত সংকটে থাকায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল। গত সপ্তাহে প্রকাশিত তথ্য বলছে, এপ্রিল মাসে চীনের উৎপাদন খাত সংকুচিত হয়েছে এবং নতুন রপ্তানি আদেশের সূচক নেমে এসেছে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কোভিড মহামারির সময়কার সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
ব্যাপক মনেটারি স্টিমুলাস ঘোষণা
বুধবার চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সচল রাখতে এবং আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনার আগে মনোবল বাড়াতে সুদের হার কমানোসহ একাধিক মুদ্রানীতি সহায়তা ঘোষণা করেছে।
আমদানিতে হালকা উন্নতি
ডলারে পরিমাপ করা চীনের আমদানি এপ্রিল মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ০.২ শতাংশ কমেছে, যা মার্চে ছিল ৪.৩ শতাংশ হ্রাস। রয়টার্সের পূর্বাভাস ছিল ৫.৯ শতাংশ হ্রাস। হুয়াং জানিয়েছেন, আমদানি উন্নতির পেছনে রয়েছে শিল্প কাঁচামালের আমদানি বৃদ্ধি, যা অবকাঠামোগত ব্যয়ের ফল।
আঞ্চলিক চিত্র: কোরিয়া ও ভিয়েতনামেও রপ্তানি বাড়ছে
দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভিয়েতনাম থেকেও ইতিবাচক রপ্তানি তথ্য পাওয়া গেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানি প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে এবং ভিয়েতনামের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি মহামারি পরবর্তী সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে এই দেশগুলো এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ১০ শতাংশ হারে সাধারণ শুল্কের আওতায় রয়েছে, আর বাড়তি পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে আলোচনার উদ্দেশ্যে।
সমঝোতার ইঙ্গিত
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ অর্থনৈতিক কর্মকর্তারা সুইজারল্যান্ডে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। তার আগে এমন রপ্তানি পরিসংখ্যান চীনকে কিছুটা আত্মবিশ্বাস জোগাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই আলোচনার মাধ্যমে শুল্কযুদ্ধ কমিয়ে আনার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে।