০৫:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩১৫)

জনৈক সভ্য ষ্টেবল্ল্স সাহেব গঙ্গাগোবিন্দের বিরুদ্ধে মত দিয়া সালবাড়ী প্রত্যর্পণ করিতে এবং গঙ্গাগোবিন্দ ও প্রাণকৃষ্ণকে পদচ্যুত করিয়া রাজস্ববিভাগের সমস্ত ভার রায়রায়ান রাজা রাজবল্লভের হস্তে অর্পণ করিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁহার প্রস্তাব অগ্রাহ্য হয়। তাহার পরে হেষ্টিংস সাহেব ইংলণ্ডে যাত্রা করেন। গমনকালে গঙ্গাগোবিন্দ জাহাজে স্বীয় প্রভুর সহিত সাক্ষাৎ করিয়াছিলেন।

দুই বন্ধুর বহুকালজাত প্রণয় বিচ্ছিন্ন হওয়ায়, দুই জনে উষ্ণ দীর্ঘ নিঃশ্বাসের সহিত বিদায় গ্রহণ করেন। হেষ্টিংসের পর শান্তিপ্রিয় লর্ড কর্ণওয়ালিস আসিয়া ভারত সিংহাসনে উপবিষ্ট হন। হেষ্টিংস অশান্তির অগ্নিতে ভারতবর্ষ দগ্ধ করিয়াছিলেন, কর্ণওয়ালিস্ তাহাতে শান্তিবারি সেচন করিতে উদ্যোগী হইলেন। বিশেষতঃ বাঙ্গলার বিপন্ন জমিদার ও প্রজাগণ অবিরত যে অর্থশোষণের অগ্নিতে পুড়িয়া মরিতেছিল, তিনি একেবারে তাহা নির্ব্বাপিত করিয়া ফেলিলেন। বাঙ্গলায় তাঁহার বিরাট কীর্ত্তি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত।

এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে তিনি জমিদার ও প্রজা উভয়েরই বিশেষ উপকার করিয়া গিয়াছেন। তিনি গঙ্গাগোবিন্দ প্রভৃতি সকলেরই বিশেষ রূপ পরিচয় পাইয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহারা অনেক দিন হইতে রাজস্ববিভাগের কার্য্য করায়, কর্ণওয়ালিস্ তাঁহাদিগের দ্বারা সাহায্য হইবে বিবেচনায়, গঙ্গা-গোবিন্দকে জমানবিশের পদে নিযুক্ত করেন। তাঁহার সময়ে রায়রায়ান রাজবল্লভ পুনর্ব্বার রাজস্ববিভাগের কর্তা হন; গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ প্রভৃতি তাঁহার অধীন ছিলেন। এইরূপ অবগত হওয়া যায় যে, জমানবিশ ১৭৮৬ খৃঃ অব্দের জুন মাসে রায়রায়ানের নিকট বাঙ্গলা ১১৮৮, ১১৮৯, ১০৯০ এবং ১১৯১ সালের বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার যাবতীয় জমাওয়াশীল বাকি উপস্থাপিত করেন।

সেই জমাওয়াশীলপত্র হইতে জানা যায় যে, তৎকালে কোম্পানীর মোট জমা ১১,১৮,০১,৪০৮০০/৫ ছিল; কিন্তু সে কয় বৎসরে গড়ে ১০,০৯, ২৬,৮১১৪১৫ আদায় হয়। গঙ্গাগোবিন্দ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় বন্দোবস্তকার্য্যে কর্ণওয়ালিসের অনেক সাহায্য করিয়াছিলেন। বঙ্গের রাজস্ব বন্দোবস্তের সর্ব্বপ্রধান কীর্ত্তি হইতেও তিনি বিচ্ছিন্ন নহেন।

 

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩১৫)

১১:০০:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫

জনৈক সভ্য ষ্টেবল্ল্স সাহেব গঙ্গাগোবিন্দের বিরুদ্ধে মত দিয়া সালবাড়ী প্রত্যর্পণ করিতে এবং গঙ্গাগোবিন্দ ও প্রাণকৃষ্ণকে পদচ্যুত করিয়া রাজস্ববিভাগের সমস্ত ভার রায়রায়ান রাজা রাজবল্লভের হস্তে অর্পণ করিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁহার প্রস্তাব অগ্রাহ্য হয়। তাহার পরে হেষ্টিংস সাহেব ইংলণ্ডে যাত্রা করেন। গমনকালে গঙ্গাগোবিন্দ জাহাজে স্বীয় প্রভুর সহিত সাক্ষাৎ করিয়াছিলেন।

দুই বন্ধুর বহুকালজাত প্রণয় বিচ্ছিন্ন হওয়ায়, দুই জনে উষ্ণ দীর্ঘ নিঃশ্বাসের সহিত বিদায় গ্রহণ করেন। হেষ্টিংসের পর শান্তিপ্রিয় লর্ড কর্ণওয়ালিস আসিয়া ভারত সিংহাসনে উপবিষ্ট হন। হেষ্টিংস অশান্তির অগ্নিতে ভারতবর্ষ দগ্ধ করিয়াছিলেন, কর্ণওয়ালিস্ তাহাতে শান্তিবারি সেচন করিতে উদ্যোগী হইলেন। বিশেষতঃ বাঙ্গলার বিপন্ন জমিদার ও প্রজাগণ অবিরত যে অর্থশোষণের অগ্নিতে পুড়িয়া মরিতেছিল, তিনি একেবারে তাহা নির্ব্বাপিত করিয়া ফেলিলেন। বাঙ্গলায় তাঁহার বিরাট কীর্ত্তি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত।

এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে তিনি জমিদার ও প্রজা উভয়েরই বিশেষ উপকার করিয়া গিয়াছেন। তিনি গঙ্গাগোবিন্দ প্রভৃতি সকলেরই বিশেষ রূপ পরিচয় পাইয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহারা অনেক দিন হইতে রাজস্ববিভাগের কার্য্য করায়, কর্ণওয়ালিস্ তাঁহাদিগের দ্বারা সাহায্য হইবে বিবেচনায়, গঙ্গা-গোবিন্দকে জমানবিশের পদে নিযুক্ত করেন। তাঁহার সময়ে রায়রায়ান রাজবল্লভ পুনর্ব্বার রাজস্ববিভাগের কর্তা হন; গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ প্রভৃতি তাঁহার অধীন ছিলেন। এইরূপ অবগত হওয়া যায় যে, জমানবিশ ১৭৮৬ খৃঃ অব্দের জুন মাসে রায়রায়ানের নিকট বাঙ্গলা ১১৮৮, ১১৮৯, ১০৯০ এবং ১১৯১ সালের বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার যাবতীয় জমাওয়াশীল বাকি উপস্থাপিত করেন।

সেই জমাওয়াশীলপত্র হইতে জানা যায় যে, তৎকালে কোম্পানীর মোট জমা ১১,১৮,০১,৪০৮০০/৫ ছিল; কিন্তু সে কয় বৎসরে গড়ে ১০,০৯, ২৬,৮১১৪১৫ আদায় হয়। গঙ্গাগোবিন্দ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় বন্দোবস্তকার্য্যে কর্ণওয়ালিসের অনেক সাহায্য করিয়াছিলেন। বঙ্গের রাজস্ব বন্দোবস্তের সর্ব্বপ্রধান কীর্ত্তি হইতেও তিনি বিচ্ছিন্ন নহেন।