টানা বৃষ্টি ও হঠাৎ বন্যায় কী ক্ষতি হল?
- চলতি মৌসুমি বর্ষার শুরু থেকেই (জানুয়ারি–মে) অতিবৃষ্টিতে ৭,৭২২ কিমি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে এলজিইডি-র সর্বশেষ সমন্বিত প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।
- এর মধ্যে গত মাসের মাঝামাঝি থেকে উপকূল ও পাহাড়ি অঞ্চলে নতুন করে বেড়ে ওঠা ঢলে অন্তত ৬,৫৪২ কিমি সড়ক ও ১,০৬৬ সেতু–কালভার্ট পুরোপুরি বা আংশিক ভাবে ধসে পড়েছে—জাতীয় দুর্যোগ ত্রাণ সমন্বয়কেন্দ্রের (NDRCC) নথি অনুযায়ী।
- শুধু লক্ষ্মীপুর জেলায় পানির তোড়ে ২,৭৪৬ কিমি পাকা-কাঁচা সড়কের ক্ষয়ক্ষতি রেকর্ড করেছে এলজিইডি–মাঠদফতর ।
- পাহাড়ি জেলায় বড় ধস: বান্দরবান-রুমা সড়কে শিলাস্তর নেমে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, জরুরি ত্রাণ ও যাত্রী পরিবহনে বিকল্প নৌ-রুট চালু করতে হয়েছে।
কোন পথে বাড়ি ফেরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ?
করিডর | প্রধান সমস্যার ধরণ | বর্তমান অবস্থা |
ঢাকা-চট্টগাম | ফেনী-সীতাকুণ্ডে ৮-১০টি গভীর গর্ত, ৩৫ সেকশনে পানি | বিকল্প উড়ালপথে হালকা গাড়ি, ভারী যান রাতে |
ঢাকা-সিলেট | ভেলানগর ও হাটখোলা এলাকায় ২ কিমি অংশ ডুবে গেছে | দিনভর একমুখী চলাচল, রাতে দুইমুখী |
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম | পাহাড়ি ধস ও গাছ পড়ে অন্তত ১০ বার বন্ধ হয়েছে | সেনাবাহিনীর ক্লিয়ারিং দল দিনে তিনবার রাস্তা খুলছে |
বান্দরবান-রুমা | ওয়াই–জংশনের পর ২ কিমি ধসে গেছে | পুরোপুরি বন্ধ; নৌ পথই-বিকল্প |
(জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কন্ট্রোলরুম, ৩১ মে সন্ধ্যা)
সরকারের ‘ঈদ অপারেশন প্ল্যান’
৫ জুনের মধ্যে সব মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে ‘ট্রাফিক শেভিং’, অর্থাৎ দুই লেনের অন্তত এক লেনে জরুরি বিটুমিন-প্যাচ ও স্টিল-প্লেট বসিয়ে গর্তমুক্ত করা হবে।
আরএইচডি-র ৩০টি মোবাইল টিম ও এলজিইডি-র ৫০টি ইউনিট ২৪ ঘণ্টার ডিউটিতে; প্রতি ৫ কিমি অন্তর লাইট-টাওয়ার ও টো-ট্রাক প্রস্তুত।
ঢাকা ছেড়ে বেরোনো পাঁচটি রুটে (টাঙ্গাইল, মাওয়া, সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগাম) ‘গ্রিন লাইন’ পদ্ধতি: পুলিশ-হাইওয়ে-পাতানো ডিজিটাল সিগন্যাল বোর্ডে রুট-আপডেট।
উপকূল ও পাহাড়ি সড়কে জিও-ব্যাগ দিয়ে অস্থায়ী প্ল্যাটফর্ম বানিয়ে ছোট বাস-মাইক্রোবাস চলাচলের ব্যবস্থা।
জরুরি সংস্কার-খাতে ৭৮০ কোটি টাকা ছাড়—অর্থ মন্ত্রণালয়ের দ্রুত বরাদ্দ চিঠি ৩১ মে দুপুরেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন সড়ক সচিব।
বাড়ি ফিরব কীভাবে?
বাংলাদেশ মেট্রো রেল ও বিআরটিসি মিলিয়ে ৬–৯ জুন পর্যন্ত অতিরিক্ত ৮২ জোড়া বিশেষ বাস-ট্রেন চালানোর ঘোষণা দিয়েছে—বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ, সিলেট ও কক্সবাজারগামী রুটে। আর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ টার্মিনালে বেসরকারি বাস মালিক সমিতি ঈদের পাঁচ দিন আগে থেকে ডিজিটাল সিরিয়াল টোকেন পদ্ধতি চালু করবে, যাতে ভাড়া ছাড়া অতিরিক্ত অর্থ আদায় না হয়।
ঈদ কবে?
চাঁদ দেখা কমিটির হিসাবে ১০ জিলহজ ১৪৪৬ হিজরি ৭ বা ৮ জুন (শনিবার/রবিবার) ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা, অর্থাৎ এখন থেকে মাত্র এক সপ্তাহ বাকি)।
প্রায় আট হাজার কিলোমিটার সড়ক-নেটওয়ার্ক ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু ঈদের আগেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামের পথে ‘গাড়ি থামবে না’—এমনটাই লক্ষ্য করে কমপক্ষে সাত দিনের ভেতর জরুরি মেরামত শেষ করার আল্টিমেটাম দিয়েছে সরকার। মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী-পুলিশ-স্থানীয় প্রশাসন-জনপ্রতিনিধি মিলিয়ে যৌথ টিম। তবু অবিরাম বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় সংশ্লিষ্ট সকলেই যাত্রীদের প্রতি ‘ভ্রমণ-সচেতন’ থাকার আহ্বান জানিয়েছে—বাড়তি সময় হাতে নিয়ে এবং আবহাওয়া-বার্তা দেখে রওনা হতে বলা হয়েছে।
দুর্যোগ-ঝুঁকিপূর্ণ রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের জন্য জিও-বেস্ট, সেফ-ট্রিপ!