০১:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের মাছচাষ শিল্পে আকস্মিক বন্যার বিধ্বংসী প্রভাব

ভূমিকা

আকস্মিক বন্যা ও অবিরাম ভারী বৃষ্টিপাতের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটে নিপতিত হয়েছে। এটি শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, বরং এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তার কেন্দ্রে—মাছচাষ শিল্পে। এই প্রতিবেদনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছচাষ খাতে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি, ক্ষতিগ্রস্তদের অভিজ্ঞতা এবং টেকসই সমাধানের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে।

ডুবে গেছে এক দেশ

উজান থেকে আসা পানির ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে দেশের উপকূলীয় ও নিম্নাঞ্চলজুড়ে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নোয়াখালী, পটুয়াখালী, ভোলা, কক্সবাজার, খুলনা, বরগুনা ও বরিশালের মতো জেলাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় দশ হাজারের বেশি মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আটকে পড়েছে, শত শত বাড়ি ডুবে গেছে এবং অনেক মাছের খামার পানির তোড়ে ভেসে গেছে।

পটুয়াখালীতে জলোচ্ছ্বাস ও ভারী বৃষ্টিতে আটটি উপজেলায় ৯৫৫টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৎস্য ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রায় ৪ হাজার ২০০টি মাছের খামার এবং ১১ হাজার ২৫০ হেক্টর আউশ বীজতলা ও আমন ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মাছচাষ খাতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পুষ্টি নিরাপত্তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই খাতটি চরম বিপর্যয়ের মুখে। শুধু ভোলা জেলাতেই উচ্চ জোয়ারে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে, ২৩৪টি ঘের এবং ২ হাজার ৫৩৩টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে কোটি টাকায়।

দেশজুড়ে মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে, আকস্মিক বন্যায় ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭১৬টি মাছচাষ খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১২টি জেলায় ১ লাখ ৭ হাজার ৫১৭ টন মাছ ও চিংড়ি নষ্ট হয়েছে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় ১৩ হাজার ৬০০-এর বেশি পুকুর ভেসে গেছে, যার ক্ষতির পরিমাণ ১৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সিলেটেই ক্ষতির পরিমাণ ১০১ কোটি টাকা।

মাঠের মানুষের কান্না

শেরপুরের মাছচাষি মোহাম্মদ আলী জানান, “এক একর জমি লিজ নিয়ে ৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে মাছচাষ শুরু করি। সব মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এখন হাতে কিছুই নেই, শুধু ঋণ আছে।”

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় খননকাজ চলাকালে একটি অস্থায়ী রিং বাঁধ ভেঙে পড়ায় ৪০০ বিঘার বেশি মাছের খামার প্লাবিত হয়েছে। কমপক্ষে ২০ লাখ টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন স্থানীয় চাষিরা।

স্থানীয় বাসিন্দা রহমত আলী বলেন, “আমার বাড়ির পাশে বড় অংশের জমি জোয়ারের চাপে হঠাৎ করে ধসে পড়েছে। আজ রাতে যদি আবার জোয়ারে মেরামত না হয়, তবে মূল বাঁধটিও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আছে। তখন আরও এলাকা প্লাবিত হবে।”

রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি

স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি রপ্তানিকারক ও মাছচাষ ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। খামারি মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এবং ৫০টিরও বেশি দেশে মাছ রপ্তানি করে, যার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান অন্যতম।

কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যা এই রপ্তানি শৃঙ্খল ছিন্ন করে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক চাহিদা পূরণে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)-এর বাংলাদেশের ডেপুটি প্রতিনিধি ডিয়া সানু বলেন, “বাংলাদেশের মাছচাষ পণ্যে নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে আস্থা কমছে এবং এতে অর্থনৈতিকভাবে বড় ধাক্কা লাগছে।”

অবকাঠামো ও পরিবেশগত ক্ষতি

এই বন্যা শুধু মাছচাষ নয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোতেও ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ৩ লাখ ১১ হাজার ৪১৯ হেক্টর জমি পানির নিচে চলে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬ হাজার ৫৪২ কিলোমিটার রাস্তা এবং ১ হাজার ৬৬টি সেতু ও কালভার্ট।

সাতক্ষীরায় রিং বাঁধ ভেঙে পড়ায় ৪০০ বিঘার বেশি মাছের খামার পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

