দেশে খাদ্যনালির ক্যানসার ভয়াবহভাবেই বাড়ছে। নারী-পুরুষ সমানভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন এই রোগে। পাকস্থলী ক্যান্সার, যা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার নামেও পরিচিত, এটি এক ধরনের ক্যান্সার যা পেটের আস্তরণের কোষে শুরু হয়। এটি প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এর হয়েথাকে। যদিও গত কয়েক দশক ধরে পাকস্থলীর ক্যান্সারের প্রকোপ কমছে, তবুও এটি গুরুতর যা চিকিৎসা না করা হলে জীবন-হুমকি হতে পারে।
> খাদ্যনালির ক্যানসার কী ও কেন হয়- পরিপাকতন্ত্রের যে অংশ গলা থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে, যা নলের মতো, সেটিকে খাদ্যনালি বলে। খাদ্যনালির প্রধান কাজ হচ্ছে খাবার ও তরল মুখ থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া।
খাদ্যনালিতে যেসব টিউমার হয় তার মধ্যে ক্যানসারযুক্ত টিউমার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ক্যানসারযুক্ত টিউমার হলো ম্যালিগন্যান্ট টিউমার যা অপ্রতিরোধ্য এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পায় এবং এক সময় খাদ্যনালির বাইরেও ছড়িয়ে যেতে পারে। খাদ্যনালির আশপাশের অঙ্গ এমনকি দূরর্বতী অঙ্গেও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ছড়িয়ে যেতে পারে। আর সারা বিশ্বে তথা বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া সাধারণ ক্যানসারগুলোর মধ্যে একটি হলো খাদ্যনালির ক্যানসার বা ইসোফেগাল ক্যানসার। বাংলাদেশে নারী ও পুরুষ সব মিলিয়ে সবার মধ্যে এই ক্যানসার রয়েছে শুরুর দিকে।খাদ্যনালির ক্যানসার কেন হয় তার সঠিক কারণ জানা না গেলেও ক্যানসার হওয়ার পেছনে কিছু কারণকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেমন-
১. অপুষ্টি ও ভিটামিনের অভাব খাদ্যনালির ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষ করে ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব।
২. নাইট্রোসামাইন নামক উপাদান যা তামাকে থাকে, অন্যান্য অনেক খাবারেও থাকে। নাইট্রোসামাইন বেশি আছে এমন খাবার খাওয়ার কারণে খাদ্যনালির ক্যানসার হতে পারে।
৩. সবসময় গরম চা, গরম কফি, গরম পানীয় পান করার অভ্যাস খাদ্যনালির ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. ধূমপান, তামাকজাত দ্রব্য সেবন, মদ্যপান খাদ্যনালির ক্যানসারের অন্যতম কারণ। পান, সানফ্লাওয়ার সিড যারা বেশি পরিমাণে খান তাদেরও ঝুঁকি বেশি।
৫. কিছু কিছু রোগ আছে যেগুলোর কারণে খাদ্যনালির ক্যানসার বেশি হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো অ্যাকালাসিয়া কার্ডিয়া নামক রোগ। যার কারণে খাদ্যনালির নিচের অংশ ঠিকভাবে প্রসারিত হতে পারে না, ফলে খাবার সহজে পাকস্থলীতে যেতে পারে না। দীর্ঘদিন এই রোগ থাকলে খাদ্যনালির ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৬. এছাড়া গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ, যার কারণে পাকস্থলীর অ্যাসিড বারবার খাদ্যনালিতে উঠে আসে এবং জ্বালাপোড়া ও প্রদাহ সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন এই রোগখাদ্যনালির ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৭. কোনো কারণে যদি খাদ্যনালিতে ক্ষত হয়, যেমন- ভুলবশত বিভিন্ন রাসায়নিক, অ্যাসিড জাতীয় দ্রব্য পান করলে খাদ্যনালী সরু হয়ে যায়। পরে চিকিৎসা না করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
৮. বয়স্কদের মধ্যে খাদ্যনালির ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

> পাকস্থলীর ক্যান্সারের কারণ- পাকস্থলীর ক্যান্সারের সঠিক কারণ অজানা, তবে কিছু কারণ আপনার রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
* বয়স: ৫০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে পেটের ক্যান্সার বেশি দেখা যায়।
* লিঙ্গ: মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের পেট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
* খাদ্য: নোনতা এবং ধূমপান যুক্ত খাবার, আচার যুক্ত শাকসবজি এবং কম ফলমূল এবং শাকসবজি যুক্ত খাবার আপনার পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
* হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি সংক্রমণ: এই ব্যাকটেরিয়া টি অনেক লোকের পেটে পাওয়া যায় এবং এটি পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
* জেনেটিক্স: যদি আপনার পাকস্থলীর ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তাহলে আপনার এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি হতে পারে।
> লক্ষণ-
১. খাবার গিলতে সমস্যা হওয়া। খাবার গলায় বা বুকে আটকে যাবে। নিচে নামতে পারবে না।
২. প্রথম দিকে শক্ত খাবার গিলতে অসুবিধা হবে, ধীরে ধীরে তরল খাবার গিলতে অসুবিধা হবে।
৩. স্বাভাবিক অবস্থায় ঢোক গিলতে কষ্ট হয় না, কিন্তু খাদ্যনালির ক্যানসারে ঢোক গিলতে ব্যথা হতে পারে।
৪. খাদ্যনালির ক্যানসার অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে ব্যথা হতে পারে, যেমন- লিভারে ছড়ালে পেটের ডানদিকে ব্যথা, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, জন্ডিস হওয়া। মস্তিষ্কে ছড়ালে মাথা ব্যথা, বমি ও খিঁচুনির উপসর্গ দেখা দিবে।
৫. খাবার সঠিকভাবে নিচের দিকে নামতে না পারলে জমে থেকে তা শ্বাসনালীতে চলে আসতে পারে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, কাশি ও জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ পায়।

> পেট ক্যান্সার প্রতিরোধ-
*একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়া যাতে প্রচুর ফল এবং শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত থাকে
* আপনার ধূমপান করা এবং আচার যুক্ত খাবারের পাশাপাশি নোনতা খাবার খাওয়া সীমিত করুন
* ধূমপান ত্যাগ
* হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি সংক্রমণের জন্য স্ক্রীন করা হচ্ছে
* আপনার সার্বিক স্বাস্থ্য নিরীক্ষণের জন্য আপনার ডাক্তারের সাথে নিয়মিত চেকআপ করা।
পরিশেষে বলতে চাই , পেটের ক্যান্সার একটি গুরুতর অবস্থা যার জন্য দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। আপনি যদি পাকস্থলীর ক্যান্সারের সাথে যুক্ত কোন উপসর্গ অনুভব করেন, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক, চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি