০৩:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
আলোচনার পরিবর্তে কেন শিক্ষকদের ওপর সহিংসতা — প্রশ্ন জিএম কাদেরের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ডের ৯ রানে জয়; ওয়েস্ট ইনডিজকে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করল কিউইরা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল তুরস্ক নাটোরে পুলিশের হাত থেকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মীকে ছিনিয়ে নিল জনতা বেতন কাঠামো উন্নয়ন ও উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন অব্যাহত রাজশাহীতে তাপমাত্রা নেমে ১৬.৫ ডিগ্রিতে: শীতের আগমনী বার্তা মোহাম্মদপুরে গ্যারেজে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি যানবাহন শীতের আরাম নিশ্চিত করুন: বাংলাদেশে কোন গিজারগুলো সেরা ঢাকা-খুলনাসহ ১৫ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ ব্যাংকঅ্যাশিওরেন্স: শোকাহত পরিবারের পাশে দ্রুত সহায়তা

কেন পৃথিবী জুড়ে ঘূর্ণিঝড় আগের থেকে বেশি হচ্ছেঃ বাংলাদেশ, ফিলিপাইন ও জাপান বিপদের মুখে

জলবায়ুর সংকট আরও তীব্র: ঘূর্ণিঝড়দাবানল ও তাপপ্রবাহের নজিরবিহীন বৃদ্ধি

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ভয়াবহ। বৈশ্বিক উষ্ণতা যেমন দ্রুত বাড়ছে, তেমনি ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতাও বেড়েছে—বিশেষত আটলান্টিক, প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে।
২০২৫ সালে শুধু উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলে রেকর্ডসংখ্যক ২২টি নামকরণ করা ঘূর্ণিঝড় দেখা গেছে, যা গত দুই দশকের গড়ের তুলনায় প্রায় ৩০% বেশি। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ঘূর্ণিঝড় এখন আরও শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।

এই পরিবর্তন শুধু ঘূর্ণিঝড়েই সীমাবদ্ধ নয়—তীব্র গরম, খরা, দাবানল, বন্যা ও প্রবালপ্রাচীর ধ্বংস একযোগে পৃথিবীর জলবায়ু ব্যবস্থাকে সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

দ্রুততর বৈশ্বিক উষ্ণায়ন

পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা এখন অতীতের তুলনায় অনেক দ্রুত বাড়ছে। আইপিসিসি (IPCC)-এর হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা এখন প্রতি দশকে প্রায় ০.২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে বাড়ছে—যা ১৯৯০ ও ২০০০ দশকের তুলনায় প্রায় ৫০% দ্রুত।

একইভাবে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হারও দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। গত শতাব্দীতে যেখানে তা ছিল প্রতি বছর ১.৮৫ মিলিমিটার, এখন তা দাঁড়িয়েছে ৪.৫ মিলিমিটার
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, আমরা এখন এমন এক পর্যায়ে যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যেই ১.৫°C সীমা অতিক্রমের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে—একটি সীমা যার পর জলবায়ু পরিবর্তন হতে পারে অপরিবর্তনীয়।

প্রবালপ্রাচীর ধ্বংস: জলবায়ুর প্রথম টিপিং পয়েন্ট

উষ্ণ সাগরে ধারাবাহিক তাপপ্রবাহে প্রবালপ্রাচীরগুলো ভয়াবহ ক্ষতির মুখে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি হতে পারে জলবায়ুর প্রথম টিপিং পয়েন্ট—অর্থাৎ এমন এক পরিবর্তন, যেখান থেকে আগের ভারসাম্যে ফিরে যাওয়া অসম্ভব।

অক্টোবরের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়, আমাজন বনাঞ্চলও ঝুঁকির মধ্যে আছে। যদি বন উজাড় চলতেই থাকে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫°C ছাড়িয়ে যায়, তবে এই বনভূমি ধীরে ধীরে সাভানায় পরিণত হতে পারে।

