০১:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৭৬)

অষ্টম পরিচ্ছেদ

এর পর পুরো একটি ঘণ্টা চারিদিকে ছড়িয়ে-পড়া শত্রু সৈন্যের হাতে পরিবেষ্টিত হওয়ার আশঙ্কা রয়ে গেল। তবে শেষপর্যন্ত আমরা ওদের বেষ্টনী এড়িয়ে ফাঁকি দিয়ে পালাতে সমর্থ হলুম। আমাদের পেছনে ধাওয়া-করা লোকগুলোর গলার আওয়াজ ক্ষীণ হতে-হতে একেবারে মিলিয়ে যাওয়ার অনেকক্ষণ পর পর্যন্তও মুখ লাল করে, ঘামে জবজবে হয়ে ভিজে আমরা যে-দিকে-চোখ-যায় দৌড়তে লাগলুম। শুকনো ঠোঁট দুটো ফাঁক করে তখনও জঙ্গলের ভিজে ভিজে হাওয়া গিলছি, পা দুটো কনকন করছে, পায়ের পাতা দুটো জ্বলে যাচ্ছে যেন, তবু কাটা গাড়ি আর ঢিবিতে হোঁচট খেতে-খেতে ছুটে চলেছি।

অবশেষে এক জায়গায় ঘাসের ওপর ধপ করে বসে পড়ে চুবুক বললেন, ‘থাক, যথেষ্ট হয়েছে। এখন একটুক আরাম করা যাক। উহ, অতি অল্পের জন্যি পেরানটা  বে’চে গ্যাচে! আমারই দোষ। ঘুমোতে গেলাম কেন। তুমি চ্যাঁচাতি শুরু করলে: ‘আমাদের নোক! আমাদের নোক!’ ভাবলাম, তুমি লিচ্চয় সব দেখে শুনেই কচ্চ। ব্যস, কোনোদিক না তাকিয়ে আধঘুমন্ত অবস্থায় ছুটে চললাম।’

এই সময় আমার হাতের রাইফেলটার দিকে নজর পড়ল। দেখলুম, কু’দোটা একেবারে চুরমার হয়ে গেছে, গুলি রাখার খোপটাও গেছে বে’কে তুবড়ে।

চুবুকের হাতে রাইফেলটা তুলে দিলুম। একবার ওটার দিকে তাকিয়ে উনি রাইফেলটা ছুড়ে ঘাসে ফেলে দিলেন।

‘রাইফেল লয়, ওটা লাঠির সামিল হয়ে গ্যাচে,’ অবজ্ঞাভরে বললেন উনি। ‘এটা দিয়ে এখন শোর ঠেঙানো চলে, আর কিছু না। যাক গে। তোমার গায়ে যে গুলি নাগে নি এই ঢের। কোটটা গেল কোথা তোমার? চলি গ্যাচে? আমার গুটিয়ে রাখা ফৌজী কোটটা কোথা ফেললাম কে জানে? তাইলে, ইয়ার, এই হল গে অবস্তা!’

কামিজের কলার আলগা করে দিয়ে, পা থেকে বুট খুলে ফেলে, নড়াচড়া না করে ঘাসের ওপর চুপচাপ শুয়ে পড়ে থেকে আমরা অনেকক্ষণের জন্যে লম্বা একটানা বিশ্রাম নিতে পারতুম। কিন্তু ক্লান্তি আর অবসাদের চেয়েও জলতেষ্টা সাংঘাতিক প্রবল হয়ে উঠল। অথচ কাছেপিঠে কোথাও জলের চিহ্নমাত্র ছিল না।

 

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৭৬)

০৮:০০:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

অষ্টম পরিচ্ছেদ

এর পর পুরো একটি ঘণ্টা চারিদিকে ছড়িয়ে-পড়া শত্রু সৈন্যের হাতে পরিবেষ্টিত হওয়ার আশঙ্কা রয়ে গেল। তবে শেষপর্যন্ত আমরা ওদের বেষ্টনী এড়িয়ে ফাঁকি দিয়ে পালাতে সমর্থ হলুম। আমাদের পেছনে ধাওয়া-করা লোকগুলোর গলার আওয়াজ ক্ষীণ হতে-হতে একেবারে মিলিয়ে যাওয়ার অনেকক্ষণ পর পর্যন্তও মুখ লাল করে, ঘামে জবজবে হয়ে ভিজে আমরা যে-দিকে-চোখ-যায় দৌড়তে লাগলুম। শুকনো ঠোঁট দুটো ফাঁক করে তখনও জঙ্গলের ভিজে ভিজে হাওয়া গিলছি, পা দুটো কনকন করছে, পায়ের পাতা দুটো জ্বলে যাচ্ছে যেন, তবু কাটা গাড়ি আর ঢিবিতে হোঁচট খেতে-খেতে ছুটে চলেছি।

অবশেষে এক জায়গায় ঘাসের ওপর ধপ করে বসে পড়ে চুবুক বললেন, ‘থাক, যথেষ্ট হয়েছে। এখন একটুক আরাম করা যাক। উহ, অতি অল্পের জন্যি পেরানটা  বে’চে গ্যাচে! আমারই দোষ। ঘুমোতে গেলাম কেন। তুমি চ্যাঁচাতি শুরু করলে: ‘আমাদের নোক! আমাদের নোক!’ ভাবলাম, তুমি লিচ্চয় সব দেখে শুনেই কচ্চ। ব্যস, কোনোদিক না তাকিয়ে আধঘুমন্ত অবস্থায় ছুটে চললাম।’

এই সময় আমার হাতের রাইফেলটার দিকে নজর পড়ল। দেখলুম, কু’দোটা একেবারে চুরমার হয়ে গেছে, গুলি রাখার খোপটাও গেছে বে’কে তুবড়ে।

চুবুকের হাতে রাইফেলটা তুলে দিলুম। একবার ওটার দিকে তাকিয়ে উনি রাইফেলটা ছুড়ে ঘাসে ফেলে দিলেন।

‘রাইফেল লয়, ওটা লাঠির সামিল হয়ে গ্যাচে,’ অবজ্ঞাভরে বললেন উনি। ‘এটা দিয়ে এখন শোর ঠেঙানো চলে, আর কিছু না। যাক গে। তোমার গায়ে যে গুলি নাগে নি এই ঢের। কোটটা গেল কোথা তোমার? চলি গ্যাচে? আমার গুটিয়ে রাখা ফৌজী কোটটা কোথা ফেললাম কে জানে? তাইলে, ইয়ার, এই হল গে অবস্তা!’

কামিজের কলার আলগা করে দিয়ে, পা থেকে বুট খুলে ফেলে, নড়াচড়া না করে ঘাসের ওপর চুপচাপ শুয়ে পড়ে থেকে আমরা অনেকক্ষণের জন্যে লম্বা একটানা বিশ্রাম নিতে পারতুম। কিন্তু ক্লান্তি আর অবসাদের চেয়েও জলতেষ্টা সাংঘাতিক প্রবল হয়ে উঠল। অথচ কাছেপিঠে কোথাও জলের চিহ্নমাত্র ছিল না।