১০:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
জুলাইযোদ্ধাদের মৃত্যু ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন সামান্তা শারমিন ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২৪০ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ১ রাজধানীর আবাসিক হোটেল থেকে জাতীয় পার্টির নেতার মরদেহ উদ্ধার জননিরাপত্তা নিশ্চিত করেই স্বাভাবিক জীবন চলবে: পুলিশকে নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের বরিশালে তিন ঘণ্টায় তিন লাশ, আতঙ্কে নগরী ও আশপাশের এলাকা এনসিপি নেত্রী জান্নাতারা রুমির মৃত্যু: সুরতহাল প্রতিবেদনে পুলিশের প্রাথমিক তথ্য ঢাকায় কয়েক মিনিটের ব্যবধানে তিন ককটেল বিস্ফোরণ, নারী পথচারী আহত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত আনোয়ার পুঁজিবাজারে সপ্তাহের সর্বনিম্ন লেনদেন জাতীয় পার্টি কি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে?

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৬)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪
  • 126

শ্রী নিখিলনাথ রায়

 

সেই রাজস্ব দিল্লীতে প্রেরিত হইত। কিন্তু নগদ টাকা প্রেরণে, সময়ে সময়ে অসুবিধা ঘটত বলিয়া, শেঠগণ রাজস্ব প্রেরণের ভার গ্রহণ করেন। দিল্লী ও আগরাতে শেঠ মানিকচাঁদের অন্যান্য ভ্রাতাদের যে কুঠি ছিল, তাহাতেই হুণ্ডী পাঠান হইত; পরে তাঁহারা বাদসাহ-সরকারে সমস্ত টাকা উপস্থিত করিতেন। এইরূপে বাদলার সমস্ত রাজস্ব দিল্লীর রাজকোরে নিরাপদে উপস্থিত হইত। মুর্শিদকুলী খাঁর সময়ে ১কোটি ৩০ লক্ষ টাকা রাজস্বপ্রেরণের কথা শুনা যায়। সরকারী অর্থ ব্যতীত নবাবের নিজ অর্থও শেঠদিগের হস্তে ন্যস্ত থাকিত। এইরূপ প্রবাদ আছে যে, মুর্শিদকুলীর মৃত্যুসময়ে তাঁহাদের নিকট নবাবের প্রায় ৭ কোটি টাকা গচ্ছিত ছিল, এবং মুর্শিদের পরবর্তী কোন নবাব তাহা পুনঃপ্রাপ্ত হন নাই।

মুর্শিদকুলী খাঁর সহিত মাণিকচাঁদের বিশিষ্টরূপ সৌহাদ্দ থাকায় নবাব ১৭১৫ খৃঃ অব্দে বাদসাহ ফরশেরের নিকট হইতে শেঠ উপাধি আনাইয়া তন্দ্বারা মাণিকচাদকে ভূষিত করেন। আবার শেঠদিগের বংশবিবরণীতে এই রূপ শুনা যায় যে, আরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর বাঙ্গলার নিজামতি প্রাপ্তির জন্য মাণিকচাদ মুর্শিদকুলীকে যথেষ্ট অর্থ সাহায্য করিয়াছিলেন। যাহা হউক, ইহা হইতে বেশ বুঝা যায়, সময়ানুসারে উভয়েই উভয়কে সাহায্য করিতেন। ১৭২২ খৃঃ অব্দে মাণিকচাঁদ পর-লোক গমন করেন। ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে দয়াবাগে তাঁহার স্মৃতি- স্তন্ত অনেকদিন পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল; এক্ষণে ভাগীরথী তাহাকে নিজ গর্ভে স্থান দান করিয়াছেন।

মাণিকচাঁদ অপুত্রক থাকায় স্বীয় ভাগিনেয় ফতেচাঁদকে আপনার পোষ্যপুত্র ও উত্তরাধিকারী মনোনীত করিয়া যান। বারাণসীর প্রধান শেঠ উদয়চাঁদের সহিত মাণিকচাদের ভগিনী ধনবাইএর বিবাহ হয়। ফতেচাঁদ তাঁহাদেরই পুত্র। মাণিকচাদের জীবিত অবস্থায় ফতেচাদ মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হন এবং তাঁহার গদীর কার্য্য পরিদর্শন করিতে আরম্ভ করেন। মার্ণিচাদের মৃত্যুর পর হইতে, তিনি প্রকৃত গদীয়ান হইয়া উঠেন। শেঠবংশীয়দের মধ্যে ফতেচাঁদই প্রথম “জগৎশেঠ” উপাধি লাভ করিয়াছিলেন। রিয়াজুস্ সালাতীন গ্রন্থে লিখিত আছে যে, যং- কালে সম্রাট্ ফরসের দিল্লীর সিংহাসন অধিকারের জন্ম চেষ্টা করিতে ছিলেন, সেই সময়ে তিনি বারাণসীর বিখ্যাত মহাজন নগর শেঠের নিকট হইতে অর্থ সাহায্য গ্রহণ করেন।

সম্রাট্ হওয়ার পর তিনি প্রতাপ- কারস্বরূপ নগরশেঠের ভাগিনেয় ও গোমস্তা ফতেচাঁদকে “জগৎশেঠ” উপাধিতে ভূষিত করিয়া বাঙ্গলার রাজস্বের ফৌতদারী, (পোদ্দারী) পদে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। কিন্তু ফতেচাঁদ মাণিকচাঁদেরই ভাগিনেয়; তাঁহার পিতা উদয়চাঁদ বারাণসীতে বাস করিতেন। রিয়াজের নগরশেঠ মাণিক চাঁদ কিনা বুঝা যায় না। দুইজনে এক ব্যক্তি হইলেও মাণিকচাদ বারাণসীতে বাস করিতেন না। ফতেচাঁদের পিতা উদয়চাঁদই তথায় থাকিতেন। আবার ফতেচাঁদের ফার্ম্মান হইতে জানা যায় যে, তিনি মহম্মদ শাহার নিকট হইতে ১৭২৪ খৃ অব্দে ‘জগৎশেঠ” উপাধি প্রাপ্ত হন।

