০২:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩০৭)

দিনাজপুর ও পাটনা ব্যতীত নদীয়া হইতে মা লক্ষ টাকা উৎকোচ লওয়া হইয়াছিল বলিয়া ওয়ারেন হেষ্টিংস অভিযুক্ত হন। নদীয়ারাজের দানপত্রে সম্মতিদানের জন্য এইরূপ উৎকোচ দেওয়া হয় বলিয়া কথিত আছে। এ বিষয়ে আমরা পূর্ব্বে উল্লেখ করিয়াছি যে, নদীয়াধিপ মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র আপনার জ্যেষ্ঠপুত্র রাজা শিবচন্দ্রকে এক দানপত্র দ্বারা সমস্ত জমিদারী দিবার ইচ্ছা করিয়া অন্যান্য পুত্রের বৃত্তির বন্দোবস্ত করেন। তাঁহার কনিষ্ঠা রাণীর গর্ভজাত রাজা শম্ভুচন্দ্র অর্দ্ধাংশ প্রাপ্তির জন্য পিতার দানপত্রের বিরুদ্ধে গঙ্গাগোবিন্দের শরণাপন্ন হন।

রাজা কৃষ্ণচন্দ্র পূর্ব্ব হইতে দেওয়ানজীর মনস্তষ্টির চেষ্টা পাইতেছিলেন; কিন্তু শম্ভুচন্দ্র গঙ্গাগোবিন্দকে পিতার বিরুদ্ধে নানারূপ কথা বলায়, তিনি রাজার উপর একান্ত অসন্তুষ্ট হন এবং গবর্ণর জেনারেলকে রাজার দানপত্রে সম্মতি প্রদান না করিতে অনুরোধ করেন। পরে রাজার দেওয়ান কালীপ্রসাদ মুক্তার মালার দ্বারা হেষ্টিংসপত্নীর মনোরঞ্জন করিয়া রাজার কার্য্য উদ্ধার করেন। কালীপ্রসাদ সে মালার মূল্য ৪০ হাজার মুদ্রা মাত্র হেষ্টিংসপত্নীর নিকট বলিয়াছিলেন।। পরে রাজার কার্য্যোদ্ধারের জন্য তাঁহাকে উপহার প্রদান করেন। উপরোক্ত ঘটনা দেশীয় প্রবাদ।

কিন্তু প্রাচীন কাগজ পত্রে সেই দানপত্রের সম্মতির জন্য ১০০ লক্ষ টাকার উল্লেখ দেখা যায়। হয়ত, মতির মালা দেওয়ার পর, যখন হেষ্টিংস সাহেব দানপত্রে সম্মতিদান করিতে স্বাকৃত হন, তখন কেবলই যে একগাছি মালায় তিনি সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন, এমত বোধ হয় না। তিনি সুযোগ বুঝিয়া, শেষে হয় ত রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নিকট হইতে ১৪ লক্ষ টাকা লইয়া থাকিবেন। কিন্তু যদি দেশীয় প্রবাদ সত্য হয়,, তাহা হইলে এ ক্ষেত্রে হেষ্টিংস দেওয়ানজীর অনুরোধ রক্ষা না করিয়া, রাজার দানপত্রে সম্মতিদান ও রিয়াছিলেন। হেষ্টিংসের অনেকগুলি লোক উৎকোচগ্রহণে নিযুক্ত থাকিত।

যখন যাহার দ্বারা সুবিধা হইত, তখন হেষ্টিংস তাহারই কথায় কর্ণপাত করিতেন; অন্যে আপত্তি করিলে সে কথা গ্রাহ করিতেন না। এ ক্ষেত্রে দেওয়ানজী তাঁহার আয়ের ব্যাঘাত জন্মাইতেছেন জানিয়া, তিনি তাঁহার অনুরোধ রক্ষা করেন নাই এবং মুক্তামালার ঘটনা যদি প্রকৃত হয়, তাহা হইলে স্বীয় প্রিয়তমা পত্নীর মনোরঞ্জন না করিয়া, তিনি কি প্রকারে অন্যের অনুরোধ রক্ষা করিতে পারেন? যাঁহার রূপে মুগ্ধ হইয়া তিনি তাঁহার পূর্ব্বস্বামীকে অর্থপ্রদান করিয়া বিবাহবন্ধন ছিন্ন করিয়া লন, এবং যাঁহার নিকট তিনি মনঃপ্রাণ বিক্রয় করিয়াছিলেন, তাঁহার অনুরোধ যে সর্বাগ্রে রক্ষণীয়, সে বিষয়ে কি কোন সন্দেহ থাকিতে পারে? গঙ্গাগোবিন্দ সহস্রগুণে হিতৈষী বন্ধু হইলেও, এ হেন প্রিয়তমার মনস্কামনা পূর্ণ না করিলে, তাঁহার যে বিষম অনর্থ উপস্থিত হইত!

