০১:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

পুরনো সংঘাত, নতুন ফ্রন্ট

ইসরায়েলি হামলা ঘটে দুইটি পরস্পরসংযুক্ত প্রেক্ষাপটে: প্রথমতওমান ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবনের আলোচনা আয়োজন করছেযেটি ট্রাম্প প্রশাসন থেকে সরে গিয়েছিল। দ্বিতীয়তসাম্প্রতিক দিনে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ইরানের অ-প্রসারণ অঙ্গীকার অমান্য করা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

কয়েক সপ্তাহের কৌশলগত চাপ ও অনিশ্চয়তার পরইসরায়েল শেষ পর্যন্ত রুবিকন পার হয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের একাধিক কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযান ১৯৬৭ সালের জুনের যুদ্ধের পর কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সবচেয়ে নাটকীয়বিস্তৃত ও বৃহত্তম সামরিক পদক্ষেপ।

১৯৭৯ সালে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুই দেশ পরস্পরের প্রতিপক্ষতবে সাম্প্রতিক হামলা উত্তাপকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। তেহরানের ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো প্রকার সম্পর্ককে অসম্ভবই করে তোলে। কয়েক দশক ধরে ইরান আঞ্চলিক প্রক্সি গড়ে তুলেছেস্বল্প ব্যয়েতীব্র সামরিক বিকল্প হিসেবে। ফিলিস্তিনে হামাসলেবাননে হিজবুল্লাহইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহী ও ইরাকে পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেস এদের মধ্যে প্রধানযারা সবাই ইসরায়েলকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে গঠিত বা প্রশ্রয় পেয়েছে। প্রক্সি কৌশল সস্তাআবার অস্বীকার করার সুযোগও রাখে।

এসব গোষ্ঠীর কার্যক্রমে ইসরায়েলকে ব্যস্ত রাখতে পারলেও ইরান সরাসরি ইসরায়েলি প্রতিশোধ এড়াতে পেরেছে। এই প্রক্সি যুদ্ধের মাধ্যমে তেহরান তার প্রভাব পারস্য উপসাগরের আশপাশ ছাড়িয়ে ভূমধ্যসাগরলোহিত সাগর ও আরব সাগরের উত্তর উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে।

দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল কৌশলগত সংকটে ছিল। নিয়মিত সামরিক প্রতিক্রিয়া সাময়িক স্বস্তি দিলেও সহিংসতার চক্র থামেনি। গাজায় দীর্ঘস্থায়ী স্থল ও আকাশ হামলাআন্তর্জাতিক সমালোচনাকে উপেক্ষা করেওহামাসকে পরাজিত করতে পারেনি। হামাস এখনো গাজায় সক্রিয়সীমিত আকারে হলেও লেবাননে হিজবুল্লাহও টিকে আছে। সানা বিমানবন্দরসহ অবকাঠামো ধ্বংস করেও হুথিদের যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করা যায়নি। হামাস ইরানের বাইরে ভিত্তি রাখলেও অন্যগুলোইরাকের পিএমএফসহইরানের ওপরই নির্ভরশীল। এসব গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা ইরানের বৃহত্তর স্বার্থের সঙ্গে যায় না।

ধৈর্য হারিয়ে ইসরায়েল এখন এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর রাজনৈতিক বৈধতাসমর্থন ও অস্ত্রভান্ডারের উৎসকে নিশানা করছে। ইসরায়েলের মতেতেহরানকেন্দ্রিক অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্সকে ইরানকে সরাসরি মোকাবিলা না করে পরাজিত করা সম্ভব নয়। ২০২৪ সালের এপ্রিল ও অক্টোবরের সরাসরি সংঘর্ষ পরিস্থিতি বদলায়নিউভয় দেশই জয়’ দাবি করলেও সংঘাত আঞ্চলিকভাবে ইসরায়েলের প্রতি নীরব সমর্থন প্রকাশ করেছে।

