৮ জুলাইয়ের বাণিজ্য আলোচনার সময়সীমা ঘনিয়ে আসায় যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার রাষ্ট্রগুলো একগুচ্ছ কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়েছে। তারা কোন অবস্থান নেবে তার ওপরই নির্ভর করবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনা এবং উচ্চ পাল্টা শুল্ক এড়ানোর সুযোগ। কিন্তু আলোচনার সময়সীমা, খাতভিত্তিক শুল্ক নিয়ে উদ্বেগ ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-র নিয়মে এর প্রভাব—এসব দীর্ঘমেয়াদি বিষয় এখন বিশ্বজুড়ে রাজধানীগুলোতে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে হিসাব-নিকাশ করা হচ্ছে। অগ্রগতি হলেও আলোচনা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় নিচ্ছে এবং অনেক কঠিন হয়ে উঠেছে।
প্রথম সিদ্ধান্ত হলো—সময়সীমা মেনে ৮ জুলাইয়ের মধ্যেই সমঝোতায় পৌঁছানো, নাকি এখনই আলোচনা বাড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া। দক্ষিণ কোরিয়া, যেখানে নতুন সরকার কাজে নেমেছে, তাদের জন্য বিষয়টি অপেক্ষাকৃত সোজা। অন্যদের জন্য এতটা নেই। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে যে সময়সীমা পাথরে খোদাই নয়; ভালো-মনের আলোচনা চললে সময় বাড়ানো যেতে পারে।
সময় বাড়ালে অংশীদাররা অবশিষ্ট জটিল বিষয়গুলো সমাধানের বাড়তি সুযোগ, খাতভিত্তিক শুল্কের ব্যাপ্তি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা, অন্য দেশগুলো কী চুক্তি করেছে সেই অভিজ্ঞতা এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য সম্পর্কে আগামী পথনির্দেশ পাবেন। তবে তারা বিলম্ব চাইলে ট্রাম্পের বিরাগভাজন হওয়ার ঝুঁকি থাকছে, আর বাড়তি সময়ে কাজ সহজ হবে—এর কোনো গ্যারান্টি নেই। তাছাড়া শেষ পর্যন্ত তাদের ওপর চাপ আসতে পারে অন্যরা যেটি মেনেছে সেটিই হুবহু মানার।
দ্বিতীয় বড় প্রশ্ন—১০ শতাংশ বেসলাইন হার ছাড়িয়ে শুধু পাল্টা শুল্ক সমন্বয়-নির্ভর একটি চুক্তি আদৌ টেকসই কি না। বিশেষ করে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, গাড়ি ও গাড়ি-যন্ত্রাংশের বিদ্যমান শুল্ক এবং জাতীয় নিরাপত্তা ধারা ২৩২-এর আওতায় চলমান সাতটি তদন্ত থেকে উদ্ভূত সম্ভাব্য শুল্ক নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ভবিষ্যতে এসব খাতে শুল্ক থেকে সুরক্ষার নিশ্চয়তা চাওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র সাড়া দিচ্ছে না। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে চুক্তির খুঁটিনাটি দেখে অনেক দেশই তাদের দাবির পরিসর সংকুচিত করে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে সীমিত করেছে। জাপান, উদাহরণস্বরূপ, যে কোনো চুক্তিতে গাড়ি শুল্কমুক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা জোরালো ভাবে তুলছে; এতে অগ্রগতি ধীর হচ্ছে। উচ্চ পাল্টা শুল্কের দেশ ভিয়েতনাম হয়তো ভবিষ্যতের খাতভিত্তিক শুল্ক নিয়ে তুলনামূলক কম চিন্তিত, তবে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রবাহে সম্ভাব্য প্রভাব তাদের ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করবে।
তৃতীয়ত, ডব্লিউটিও ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিদ্যমান অবাধ বাণিজ্য চুক্তিগুলোর গুরুত্ব নিয়ে অংশীদারদের আত্ম-বিশ্লেষণ করতে হচ্ছে। ১০ শতাংশ বা তার বেশি একটি বেসলাইন শুল্ক স্বীকৃতি দিলে তারা কার্যত ডব্লিউটিও-বিরোধী এক শুল্ককে বৈধতা দিতে রাজি হচ্ছে, যা নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যব্যবস্থার ‘সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী রাষ্ট্র’ নীতির পরিপন্থী। এতে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মূল্যহানি ঘটবে এবং দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো একসময় তাদের অংশগ্রহণ পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
ওয়ারশ, পোল্যান্ডের শোপেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কন্টেইনার সারি। ছবি: রয়টার্স
চতুর্থ সিদ্ধান্ত—চীনের প্রভাব মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র যে উদ্যোগ চাইছে তাতে কতদূর এগোবে। ট্রান্সশিপমেন্ট নজরদারি ও প্রয়োগ জোরদার করা এক বিষয়; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র নিজের সীমানার ভেতরে তৈরি ও রপ্তানিযোগ্য পণ্যে চীনা উপাদান বা বিনিয়োগ সীমিত করতে চাপ দিলে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক-কবলিত দেশগুলো পা গুটিয়ে নিতে পারে। এ ছাড়া বেইজিং হুশিয়ার করেছে—চুক্তিতে তাদের স্বার্থবিরোধী ধারা থাকলে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফলে অংশীদারদের সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বড় সমঝোতা করলেও তারা বিপাকে না পড়ে।
শেষত, অংশীদারদের নির্ধারণ করতে হবে—ওয়াশিংটনের সঙ্গে যে কোনো চুক্তি দেশে পর্যাপ্ত সমর্থন পাবে কি না। সাধারণত জনগণকে আশ্বস্ত করতে তারা দেখায়—প্রতিপক্ষ কত ছাড় দিয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিতে সেটি সহজ নয়। ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্কে নামার প্রস্তাব ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র প্রকৃতপক্ষে খুব কমই ছাড় দিচ্ছে—যা দেশে চুক্তির পক্ষে জনসমর্থন পাওয়াকে কঠিন করে তুলছে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছাড় বরং বিরোধিতা উসকে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে গরুর মাংস, জাপানের কাছে চাল এবং ভারতের কাছে দুগ্ধখাতে বাড়তি বাজার-প্রবেশাধিকার চাইছে—যা রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
চূড়ান্ত সময়সীমা এগিয়ে আসায় অংশীদারদের একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে, যার একটিও সহজ নয়। এই চুক্তিগুলোর মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসন মূলত চায়—দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, শুল্ক বাড়ানো এবং ‘অন্যায্যতার’ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংজ্ঞাকে তারা স্বীকার করুক। সামনে কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে—এই বড় প্রশ্নগুলোতে কে কোথায় দাঁড়াল।
লেখক: ওয়েন্ডি কাটলার এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের সহ-সভাপতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি বাণিজ্য প্রতিনিধি।