১০:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩১০)

যে ব্যক্তি তাঁহার নামে অভিযোগ উপস্থিত করে, যদিও তাহার ন্যায় ইতর প্রকৃতির লোক অতি অল্পই দৃষ্ট হইত, তথাপি এ ক্ষেত্রে তাহার অভিযোগের যে একেবারে কোনই মূল ছিল না, তাহা বলা যায় না। হেষ্টিংস সাহেবের মধ্যস্থতা হইতে তাহা একরূপ প্রমাণীকৃত হইয়াছিল। যে কমল উদ্দীনের সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করিয়া সুপ্রীমকোর্টের জজেরা বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ মহারাজ নন্দকুমারকে ফাঁসীকাঠে লম্বমান করিবার জন্য আদেশ প্রদান করিয়াছিলেন, সেই কমলউদ্দীনই গঙ্গাগোবিন্দের নামে অভিযোগ উপস্থিত করে।

সে এই বলিয়া কাউন্সিলে আর্জি দাখিল করে যে, বাঙ্গলা ১১৮১ সালের মাঘ মাসের শেষে রাজস্ব-সমিতির নিকট হইতে ৪ বৎসরের জন্য আমি হিজলী পরগণায় লবণের ইজারা গ্রহণ করি। লক্ষ ঘণ করিয়া লবণ চালান দিবার জন্য আমার প্রতি আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সমিতির দেওয়ান আমার নিকট হইতে গোপন ভাবে ২৬ হাজার টাকা প্রার্থনা করিয়া বলেন যে, লক্ষ মণের অধিক যে লবণ হইবে, তাহা আমি নিজে বিক্রয় করিয়া লাভ করিতে পারিব। তজ্জন্য গবর্ণমেন্ট হইতে কোনরূপ গোলযোগ হইবে না। আমি সেই কথায় প্রথমত: ১৫ হাজার টাকার মোহর প্রদান করি।

পরে লক্ষ মণের অতিরিক্ত লবণের ছাড় চাহিলে, দেওয়ান সে কথায় কর্ণপাত না করিয়া অবশিষ্ট টাকার জন্য পীড়াপীড়ি করিয়া আমার নিকট হইতে সমস্ত টাকা আদায় করিয়া লন। এক্ষণে যাহারা লবণ প্রস্তুত করে, তাহারা টাকার জন্য পীড়াপীড়ি করিতেছে। সুতরাং যাহাতে দেওয়ান আমাকে উক্ত টাকা প্রদান করেন, তাহার বিধান করা হউক। এই আর্জি লিখিয়া কমল উদ্দীন মহারাজ নন্দকুমার ও ফাউক সাহেবের দ্বারা কাউন্সিলে আর্জি প্রেরণ করে।

গবর্ণর জেনারেল তাহা অবগত হইয়া কমল উদ্দীনকে বশীভূত করিয়া ফেলেন এবং গ্রেহাম নামে তদানীন্তন কোম্পানীর জনৈক কর্মচারীর মুন্সী সদর উদ্দীনের দ্বারা গঙ্গা-গোবিন্দ ও কমল উদ্দীনের গোলযোগ মিটাইয়া দেন। নন্দকুমার প্রবন্ধে ইহা উল্লিখিত হইয়াছে। হেষ্টিংস কমল উদ্দীনকে বশীভূত করিয়া, সেই বিচারে তাহার সাক্ষা প্রদান করাইয়াছিলেন। সেই সাক্ষ্য ও জেরায় কমল উদ্দীন বলিয়াছিল যে, গঙ্গাগোবিন্দের নামে প্রকৃত প্রস্তাবে অভিযোগ করিবে বলিয়া আর্জি লেখে নাই।

 

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩১০)

১১:০০:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫

যে ব্যক্তি তাঁহার নামে অভিযোগ উপস্থিত করে, যদিও তাহার ন্যায় ইতর প্রকৃতির লোক অতি অল্পই দৃষ্ট হইত, তথাপি এ ক্ষেত্রে তাহার অভিযোগের যে একেবারে কোনই মূল ছিল না, তাহা বলা যায় না। হেষ্টিংস সাহেবের মধ্যস্থতা হইতে তাহা একরূপ প্রমাণীকৃত হইয়াছিল। যে কমল উদ্দীনের সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করিয়া সুপ্রীমকোর্টের জজেরা বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ মহারাজ নন্দকুমারকে ফাঁসীকাঠে লম্বমান করিবার জন্য আদেশ প্রদান করিয়াছিলেন, সেই কমলউদ্দীনই গঙ্গাগোবিন্দের নামে অভিযোগ উপস্থিত করে।

সে এই বলিয়া কাউন্সিলে আর্জি দাখিল করে যে, বাঙ্গলা ১১৮১ সালের মাঘ মাসের শেষে রাজস্ব-সমিতির নিকট হইতে ৪ বৎসরের জন্য আমি হিজলী পরগণায় লবণের ইজারা গ্রহণ করি। লক্ষ ঘণ করিয়া লবণ চালান দিবার জন্য আমার প্রতি আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সমিতির দেওয়ান আমার নিকট হইতে গোপন ভাবে ২৬ হাজার টাকা প্রার্থনা করিয়া বলেন যে, লক্ষ মণের অধিক যে লবণ হইবে, তাহা আমি নিজে বিক্রয় করিয়া লাভ করিতে পারিব। তজ্জন্য গবর্ণমেন্ট হইতে কোনরূপ গোলযোগ হইবে না। আমি সেই কথায় প্রথমত: ১৫ হাজার টাকার মোহর প্রদান করি।

পরে লক্ষ মণের অতিরিক্ত লবণের ছাড় চাহিলে, দেওয়ান সে কথায় কর্ণপাত না করিয়া অবশিষ্ট টাকার জন্য পীড়াপীড়ি করিয়া আমার নিকট হইতে সমস্ত টাকা আদায় করিয়া লন। এক্ষণে যাহারা লবণ প্রস্তুত করে, তাহারা টাকার জন্য পীড়াপীড়ি করিতেছে। সুতরাং যাহাতে দেওয়ান আমাকে উক্ত টাকা প্রদান করেন, তাহার বিধান করা হউক। এই আর্জি লিখিয়া কমল উদ্দীন মহারাজ নন্দকুমার ও ফাউক সাহেবের দ্বারা কাউন্সিলে আর্জি প্রেরণ করে।

গবর্ণর জেনারেল তাহা অবগত হইয়া কমল উদ্দীনকে বশীভূত করিয়া ফেলেন এবং গ্রেহাম নামে তদানীন্তন কোম্পানীর জনৈক কর্মচারীর মুন্সী সদর উদ্দীনের দ্বারা গঙ্গা-গোবিন্দ ও কমল উদ্দীনের গোলযোগ মিটাইয়া দেন। নন্দকুমার প্রবন্ধে ইহা উল্লিখিত হইয়াছে। হেষ্টিংস কমল উদ্দীনকে বশীভূত করিয়া, সেই বিচারে তাহার সাক্ষা প্রদান করাইয়াছিলেন। সেই সাক্ষ্য ও জেরায় কমল উদ্দীন বলিয়াছিল যে, গঙ্গাগোবিন্দের নামে প্রকৃত প্রস্তাবে অভিযোগ করিবে বলিয়া আর্জি লেখে নাই।