০৯:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
৫৪০ কোটি টাকার ‘মাদক অর্থ’ পাচারে অভিযুক্ত বিক্রম সিং মজিঠিয়া উনসানে সমুদ্র সৈকতের রিসোর্ট উদ্বোধন: পর্যটনে বাজি ধরছে উত্তর কোরিয়া ওএমএস ও টিসিবি ডিলার নিয়োগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের আহ্বান এসএসসি টেস্টের দুই দিনে শ্রীলঙ্কার রাজত্ব রাসেল ভাইপারের হুমকি: শহরেও ঢুকছে বিপজ্জনক সাপ! মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতি: মহাকাশে পাঠানো হলো গাঁজা গাছের বীজ ২০২৫ সালের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ আইসল্যান্ড, শীর্ষ দশে সিঙ্গাপুর নৌকার বাংলাদেশ: জেলা-জেলা ঘিরে এক ইতিহাস ও সংস্কৃতি ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট বা পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কী? কীভাবে এটি করা হয়? নেতানিয়াহুর বিচার বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের

আলঝেইমারস্‌ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরবর্তী ধাপ

  • বিল গেটস
  • ০৬:২০:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
  • 71

আশার কারণ

গত কয়েক বছরে আমরা আলঝেইমারস্‌ রোগ সম্পর্কে যা শিখেছি, তাতে আমি অভিভূত।

বাবাকে ছাড়া আরেকটি ফাদারস ডে

বাবা ছাড়া ফাদারস ডে কখনোই সহজ হয়ে ওঠে না। যদিও প্রতিদিনই আমি তাঁকে মনে করি, বছরের এই সময়টায় তাঁকে আরও বেশি করে মনে পড়ে।

আমার বাবা ছিলেন এক বিশাল ব্যক্তিত্ব। গেটস ফাউন্ডেশনের মূল্যবোধ গঠনে তাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি। আমরা যা কিছু অর্জন করেছি, তার সবই এক উন্নত বিশ্বের তাঁর স্বপ্নের প্রতিফলন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, পাঁচ বছর আগে আমরা তাঁকে আলঝেইমারস্‌ রোগে হারাই। সেই অভিজ্ঞতা ছিল নির্মম—নিজ চোখে দেখা যে কীভাবে আমার প্রতিভাবান, ভালোবাসাপূর্ণ বাবা ধীরে ধীরে মুছে গেলেন।

তাঁর মৃত্যুর পর আমি আরও অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা করেছি, যাঁদের প্রিয়জনও একইরকম দুর্ভোগ পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ৭ মিলিয়নের বেশি মানুষ আলঝেইমারস্‌ রোগে আক্রান্ত। অর্থাৎ প্রতি ৯ জন ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে একজন এই রোগে ভুগছেন। মানুষের গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।

তবে আশার কথা হলো—আমরা আলঝেইমারস্‌ এবং অন্যান্য স্মৃতিভ্রংশ সংক্রান্ত রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।

ইন্ডিয়ানার অভিজ্ঞতা: গবেষণায় অগ্রগতি

গত বছর ইন্ডিয়ানা সফরে আমি এই অগ্রগতির কিছু দেখতে পাই। ইন্ডিয়ানাপলিসে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে আমি তাদের অসাধারণ স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের সঙ্গে পরিচিত হই এবং তাদের বায়োমার্কার ল্যাব ঘুরে দেখি। সেখানে এমন কিছু স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র দেখেছি, যেগুলো ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হবে। এটি ছিল অত্যন্ত রোমাঞ্চকর।

এই সফরের সময় আমি যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শিখেছি তা হলো—রক্তভিত্তিক আলঝেইমারস্‌ পরীক্ষার অগ্রগতি। অনেক সংস্থা এই পরীক্ষার উন্নয়নে কাজ করছে, এবং মূলভাবে প্রতিটি পদ্ধতিই মস্তিষ্কে অ্যামাইলয়েড প্লাকের অনুপাত শনাক্ত করে কাজ করে। আমি মনে করি এই রক্ত পরীক্ষাগুলো ভবিষ্যতে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেবে। যুক্তরাষ্ট্রে গত মাসে একটি বিশাল অগ্রগতি হয়েছে—এফডিএ ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের জন্য প্রথম রক্তভিত্তিক আলঝেইমারস্‌ পরীক্ষা অনুমোদন দিয়েছে।

