০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩১২)

গোলাম আশরফ উপায়ান্তর না দেখিয়া পুনর্ব্বার সাক্ষীর চেষ্টা দেখিতে লাগিল। ৭ই জুন সে তিন জন সাক্ষী লইয়া যায়। কিন্তু সে সাক্ষীর প্রমাণ গ্রাহ্য না করিয়া, তাঁহারা তাহাদিগকে মিথ্যাসাক্ষী স্থির করিয়া সমিতিকে অবগত করান। সমিতি সরকারী পক্ষের তৎকালীন সর্ব্বপ্রধান কৌন্সিলী সার্জন ডেকে এই সকল মিথ্যাসাক্ষীর দণ্ডবিধানার্থ তাহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উপস্থিত করিতে আদেশ দেন। দুই জন দাওরা সোপর্দ্দদ হয়; তন্মধ্যে একজনকে শান্তি ভোগ করিতে হইয়াছিল। অনুসন্ধান-সমিতি ক্রমান্বয়ে আপনাদের অনুসন্ধান চালাইতে লাগিলেন।

অবশেষে আগষ্ট মাসে তাঁহারা তাঁহাদের অনুসন্ধানের পূর্ণ বিবরণ সমিতির নিকট উপস্থিত করেন। তাহাতে দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ ও প্রাণকৃষ্ণকে সম্পূর্ণরূপে অব্যাহতি দেওয়া হয়। জানি না, গোলাম আশরফের উক্ত ব্যাপারে দেওয়ানজী ও তাঁহার পুত্র লিপ্ত ছিলেন কি না। অর্থতৃষ্ণায় তাঁহাদিগকে যেরূপ অন্ধ করিয়া রাখিয়াছিল, তাহাতে ঐরূপ ব্যাপার তাঁহাদিগের পক্ষে নিতান্ত অসম্ভব বলিয়াও বোধ হয় না এবং সমিতির অনুসন্ধান ও মন্তব্য যে সম্পূর্ণ নির্দোষ, তাহাই বা কেমন করিয়া বলিতে পারি।

আমরা যে সমিতিকে বরাবর গঙ্গাগোবিন্দের ক্রীড়াপুত্তল স্বরূপ বলিয়া আসিয়াছি, যে সমিতির অনুসন্ধান ও বিচারে তিনি ও তাঁহার পুত্র যে নিষ্কৃতি পাইবেন, তাহারই বৈচিত্র্য কি? গবর্ণর জেনারেল হেষ্টিংসেরও যে ইহাতে কোন ইঙ্গিত থাকিতে না পারে, তাহাই বা কে বলিতে পারে? এই সকল কথা বলিবার কোন বিশেষ কারণ আছে, বলিয়া আমাদিগকে বলিতে হইল।

উক্ত জাল অভিযোগ হইতে নিষ্কৃতি পাইয়া, প্রাণকৃষ্ণ এক মানহানির অভিযোগ উপস্থাপিত করিয়া-ছিলেন। রামচন্দ্র সেন ও গোপী নাজির নামে দুই জন গোলাম আশরফের সহিত ষড়যন্ত্র করিয়া তাঁহার সম্মানহানির জন্য মিথ্যা মোকদ্দমা উপস্থিত করিয়াছে বলিয়া প্রাণকৃষ্ণ এই অভিযোগ উপস্থাপিত করেন। এই স্থলে আমরা রামচন্দ্র সেনের কিঞ্চিৎ পরিচয় প্রদান করিতে ইচ্ছা করিতেছি। রামচন্দ্র সেন বৈদ্যবংশসম্ভূত। তাঁহাদের পূর্ব্ব পুরুষগণের নিবাস কৃষ্ণনগরে ছিল এবং নদীয়ার রাজসরকারে তাঁহারা কাৰ্য্য করিতেন।

 

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩১২)

১১:০০:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫

গোলাম আশরফ উপায়ান্তর না দেখিয়া পুনর্ব্বার সাক্ষীর চেষ্টা দেখিতে লাগিল। ৭ই জুন সে তিন জন সাক্ষী লইয়া যায়। কিন্তু সে সাক্ষীর প্রমাণ গ্রাহ্য না করিয়া, তাঁহারা তাহাদিগকে মিথ্যাসাক্ষী স্থির করিয়া সমিতিকে অবগত করান। সমিতি সরকারী পক্ষের তৎকালীন সর্ব্বপ্রধান কৌন্সিলী সার্জন ডেকে এই সকল মিথ্যাসাক্ষীর দণ্ডবিধানার্থ তাহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উপস্থিত করিতে আদেশ দেন। দুই জন দাওরা সোপর্দ্দদ হয়; তন্মধ্যে একজনকে শান্তি ভোগ করিতে হইয়াছিল। অনুসন্ধান-সমিতি ক্রমান্বয়ে আপনাদের অনুসন্ধান চালাইতে লাগিলেন।

অবশেষে আগষ্ট মাসে তাঁহারা তাঁহাদের অনুসন্ধানের পূর্ণ বিবরণ সমিতির নিকট উপস্থিত করেন। তাহাতে দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ ও প্রাণকৃষ্ণকে সম্পূর্ণরূপে অব্যাহতি দেওয়া হয়। জানি না, গোলাম আশরফের উক্ত ব্যাপারে দেওয়ানজী ও তাঁহার পুত্র লিপ্ত ছিলেন কি না। অর্থতৃষ্ণায় তাঁহাদিগকে যেরূপ অন্ধ করিয়া রাখিয়াছিল, তাহাতে ঐরূপ ব্যাপার তাঁহাদিগের পক্ষে নিতান্ত অসম্ভব বলিয়াও বোধ হয় না এবং সমিতির অনুসন্ধান ও মন্তব্য যে সম্পূর্ণ নির্দোষ, তাহাই বা কেমন করিয়া বলিতে পারি।

আমরা যে সমিতিকে বরাবর গঙ্গাগোবিন্দের ক্রীড়াপুত্তল স্বরূপ বলিয়া আসিয়াছি, যে সমিতির অনুসন্ধান ও বিচারে তিনি ও তাঁহার পুত্র যে নিষ্কৃতি পাইবেন, তাহারই বৈচিত্র্য কি? গবর্ণর জেনারেল হেষ্টিংসেরও যে ইহাতে কোন ইঙ্গিত থাকিতে না পারে, তাহাই বা কে বলিতে পারে? এই সকল কথা বলিবার কোন বিশেষ কারণ আছে, বলিয়া আমাদিগকে বলিতে হইল।

উক্ত জাল অভিযোগ হইতে নিষ্কৃতি পাইয়া, প্রাণকৃষ্ণ এক মানহানির অভিযোগ উপস্থাপিত করিয়া-ছিলেন। রামচন্দ্র সেন ও গোপী নাজির নামে দুই জন গোলাম আশরফের সহিত ষড়যন্ত্র করিয়া তাঁহার সম্মানহানির জন্য মিথ্যা মোকদ্দমা উপস্থিত করিয়াছে বলিয়া প্রাণকৃষ্ণ এই অভিযোগ উপস্থাপিত করেন। এই স্থলে আমরা রামচন্দ্র সেনের কিঞ্চিৎ পরিচয় প্রদান করিতে ইচ্ছা করিতেছি। রামচন্দ্র সেন বৈদ্যবংশসম্ভূত। তাঁহাদের পূর্ব্ব পুরুষগণের নিবাস কৃষ্ণনগরে ছিল এবং নদীয়ার রাজসরকারে তাঁহারা কাৰ্য্য করিতেন।