১০:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
সোমেশ্বরী নদী: পাহাড়ি ঢল, পাথরের খনি ও পর্যটনের সম্ভাবনা কপিল দেবের মতো নন জাদেজা: সিধুর কঠোর সমালোচনা রণক্ষেত্রে (পর্ব-৮৮) নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রতিবেদন: বাংলাদেশে হামলায় বিদেশিদের লক্ষ্য করেছিল আইএস কে-পপের স্টাইল আইকন: ছোট্ট এক চুলের স্টাইলেই ভাইরাল এস্পার উইন্টার মার্বেল বিড়াল — দুর্লভ রহস্যের ছায়া উপকূলে নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা ও জলবায়ু সহনশীলতা বাড়াতে ডেনমার্কের সহায়তায় ব্র্যাকের ‘রেইন ফর লাইফ’ ২০২৪ এ বিজয়ী প্রতিচ্ছবি ‘সমন্বয়ক’ ২০২৫ সালে ‘সমন্বয়ক’ শব্দটি ঘৃণার প্রতীক কেন ? ফরিদপুরের মুড়ি: ঐতিহ্যের খাস প্রসাদ ও বিশেষ চালের গল্প সুবর্ণা মুস্তাফার জীবনী ও টেলিভিশন নাটকে অবদান: চার দশকের দীপ্ত পথচলা

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৪৪)

অচল সিকি

কতো বয়েস এই সূর্যের? অদ্ভুত অদ্ভুত সব কথা মনে হয় জেবুন্নেসার। ময়নামতীর গায়ে কালজয়ী ঘুম; পাহাড়গুলো স্তব্ধ, এসব অঞ্চলে এলেই মনের ভেতরটায় ধু ধু করে জ্বলতে থাকে, কাক ডাকে; জেবুন্নেসার মনে হলো সে যেন আজ হঠাৎ আশ্চর্য রকম ধার্মিক হয়ে গিয়েছে।

সে বললে, ‘আমাদের বিয়ে কোনোদিন যদি সম্ভব না হয় তাহলে কি হবে, একথা যতোবারই নাড়াচাড়া করেছি, ততোই সবকিছু জট পাকিয়ে গেছে, চোখের সামনে অন্ধকার নেমে এসেছে। তুমি বিশ্বাস করবে না-‘ জেবুন্নেসা বেখেয়ালে এনামুলের হাত চেপে ধরে বলল, ‘সেই সময় সবচেয়ে বেশি করে মনে হতো মৃত্যুর কথা। মৃত্যুর লোভ আমাকে পেয়ে বসেছিলো। আমি মরে

গিয়েছি একথা ভাবতে কী ভালোই যে লাগতো। কল্পনা করতাম আমি নিঃসাড় হয়ে পড়ে আছি, তোমরা সকলে শোকে-বিস্ময়ে গভীর চোখে আমাকে দেখছো, আর মরে গিয়েও আমার মনে হচ্ছে কোনো দিন কারো সঙ্গেই আমার কোনোরকম শত্রুতা ছিলো না-‘

তার গলা ভারি হয়ে এলো।

‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম মৃত্যুর সঙ্গে কেন মানুষের সম্পর্ক এতো নিবিড়। ভয় মিথ্যে হয়ে গেল, এমনকি তোমার চেয়েও মৃত্যুকে প্রিয় মনে হতো।’

এনামুল বললে, ‘তোমাকে চালায় তোমার আবেগ। বাধা পেলেই দিশাহারা হয়ে যাও। সেই জন্য মৃত্যু ছাড়া অন্য ফর্মুলা তোমার মাথায় আসে নি।’

‘গালাগাল দিও না, আমার কষ্ট তুমি কি করে বুঝবে? তোমার আছে আড্ডা, স্রোতে গা জুবড়ে ভেসে বেড়ানো; মেয়েদের ব্যাপার আলাদা।

একেবারে অকারণেই মনে হতো তোমাকে আমি কোনোদিনই পাবো না। বসে বসে কাঁদতাম। মনে হতো কেউ বুকের ভেতর এ্যাসিড ঢেলে দিয়েছে। জ্বলে যেতো। ওদিকে তুমি কয়েক ছত্র কাব্যচর্চা করেই খালাস!’

