১০:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
বিআরটিএতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলা ও পাসপোর্ট দপ্তরও শীর্ষে মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে বোমা নিক্ষেপ, নিহত এক পথচারী অসম ভিআইপি সুবিধা নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন: নির্বাচন কমিশনকে জানাল জামায়াত বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটিতে টানা তিন দিন বন্ধ ব্যাংক ও শেয়ারবাজার বৃহস্পতিবার দেশে পালিত হবে বড়দিন, উৎসব ঘিরে শুভেচ্ছা ও বাড়তি নিরাপত্তা উপেক্ষিত রুমিন ফারহানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থানে বিশ্বব্যাংকের নতুন অর্থায়ন, বাংলাদেশে অনুমোদন ১৫০ কোটি ডলার তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে সরকারের স্বাগত, পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস গাজীপুরে জাসাস নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা টাকা-ডলার বিনিময় হারে বাড়ছে ফাঁক, বৈদেশিক প্রতিযোগিতায় ঝুঁকির সতর্কতা

বিআরটিএতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলা ও পাসপোর্ট দপ্তরও শীর্ষে

দেশের সরকারি সেবাদানকারী দপ্তরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিপ্রবণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআরটিএ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর নাগরিক ধারণা জরিপ ২০২৫-এর ফলাফলে উঠে এসেছে, বিআরটিএ থেকে সেবা নিতে গিয়ে ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।

জরিপের প্রতিবেদনটি বুধবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিবিএস মিলনায়তনে প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, দুর্নীতির তালিকায় বিআরটিএর পরেই রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং পাসপোর্ট অফিস।

বিআরটিএ, পুলিশ ও পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতির চিত্র
জরিপ অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে সেবা নিতে গিয়ে ৫৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ মানুষ ঘুষ দেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। পাসপোর্ট অফিসে এই হার ৫৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এছাড়া ভূমি রেজিস্ট্রি বা ক্যাডাস্ট্র অফিসে ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ সেবাগ্রহীতা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

বিচারিক ও ভূমি সংক্রান্ত দপ্তরেও ঘুষ
অর্ধেকের বেশি উত্তরদাতা জানিয়েছেন, বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট, কৌঁসুলি ও অন্যান্য বিচারিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগে ৫৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রে ঘুষের ঘটনা ঘটেছে। ভূমি রেকর্ড, অধিগ্রহণ ও বন্দোবস্ত সংক্রান্ত দপ্তরগুলোতে এই হার ৫১ দশমিক ৪০ শতাংশ।

মাঝারি ও তুলনামূলক কম দুর্নীতির দপ্তর
হিসাব দপ্তরে ঘুষ দেওয়ার হার ৪৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ। কাস্টমস, আবগারি ও ভ্যাট অফিসে এই হার ৩৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ের স্থানীয় সরকার দপ্তরে ৩২ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসে ২৬ দশমিক ০৪ শতাংশ উত্তরদাতা ঘুষের কথা জানিয়েছেন।

এর তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ দপ্তরে ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসসহ ইউটিলিটি সেবায় ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ ঘুষের ঘটনা উঠে এসেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগে ১৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং আয়কর বা রাজস্ব অফিসে ১৪ দশমিক ০৮ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন।

সবচেয়ে কম ঘুষের অভিযোগ
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে ঘুষের হার তুলনামূলক কম, ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। কৃষি দপ্তরে এই হার ৯ দশমিক ০৭ শতাংশ। সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসক-নার্সদের সঙ্গে যোগাযোগে ৮ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঘুষের হার ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষেত্রে এই হার সবচেয়ে কম, মাত্র ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

ঘুষের ধরন ও লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য
গত ১২ মাসে সরকারি সেবা নিতে গিয়ে সরাসরি ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ উত্তরদাতা। পুরুষদের মধ্যে এই হার ৩৮ দশমিক ৬২ শতাংশ, যেখানে নারীদের ক্ষেত্রে ২২ দশমিক ৭১ শতাংশ। প্রায় সব ক্ষেত্রেই, অর্থাৎ ৯৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ ঘটনায় ঘুষ দেওয়া হয়েছে নগদ টাকায়।

জরিপের পরিধি ও পদ্ধতি
বিবিএস চলতি বছরের ৬ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলায় এই জরিপ পরিচালনা করে। ১ হাজার ৯২০টি নমুনা এলাকায় ৪৫ হাজার ৮৮৮টি পরিবারের ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ৮৪ হাজার ৮০৭ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর মধ্যে পুরুষ ছিলেন ৩৯ হাজার ৮৯৪ জন এবং নারী ৪৪ হাজার ৯১৩ জন।