মানবিক বিপর্যয়

এই বন্যার মানবিক মূল্য অত্যন্ত করুণ। ৫৮ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৫ লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। জীবিকা হারিয়ে অনেকেই দারিদ্র্যের মুখে পড়েছেন। বাংলাদেশের মোট কৃষি পরিবারের ৭৬ শতাংশই ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক, যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

ত্রাণ ও পুনর্বাসন উদ্যোগ

এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় জাতিসংঘের FAO ও বেলজিয়াম সরকারের সহায়তায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ভোলা, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়ি জেলার ৯ হাজার ৫০টি কৃষক পরিবারকে বীজ, সার ও কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদান করা হচ্ছে, যা ৪৫ হাজার ২০০ জন উপকারভোগীকে সহায়তা করবে।

খুলনা, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায় ১০ হাজার ৮০০টি পশুপালন পরিবারকে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা আবারও ফসল ও সবজি উৎপাদন শুরু করতে পারবে।

দীর্ঘমেয়াদি সমাধান ও জলবায়ু সহনশীলতা

এই ধরনের পুনরাবৃত্ত দুর্যোগের প্রেক্ষিতে স্থায়ী ও জলবায়ু-সহনশীল সমাধান অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো, টেকসই মাছচাষ পদ্ধতি ও পরিবেশবান্ধব চাষাবাদের দিকে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, কঠিন ও নমনীয় উভয় ধরনের জলবায়ু-সহায়ক বিনিয়োগ বন্যা ও অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাব কমাতে পারে। তাছাড়া জরুরি সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা উন্নত করা, ত্রাণ বণ্টনে সমতা নিশ্চিত করা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতির জন্য বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করাও জরুরি।

অতিবৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় বাংলাদেশের মাছচাষ শিল্পে যে ধ্বংস নেমে এসেছে, তা জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদের ভয়াবহতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। বর্তমান সংকট মোকাবেলার পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য টেকসই ও সহনশীল চাষব্যবস্থায় বিনিয়োগ না করলে খাদ্য নিরাপত্তা ও কোটি মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।

বাংলাদেশের মাছচাষ শিল্পে আকস্মিক বন্যার বিধ্বংসী প্রভাব

০৫:৩৩:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

ভূমিকা

আকস্মিক বন্যা ও অবিরাম ভারী বৃষ্টিপাতের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটে নিপতিত হয়েছে। এটি শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, বরং এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তার কেন্দ্রে—মাছচাষ শিল্পে। এই প্রতিবেদনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছচাষ খাতে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি, ক্ষতিগ্রস্তদের অভিজ্ঞতা এবং টেকসই সমাধানের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে।

ডুবে গেছে এক দেশ

উজান থেকে আসা পানির ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে দেশের উপকূলীয় ও নিম্নাঞ্চলজুড়ে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নোয়াখালী, পটুয়াখালী, ভোলা, কক্সবাজার, খুলনা, বরগুনা ও বরিশালের মতো জেলাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় দশ হাজারের বেশি মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আটকে পড়েছে, শত শত বাড়ি ডুবে গেছে এবং অনেক মাছের খামার পানির তোড়ে ভেসে গেছে।

পটুয়াখালীতে জলোচ্ছ্বাস ও ভারী বৃষ্টিতে আটটি উপজেলায় ৯৫৫টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৎস্য ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রায় ৪ হাজার ২০০টি মাছের খামার এবং ১১ হাজার ২৫০ হেক্টর আউশ বীজতলা ও আমন ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মাছচাষ খাতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পুষ্টি নিরাপত্তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই খাতটি চরম বিপর্যয়ের মুখে। শুধু ভোলা জেলাতেই উচ্চ জোয়ারে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে, ২৩৪টি ঘের এবং ২ হাজার ৫৩৩টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে কোটি টাকায়।

দেশজুড়ে মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে, আকস্মিক বন্যায় ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭১৬টি মাছচাষ খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১২টি জেলায় ১ লাখ ৭ হাজার ৫১৭ টন মাছ ও চিংড়ি নষ্ট হয়েছে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় ১৩ হাজার ৬০০-এর বেশি পুকুর ভেসে গেছে, যার ক্ষতির পরিমাণ ১৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সিলেটেই ক্ষতির পরিমাণ ১০১ কোটি টাকা।