বিষম শোনালেওইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনিকেই ইসরায়েল ও কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে আব্রাহাম চুক্তির সূতিকর্তা বলা যায়। তেহরান থেকে উদ্ভূত হুমকি উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোকেসৌদি আরবের নীরব সমর্থনেইসরায়েলের প্রতি আগের বৈরিতা ভুলতে ও ফিলিস্তিন ইস্যু পাশ কাটিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বাধ্য করেছে। তেহরানের আগ্রাসী অবস্থানই ট্রাম্পের কূটনৈতিক জৌলুসকে ছাপিয়ে সুন্নি আরব দেশগুলোকে ইসরায়েলের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। এই সমঝোতা ৭ অক্টোবরের হামলার পর ২০ মাসের গাজা সঙ্কটেও টিকে আছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেনশুক্রবার ভোরে ২০০টি যুদ্ধবিমান ৩০০ রকম গোলাবারুদ দিয়ে ইরানের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এর মধ্যে রয়েছে একাধিক সামরিক ও ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এবং নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনাসহ শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সদরদপ্তর। কিছু হামলা ইরানের ভেতর থেকেই স্থলভিত্তিকভাবে চালানো হয়েছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা একে অস্তিত্ব রক্ষার’ যুদ্ধ বলে বর্ণনা করে বলেছেনলক্ষ্য পরমাণু হুমকি ধ্বংসব্যাহত এবং সরিয়ে ফেলা।

অতীতে ইসরায়েল ১৯৮১ সালের ৭ জুন বাগদাদের উপকণ্ঠে ওসিরাক রিঅ্যাক্টরে সফল হামলা চালিয়েছিল২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে সিরিয়ার দেইর আল-জোরেও অনুরূপ অস্ত্রাগার ধ্বংস করে। কিন্তু ইরান ভিন্ন বিষয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বছরের পর বছর ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সম্ভাব্য ইসরায়েলি অভিযানের আলোচনা করায় চমক’ নামের অপারেশনের সংকটপদ উপাদানটি আর নেই। সম্ভাব্য হামলা আঁচ করে ইরান ইতোমধ্যে পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সুরক্ষিত করেছে।

ইসরায়েলি অভিযানটি এমন সময়যখন ওমান ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে এবং আইএইএ ইরানের দায়বদ্ধতা লঙ্ঘনে অসন্তোষ জানিয়েছে। এই হামলা ইরান-সংকটে যে কোনো তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক নিষ্পত্তির পথ বন্ধ করে দিল।

প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা গেছেইরান নিহত কিছু শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার স্থলাভিষিক্ত করেছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইরান ড্রোনের ঢেউ পাঠিয়ে ইসরায়েলে প্রতিশোধ নিয়েছেকিছু ড্রোন জর্ডানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় সেখানেই গুলি করে নামানো হয়। গত এপ্রিলেও ইরাকলেবানন ও ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত প্রক্সিদের ছোড়া আকাশযান ভূপাতিত করতে পশ্চিমা ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো একত্র হয়েছিল। এবারও কি তাই হবে?

প্রক্সি নয়এবার ইসরায়েল আশ্রয়দাতাকেই নিশানা করেছে। এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এটি অভিযান নয়যুদ্ধ।’ মধ্যস্থতার মতো দক্ষ ও ইচ্ছুক কোনো আন্তর্জাতিক শক্তি অনুপস্থিত থাকায় সংঘর্ষ হয়তো চলবে এবং তীব্র হবে। এত দিনে ইসরায়েল দেখিয়ে দিয়েছেসে একা কাজ করতে সক্ষমপ্রস্তুত এবং প্রতিজ্ঞ। ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ গোয়েন্দা ব্যর্থতার পর এবার ইসরায়েলি গোয়েন্দারা ইরানের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য তুলে ধরতে পেরেছে।

উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইরান ও ইসরায়েলের মানুষ পতাকার নিচে সমবেত হয়ে নিজ নিজ জয়ের’ প্রত্যাশা করবে। কিন্তু কথা যত সহজকাজ তত নয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংঘাতের সোনার সূত্র একই: যুদ্ধ শুরু করতে জানোকিন্তু শেষ কোথায় হবে জানা নেই। চলমান সংঘাতও এর ব্যতিক্রম হবে না।

লেখক জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে সমসাময়িক মধ্যপ্রাচ্য বিষয় পড়ান।

 

