ঈদের আগে দুর্যোগ: হাটে গরু-ছাগল আসবে তো?
ঈদুল আজহা সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন হাটে কোরবানির পশু সরবরাহ শুরু হলেও টানা ভারী বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় সেই প্রস্তুতিতে দেখা দিয়েছে বড় ধরণের বাধা। দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং উপকূলীয় এলাকা থেকে কোরবানির পশুর সবচেয়ে বড় যোগান এলেও সেখানকার অনেক অঞ্চল এখন পানিতে নিমজ্জিত।
রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, ও কক্সবাজারের মতো অঞ্চল থেকে প্রতিনিয়ত পশু আসে ঢাকার গাবতলী, সাতক্ষীরা, নারায়ণগঞ্জ, ও মাওয়া ঘাট সংলগ্ন হাটগুলোতে। কিন্তু এ বছর এসব অঞ্চলেই দেখা দিয়েছে ব্যাপক জলাবদ্ধতা, ভেঙে গেছে কাঁচা রাস্তা, ডুবে গেছে অনেক খামার। ফলে পশু পরিবহন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা বলছেন
কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার খামারি মো. সামসুল হক বলেন,
“আমার খামারে ১৮টি গরু ছিল, এরমধ্যে ৫টা গরু হঠাৎ পানিতে পড়ে পা ভেঙে গেছে। দুইটা গরু মারা গেছে। এখন যেগুলো বেঁচে আছে, সেগুলোকেও বাঁচিয়ে রাখা কঠিন। গাবতলী হাটে নিতে পারব কিনা সন্দেহ।”
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার আরেক খামারি জানান,
“আমরা ২০টি ছাগল হাটে তোলার জন্য প্রস্তুত করছিলাম। গত দুই দিনে ছাগলগুলো ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছে। রোগ হলে দাম কমে যাবে।”
পশুর হাটে সরবরাহ কমবে: ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত
গাবতলীর বড় পশু ব্যবসায়ী মো. সেলিম বলেন,
“এখনো পর্যন্ত গরুর ট্রাক খুব কম আসছে। আগে ঈদের ২০ দিন আগে থেকেই প্রচুর গরু আসত। এবার বৃষ্টি ও রাস্তার অবস্থার কারণে অনেকে আসতেই পারছে না। হাটে গরু কম থাকলে দাম তো বাড়বেই।”
সাতক্ষীরার একটি বড় পরিবহনকারী কোম্পানির ম্যানেজার জানান,
“রাস্তায় পানি উঠে গেছে, ফলে আমরা পশুবাহী ট্রাক পাঠাতে পারছি না। দেরিতে গেলে পশু অসুস্থ হয়ে পড়ে, আবার অনেক চালক রাজি হচ্ছেন না এই অবস্থায় রওনা দিতে।”
বাজারে কী ধরনের প্রভাব পড়বে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই অবস্থা অব্যাহত থাকে, তাহলে এবছর কোরবানির পশুর দাম বেড়ে যেতে পারে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। কারণ—
- পশুর সরবরাহ কমবে
- ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাড়তি দাম চাইবেন
- পরিবহন ব্যয় বাড়ছে, ফলে দামেও প্রভাব পড়বে
ঢাকার মিরপুরে হাটে আসা ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন,
“গত বছর যেই গরু ৭৫ হাজারে কিনেছি, এবার সেটা ৯০ হাজার বলছে। অথচ হাটে গরু এখনো খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না।”
সরকারি পদক্ষেপ জরুরি
কৃষি ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন,
“আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। খামারিদের সহায়তা দিতে মোবাইল ভেটেরিনারি টিম, জরুরি খাদ্য ও ওষুধ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। যাতে তারা হাটে পশু তুলতে পারেন।”
তবে পরিবহন ও রাস্তাঘাটের সংকট সমাধানে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া খামারিদের এই সংকট থেকে উদ্ধার করা কঠিন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সামনে আরও বৃষ্টি: বিপদের ইঙ্গিত
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আগামী ৫-৭ দিন দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে করে নদ-নদীর পানি আরও বাড়বে এবং নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এর প্রভাব সরাসরি কোরবানির হাটেও পড়বে।
উপসংহার
পশুর হাট শুধু ঈদের ধর্মীয় গুরুত্বের কেন্দ্র নয়, দেশের লক্ষাধিক খামারি ও পরিবহন ব্যবসায়ীর অর্থনীতির অন্যতম উৎস। বৃষ্টি ও বন্যা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে এবছর কোরবানির হাটে পশুর ঘাটতি দেখা দেবে, দামও বাড়তে পারে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর এখনই দ্রুত সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে, খামারি ও সাধারণ ক্রেতা—দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এটাই হয়তো এবছরের কোরবানির বাজারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।