রোগ নির্ধারণের উপযোগিতা

আলঝেইমারস্‌ আগে কেবল PET স্ক্যান বা স্পাইনাল ট্যাপের মাধ্যমে নির্ধারণ করা যেত, যা সাধারণত শুধুমাত্র লক্ষণ স্পষ্ট হলে ডাক্তাররা করাতেন। অথচ এখন জানা গেছে যে, রোগটি লক্ষণ দেখা দেওয়ার ১৫–২০ বছর আগেই শুরু হয়। তাই একটি সহজ, সঠিক, এবং রুটিনে চালানো যায় এমন রক্ত পরীক্ষা একদিন আমাদের রোগ নির্ধারণ পদ্ধতিকে বদলে দিতে পারে—যেখানে আমরা রোগীর মস্তিষ্কের অবক্ষয় শুরু হওয়ার আগেই শনাক্ত করতে পারব।

মানুষ যখন আমার সঙ্গে এই নতুন পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে কথা বলেন, তখন প্রায়ই জিজ্ঞাসা করেন, “যদি চিকিৎসা না থাকে, তাহলে জেনে কী লাভ?”

এটা একেবারে যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন—কিন্তু শিগগিরই এই প্রশ্নটি আর প্রাসঙ্গিক থাকবে না। কারণ, এফডিএ ইতোমধ্যেই আলঝেইমারস্‌ চিকিৎসার জন্য দুটি ওষুধ অনুমোদন দিয়েছে। এগুলো প্রমাণ করেছে যে রোগের গতি কিছুটা হলেও ধীর করে। কিন্তু আমি যা নিয়ে সবচেয়ে আশাবাদী, তা হলো এই ওষুধগুলো যদি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহার করা যায়, তাহলে তাদের প্রভাব অনেক বেশি হতে পারে।

সম্ভাবনার পথে নতুন চিকিৎসা

ইন্ডিয়ানায় আমার সফরের মূল উপলব্ধি ছিল এই যে, এই ওষুধগুলো যদি রোগের শুরুতেই ব্যবহার করা হয়, তাহলে তার প্রভাব অনেক গভীর ও ফলপ্রসূ হবে। বর্তমানে রোগের লক্ষণ শুরু হওয়ার আগেই এই ওষুধগুলো কতটা কার্যকর, তা যাচাই করতে Phase III ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। এই ট্রায়ালের ফলাফল আমরা ২০২৬ সাল নাগাদ পেতে পারি। ততদিন পর্যন্ত, এই ওষুধগুলো কেবল তাদেরই সাহায্য করতে পারবে, যাঁরা ইতোমধ্যেই স্মৃতিভ্রংশে আক্রান্ত।

আমি আশা করি, গবেষকেরা এই ওষুধগুলো আরও উন্নত করবেন এবং নতুন ওষুধও উদ্ভাবন করবেন। তবে এর জন্য প্রচুর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাতে হবে। একটি সাধারণ ডায়াগনস্টিক টেস্ট ছাড়া উপযুক্ত রোগী খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে একজন রোগী খুঁজে পেতেই তিন বছর লেগে যায়। আমি বিশ্বাস করি, নতুন রক্তভিত্তিক পরীক্ষাগুলো এই সময় এক বছরের নিচে নামিয়ে আনবে।

গবেষণার অর্থায়ন জরুরি

এই সব অগ্রগতি নির্ভর করছে গবেষণায় অর্থায়নের ওপর। আলঝেইমারস্‌ রোগের সঙ্গে অ্যামাইলয়েড প্রোটিনের সম্পর্ক আবিষ্কারের মতো বড় সাফল্যগুলো এসেছে ফেডারেল অনুদানের মাধ্যমে। এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়—চিকিৎসা গবেষণায় প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত সরকারি সহায়তা প্রয়োজন হয়।

