০৯:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৭) প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৪) পাঁচ হাজার ডলারের পথে সোনা, ২০২৬ সালেও ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার আভাস জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমছে, ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা কাটছাঁট স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, আউন্সপ্রতি ছাড়াল ৪৪০০ ডলার এনসিপি নেতাকে গুলি: নারী সঙ্গী পলাতক, ফ্ল্যাট থেকে মাদকসংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধার তারেক রহমানের দেশে ফেরা সামনে রেখে শঙ্কার কথা জানালেন মির্জা আব্বাস গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ওসমান হাদির বোন পাচ্ছেন অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান তিন যুগ, তিন ফাইনাল, একই বাধা ভারত—সারফরাজের নামেই আবার পাকিস্তানের জয়গাথা

রঙিন হীরার মোহ

দুর্লভ সৌন্দর্যের খনি

নীল, গোলাপি, বেগুনি বা লাল—উজ্জ্বল রঙিন হীরা বরাবরই জুয়েলারি বাজারের শীর্ষে। তবে সাম্প্রতিক নিলামগুলোর চমকপ্রদ মূল্য আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছে যে, এই হীরা শুধু সৌন্দর্যের নয়, নিরাপদ সম্পদ সংরক্ষণেরও আশ্রয় হয়ে উঠছে।

নিলামে রেকর্ডের পর নয়া রেকর্ড

  • ২০২৫ সালের মে মাসে জেনেভায় ক্রিস্টিজের নিলামে ৬.২৪ ক্যারেট‘ডিপ ব্লু’ হীরাটি ১ কোটি ২৭ লক্ষ ডলারে বিক্রি হয়েছে—গভীর নীল হীরার ক্ষেত্রে ক্যারেটপ্রতি সর্বোচ্চ দাম।
    • জুনে নিউ ইয়র্কের ক্রিস্টিজ নিলামে ১০.৩৮ ক্যারেট ‘মারি-তেরেজ পিংক’ হীরা ১ কোটি ৪০ লক্ষ ডলারে হাতবদল হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ফরাসি রাজপরিবারের ইতিহাস; সম্ভবত মারি অঁতোয়ানেত্তের মালিকানায়ও ছিল।
    • ২০২৪ সালের জুনে ‘ইডেন রোজ’ নামে ১০.২০ ক্যারেটের ফ্যান্সি ইন্টেন্স পিংক হীরা বিক্রি হয় ১ কোটি ৩৩ লক্ষ ডলারে।
    • সোথেবিজ জেনেভায় ১০.০৩ ক্যারেট ‘মেডিটারেনিয়ান ব্লু’ হীরা ২ কোটি ১৫ লক্ষ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
    • ফিলিপসের সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়া নয়টি রঙিন হীরাগুলোর মধ্যে ছিল ৬.২১ ক্যারেটের উজ্জ্বল গোলাপি (১ কোটি ২০ লক্ষ ডলার) এবং ১.৫৬ ক্যারেটের ‘আর্জাইল ফিনিক্স’ লাল হীরা (৪২ লক্ষ ডলার)।

নিরাপদ বিনিয়োগের আশ্রয়

বাজার অস্থির হলে সম্পদশালী ক্রেতারা শেয়ারবাজারের বাইরে নিরাপদ বিকল্প খোঁজেন। বোনহ্যামসের ক্যারোলিন মরিসি জানান, বর্তমানে রঙিন হীরা সেই নিরাপদ বিকল্প হিসেবে দেখা দিচ্ছে। পকেটে রেখেই সম্পদ সুরক্ষিত রাখা যায়—এটি অন্য কোনো সম্পত্তিতে সম্ভব নয়।

বিক্রয় কৌশল ও সংকটাপন্ন সরবরাহ

নিলামে উচ্চমূল্যের ধারাবাহিকতা বিক্রেতাদের উৎসাহিত করছে। ক্রিস্টিজের রাহুল কাদাকিয়া বলেন, ৭০ ও ৮০-এর দশকে কেনা হীরাগুলোর মূল্য এখন দশ, কুড়ি, এমনকি পঞ্চাশ গুণ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। তবে জিআইএ’র তথ্য অনুযায়ী, শেষ ২০ বছরে গ্রেড করা সব প্রাকৃতিক হীরার মাত্র ০.৪ শতাংশই রঙিন—তার মধ্যে ১০ ক্যারেটের বেশি হলে তো প্রায় বিরল। ২০২৩-এর নভেম্বরে ১৭.৬১ ক্যারেট ‘ব্লু রয়াল’ ৪৪ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হওয়াটা সে কারণেই।

মূল্যবুদবুদ নাকি স্থায়ী ঊর্ধ্বগতি?