পুরনো সংঘাত, নতুন ফ্রন্ট

০৮:০০:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

ইসরায়েলি হামলা ঘটে দুইটি পরস্পরসংযুক্ত প্রেক্ষাপটে: প্রথমতওমান ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবনের আলোচনা আয়োজন করছেযেটি ট্রাম্প প্রশাসন থেকে সরে গিয়েছিল। দ্বিতীয়তসাম্প্রতিক দিনে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ইরানের অ-প্রসারণ অঙ্গীকার অমান্য করা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

কয়েক সপ্তাহের কৌশলগত চাপ ও অনিশ্চয়তার পরইসরায়েল শেষ পর্যন্ত রুবিকন পার হয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের একাধিক কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযান ১৯৬৭ সালের জুনের যুদ্ধের পর কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সবচেয়ে নাটকীয়বিস্তৃত ও বৃহত্তম সামরিক পদক্ষেপ।

১৯৭৯ সালে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুই দেশ পরস্পরের প্রতিপক্ষতবে সাম্প্রতিক হামলা উত্তাপকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। তেহরানের ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো প্রকার সম্পর্ককে অসম্ভবই করে তোলে। কয়েক দশক ধরে ইরান আঞ্চলিক প্রক্সি গড়ে তুলেছেস্বল্প ব্যয়েতীব্র সামরিক বিকল্প হিসেবে। ফিলিস্তিনে হামাসলেবাননে হিজবুল্লাহইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহী ও ইরাকে পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেস এদের মধ্যে প্রধানযারা সবাই ইসরায়েলকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে গঠিত বা প্রশ্রয় পেয়েছে। প্রক্সি কৌশল সস্তাআবার অস্বীকার করার সুযোগও রাখে।

এসব গোষ্ঠীর কার্যক্রমে ইসরায়েলকে ব্যস্ত রাখতে পারলেও ইরান সরাসরি ইসরায়েলি প্রতিশোধ এড়াতে পেরেছে। এই প্রক্সি যুদ্ধের মাধ্যমে তেহরান তার প্রভাব পারস্য উপসাগরের আশপাশ ছাড়িয়ে ভূমধ্যসাগরলোহিত সাগর ও আরব সাগরের উত্তর উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে।

দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল কৌশলগত সংকটে ছিল। নিয়মিত সামরিক প্রতিক্রিয়া সাময়িক স্বস্তি দিলেও সহিংসতার চক্র থামেনি। গাজায় দীর্ঘস্থায়ী স্থল ও আকাশ হামলাআন্তর্জাতিক সমালোচনাকে উপেক্ষা করেওহামাসকে পরাজিত করতে পারেনি। হামাস এখনো গাজায় সক্রিয়সীমিত আকারে হলেও লেবাননে হিজবুল্লাহও টিকে আছে। সানা বিমানবন্দরসহ অবকাঠামো ধ্বংস করেও হুথিদের যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করা যায়নি। হামাস ইরানের বাইরে ভিত্তি রাখলেও অন্যগুলোইরাকের পিএমএফসহইরানের ওপরই নির্ভরশীল। এসব গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা ইরানের বৃহত্তর স্বার্থের সঙ্গে যায় না।

ধৈর্য হারিয়ে ইসরায়েল এখন এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর রাজনৈতিক বৈধতাসমর্থন ও অস্ত্রভান্ডারের উৎসকে নিশানা করছে। ইসরায়েলের মতেতেহরানকেন্দ্রিক অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্সকে ইরানকে সরাসরি মোকাবিলা না করে পরাজিত করা সম্ভব নয়। ২০২৪ সালের এপ্রিল ও অক্টোবরের সরাসরি সংঘর্ষ পরিস্থিতি বদলায়নিউভয় দেশই জয়’ দাবি করলেও সংঘাত আঞ্চলিকভাবে ইসরায়েলের প্রতি নীরব সমর্থন প্রকাশ করেছে।

