হেষ্টিংস ১৭৮৫ খৃঃ অব্দের ১৬ই ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলের, নিকট অনুরোধ করেন যে, গঙ্গাগোবিন্দসিংহ বাল্যকাল হইতে কোম্পানীর কার্য্য করিয়াছে এবং তাহার অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার জন্য তাহাকে ১১ বৎসর ব্যাপিয়া কমিটির দেওয়ানী পদে নিযুক্ত রাখা হইয়াছে। সে যেরূপ বিশ্বস্ততা, তৎপরতা ও দক্ষতার সহিত কোম্পানীর রাজস্ববিভাগের কার্য্য নির্ব্বাহ করিয়াছে, তাহাকে তজ্জন্য বিশেষরূপে পুরস্কৃত করা উচিত। এক্ষণে সে ভিন্ন ভিন্ন জেলায় তাঁহার টুঠী রাধাগোবিন্দ ঘোষ ও ব্রজকিশোর ঘোষের নামে কতকগুলি জমাজমি চাহিতেছে।
গঙ্গাগোবিন্দ ২,৩৮,০৬১৬৫ খাজানায় সেই সমস্ত জমি বন্দোবস্ত করিতে চাহে। অতএব তাহার প্রার্থনা পূরণ করিয়া তাহার কার্য্যের পুরস্কার প্রদান করা হউক।” হেষ্টিংসের কৃপায় গঙ্গাগোবিন্দ বাঙ্গলায় অনেক স্থানের জমিদারী লাভকরিয়াছিলেন। যে দিনাজপুরের অপ্রাপ্তবয়স্ক রাজার তত্ত্বাবধানের ভার তাঁহার হস্তে ন্যস্ত হইয়াছিল, তিনি তাঁহার সর্ব্বনাশ করিতে ত্রুটি করেন নাই; তাঁহাকে জমিদারী দেওয়ার কালে তাঁহার নিকট হইতে যে ৪ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়, তদ্ব্যতীত তাঁহার জমিদারীর কতক অংশ -গঙ্গাগোবিন্দ গ্রাস করিয়া বসেন।
তিনি নাবালগ রাধানাথকে ভুলাইয়া তাঁহার নিকট হইতে সালবাড়ী পরগণা অল্প মূল্যে ক্রয় করিয়া তাঁহার কোন আত্মীয়ের সম্মতি লিখাইয়া লয়েন। কিন্তু রাজার পক্ষীয় অন্যান্য লোকেরা নাবালগের সম্পত্তি হস্তান্তর করিবার কোন ক্ষমতা নাই বলিয়া, কাউন্সিলে আবেদন করিলে, কাউন্সিলের অনুসন্ধানে এইরূপ জ্ঞাত -হওয়া যায় যে রাজার যে আত্মীয় সম্মতি দিয়াছিলেন, তিনি এইরূপ বলেন যে, আমি জাতিনাশের ভয়ে সম্মতি দিয়াছি। আমি যদি সম্মতি না দিতাম, তাহা হইলে গঙ্গাগোবিন্দের মাতৃশ্রাদ্ধে আমার নিমন্ত্রণ হইত না।
সুতরাং তাহাতে আমাকে একরূপ সমাজচ্যুত হইতে হইত। গঙ্গাগোবিন্দ যখন দেখিলেন যে, নাবালগের সম্পত্তি লওয়ায় বাস্তবিক বিপদ ঘটিতেছে, তখন তিনি এই সুর ধরিলেন যে, নাবালগের সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষমতা না থাকিলেও গবর্ণমেন্ট যাহাকেই ইচ্ছা তাহাকেই সে সম্পত্তি দিতে পারেন। অতএব গবর্ণমেন্টের নিকট হইতে যখন আমি অনুমতি পাইয়াছি, তখন সালবাড়ী প্রত্যর্পণ করিতে পারি না। তিনি জানিতেন যে, যদিও হেষ্টিংস গমনোন্মুখ, তথাপি তাঁহার ক্ষমতা একেবারে তিরোহিত হয় নাই। কাউন্সিলের সভ্যেরা রাজস্ব সমিতির মত চাহিয়া পাঠান।