আমরা এখন ডিমেনশিয়ার বিরুদ্ধে জয়লাভের দ্বারপ্রান্তে। এমন সময়ে গবেষণায় বাজেট কাটছাঁট করা অত্যন্ত ভুল হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের তহবিল কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা এই অগ্রগতিকে হুমকির মুখে ফেলছে। কোনো ব্যক্তি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একা এই ঘাটতি পূরণ করতে পারবে না।

এই মুহূর্তেই গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। বর্তমানে বিশ্বের নানা প্রান্তে গবেষকেরা আলঝেইমারস্‌ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। নতুন নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁরা তথ্য ভাগাভাগি করছেন, যৌথভাবে কাজ করছেন। ফলে, এই রোগ মোকাবেলায় গবেষণার গতি এখন সবচেয়ে বেশি।

আমি নিজেও কিছু উদ্যোগে জড়িত আছি, যেমন Alzheimer’s Disease Data Initiative এবং Global Research and Imaging Platform। আমি ADDF-এর Diagnostics Accelerator এবং Part the Cloud-এর মতো সংগঠনকেও সমর্থন করি। এই সকল উদ্যোগ গবেষক ও তথ্যবিজ্ঞানীদের মধ্যে সহযোগিতা সহজ করে তুলছে, যাতে তারা নতুন অ্যালগরিদম ও সরঞ্জাম তৈরি করে এই ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন করতে পারেন।

একটি পরিবর্তনের সম্ভাবনা

আমাদের সামনে এখনো বিশাল পরিমাণ কাজ বাকি—যেমন এই রোগের প্যাথলজি (জৈব প্রক্রিয়া) আরও ভালোভাবে বোঝা, এবং আরও উন্নত ডায়াগনস্টিক তৈরি। কিন্তু গত কয়েক বছরে আমরা যতটা শিখেছি, তাতে আমি সত্যিই বিস্মিত।

যখন আমরা আমার বাবাকে হারাই, তখন একটি আলঝেইমারস্‌ নির্ণয় মানেই ছিল মৃত্যুবার্তা। মাত্র পাঁচ বছর পর, এই বাস্তবতা বদলাতে শুরু করেছে। আমি যখন আলঝেইমারস্‌ নিয়ে করা অগ্রগতির কথা ভাবি, তখন আশায় ভরে যাই। বিশ্বজুড়ে এত অশান্তি সত্ত্বেও এই ক্ষেত্রে আমরা এতটা এগিয়ে এসেছি—এটি ভাবতেই ভালো লাগে।

আমরা এমন এক ভবিষ্যতের কাছাকাছি চলে এসেছি, যেখানে আর কাউকে তার প্রিয়জনকে এই ভয়াবহ রোগে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে দেখতে হবে না।

৫৪০ কোটি টাকার ‘মাদক অর্থ’ পাচারে অভিযুক্ত বিক্রম সিং মজিঠিয়া

আলঝেইমারস্‌ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরবর্তী ধাপ

০৬:২০:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

আশার কারণ

গত কয়েক বছরে আমরা আলঝেইমারস্‌ রোগ সম্পর্কে যা শিখেছি, তাতে আমি অভিভূত।

বাবাকে ছাড়া আরেকটি ফাদারস ডে

বাবা ছাড়া ফাদারস ডে কখনোই সহজ হয়ে ওঠে না। যদিও প্রতিদিনই আমি তাঁকে মনে করি, বছরের এই সময়টায় তাঁকে আরও বেশি করে মনে পড়ে।

আমার বাবা ছিলেন এক বিশাল ব্যক্তিত্ব। গেটস ফাউন্ডেশনের মূল্যবোধ গঠনে তাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি। আমরা যা কিছু অর্জন করেছি, তার সবই এক উন্নত বিশ্বের তাঁর স্বপ্নের প্রতিফলন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, পাঁচ বছর আগে আমরা তাঁকে আলঝেইমারস্‌ রোগে হারাই। সেই অভিজ্ঞতা ছিল নির্মম—নিজ চোখে দেখা যে কীভাবে আমার প্রতিভাবান, ভালোবাসাপূর্ণ বাবা ধীরে ধীরে মুছে গেলেন।