বিশ্লেষকদের মতে, দাম এখনো টেকসই। বোনহ্যামস মনে করে মূল্য আরও বাড়বে। লন্ডনের ডিলার সিম্বোলিক অ্যান্ড চেজ বলছে, বিদ্যমান ও নতুন—দু ধরনের সংগ্রাহকই আগ্রহী। সৌন্দর্যই মূল আকর্ষণ, তবে বিনিয়োগের দৃষ্টিও উপেক্ষিত নয়।

বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের রঙিন দৌড়

টিফানি অ্যান্ড কোম্পানি ২০২২-এ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়া আর্জাইল খনি থেকে পাওয়া শেষ ৩৫টি গোলাপি-লাল হীরা সংগ্রহ করে; বেশির ভাগই বিক্রি হয়ে গেছে। বাড়তি চাহিদার জবাবে অতিরিক্ত নীল, কমলা ও সবুজাভ হীরাও সংগ্রহে রাখা হচ্ছে। টিফানির ‘ব্লু বুক’ ইভেন্টে এসব হীরা ব্যক্তিগত প্রদর্শনীতে দেখানো হয়; গ্রাহক চাইলে কাস্টম নকশায় সেট করতে পারেন।

সংগ্রাহকের চূড়ান্ত ধাপ

বিলাসবহুল পাথর জগতে অনেকেই আগে থেকেই দুর্লভ রঙিন রত্নে আগ্রহী থাকেন। সিম্বোলিক অ্যান্ড চেজের ভাষায়, রঙিন হীরা সেই স্বাভাবিক উত্তরণ—‘দুর্লভতার চূড়ান্ত রূপ’।

রঙিন হীরার বাজারে সাম্প্রতিক রেকর্ডমূল্য কেবল নান্দনিকতার জন্য নয়, ভরসার স্থান হিসেবেও তাদের গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলেছে। সীমিত সরবরাহ ও ঐতিহাসিক-রাজকীয় প্রেক্ষাপট দামের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করছে। তাই সৌন্দর্যপিপাসু ও বিনিয়োগসচেতন—উভয় শ্রেণির সংগ্রাহকের কাছেই রঙিন হীরা আজও অমলিন আকর্ষণ।

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৭)

রঙিন হীরার মোহ

১২:০০:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

দুর্লভ সৌন্দর্যের খনি

নীল, গোলাপি, বেগুনি বা লাল—উজ্জ্বল রঙিন হীরা বরাবরই জুয়েলারি বাজারের শীর্ষে। তবে সাম্প্রতিক নিলামগুলোর চমকপ্রদ মূল্য আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছে যে, এই হীরা শুধু সৌন্দর্যের নয়, নিরাপদ সম্পদ সংরক্ষণেরও আশ্রয় হয়ে উঠছে।

নিলামে রেকর্ডের পর নয়া রেকর্ড

  • ২০২৫ সালের মে মাসে জেনেভায় ক্রিস্টিজের নিলামে ৬.২৪ ক্যারেট‘ডিপ ব্লু’ হীরাটি ১ কোটি ২৭ লক্ষ ডলারে বিক্রি হয়েছে—গভীর নীল হীরার ক্ষেত্রে ক্যারেটপ্রতি সর্বোচ্চ দাম।
    • জুনে নিউ ইয়র্কের ক্রিস্টিজ নিলামে ১০.৩৮ ক্যারেট ‘মারি-তেরেজ পিংক’ হীরা ১ কোটি ৪০ লক্ষ ডলারে হাতবদল হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ফরাসি রাজপরিবারের ইতিহাস; সম্ভবত মারি অঁতোয়ানেত্তের মালিকানায়ও ছিল।
    • ২০২৪ সালের জুনে ‘ইডেন রোজ’ নামে ১০.২০ ক্যারেটের ফ্যান্সি ইন্টেন্স পিংক হীরা বিক্রি হয় ১ কোটি ৩৩ লক্ষ ডলারে।
    • সোথেবিজ জেনেভায় ১০.০৩ ক্যারেট ‘মেডিটারেনিয়ান ব্লু’ হীরা ২ কোটি ১৫ লক্ষ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
    • ফিলিপসের সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়া নয়টি রঙিন হীরাগুলোর মধ্যে ছিল ৬.২১ ক্যারেটের উজ্জ্বল গোলাপি (১ কোটি ২০ লক্ষ ডলার) এবং ১.৫৬ ক্যারেটের ‘আর্জাইল ফিনিক্স’ লাল হীরা (৪২ লক্ষ ডলার)।