 

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩০৭)

১১:০০:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

দিনাজপুর ও পাটনা ব্যতীত নদীয়া হইতে মা লক্ষ টাকা উৎকোচ লওয়া হইয়াছিল বলিয়া ওয়ারেন হেষ্টিংস অভিযুক্ত হন। নদীয়ারাজের দানপত্রে সম্মতিদানের জন্য এইরূপ উৎকোচ দেওয়া হয় বলিয়া কথিত আছে। এ বিষয়ে আমরা পূর্ব্বে উল্লেখ করিয়াছি যে, নদীয়াধিপ মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র আপনার জ্যেষ্ঠপুত্র রাজা শিবচন্দ্রকে এক দানপত্র দ্বারা সমস্ত জমিদারী দিবার ইচ্ছা করিয়া অন্যান্য পুত্রের বৃত্তির বন্দোবস্ত করেন। তাঁহার কনিষ্ঠা রাণীর গর্ভজাত রাজা শম্ভুচন্দ্র অর্দ্ধাংশ প্রাপ্তির জন্য পিতার দানপত্রের বিরুদ্ধে গঙ্গাগোবিন্দের শরণাপন্ন হন।

রাজা কৃষ্ণচন্দ্র পূর্ব্ব হইতে দেওয়ানজীর মনস্তষ্টির চেষ্টা পাইতেছিলেন; কিন্তু শম্ভুচন্দ্র গঙ্গাগোবিন্দকে পিতার বিরুদ্ধে নানারূপ কথা বলায়, তিনি রাজার উপর একান্ত অসন্তুষ্ট হন এবং গবর্ণর জেনারেলকে রাজার দানপত্রে সম্মতি প্রদান না করিতে অনুরোধ করেন। পরে রাজার দেওয়ান কালীপ্রসাদ মুক্তার মালার দ্বারা হেষ্টিংসপত্নীর মনোরঞ্জন করিয়া রাজার কার্য্য উদ্ধার করেন। কালীপ্রসাদ সে মালার মূল্য ৪০ হাজার মুদ্রা মাত্র হেষ্টিংসপত্নীর নিকট বলিয়াছিলেন।। পরে রাজার কার্য্যোদ্ধারের জন্য তাঁহাকে উপহার প্রদান করেন। উপরোক্ত ঘটনা দেশীয় প্রবাদ।

কিন্তু প্রাচীন কাগজ পত্রে সেই দানপত্রের সম্মতির জন্য ১০০ লক্ষ টাকার উল্লেখ দেখা যায়। হয়ত, মতির মালা দেওয়ার পর, যখন হেষ্টিংস সাহেব দানপত্রে সম্মতিদান করিতে স্বাকৃত হন, তখন কেবলই যে একগাছি মালায় তিনি সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন, এমত বোধ হয় না। তিনি সুযোগ বুঝিয়া, শেষে হয় ত রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নিকট হইতে ১৪ লক্ষ টাকা লইয়া থাকিবেন। কিন্তু যদি দেশীয় প্রবাদ সত্য হয়,, তাহা হইলে এ ক্ষেত্রে হেষ্টিংস দেওয়ানজীর অনুরোধ রক্ষা না করিয়া, রাজার দানপত্রে সম্মতিদান ও রিয়াছিলেন। হেষ্টিংসের অনেকগুলি লোক উৎকোচগ্রহণে নিযুক্ত থাকিত।

যখন যাহার দ্বারা সুবিধা হইত, তখন হেষ্টিংস তাহারই কথায় কর্ণপাত করিতেন; অন্যে আপত্তি করিলে সে কথা গ্রাহ করিতেন না। এ ক্ষেত্রে দেওয়ানজী তাঁহার আয়ের ব্যাঘাত জন্মাইতেছেন জানিয়া, তিনি তাঁহার অনুরোধ রক্ষা করেন নাই এবং মুক্তামালার ঘটনা যদি প্রকৃত হয়, তাহা হইলে স্বীয় প্রিয়তমা পত্নীর মনোরঞ্জন না করিয়া, তিনি কি প্রকারে অন্যের অনুরোধ রক্ষা করিতে পারেন? যাঁহার রূপে মুগ্ধ হইয়া তিনি তাঁহার পূর্ব্বস্বামীকে অর্থপ্রদান করিয়া বিবাহবন্ধন ছিন্ন করিয়া লন, এবং যাঁহার নিকট তিনি মনঃপ্রাণ বিক্রয় করিয়াছিলেন, তাঁহার অনুরোধ যে সর্বাগ্রে রক্ষণীয়, সে বিষয়ে কি কোন সন্দেহ থাকিতে পারে? গঙ্গাগোবিন্দ সহস্রগুণে হিতৈষী বন্ধু হইলেও, এ হেন প্রিয়তমার মনস্কামনা পূর্ণ না করিলে, তাঁহার যে বিষম অনর্থ উপস্থিত হইত!