১০:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের পুনরায় ভারতে কার্যক্রম শুরু করায় শক্তিশালী আয়: সাপ্তাহিক লাভে ভারতীয় শেয়ারবাজার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায় ঘোষণার দিনে রাস্তায় অবস্থানের ঘোষণা জামায়াতের ওশেনম্যান থাইল্যান্ড ২০২৫–এ ১০ কিলোমিটার সাঁতার সম্পন্ন করলেন বাংলাদেশি সাঁতারু শেখ জামিল সাভারে ইতিহাস পরিবহনের বাসে অগ্নিসংযোগ ইসলামিক ফ্রন্টের ৯ দফা প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের সংলাপে কাতারে ৮০০ বাংলাদেশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োগ শিক্ষক আন্দোলনে সাউন্ড গ্রেনেডে আহত শিক্ষিকার মৃত্যু পুলিশের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে বড় রদবদল নির্বাচন সামনে রেখে ডিসি নিয়োগে আবারও বিতর্ক গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটের আহ্বান জানাল জামায়াতসহ আট দল

উন্নয়নের নাম সড়ক, উপেক্ষায় শিক্ষা

বাজেট ঘোষণা ও মূল অগ্রাধিকার

২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে বাংলাদেশ সরকার আবারও সবচেয়ে বড় বরাদ্দ দিয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। উন্নয়ন বাজেটের ২৩.৯ শতাংশই রাখা হয়েছে এই খাতে—যা টানা ১৩তম বছরের মতো সর্বোচ্চ।

সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, অবকাঠামো উন্নয়নই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। সড়ক, রেল ও সেতু প্রকল্পে বিনিয়োগকে মনে করা হচ্ছে ব্যবসা, কর্মসংস্থান এবং আঞ্চলিক সংযুক্তির জন্য অপরিহার্য। এই খাতে শুধুমাত্র সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ পেয়েছে ৩৮ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডসহ অন্যান্য সংস্থা।

শিক্ষা খাত: সামান্য বাড়তি বরাদ্দকিন্তু কাঙ্ক্ষিত নয়

শিক্ষা খাতে প্রস্তাবিত বাজেটে মোট বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা—যা সামান্য বাড়লেও মোট বাজেটের মাত্র ১১.৮৮ শতাংশ এবং জিডিপির মাত্র ১.৬৯ শতাংশ। অথচ আন্তর্জাতিকভাবে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়ে থাকে।

এই বরাদ্দের বড় অংশই আবার পরিচালন ব্যয়ের জন্য নির্ধারিত। উন্নয়নমূলক কাজ, যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন, মানোন্নয়ন বা শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার—এসব দিক অনেকটাই উপেক্ষিত রয়ে গেছে।

উন্নয়ন বাজেট ব্যবহারের হারও উদ্বেগজনকভাবে কমে গেছে। ২০১০ অর্থবছরে যেখানে খরচের হার ছিল ১০২ শতাংশ, সেখানে ২০২৩ অর্থবছরে তা নেমে এসেছে মাত্র ৭৯ শতাংশে।

কেন শিক্ষা খাতই হওয়া উচিত মূল অগ্রাধিকার?

শিক্ষা যে কোনো দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের ভিত্তি। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে যেখানে সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ১৮ শতাংশ, সেখানে ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ শতাংশে। তবুও অনেক চ্যালেঞ্জ এখনো বিদ্যমান।

উদাহরণস্বরূপ:

  • শুধুমাত্র ৬৪ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে।
  • ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশও পঠন-পাঠন বা গণিত দক্ষতায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম নয়।

  • কোভিড-১৯ মহামারির আগেই মাত্র ৪৩ শতাংশ ১০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ছিল পাঠে দক্ষ, এবং মাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীদের মাত্র ২৫ শতাংশই ছিল মৌলিক দক্ষতায় পারদর্শী।

শিক্ষকের সংকটও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে দেশের শিক্ষকদের মধ্যে প্রশিক্ষিত মাত্র ৭৪ শতাংশ, যেখানে প্রতিবেশী অনেক দেশের চিত্র আরও ভালো।

ভারসাম্যহীনতার খেসারত দিতে হতে পারে ভবিষ্যতে

অবকাঠামো উন্নয়ন নিঃসন্দেহে জরুরি, তবে বারবার শিক্ষাকে উপেক্ষা করার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। দীর্ঘমেয়াদে জনসংখ্যাকে দক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী ও কার্যকর বিনিয়োগ শিক্ষা খাতে।

একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট বিন্যাস—যেখানে শিক্ষা ও অবকাঠামোর মধ্যে যুক্তিযুক্ত সমতা থাকবে—হয়তোই পারে ভবিষ্যতের একটি আত্মনির্ভর, সাম্যভিত্তিক ও উন্নত বাংলাদেশের ভিত্তি রচনা করতে।

শিক্ষায় অগ্রাধিকার মানেই কেবল শিশুদের ভবিষ্যৎ নয়, জাতির ভবিষ্যতের বিনিয়োগ।

জনপ্রিয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রের পুনরায় ভারতে কার্যক্রম শুরু করায় শক্তিশালী আয়: সাপ্তাহিক লাভে ভারতীয় শেয়ারবাজার

উন্নয়নের নাম সড়ক, উপেক্ষায় শিক্ষা

০৫:৫৫:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

বাজেট ঘোষণা ও মূল অগ্রাধিকার

২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে বাংলাদেশ সরকার আবারও সবচেয়ে বড় বরাদ্দ দিয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। উন্নয়ন বাজেটের ২৩.৯ শতাংশই রাখা হয়েছে এই খাতে—যা টানা ১৩তম বছরের মতো সর্বোচ্চ।

সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, অবকাঠামো উন্নয়নই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। সড়ক, রেল ও সেতু প্রকল্পে বিনিয়োগকে মনে করা হচ্ছে ব্যবসা, কর্মসংস্থান এবং আঞ্চলিক সংযুক্তির জন্য অপরিহার্য। এই খাতে শুধুমাত্র সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ পেয়েছে ৩৮ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডসহ অন্যান্য সংস্থা।

শিক্ষা খাত: সামান্য বাড়তি বরাদ্দকিন্তু কাঙ্ক্ষিত নয়

শিক্ষা খাতে প্রস্তাবিত বাজেটে মোট বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা—যা সামান্য বাড়লেও মোট বাজেটের মাত্র ১১.৮৮ শতাংশ এবং জিডিপির মাত্র ১.৬৯ শতাংশ। অথচ আন্তর্জাতিকভাবে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়ে থাকে।

এই বরাদ্দের বড় অংশই আবার পরিচালন ব্যয়ের জন্য নির্ধারিত। উন্নয়নমূলক কাজ, যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন, মানোন্নয়ন বা শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার—এসব দিক অনেকটাই উপেক্ষিত রয়ে গেছে।

উন্নয়ন বাজেট ব্যবহারের হারও উদ্বেগজনকভাবে কমে গেছে। ২০১০ অর্থবছরে যেখানে খরচের হার ছিল ১০২ শতাংশ, সেখানে ২০২৩ অর্থবছরে তা নেমে এসেছে মাত্র ৭৯ শতাংশে।

কেন শিক্ষা খাতই হওয়া উচিত মূল অগ্রাধিকার?

শিক্ষা যে কোনো দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের ভিত্তি। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে যেখানে সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ১৮ শতাংশ, সেখানে ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ শতাংশে। তবুও অনেক চ্যালেঞ্জ এখনো বিদ্যমান।

উদাহরণস্বরূপ:

  • শুধুমাত্র ৬৪ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে।
  • ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশও পঠন-পাঠন বা গণিত দক্ষতায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম নয়।

  • কোভিড-১৯ মহামারির আগেই মাত্র ৪৩ শতাংশ ১০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ছিল পাঠে দক্ষ, এবং মাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীদের মাত্র ২৫ শতাংশই ছিল মৌলিক দক্ষতায় পারদর্শী।

শিক্ষকের সংকটও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে দেশের শিক্ষকদের মধ্যে প্রশিক্ষিত মাত্র ৭৪ শতাংশ, যেখানে প্রতিবেশী অনেক দেশের চিত্র আরও ভালো।

ভারসাম্যহীনতার খেসারত দিতে হতে পারে ভবিষ্যতে

অবকাঠামো উন্নয়ন নিঃসন্দেহে জরুরি, তবে বারবার শিক্ষাকে উপেক্ষা করার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। দীর্ঘমেয়াদে জনসংখ্যাকে দক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী ও কার্যকর বিনিয়োগ শিক্ষা খাতে।

একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট বিন্যাস—যেখানে শিক্ষা ও অবকাঠামোর মধ্যে যুক্তিযুক্ত সমতা থাকবে—হয়তোই পারে ভবিষ্যতের একটি আত্মনির্ভর, সাম্যভিত্তিক ও উন্নত বাংলাদেশের ভিত্তি রচনা করতে।

শিক্ষায় অগ্রাধিকার মানেই কেবল শিশুদের ভবিষ্যৎ নয়, জাতির ভবিষ্যতের বিনিয়োগ।