এনামুল রসিকতা করে বললে, ‘কারো সঙ্গে কারো আন্তরিকতার সম্পর্ক থাকলেই যে কারণে-অকারণে সব সময় তুর্কি-নাচন নাচতে হবে তার কোনো মানে নেই। হুট করে সাংঘাতিক কিছু একটা করে ফেলাটা আমার কাছে ছেলেমানুষি। ধীরে-সুস্থে সিদ্ধান্ত নিলেই তা খাঁটি হয়, তাতে ফাঁক থাকে না। তুমি তো জানোই, দুঃসাহসী আমি কোনদিনই নই। নিজের বেলায় তুমি যেটাকে দুঃসাহস ভেবে গর্ব করো আসলে যেটা নিছক মেয়েলি জিদ-‘

‘তাই বলে তোমার মতো মেরুদণ্ডহীনও নই। তোমার কি, আমার জায়গায় আমি না হয়ে অন্য কেউ হলেও তুমি ধেই ধেই করে নেচে স্বচ্ছন্দে তাকে বিয়ে করে ঘরে নিয়ে যেতে পারতে!’

 

 

সোমেশ্বরী নদী: পাহাড়ি ঢল, পাথরের খনি ও পর্যটনের সম্ভাবনা

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৪৪)

১২:০০:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

অচল সিকি

কতো বয়েস এই সূর্যের? অদ্ভুত অদ্ভুত সব কথা মনে হয় জেবুন্নেসার। ময়নামতীর গায়ে কালজয়ী ঘুম; পাহাড়গুলো স্তব্ধ, এসব অঞ্চলে এলেই মনের ভেতরটায় ধু ধু করে জ্বলতে থাকে, কাক ডাকে; জেবুন্নেসার মনে হলো সে যেন আজ হঠাৎ আশ্চর্য রকম ধার্মিক হয়ে গিয়েছে।

সে বললে, ‘আমাদের বিয়ে কোনোদিন যদি সম্ভব না হয় তাহলে কি হবে, একথা যতোবারই নাড়াচাড়া করেছি, ততোই সবকিছু জট পাকিয়ে গেছে, চোখের সামনে অন্ধকার নেমে এসেছে। তুমি বিশ্বাস করবে না-‘ জেবুন্নেসা বেখেয়ালে এনামুলের হাত চেপে ধরে বলল, ‘সেই সময় সবচেয়ে বেশি করে মনে হতো মৃত্যুর কথা। মৃত্যুর লোভ আমাকে পেয়ে বসেছিলো। আমি মরে

গিয়েছি একথা ভাবতে কী ভালোই যে লাগতো। কল্পনা করতাম আমি নিঃসাড় হয়ে পড়ে আছি, তোমরা সকলে শোকে-বিস্ময়ে গভীর চোখে আমাকে দেখছো, আর মরে গিয়েও আমার মনে হচ্ছে কোনো দিন কারো সঙ্গেই আমার কোনোরকম শত্রুতা ছিলো না-‘

তার গলা ভারি হয়ে এলো।

‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম মৃত্যুর সঙ্গে কেন মানুষের সম্পর্ক এতো নিবিড়। ভয় মিথ্যে হয়ে গেল, এমনকি তোমার চেয়েও মৃত্যুকে প্রিয় মনে হতো।’

এনামুল বললে, ‘তোমাকে চালায় তোমার আবেগ। বাধা পেলেই দিশাহারা হয়ে যাও। সেই জন্য মৃত্যু ছাড়া অন্য ফর্মুলা তোমার মাথায় আসে নি।’

‘গালাগাল দিও না, আমার কষ্ট তুমি কি করে বুঝবে? তোমার আছে আড্ডা, স্রোতে গা জুবড়ে ভেসে বেড়ানো; মেয়েদের ব্যাপার আলাদা।

একেবারে অকারণেই মনে হতো তোমাকে আমি কোনোদিনই পাবো না। বসে বসে কাঁদতাম। মনে হতো কেউ বুকের ভেতর এ্যাসিড ঢেলে দিয়েছে। জ্বলে যেতো। ওদিকে তুমি কয়েক ছত্র কাব্যচর্চা করেই খালাস!’

এনামুল রসিকতা করে বললে, ‘কারো সঙ্গে কারো আন্তরিকতার সম্পর্ক থাকলেই যে কারণে-অকারণে সব সময় তুর্কি-নাচন নাচতে হবে তার কোনো মানে নেই। হুট করে সাংঘাতিক কিছু একটা করে ফেলাটা আমার কাছে ছেলেমানুষি। ধীরে-সুস্থে সিদ্ধান্ত নিলেই তা খাঁটি হয়, তাতে ফাঁক থাকে না। তুমি তো জানোই, দুঃসাহসী আমি কোনদিনই নই। নিজের বেলায় তুমি যেটাকে দুঃসাহস ভেবে গর্ব করো আসলে যেটা নিছক মেয়েলি জিদ-‘

‘তাই বলে তোমার মতো মেরুদণ্ডহীনও নই। তোমার কি, আমার জায়গায় আমি না হয়ে অন্য কেউ হলেও তুমি ধেই ধেই করে নেচে স্বচ্ছন্দে তাকে বিয়ে করে ঘরে নিয়ে যেতে পারতে!’