তাঁর মৃত্যুর পর আমি আরও অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা করেছি, যাঁদের প্রিয়জনও একইরকম দুর্ভোগ পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ৭ মিলিয়নের বেশি মানুষ আলঝেইমারস্‌ রোগে আক্রান্ত। অর্থাৎ প্রতি ৯ জন ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে একজন এই রোগে ভুগছেন। মানুষের গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।

তবে আশার কথা হলো—আমরা আলঝেইমারস্‌ এবং অন্যান্য স্মৃতিভ্রংশ সংক্রান্ত রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।

ইন্ডিয়ানার অভিজ্ঞতা: গবেষণায় অগ্রগতি

গত বছর ইন্ডিয়ানা সফরে আমি এই অগ্রগতির কিছু দেখতে পাই। ইন্ডিয়ানাপলিসে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে আমি তাদের অসাধারণ স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের সঙ্গে পরিচিত হই এবং তাদের বায়োমার্কার ল্যাব ঘুরে দেখি। সেখানে এমন কিছু স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র দেখেছি, যেগুলো ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হবে। এটি ছিল অত্যন্ত রোমাঞ্চকর।

এই সফরের সময় আমি যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শিখেছি তা হলো—রক্তভিত্তিক আলঝেইমারস্‌ পরীক্ষার অগ্রগতি। অনেক সংস্থা এই পরীক্ষার উন্নয়নে কাজ করছে, এবং মূলভাবে প্রতিটি পদ্ধতিই মস্তিষ্কে অ্যামাইলয়েড প্লাকের অনুপাত শনাক্ত করে কাজ করে। আমি মনে করি এই রক্ত পরীক্ষাগুলো ভবিষ্যতে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেবে। যুক্তরাষ্ট্রে গত মাসে একটি বিশাল অগ্রগতি হয়েছে—এফডিএ ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের জন্য প্রথম রক্তভিত্তিক আলঝেইমারস্‌ পরীক্ষা অনুমোদন দিয়েছে।

রোগ নির্ধারণের উপযোগিতা

আলঝেইমারস্‌ আগে কেবল PET স্ক্যান বা স্পাইনাল ট্যাপের মাধ্যমে নির্ধারণ করা যেত, যা সাধারণত শুধুমাত্র লক্ষণ স্পষ্ট হলে ডাক্তাররা করাতেন। অথচ এখন জানা গেছে যে, রোগটি লক্ষণ দেখা দেওয়ার ১৫–২০ বছর আগেই শুরু হয়। তাই একটি সহজ, সঠিক, এবং রুটিনে চালানো যায় এমন রক্ত পরীক্ষা একদিন আমাদের রোগ নির্ধারণ পদ্ধতিকে বদলে দিতে পারে—যেখানে আমরা রোগীর মস্তিষ্কের অবক্ষয় শুরু হওয়ার আগেই শনাক্ত করতে পারব।

মানুষ যখন আমার সঙ্গে এই নতুন পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে কথা বলেন, তখন প্রায়ই জিজ্ঞাসা করেন, “যদি চিকিৎসা না থাকে, তাহলে জেনে কী লাভ?”

এটা একেবারে যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন—কিন্তু শিগগিরই এই প্রশ্নটি আর প্রাসঙ্গিক থাকবে না। কারণ, এফডিএ ইতোমধ্যেই আলঝেইমারস্‌ চিকিৎসার জন্য দুটি ওষুধ অনুমোদন দিয়েছে। এগুলো প্রমাণ করেছে যে রোগের গতি কিছুটা হলেও ধীর করে। কিন্তু আমি যা নিয়ে সবচেয়ে আশাবাদী, তা হলো এই ওষুধগুলো যদি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহার করা যায়, তাহলে তাদের প্রভাব অনেক বেশি হতে পারে।

সম্ভাবনার পথে নতুন চিকিৎসা

ইন্ডিয়ানায় আমার সফরের মূল উপলব্ধি ছিল এই যে, এই ওষুধগুলো যদি রোগের শুরুতেই ব্যবহার করা হয়, তাহলে তার প্রভাব অনেক গভীর ও ফলপ্রসূ হবে। বর্তমানে রোগের লক্ষণ শুরু হওয়ার আগেই এই ওষুধগুলো কতটা কার্যকর, তা যাচাই করতে Phase III ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। এই ট্রায়ালের ফলাফল আমরা ২০২৬ সাল নাগাদ পেতে পারি। ততদিন পর্যন্ত, এই ওষুধগুলো কেবল তাদেরই সাহায্য করতে পারবে, যাঁরা ইতোমধ্যেই স্মৃতিভ্রংশে আক্রান্ত।