এছাড়া, গ্রিনল্যান্ডের বরফগলনের কারণে উত্তর আটলান্টিকের AMOC স্রোতব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে—যা ইউরোপে শীতকে সহনীয় রাখে।
অন্যদিকে, অ্যান্টার্কটিকায় বরফগলন ও সমুদ্রের অন্ধকার পানির সূর্যালোক শোষণ বৃদ্ধির ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে। এতে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন নামক ক্ষুদ্র সামুদ্রিক জীবের বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে, যারা পৃথিবীর বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে

দাবানল: নতুন বিপর্যয়ের ইঙ্গিত

তাপপ্রবাহ ও খরার পাশাপাশি দাবানল এখন এক বৈশ্বিক সংকট।
স্টেট অব ওয়াইল্ডফায়ারস ২০২৫ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রায় ৩.৭ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার এলাকা পুড়ে গেছে—যা ভারত ও নরওয়ের সম্মিলিত আয়তনের সমান।
যদিও এই পরিমাণ গত দুই দশকের গড়ের চেয়ে কিছুটা কম, কিন্তু এই আগুনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি কার্বন নির্গমন ঘটেছে, কারণ বর্তমানে অধিক কার্বনসমৃদ্ধ বনভূমি আগুনে পুড়ছে।

প্রাণঘাতী গরম ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী এখন চরম গরমে ভুগছে। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য ও আবহাওয়া সংস্থাগুলোর হিসাবে, প্রতি ২০°C-এর উপরে প্রতি ডিগ্রিতে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা ২৩% কমে যায়
‘ল্যানসেট’ পত্রিকার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে গরমজনিত উৎপাদনহ্রাসের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে ১ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি

ইউরোপে, ইম্পেরিয়াল কলেজের এক দল গবেষক জানায়, এবারের গ্রীষ্মে ২৪,৪০০ জনের মৃত্যু ঘটেছে অতিরিক্ত গরমে। এর মধ্যে প্রায় ৭০% মৃত্যু জলবায়ুজনিত তাপপ্রবাহের ফল
আর গত বছরের রেকর্ড গরমে ৬২,৭০০ জনের বেশি ইউরোপীয় নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন বলে এক যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়: উষ্ণ সমুদ্রের সরাসরি ফল

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রের তাপমাত্রা যত বাড়ছে, ঘূর্ণিঝড় ততই বেশি ও শক্তিশালী হচ্ছে।
২০২৫ সালে প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গড়ে ১৮% বেশি ঘূর্ণিঝড় দেখা গেছে, যাদের অনেকগুলোর শক্তি ক্যাটাগরি-৪ বা তার উপরে ছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ঘূর্ণিঝড়প্রবণ দেশগুলো—বিশেষ করে বাংলাদেশফিলিপাইন ও জাপান—আরও বড় বিপদের মুখে পড়বে।

বিজ্ঞান চাপেঅর্থায়নে কাটছাঁটের হুমকি

যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন জলবায়ু ও আবহাওয়া গবেষণার জন্য বরাদ্দ কমানোর পরিকল্পনা করছে। ২০২৬ সালের বাজেট প্রস্তাবে নাসা আর্থ সায়েন্স-এর বাজেট অর্ধেকে নামিয়ে ১ বিলিয়ন ডলার, এবং NOAA-এর বাজেট ২৫% কমিয়ে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু নেতৃত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।

অন্যদিকে, চীনযুক্তরাজ্যজাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে জলবায়ুবিজ্ঞানে বরাদ্দ বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি তাদের রিয়েল-টাইম আবহাওয়া তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করেছে, যা বৈশ্বিক গবেষণাকে আরও সহজ করছে।

সিওপি৩০ সম্মেলনের আগে প্রকাশিত এই তথ্যগুলো স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে—পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর ভবিষ্যতের আশঙ্কা নয়এটি বর্তমানের বাস্তবতা
ঘূর্ণিঝড়, দাবানল, তাপপ্রবাহ ও প্রবাল ধ্বংস—সব মিলিয়ে আমাদের পরিবেশ ব্যবস্থা ভয়াবহ পরিবর্তনের মুখে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পৃথিবী হয়ে উঠবে আরও অনিরাপদ ও অস্থিতিশীল।