শাসন, নিরাপত্তা ও সেবার মান নিয়ে ধারণা
জরিপে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১৬-এর ছয়টি সূচক মূল্যায়ন করা হয়। এর মধ্যে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, বিচারপ্রাপ্তি ও বৈষম্য অন্তর্ভুক্ত ছিল।

রাতে নিজের এলাকায় একা হাঁটলে নিরাপদ বোধ করেন ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ মানুষ। তবে নারীদের মধ্যে এই অনুভূতি কম, ৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে ৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। রাতে নিজের ঘরে নিরাপদ বোধ করেন ৯২ দশমিক ৫৪ শতাংশ নাগরিক।

সরকারি সিদ্ধান্তে প্রভাব রাখার সক্ষমতা
মাত্র ২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, তারা সরকারি সিদ্ধান্তে প্রভাব রাখতে পারেন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এই ধারণা আরও কম, ২১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনগণের প্রতি সাড়া দেয় বলে মনে করেন ২৪ দশমিক ৬২ শতাংশ উত্তরদাতা। গ্রাম ও শহরের মধ্যে এই ধারণায় তেমন পার্থক্য নেই।

সরকারি সেবা গ্রহণ ও সন্তুষ্টি
গত এক বছরে ৪৭ দশমিক ১২ শতাংশ মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন। ৪০ দশমিক ৯৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের অন্তত একজন সন্তান সরকারি প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধনের মতো অন্যান্য সরকারি সেবা নিয়েছেন ৭৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ মানুষ।

স্বাস্থ্যসেবায় সন্তুষ্টির হার ৭২ দশমিক ৬৯ শতাংশ, প্রাথমিক শিক্ষায় ৮১ দশমিক ৫৬ শতাংশ, মাধ্যমিক শিক্ষায় ৭৮ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং অন্যান্য সরকারি সেবায় ৬৬ দশমিক ৯১ শতাংশ।

বিরোধ, বিচার ও বৈষম্যের অভিজ্ঞতা
গত দুই বছরে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো বিরোধ বা সংঘাতের মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৬০ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪১ দশমিক ৩৪ শতাংশ আদালতের মতো আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থার শরণাপন্ন হয়েছেন, আর ৬৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ ভরসা করেছেন অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতির ওপর।

বৈষম্যের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ উত্তরদাতা। এর প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান এবং লিঙ্গ। বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে পরিবারের ভেতরে, গণপরিবহন বা খোলা জায়গায় এবং কর্মস্থলে। তবে মাত্র ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভুক্তভোগী এসব ঘটনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

এই জরিপের তথ্য সামগ্রিকভাবে দেখাচ্ছে, পরিবহন, আইনশৃঙ্খলা ও ভূমি সংক্রান্ত দপ্তরগুলোতে নাগরিকদের নির্ভরশীলতার সুযোগ নিয়ে এখনো ব্যাপক দুর্নীতি চলছে, যা সুশাসনের পথে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিআরটিএতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলা ও পাসপোর্ট দপ্তরও শীর্ষে

বিআরটিএতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলা ও পাসপোর্ট দপ্তরও শীর্ষে

০৮:২৯:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

দেশের সরকারি সেবাদানকারী দপ্তরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিপ্রবণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআরটিএ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর নাগরিক ধারণা জরিপ ২০২৫-এর ফলাফলে উঠে এসেছে, বিআরটিএ থেকে সেবা নিতে গিয়ে ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।

জরিপের প্রতিবেদনটি বুধবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিবিএস মিলনায়তনে প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, দুর্নীতির তালিকায় বিআরটিএর পরেই রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং পাসপোর্ট অফিস।

বিআরটিএ, পুলিশ ও পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতির চিত্র
জরিপ অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে সেবা নিতে গিয়ে ৫৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ মানুষ ঘুষ দেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। পাসপোর্ট অফিসে এই হার ৫৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এছাড়া ভূমি রেজিস্ট্রি বা ক্যাডাস্ট্র অফিসে ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ সেবাগ্রহীতা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

বিচারিক ও ভূমি সংক্রান্ত দপ্তরেও ঘুষ
অর্ধেকের বেশি উত্তরদাতা জানিয়েছেন, বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট, কৌঁসুলি ও অন্যান্য বিচারিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগে ৫৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রে ঘুষের ঘটনা ঘটেছে। ভূমি রেকর্ড, অধিগ্রহণ ও বন্দোবস্ত সংক্রান্ত দপ্তরগুলোতে এই হার ৫১ দশমিক ৪০ শতাংশ।

মাঝারি ও তুলনামূলক কম দুর্নীতির দপ্তর
হিসাব দপ্তরে ঘুষ দেওয়ার হার ৪৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ। কাস্টমস, আবগারি ও ভ্যাট অফিসে এই হার ৩৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ের স্থানীয় সরকার দপ্তরে ৩২ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসে ২৬ দশমিক ০৪ শতাংশ উত্তরদাতা ঘুষের কথা জানিয়েছেন।

