স্বয়ং গবর্ণর জেনারেল বাহাদুর বারওয়েলের পক্ষ সমর্থন করিয়া বলিলেন যে, আমিও কখন গঙ্গাগোবিন্দের কোন দোৰ দেখি নাই; তাহার অনেক শত্রু আছে; বোধ হয়, তাহারা এরূপ রটাইয়া থাকিবে। গঙ্গাগোবিন্দ যেরূপ দক্ষতাসহকারে রাজস্ববিভাগে কার্য্য করিতেছে, তাহাতে তাহাকে পদচ্যুত করিলে, রাজস্ববিভাগে অত্যন্ত বিশৃঙ্খলা ঘাটবে; অতএব এরূপ দক্ষ লোকের পদচ্যুতি কদাচ ঘটিতে পারে না। কিন্তু প্রথমোক্ত তিন জনের একবাক্যতায় অবশেষে। কাউন্সিলের সভ্যেরা গঙ্গাগোবিন্দকে অবসর প্রদান করিতে বাধ্য হন।
ক্লেভারিং, মদন ও ফ্রান্সিস্ তিন জনেই হেষ্টিংসের বিপক্ষ ছিলেন। ১৭৭৬ খৃঃ অব্দে মন্দনের মৃত্যুর পর হেষ্টিংসের বিপক্ষদলের ক্ষমতা-হ্রাস হওয়ায়, তিনি পুনর্ব্বার গঙ্গাগোবিন্দকে রাজস্ববিষয়ের কার্য্যে নিযুক্ত-করিতে উৎসুক হইলেন। ১৭৭৬ খৃষ্টাব্দের ৮ই নবেম্বরের সভায় গবর্ণর জেনারেল তাঁহার দক্ষতা ও রাজস্ববিষয়ক জ্ঞানের উল্লেখ করিয়া, পুনর্ব্বার গঙ্গাগোবিন্দকে কলিকাতার রাজস্ব-সমিতির দেওয়ানের পদে নিযুক্ত করিলেন।
হেষ্টিংস পাঁচসনা বন্দোবস্তের সময় অধিকাংশ জেলার রাজস্ব আদায়ের জন্য কালেক্টর নিযুক্ত করিয়াছিলেন। গবর্ণর জেনারেলের উৎকোচ অহণ দেখিয়া, সেই সমস্ত কালেক্টরগণও নিজ নিজ উদরপূরণে সচেষ্ট হন। ক্রমে কোম্পানীর রাজস্ব বাকী পড়িতে লাগিল। হেষ্টিংস কালেক্টর-দিগকে শাসন করিতে গেলে, তাঁহারা তাঁহার দোষও প্রকাশ করিতে পারেন, এই আশঙ্কায় হেষ্টিংস কালেক্টরী পদ রহিত করিয়া, পুনর্ব্বার দেশীয় লোকদিগের হস্তে রাজস্ব আদায়ের ভার দিলেন।
এই সকল দেশীয় কর্মচারিগণের কার্যকলাপ পরিদর্শনের জন্য পাটনা, মুর্শিদাবাদ, বর্দ্ধমান, দিনাজপুর, ঢাকা ও কলিকাতা এই ছয় স্থানে ছয়টি প্রবিন্সিয়াল কাউ-দিল বা প্রাদেশিক সমিতি স্থাপিত হইল। গঙ্গাগোবিন্দ কলিকাতার ও দেবী সিংহ মুর্শিদাবাদ প্রবিন্সিয়াল কাউন্সিলের দেওয়ান নিযুক্ত হইলেন। প্রবিন্সিয়াল কাউন্সিলের সভাদিগের হস্তে রাজস্ব-সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের ভার ন্যস্ত হওয়ায় হেষ্টিংসের নিজের কোন সুবিধা নাই দেখিয়া, তিনি পুনর্ব্বার প্রাদেশিক সমিতি ভঙ্গ করিবার জন্ম বারংবার ডিরেক্টর-দিগকে লিখিতে লাগিলেন।