আমি আশা করি, গবেষকেরা এই ওষুধগুলো আরও উন্নত করবেন এবং নতুন ওষুধও উদ্ভাবন করবেন। তবে এর জন্য প্রচুর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাতে হবে। একটি সাধারণ ডায়াগনস্টিক টেস্ট ছাড়া উপযুক্ত রোগী খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে একজন রোগী খুঁজে পেতেই তিন বছর লেগে যায়। আমি বিশ্বাস করি, নতুন রক্তভিত্তিক পরীক্ষাগুলো এই সময় এক বছরের নিচে নামিয়ে আনবে।

গবেষণার অর্থায়ন জরুরি

এই সব অগ্রগতি নির্ভর করছে গবেষণায় অর্থায়নের ওপর। আলঝেইমারস্‌ রোগের সঙ্গে অ্যামাইলয়েড প্রোটিনের সম্পর্ক আবিষ্কারের মতো বড় সাফল্যগুলো এসেছে ফেডারেল অনুদানের মাধ্যমে। এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়—চিকিৎসা গবেষণায় প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত সরকারি সহায়তা প্রয়োজন হয়।

আমরা এখন ডিমেনশিয়ার বিরুদ্ধে জয়লাভের দ্বারপ্রান্তে। এমন সময়ে গবেষণায় বাজেট কাটছাঁট করা অত্যন্ত ভুল হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের তহবিল কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা এই অগ্রগতিকে হুমকির মুখে ফেলছে। কোনো ব্যক্তি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একা এই ঘাটতি পূরণ করতে পারবে না।

এই মুহূর্তেই গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। বর্তমানে বিশ্বের নানা প্রান্তে গবেষকেরা আলঝেইমারস্‌ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। নতুন নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁরা তথ্য ভাগাভাগি করছেন, যৌথভাবে কাজ করছেন। ফলে, এই রোগ মোকাবেলায় গবেষণার গতি এখন সবচেয়ে বেশি।

আমি নিজেও কিছু উদ্যোগে জড়িত আছি, যেমন Alzheimer’s Disease Data Initiative এবং Global Research and Imaging Platform। আমি ADDF-এর Diagnostics Accelerator এবং Part the Cloud-এর মতো সংগঠনকেও সমর্থন করি। এই সকল উদ্যোগ গবেষক ও তথ্যবিজ্ঞানীদের মধ্যে সহযোগিতা সহজ করে তুলছে, যাতে তারা নতুন অ্যালগরিদম ও সরঞ্জাম তৈরি করে এই ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন করতে পারেন।

একটি পরিবর্তনের সম্ভাবনা

আমাদের সামনে এখনো বিশাল পরিমাণ কাজ বাকি—যেমন এই রোগের প্যাথলজি (জৈব প্রক্রিয়া) আরও ভালোভাবে বোঝা, এবং আরও উন্নত ডায়াগনস্টিক তৈরি। কিন্তু গত কয়েক বছরে আমরা যতটা শিখেছি, তাতে আমি সত্যিই বিস্মিত।

যখন আমরা আমার বাবাকে হারাই, তখন একটি আলঝেইমারস্‌ নির্ণয় মানেই ছিল মৃত্যুবার্তা। মাত্র পাঁচ বছর পর, এই বাস্তবতা বদলাতে শুরু করেছে। আমি যখন আলঝেইমারস্‌ নিয়ে করা অগ্রগতির কথা ভাবি, তখন আশায় ভরে যাই। বিশ্বজুড়ে এত অশান্তি সত্ত্বেও এই ক্ষেত্রে আমরা এতটা এগিয়ে এসেছি—এটি ভাবতেই ভালো লাগে।

আমরা এমন এক ভবিষ্যতের কাছাকাছি চলে এসেছি, যেখানে আর কাউকে তার প্রিয়জনকে এই ভয়াবহ রোগে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে দেখতে হবে না।