#জলবায়ুপরিবর্তন #সিওপি৩০ #ঘূর্ণিঝড় #প্রবালধ্বংস #বিশ্বউষ্ণায়ন #দাবানল #জলবায়ুবিজ্ঞান #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

আলোচনার পরিবর্তে কেন শিক্ষকদের ওপর সহিংসতা — প্রশ্ন জিএম কাদেরের

কেন পৃথিবী জুড়ে ঘূর্ণিঝড় আগের থেকে বেশি হচ্ছেঃ বাংলাদেশ, ফিলিপাইন ও জাপান বিপদের মুখে

০১:৩২:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫

জলবায়ুর সংকট আরও তীব্র: ঘূর্ণিঝড়দাবানল ও তাপপ্রবাহের নজিরবিহীন বৃদ্ধি

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ভয়াবহ। বৈশ্বিক উষ্ণতা যেমন দ্রুত বাড়ছে, তেমনি ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতাও বেড়েছে—বিশেষত আটলান্টিক, প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে।
২০২৫ সালে শুধু উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলে রেকর্ডসংখ্যক ২২টি নামকরণ করা ঘূর্ণিঝড় দেখা গেছে, যা গত দুই দশকের গড়ের তুলনায় প্রায় ৩০% বেশি। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ঘূর্ণিঝড় এখন আরও শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।

এই পরিবর্তন শুধু ঘূর্ণিঝড়েই সীমাবদ্ধ নয়—তীব্র গরম, খরা, দাবানল, বন্যা ও প্রবালপ্রাচীর ধ্বংস একযোগে পৃথিবীর জলবায়ু ব্যবস্থাকে সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

দ্রুততর বৈশ্বিক উষ্ণায়ন

পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা এখন অতীতের তুলনায় অনেক দ্রুত বাড়ছে। আইপিসিসি (IPCC)-এর হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা এখন প্রতি দশকে প্রায় ০.২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে বাড়ছে—যা ১৯৯০ ও ২০০০ দশকের তুলনায় প্রায় ৫০% দ্রুত।

একইভাবে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হারও দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। গত শতাব্দীতে যেখানে তা ছিল প্রতি বছর ১.৮৫ মিলিমিটার, এখন তা দাঁড়িয়েছে ৪.৫ মিলিমিটার
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, আমরা এখন এমন এক পর্যায়ে যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যেই ১.৫°C সীমা অতিক্রমের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে—একটি সীমা যার পর জলবায়ু পরিবর্তন হতে পারে অপরিবর্তনীয়।

প্রবালপ্রাচীর ধ্বংস: জলবায়ুর প্রথম টিপিং পয়েন্ট

উষ্ণ সাগরে ধারাবাহিক তাপপ্রবাহে প্রবালপ্রাচীরগুলো ভয়াবহ ক্ষতির মুখে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি হতে পারে জলবায়ুর প্রথম টিপিং পয়েন্ট—অর্থাৎ এমন এক পরিবর্তন, যেখান থেকে আগের ভারসাম্যে ফিরে যাওয়া অসম্ভব।

অক্টোবরের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়, আমাজন বনাঞ্চলও ঝুঁকির মধ্যে আছে। যদি বন উজাড় চলতেই থাকে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫°C ছাড়িয়ে যায়, তবে এই বনভূমি ধীরে ধীরে সাভানায় পরিণত হতে পারে।

এছাড়া, গ্রিনল্যান্ডের বরফগলনের কারণে উত্তর আটলান্টিকের AMOC স্রোতব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে—যা ইউরোপে শীতকে সহনীয় রাখে।
অন্যদিকে, অ্যান্টার্কটিকায় বরফগলন ও সমুদ্রের অন্ধকার পানির সূর্যালোক শোষণ বৃদ্ধির ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে। এতে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন নামক ক্ষুদ্র সামুদ্রিক জীবের বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে, যারা পৃথিবীর বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে

