বাংলাদেশে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ও ড. সাঈদুজ্জামানও ছিলেন; তাঁদের দু-জনেরই বাজেট পেশের সংখ্যা মাত্র দুটি করে। তাই সফল অর্থমন্ত্রী হিসেবে এখনও অবধি সামনে আসেন সাইফুর রহমান ও আবুল মাল আব্দুল মুহিত। শেষের দু-জন সফল হলেও তাঁরা ভিন্ন ধারার—একজন কনজারভেটিভ, অন্যজন অ্যাগ্রেসিভ।
অবশ্য আবুল মাল আব্দুল মুহিত তাঁর বাজেটের অধিকাংশ ক্ষেত্রে অ্যাগ্রেসিভ থাকলেও সঞ্চয়পত্রের সুদের হারের ব্যাপারে ছিলেন কনজারভেটিভ। প্রতি বাজেটেই তিনি সঞ্চয়পত্রের সুদ কমাতেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ক্ষেত্রে তাঁর পক্ষে থাকতেন; ফলে অন্য সংসদ-সদস্যরাও হাত তুলতেন, আর বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো থাকলেও প্রস্তাবটি সহজে পাস হয়ে যেত।
কিন্তু বাজেট প্রস্তাবের পর পাসের আগে সংশোধনীর সময় যত নেতা ভাষণ দিতেন, তাঁদের মধ্যে একমাত্র মতিয়া চৌধুরী সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর বিরোধিতা করতেন। অন্যদিকে সাইফুর রহমান ও আবুল মাল আব্দুল মুহিতের যুক্তি ছিল, এ সুদের হার সরকারের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। আর মতিয়া চৌধুরীর যুক্তি ছিল, “আমি এ সমাজের নিম্নমধ্যবিত্ত, ছোট চাকুরে, সাধারণ মধ্যবিত্ত এবং বিশেষ করে স্বামীহারা বা বয়স্ক নারীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানি; একটা সময়ে তাঁদের একমাত্র সম্বল সঞ্চয়পত্র।”
মতিয়া চৌধুরী যে শ্রেণিদের কথা উল্লেখ করতেন, তারা সমাজের সবচেয়ে অসহায়—উড়তেও পারে না, আবার মাটিতে মিশে যেতেও পারে না।
অথচ এই শ্রেণিরা সারা জীবন তিল তিল করে যা সঞ্চয় করে—শেষ বয়সে কোনোমতে বেঁচে থাকার আর একটু ওষুধ-পথ্য কেনার জন্য—প্রতিটি সরকারই তার ওপর খড়গ চালায়। এবারও যথারীতি তা-ই হয়েছে।
আর মাত্র কয়েক দিন পরেই মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হবে। তিনি নিজের জন্য এ দেশের মাটিতে সামান্য কবরের জায়গাও পাননি। এরপরে আর কে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নিয়ে কথা বলবে? তিনি বললেও কিছুই হতো না, তবু একজন তো বলতেন—সেটাও শেষ।