এর তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ দপ্তরে ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসসহ ইউটিলিটি সেবায় ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ ঘুষের ঘটনা উঠে এসেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগে ১৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং আয়কর বা রাজস্ব অফিসে ১৪ দশমিক ০৮ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন।

সবচেয়ে কম ঘুষের অভিযোগ
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে ঘুষের হার তুলনামূলক কম, ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। কৃষি দপ্তরে এই হার ৯ দশমিক ০৭ শতাংশ। সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসক-নার্সদের সঙ্গে যোগাযোগে ৮ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঘুষের হার ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষেত্রে এই হার সবচেয়ে কম, মাত্র ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

ঘুষের ধরন ও লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য
গত ১২ মাসে সরকারি সেবা নিতে গিয়ে সরাসরি ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ উত্তরদাতা। পুরুষদের মধ্যে এই হার ৩৮ দশমিক ৬২ শতাংশ, যেখানে নারীদের ক্ষেত্রে ২২ দশমিক ৭১ শতাংশ। প্রায় সব ক্ষেত্রেই, অর্থাৎ ৯৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ ঘটনায় ঘুষ দেওয়া হয়েছে নগদ টাকায়।

জরিপের পরিধি ও পদ্ধতি
বিবিএস চলতি বছরের ৬ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলায় এই জরিপ পরিচালনা করে। ১ হাজার ৯২০টি নমুনা এলাকায় ৪৫ হাজার ৮৮৮টি পরিবারের ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ৮৪ হাজার ৮০৭ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর মধ্যে পুরুষ ছিলেন ৩৯ হাজার ৮৯৪ জন এবং নারী ৪৪ হাজার ৯১৩ জন।

শাসন, নিরাপত্তা ও সেবার মান নিয়ে ধারণা
জরিপে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১৬-এর ছয়টি সূচক মূল্যায়ন করা হয়। এর মধ্যে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, বিচারপ্রাপ্তি ও বৈষম্য অন্তর্ভুক্ত ছিল।

রাতে নিজের এলাকায় একা হাঁটলে নিরাপদ বোধ করেন ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ মানুষ। তবে নারীদের মধ্যে এই অনুভূতি কম, ৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে ৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। রাতে নিজের ঘরে নিরাপদ বোধ করেন ৯২ দশমিক ৫৪ শতাংশ নাগরিক।

সরকারি সিদ্ধান্তে প্রভাব রাখার সক্ষমতা
মাত্র ২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, তারা সরকারি সিদ্ধান্তে প্রভাব রাখতে পারেন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এই ধারণা আরও কম, ২১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনগণের প্রতি সাড়া দেয় বলে মনে করেন ২৪ দশমিক ৬২ শতাংশ উত্তরদাতা। গ্রাম ও শহরের মধ্যে এই ধারণায় তেমন পার্থক্য নেই।

সরকারি সেবা গ্রহণ ও সন্তুষ্টি
গত এক বছরে ৪৭ দশমিক ১২ শতাংশ মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন। ৪০ দশমিক ৯৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের অন্তত একজন সন্তান সরকারি প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধনের মতো অন্যান্য সরকারি সেবা নিয়েছেন ৭৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ মানুষ।

স্বাস্থ্যসেবায় সন্তুষ্টির হার ৭২ দশমিক ৬৯ শতাংশ, প্রাথমিক শিক্ষায় ৮১ দশমিক ৫৬ শতাংশ, মাধ্যমিক শিক্ষায় ৭৮ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং অন্যান্য সরকারি সেবায় ৬৬ দশমিক ৯১ শতাংশ।

বিরোধ, বিচার ও বৈষম্যের অভিজ্ঞতা
গত দুই বছরে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো বিরোধ বা সংঘাতের মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৬০ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪১ দশমিক ৩৪ শতাংশ আদালতের মতো আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থার শরণাপন্ন হয়েছেন, আর ৬৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ ভরসা করেছেন অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতির ওপর।

বৈষম্যের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ উত্তরদাতা। এর প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান এবং লিঙ্গ। বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে পরিবারের ভেতরে, গণপরিবহন বা খোলা জায়গায় এবং কর্মস্থলে। তবে মাত্র ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভুক্তভোগী এসব ঘটনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

এই জরিপের তথ্য সামগ্রিকভাবে দেখাচ্ছে, পরিবহন, আইনশৃঙ্খলা ও ভূমি সংক্রান্ত দপ্তরগুলোতে নাগরিকদের নির্ভরশীলতার সুযোগ নিয়ে এখনো ব্যাপক দুর্নীতি চলছে, যা সুশাসনের পথে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।