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৫)

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৫)

জনপ্রিয় সংবাদ

জুলাইযোদ্ধাদের মৃত্যু ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন সামান্তা শারমিন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৬)

১১:০০:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

 

সেই রাজস্ব দিল্লীতে প্রেরিত হইত। কিন্তু নগদ টাকা প্রেরণে, সময়ে সময়ে অসুবিধা ঘটত বলিয়া, শেঠগণ রাজস্ব প্রেরণের ভার গ্রহণ করেন। দিল্লী ও আগরাতে শেঠ মানিকচাঁদের অন্যান্য ভ্রাতাদের যে কুঠি ছিল, তাহাতেই হুণ্ডী পাঠান হইত; পরে তাঁহারা বাদসাহ-সরকারে সমস্ত টাকা উপস্থিত করিতেন। এইরূপে বাদলার সমস্ত রাজস্ব দিল্লীর রাজকোরে নিরাপদে উপস্থিত হইত। মুর্শিদকুলী খাঁর সময়ে ১কোটি ৩০ লক্ষ টাকা রাজস্বপ্রেরণের কথা শুনা যায়। সরকারী অর্থ ব্যতীত নবাবের নিজ অর্থও শেঠদিগের হস্তে ন্যস্ত থাকিত। এইরূপ প্রবাদ আছে যে, মুর্শিদকুলীর মৃত্যুসময়ে তাঁহাদের নিকট নবাবের প্রায় ৭ কোটি টাকা গচ্ছিত ছিল, এবং মুর্শিদের পরবর্তী কোন নবাব তাহা পুনঃপ্রাপ্ত হন নাই।

মুর্শিদকুলী খাঁর সহিত মাণিকচাঁদের বিশিষ্টরূপ সৌহাদ্দ থাকায় নবাব ১৭১৫ খৃঃ অব্দে বাদসাহ ফরশেরের নিকট হইতে শেঠ উপাধি আনাইয়া তন্দ্বারা মাণিকচাদকে ভূষিত করেন। আবার শেঠদিগের বংশবিবরণীতে এই রূপ শুনা যায় যে, আরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর বাঙ্গলার নিজামতি প্রাপ্তির জন্য মাণিকচাদ মুর্শিদকুলীকে যথেষ্ট অর্থ সাহায্য করিয়াছিলেন। যাহা হউক, ইহা হইতে বেশ বুঝা যায়, সময়ানুসারে উভয়েই উভয়কে সাহায্য করিতেন। ১৭২২ খৃঃ অব্দে মাণিকচাঁদ পর-লোক গমন করেন। ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে দয়াবাগে তাঁহার স্মৃতি- স্তন্ত অনেকদিন পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল; এক্ষণে ভাগীরথী তাহাকে নিজ গর্ভে স্থান দান করিয়াছেন।

মাণিকচাঁদ অপুত্রক থাকায় স্বীয় ভাগিনেয় ফতেচাঁদকে আপনার পোষ্যপুত্র ও উত্তরাধিকারী মনোনীত করিয়া যান। বারাণসীর প্রধান শেঠ উদয়চাঁদের সহিত মাণিকচাদের ভগিনী ধনবাইএর বিবাহ হয়। ফতেচাঁদ তাঁহাদেরই পুত্র। মাণিকচাদের জীবিত অবস্থায় ফতেচাদ মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হন এবং তাঁহার গদীর কার্য্য পরিদর্শন করিতে আরম্ভ করেন। মার্ণিচাদের মৃত্যুর পর হইতে, তিনি প্রকৃত গদীয়ান হইয়া উঠেন। শেঠবংশীয়দের মধ্যে ফতেচাঁদই প্রথম “জগৎশেঠ” উপাধি লাভ করিয়াছিলেন। রিয়াজুস্ সালাতীন গ্রন্থে লিখিত আছে যে, যং- কালে সম্রাট্ ফরসের দিল্লীর সিংহাসন অধিকারের জন্ম চেষ্টা করিতে ছিলেন, সেই সময়ে তিনি বারাণসীর বিখ্যাত মহাজন নগর শেঠের নিকট হইতে অর্থ সাহায্য গ্রহণ করেন।

সম্রাট্ হওয়ার পর তিনি প্রতাপ- কারস্বরূপ নগরশেঠের ভাগিনেয় ও গোমস্তা ফতেচাঁদকে “জগৎশেঠ” উপাধিতে ভূষিত করিয়া বাঙ্গলার রাজস্বের ফৌতদারী, (পোদ্দারী) পদে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। কিন্তু ফতেচাঁদ মাণিকচাঁদেরই ভাগিনেয়; তাঁহার পিতা উদয়চাঁদ বারাণসীতে বাস করিতেন। রিয়াজের নগরশেঠ মাণিক চাঁদ কিনা বুঝা যায় না। দুইজনে এক ব্যক্তি হইলেও মাণিকচাদ বারাণসীতে বাস করিতেন না। ফতেচাঁদের পিতা উদয়চাঁদই তথায় থাকিতেন। আবার ফতেচাঁদের ফার্ম্মান হইতে জানা যায় যে, তিনি মহম্মদ শাহার নিকট হইতে ১৭২৪ খৃ অব্দে ‘জগৎশেঠ” উপাধি প্রাপ্ত হন।

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৫)

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৫)