নিরাপদ বিনিয়োগের আশ্রয়

বাজার অস্থির হলে সম্পদশালী ক্রেতারা শেয়ারবাজারের বাইরে নিরাপদ বিকল্প খোঁজেন। বোনহ্যামসের ক্যারোলিন মরিসি জানান, বর্তমানে রঙিন হীরা সেই নিরাপদ বিকল্প হিসেবে দেখা দিচ্ছে। পকেটে রেখেই সম্পদ সুরক্ষিত রাখা যায়—এটি অন্য কোনো সম্পত্তিতে সম্ভব নয়।

বিক্রয় কৌশল ও সংকটাপন্ন সরবরাহ

নিলামে উচ্চমূল্যের ধারাবাহিকতা বিক্রেতাদের উৎসাহিত করছে। ক্রিস্টিজের রাহুল কাদাকিয়া বলেন, ৭০ ও ৮০-এর দশকে কেনা হীরাগুলোর মূল্য এখন দশ, কুড়ি, এমনকি পঞ্চাশ গুণ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। তবে জিআইএ’র তথ্য অনুযায়ী, শেষ ২০ বছরে গ্রেড করা সব প্রাকৃতিক হীরার মাত্র ০.৪ শতাংশই রঙিন—তার মধ্যে ১০ ক্যারেটের বেশি হলে তো প্রায় বিরল। ২০২৩-এর নভেম্বরে ১৭.৬১ ক্যারেট ‘ব্লু রয়াল’ ৪৪ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হওয়াটা সে কারণেই।

মূল্যবুদবুদ নাকি স্থায়ী ঊর্ধ্বগতি?

বিশ্লেষকদের মতে, দাম এখনো টেকসই। বোনহ্যামস মনে করে মূল্য আরও বাড়বে। লন্ডনের ডিলার সিম্বোলিক অ্যান্ড চেজ বলছে, বিদ্যমান ও নতুন—দু ধরনের সংগ্রাহকই আগ্রহী। সৌন্দর্যই মূল আকর্ষণ, তবে বিনিয়োগের দৃষ্টিও উপেক্ষিত নয়।

বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের রঙিন দৌড়

টিফানি অ্যান্ড কোম্পানি ২০২২-এ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়া আর্জাইল খনি থেকে পাওয়া শেষ ৩৫টি গোলাপি-লাল হীরা সংগ্রহ করে; বেশির ভাগই বিক্রি হয়ে গেছে। বাড়তি চাহিদার জবাবে অতিরিক্ত নীল, কমলা ও সবুজাভ হীরাও সংগ্রহে রাখা হচ্ছে। টিফানির ‘ব্লু বুক’ ইভেন্টে এসব হীরা ব্যক্তিগত প্রদর্শনীতে দেখানো হয়; গ্রাহক চাইলে কাস্টম নকশায় সেট করতে পারেন।

সংগ্রাহকের চূড়ান্ত ধাপ

বিলাসবহুল পাথর জগতে অনেকেই আগে থেকেই দুর্লভ রঙিন রত্নে আগ্রহী থাকেন। সিম্বোলিক অ্যান্ড চেজের ভাষায়, রঙিন হীরা সেই স্বাভাবিক উত্তরণ—‘দুর্লভতার চূড়ান্ত রূপ’।

রঙিন হীরার বাজারে সাম্প্রতিক রেকর্ডমূল্য কেবল নান্দনিকতার জন্য নয়, ভরসার স্থান হিসেবেও তাদের গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলেছে। সীমিত সরবরাহ ও ঐতিহাসিক-রাজকীয় প্রেক্ষাপট দামের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করছে। তাই সৌন্দর্যপিপাসু ও বিনিয়োগসচেতন—উভয় শ্রেণির সংগ্রাহকের কাছেই রঙিন হীরা আজও অমলিন আকর্ষণ।