যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, শুল্ক-উত্তেজনার মাঝেও দেশটিতে শিগগিরই গভীর মন্দা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা কিছুটা দূর হয়েছে। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর ত্রৈমাসিক জরিপে অংশ নেওয়া ৬৯ জন শীর্ষ অর্থনীতিবিদের মতে, প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের পূর্বাভাস আগের তুলনায় উজ্জ্বল হলেও মূল্যস্ফীতির চাপ এখনও পুরোপুরি হালকা হয়নি।
জরিপের ব্যাপ্তি ও পদ্ধতি
৩–৮ জুলাই সময়ে চালানো জরিপটিতে ওয়াল স্ট্রিটের বড় ব্যাংক, নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন গবেষণা-সংস্থার অর্থনীতিবিদের মতামত নেওয়া হয়। তাঁদের পর্যবেক্ষণেই তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ‘পালস-রিপোর্ট’।
শুল্ক-শঙ্কা কিছুটা কমেছে, তবু অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে
এপ্রিল পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছিল। পরে অল্প কিছু শুল্ক স্থগিত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও ১ আগস্ট থেকে ৩০ শতাংশ কর আরোপের নতুন ঘোষণা আবার অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দেয়।
প্রবৃদ্ধির হালনাগাদ পূর্বাভাস
- ২০২৫ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে প্রকৃত জিডিপি বছরে ১ শতাংশ বাড়তে পারে; এপ্রিলের পূর্বাভাস ছিল ০.৮ শতাংশ।
- ২০২৬ সালে প্রবৃদ্ধি ১.৯ শতাংশে ঠেকতে পারে—এপ্রিলের হিসাবের কাছাকাছি।
মন্দার ঝুঁকি আরও নীচে
পরবর্তী ১২ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের মন্দা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ৩৩ শতাংশ—এপ্রিলের ৪৫ শতাংশ থেকে অনেকটাই কম। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভোক্তা-ব্যয় স্থিতিশীল থাকায় অর্থনীতি আপাতত ‘নরম-অবতরণ’ পথে রয়েছে।
শ্রমবাজারের দৃঢ়তা
- গত তিন মাসে গড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে; পূর্বানুমানের চেয়ে ভালো।
- মে-তে বেকারত্ব ৪.২ শতাংশ থেকে জুনে ৪.১ শতাংশে নেমেছে।
- আগামী এক বছরে মাসিক গড়ে ৭৪ হাজার নতুন চাকরির সম্ভাবনা—এপ্রিলের চেয়ে ২০ হাজার বেশি।
মূল্যস্ফীতি ও ফেডের নীতিপথ
খাদ্য-জ্বালানি বাদে কোর মূল্যসূচক মে-তে বার্ষিক ২.৮ শতাংশ বেড়েছে—চার বছরে সর্বনিম্ন, যদিও ফেডের লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের ওপরে। অর্থনীতিবিদদের ধারণা, চলতি শুল্ক-পরিকল্পনা ২০২৫-এর শেষে মূল্যস্ফীতিতে ০.৭ শতাংশ পয়েন্ট বাড়াতে পারে। তা সত্ত্বেও ডিসেম্বরে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৩ শতাংশে থামতে পারে—এপ্রিলের ৩.৬ শতাংশ পূর্বাভাসের নিচে।
ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার দ্রুত কমানোর চাপ থেকে সাময়িক স্বস্তি পেলেও বছরের শেষে নীতিগত হার ৩.৯৪ শতাংশে নামতে পারে, যা এপ্রিলের পূর্বাভাসের তুলনায় সামান্য বেশি।
কেন এটা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ
- রপ্তানি বাজার: যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার ঝুঁকি কমলে বাংলাদেশের তৈরি-পোশাক ও আইটি-সেবা রপ্তানিতে সম্ভাবনা বাড়ে।
- রেমিট্যান্স: যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত বাংলাদেশি কর্মীদের আয় স্থিতিশীল থাকলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে পারে।
- মূল্যস্ফীতি-পাঠ: যুক্তরাষ্ট্রের কম মূল্যস্ফীতি বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম নির্দিষ্ট মাত্রায় ধরে রাখতে সহায়ক, যা বাংলাদেশি ভোক্তাদেরও স্বস্তি দেবে।
আশাব্যঞ্জক
শুল্ক-উত্তেজনা, অভিবাসন নীতি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আপাতত ‘সহনশীল’ গতি বজায় রেখেছে। সামনের মাসগুলোতে শুল্কের চূড়ান্ত হার, ফেডের সুদের নীতি ও মূল্যস্ফীতি—এই তিন কারক বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির গতিপথ নির্ধারণ করবে। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই স্বস্তির খবর যেমন আশাব্যঞ্জক, তেমনি শুল্ক-ভিত্তিক অস্থিরতা নজরে রাখাও জরুরি।