মাঠের মানুষের কান্না

শেরপুরের মাছচাষি মোহাম্মদ আলী জানান, “এক একর জমি লিজ নিয়ে ৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে মাছচাষ শুরু করি। সব মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এখন হাতে কিছুই নেই, শুধু ঋণ আছে।”

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় খননকাজ চলাকালে একটি অস্থায়ী রিং বাঁধ ভেঙে পড়ায় ৪০০ বিঘার বেশি মাছের খামার প্লাবিত হয়েছে। কমপক্ষে ২০ লাখ টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন স্থানীয় চাষিরা।

স্থানীয় বাসিন্দা রহমত আলী বলেন, “আমার বাড়ির পাশে বড় অংশের জমি জোয়ারের চাপে হঠাৎ করে ধসে পড়েছে। আজ রাতে যদি আবার জোয়ারে মেরামত না হয়, তবে মূল বাঁধটিও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আছে। তখন আরও এলাকা প্লাবিত হবে।”

রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি

স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি রপ্তানিকারক ও মাছচাষ ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। খামারি মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এবং ৫০টিরও বেশি দেশে মাছ রপ্তানি করে, যার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান অন্যতম।

কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যা এই রপ্তানি শৃঙ্খল ছিন্ন করে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক চাহিদা পূরণে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)-এর বাংলাদেশের ডেপুটি প্রতিনিধি ডিয়া সানু বলেন, “বাংলাদেশের মাছচাষ পণ্যে নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে আস্থা কমছে এবং এতে অর্থনৈতিকভাবে বড় ধাক্কা লাগছে।”

অবকাঠামো ও পরিবেশগত ক্ষতি

এই বন্যা শুধু মাছচাষ নয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোতেও ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ৩ লাখ ১১ হাজার ৪১৯ হেক্টর জমি পানির নিচে চলে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬ হাজার ৫৪২ কিলোমিটার রাস্তা এবং ১ হাজার ৬৬টি সেতু ও কালভার্ট।

সাতক্ষীরায় রিং বাঁধ ভেঙে পড়ায় ৪০০ বিঘার বেশি মাছের খামার পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

মানবিক বিপর্যয়

এই বন্যার মানবিক মূল্য অত্যন্ত করুণ। ৫৮ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৫ লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। জীবিকা হারিয়ে অনেকেই দারিদ্র্যের মুখে পড়েছেন। বাংলাদেশের মোট কৃষি পরিবারের ৭৬ শতাংশই ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক, যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

ত্রাণ ও পুনর্বাসন উদ্যোগ

এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় জাতিসংঘের FAO ও বেলজিয়াম সরকারের সহায়তায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ভোলা, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়ি জেলার ৯ হাজার ৫০টি কৃষক পরিবারকে বীজ, সার ও কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদান করা হচ্ছে, যা ৪৫ হাজার ২০০ জন উপকারভোগীকে সহায়তা করবে।

খুলনা, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায় ১০ হাজার ৮০০টি পশুপালন পরিবারকে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা আবারও ফসল ও সবজি উৎপাদন শুরু করতে পারবে।

দীর্ঘমেয়াদি সমাধান ও জলবায়ু সহনশীলতা

এই ধরনের পুনরাবৃত্ত দুর্যোগের প্রেক্ষিতে স্থায়ী ও জলবায়ু-সহনশীল সমাধান অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো, টেকসই মাছচাষ পদ্ধতি ও পরিবেশবান্ধব চাষাবাদের দিকে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, কঠিন ও নমনীয় উভয় ধরনের জলবায়ু-সহায়ক বিনিয়োগ বন্যা ও অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাব কমাতে পারে। তাছাড়া জরুরি সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা উন্নত করা, ত্রাণ বণ্টনে সমতা নিশ্চিত করা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতির জন্য বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করাও জরুরি।

অতিবৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় বাংলাদেশের মাছচাষ শিল্পে যে ধ্বংস নেমে এসেছে, তা জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদের ভয়াবহতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। বর্তমান সংকট মোকাবেলার পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য টেকসই ও সহনশীল চাষব্যবস্থায় বিনিয়োগ না করলে খাদ্য নিরাপত্তা ও কোটি মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।