দাবানল: নতুন বিপর্যয়ের ইঙ্গিত

তাপপ্রবাহ ও খরার পাশাপাশি দাবানল এখন এক বৈশ্বিক সংকট।
স্টেট অব ওয়াইল্ডফায়ারস ২০২৫ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রায় ৩.৭ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার এলাকা পুড়ে গেছে—যা ভারত ও নরওয়ের সম্মিলিত আয়তনের সমান।
যদিও এই পরিমাণ গত দুই দশকের গড়ের চেয়ে কিছুটা কম, কিন্তু এই আগুনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি কার্বন নির্গমন ঘটেছে, কারণ বর্তমানে অধিক কার্বনসমৃদ্ধ বনভূমি আগুনে পুড়ছে।

প্রাণঘাতী গরম ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী এখন চরম গরমে ভুগছে। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য ও আবহাওয়া সংস্থাগুলোর হিসাবে, প্রতি ২০°C-এর উপরে প্রতি ডিগ্রিতে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা ২৩% কমে যায়
‘ল্যানসেট’ পত্রিকার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে গরমজনিত উৎপাদনহ্রাসের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে ১ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি

ইউরোপে, ইম্পেরিয়াল কলেজের এক দল গবেষক জানায়, এবারের গ্রীষ্মে ২৪,৪০০ জনের মৃত্যু ঘটেছে অতিরিক্ত গরমে। এর মধ্যে প্রায় ৭০% মৃত্যু জলবায়ুজনিত তাপপ্রবাহের ফল
আর গত বছরের রেকর্ড গরমে ৬২,৭০০ জনের বেশি ইউরোপীয় নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন বলে এক যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়: উষ্ণ সমুদ্রের সরাসরি ফল

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রের তাপমাত্রা যত বাড়ছে, ঘূর্ণিঝড় ততই বেশি ও শক্তিশালী হচ্ছে।
২০২৫ সালে প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গড়ে ১৮% বেশি ঘূর্ণিঝড় দেখা গেছে, যাদের অনেকগুলোর শক্তি ক্যাটাগরি-৪ বা তার উপরে ছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ঘূর্ণিঝড়প্রবণ দেশগুলো—বিশেষ করে বাংলাদেশফিলিপাইন ও জাপান—আরও বড় বিপদের মুখে পড়বে।

বিজ্ঞান চাপেঅর্থায়নে কাটছাঁটের হুমকি

যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন জলবায়ু ও আবহাওয়া গবেষণার জন্য বরাদ্দ কমানোর পরিকল্পনা করছে। ২০২৬ সালের বাজেট প্রস্তাবে নাসা আর্থ সায়েন্স-এর বাজেট অর্ধেকে নামিয়ে ১ বিলিয়ন ডলার, এবং NOAA-এর বাজেট ২৫% কমিয়ে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু নেতৃত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।

অন্যদিকে, চীনযুক্তরাজ্যজাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে জলবায়ুবিজ্ঞানে বরাদ্দ বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি তাদের রিয়েল-টাইম আবহাওয়া তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করেছে, যা বৈশ্বিক গবেষণাকে আরও সহজ করছে।

সিওপি৩০ সম্মেলনের আগে প্রকাশিত এই তথ্যগুলো স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে—পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর ভবিষ্যতের আশঙ্কা নয়এটি বর্তমানের বাস্তবতা
ঘূর্ণিঝড়, দাবানল, তাপপ্রবাহ ও প্রবাল ধ্বংস—সব মিলিয়ে আমাদের পরিবেশ ব্যবস্থা ভয়াবহ পরিবর্তনের মুখে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পৃথিবী হয়ে উঠবে আরও অনিরাপদ ও অস্থিতিশীল।

#জলবায়ুপরিবর্তন #সিওপি৩০ #ঘূর্ণিঝড় #প্রবালধ্বংস #বিশ্বউষ্ণায়ন #দাবানল #জলবায়ুবিজ্ঞান #সারাক্ষণরিপোর্ট