ফিলিপাইনে আবারও প্রকৃতির ভয়াল রূপ—সুপার টাইফুন ‘ফুং-ওয়ং’ প্রবল বেগে লুজন দ্বীপের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। সাম্প্রতিক টাইফুন ‘কালমাগি’-এর ধ্বংসযজ্ঞ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দেশটি নতুন বিপর্যয়ের মুখে। ইতিমধ্যে ৯ লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, বন্ধ করা হয়েছে সরকারি ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম, আর রাজধানী ম্যানিলা পর্যন্ত সতর্কতার মধ্যে রয়েছে।
ভয়াবহ সুপার টাইফুনের সামনে ফিলিপাইন
ফিলিপাইনে সুপার টাইফুন ‘ফুং-ওয়ং’ (স্থানীয় নাম ‘উওয়ান’) প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে। দেশের প্রধান দ্বীপ লুজনের উপকূল এখন ভয়ানক ঝড়-বৃষ্টির কবলে। বিপদাপন্ন এলাকাগুলো থেকে ইতিমধ্যে ৯ লাখেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে বহু অঞ্চলে সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে, যার মধ্যে রাজধানী ম্যানিলাও রয়েছে।
সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের পর নতুন আতঙ্ক
এই ঝড় আসছে এমন এক সময়ে, যখন ফিলিপাইন এখনও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে টাইফুন ‘কালমাগি’-এর ধ্বংসযজ্ঞ থেকে। সেই ঝড়ে শুধু ফিলিপাইনেই প্রাণ হারিয়েছিল ২২৪ জন এবং প্রতিবেশী ভিয়েতনামে আরও পাঁচজন মারা যান। ভিয়েতনামের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে তখন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে ফুং-ওয়ং
আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ‘ফুং-ওয়ং’ বর্তমানে ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার স্থায়ী বাতাস, এবং ঘণ্টায় ২৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বেগে ঝোড়ো হাওয়া তৈরি করছে। বিশাল বৃষ্টিপাতের বেল্ট এখন লুজন দ্বীপের বহু এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে, যা ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
দক্ষিণ-পূর্ব ও মধ্য লুজনের অঞ্চলগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতা, অর্থাৎ সিগন্যাল নম্বর ৫, জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কাতান্দুয়ানেস, কামারিনেস সুর এবং অরোরা প্রদেশ। রাজধানী ম্যানিলা ও আশপাশের এলাকায় দেওয়া হয়েছে সিগন্যাল নম্বর ৩।
ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গিলবার্তো তেওদরো জনগণকে জরুরি সতর্কতা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি আগেভাগে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে। শেষ মুহূর্তে উদ্ধার অভিযান চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ—এতে পুলিশ, সেনা, অগ্নিনির্বাপক ও কোস্টগার্ড সদস্যদের জীবন বিপন্ন হতে পারে।”
২১তম ঝড়: চাপে ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
এই বছর ফিলিপাইনে এটি ২১তম ঝড়, যেখানে সাধারণত বছরে প্রায় ২০টি ঝড় আঘাত হানে। টানা একের পর এক টাইফুনে দুর্যোগ মোকাবিলা সক্ষমতা মারাত্মক চাপে পড়েছে। তবু কর্তৃপক্ষ এবার প্রাণহানি শূন্য রাখার আশা করছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় দুর্যোগ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা রাফি আলেহান্দ্রো।
সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে প্রায় দুই হাজার সদস্যকে মানবিক সহায়তা ও উদ্ধার অভিযানে পাঠিয়েছে, যারা পূর্বে মাঠ প্রশিক্ষণে নিযুক্ত ছিলেন।

বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয়
উত্তর লুজনের ইসাবেলা প্রদেশে বহু পরিবার স্থানীয় একটি বাস্কেটবল কোর্টে আশ্রয় নিয়েছে, যা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
৫০ বছর বয়সী ক্রিস্টোফার সানচেজ বলেন, “খবর শুনেই আমরা আগে থেকেই চলে এসেছি। আমাদের ঘরের পাশে নদী। তাই প্রতি ঝড়েই এখানে আসতে হয়। আগেরবারের ঝড়ে পানির উচ্চতা মানুষের মাথার ওপর চলে গিয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সবাই ভীষণ ভয় পাচ্ছি। পুরো পরিবার — বাচ্চা, নাতি-নাতনিসহ সবাই এখন এই আশ্রয়কেন্দ্রে।”
তীব্র ঝড়-বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত যাতায়াত
রয়টার্সের এক প্রতিবেদকের বর্ণনায়, ইসাবেলায় প্রবল বাতাসে গাছপালা দুলছে, আকাশ কালো মেঘে ঢেকে আছে, আর প্রবল বৃষ্টিতে রাস্তা প্রায় অচল। যানবাহনের কাঁচে জল আছড়ে পড়ায় যান চলাচল অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
ফিলিপাইন কোস্টগার্ডের ছবিতে দেখা যায়, কামারিনেস সুর প্রদেশে মানুষজন ব্যাগ ও মালপত্র হাতে ছোট নৌকা থেকে নেমে ট্রাকে উঠছেন।
বিদ্যুৎ ও ফ্লাইট বাতিল
ইস্টার্ন ভিসায়াস অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৪০০টি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

ভয় ও সতর্কতার মধ্যে লুজনবাসী
দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি ভয়াবহ টাইফুন ফিলিপাইনকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। ‘কালমাগি’-এর দুঃসহ স্মৃতি এখনও কাটেনি, তারই মধ্যে এসে পড়েছে ‘ফুং-ওয়ং’-এর হুমকি। দেশের মানুষ আবারও এক অনিশ্চিত রাতের অপেক্ষায়, যেখানে তাদের একমাত্র আশা—আগেভাগে নেওয়া প্রস্তুতি যেন প্রাণহানি ও ধ্বংস কমিয়ে আনে।
#ফিলিপাইন #টাইফুন #ফুংওয়ং #কালমাগি #দুর্যোগ #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