বিষম শোনালেওইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনিকেই ইসরায়েল ও কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে আব্রাহাম চুক্তির সূতিকর্তা বলা যায়। তেহরান থেকে উদ্ভূত হুমকি উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোকেসৌদি আরবের নীরব সমর্থনেইসরায়েলের প্রতি আগের বৈরিতা ভুলতে ও ফিলিস্তিন ইস্যু পাশ কাটিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বাধ্য করেছে। তেহরানের আগ্রাসী অবস্থানই ট্রাম্পের কূটনৈতিক জৌলুসকে ছাপিয়ে সুন্নি আরব দেশগুলোকে ইসরায়েলের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। এই সমঝোতা ৭ অক্টোবরের হামলার পর ২০ মাসের গাজা সঙ্কটেও টিকে আছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেনশুক্রবার ভোরে ২০০টি যুদ্ধবিমান ৩০০ রকম গোলাবারুদ দিয়ে ইরানের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এর মধ্যে রয়েছে একাধিক সামরিক ও ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এবং নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনাসহ শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সদরদপ্তর। কিছু হামলা ইরানের ভেতর থেকেই স্থলভিত্তিকভাবে চালানো হয়েছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা একে অস্তিত্ব রক্ষার’ যুদ্ধ বলে বর্ণনা করে বলেছেনলক্ষ্য পরমাণু হুমকি ধ্বংসব্যাহত এবং সরিয়ে ফেলা।

অতীতে ইসরায়েল ১৯৮১ সালের ৭ জুন বাগদাদের উপকণ্ঠে ওসিরাক রিঅ্যাক্টরে সফল হামলা চালিয়েছিল২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে সিরিয়ার দেইর আল-জোরেও অনুরূপ অস্ত্রাগার ধ্বংস করে। কিন্তু ইরান ভিন্ন বিষয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বছরের পর বছর ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সম্ভাব্য ইসরায়েলি অভিযানের আলোচনা করায় চমক’ নামের অপারেশনের সংকটপদ উপাদানটি আর নেই। সম্ভাব্য হামলা আঁচ করে ইরান ইতোমধ্যে পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সুরক্ষিত করেছে।

ইসরায়েলি অভিযানটি এমন সময়যখন ওমান ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে এবং আইএইএ ইরানের দায়বদ্ধতা লঙ্ঘনে অসন্তোষ জানিয়েছে। এই হামলা ইরান-সংকটে যে কোনো তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক নিষ্পত্তির পথ বন্ধ করে দিল।

প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা গেছেইরান নিহত কিছু শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার স্থলাভিষিক্ত করেছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইরান ড্রোনের ঢেউ পাঠিয়ে ইসরায়েলে প্রতিশোধ নিয়েছেকিছু ড্রোন জর্ডানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় সেখানেই গুলি করে নামানো হয়। গত এপ্রিলেও ইরাকলেবানন ও ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত প্রক্সিদের ছোড়া আকাশযান ভূপাতিত করতে পশ্চিমা ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো একত্র হয়েছিল। এবারও কি তাই হবে?

প্রক্সি নয়এবার ইসরায়েল আশ্রয়দাতাকেই নিশানা করেছে। এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এটি অভিযান নয়যুদ্ধ।’ মধ্যস্থতার মতো দক্ষ ও ইচ্ছুক কোনো আন্তর্জাতিক শক্তি অনুপস্থিত থাকায় সংঘর্ষ হয়তো চলবে এবং তীব্র হবে। এত দিনে ইসরায়েল দেখিয়ে দিয়েছেসে একা কাজ করতে সক্ষমপ্রস্তুত এবং প্রতিজ্ঞ। ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ গোয়েন্দা ব্যর্থতার পর এবার ইসরায়েলি গোয়েন্দারা ইরানের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য তুলে ধরতে পেরেছে।

উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইরান ও ইসরায়েলের মানুষ পতাকার নিচে সমবেত হয়ে নিজ নিজ জয়ের’ প্রত্যাশা করবে। কিন্তু কথা যত সহজকাজ তত নয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংঘাতের সোনার সূত্র একই: যুদ্ধ শুরু করতে জানোকিন্তু শেষ কোথায় হবে জানা নেই। চলমান সংঘাতও এর ব্যতিক্রম হবে না।

লেখক জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে সমসাময়িক মধ্যপ্রাচ্য বিষয় পড়ান।