সারাংশ
১. জুলাই মাসে প্রায় ১,২০০ কোটি টাকার সমমূল্যের অর্ডার বাতিল হয়েছে
২. হোম-টেক্সটাইল পণ্যের অর্ডার ৫‒১০ শতাংশ কমানোর নোটিশ পেয়েছে একাধিক রপ্তানিকারক
৩. ক্ষতির আশঙ্খা করেছে পাটজাত ও চামড়ার পণ্য রফতানিকারকরা
আলোচনার সমাপ্তি—কোনো সমঝোতা নেই
ওয়াশিংটন ডিসিতে সদ্যসমাপ্ত তিন দিনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল শুল্ক কমানো কিংবা শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। বাংলাদেশ পক্ষ যুক্তি দিয়েও মার্কিন প্রশাসনের অনড় অবস্থান বদলাতে পারেনি।
১ আগস্ট থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক
চুক্তি না হওয়ায় ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের (বিশেষত তৈরি পোশাক, হোম-টেক্সটাইল, চামড়াজাত ও কিছু খাদ্যপণ্য) ওপর অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। বর্তমান ১৫ শতাংশের সঙ্গে মিলিয়ে মোট শুল্কহার দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে।
মার্কিন যুক্তি ও বাংলাদেশের শঙ্কা
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (USTR) কার্যালয় জানায়, বাংলাদেশে শ্রম অধিকার, ইউনিয়নের স্বাধীনতা ও পণ্যের পূর্ণ ট্রেসিবিলিটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো রেয়াত দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ধারণা, বাড়তি শুল্কে রপ্তানি ঝুঁকিতে পড়বে; ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও মেক্সিকোর মতো প্রতিযোগী দেশ বাজার শেয়ার দখল করতে পারে।
গার্মেন্টস অর্ডার বাতিলের ঢল
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) জানায়, খবরটি বাজারে ছড়াতেই জুলাই মাসে প্রায় ১,২০০ কোটি টাকার সমমূল্যের অর্ডার বাতিল হয়েছে। অনেক ক্রেতা পরিষ্কার জানিয়েছে, ১ আগস্টের পর ওই শুল্কহার কার্যকর হলে তারা সোর্সিং কমাবে—বিশেষত টি-শার্ট, সোয়েটার, হুডি ও ডেনিমের মতো কম দামের পণ্যে।
হোম-টেক্সটাইল, চামড়া ও পাটেও ধাক্কা
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) জানায়, হোম-টেক্সটাইল পণ্যের অর্ডার ৫‒১০ শতাংশ কমানোর নোটিশ পেয়েছে একাধিক রপ্তানিকারক।
চামড়াশিল্প মালিক সমিতি বলছে, ক্রেতারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অর্ডার বাতিল না করলেও নতুন শুল্কের আশঙ্কায় ক্রয়াদেশ স্থগিত রেখেছে।
পাটজাত পণ্য রপ্তানিকারকদের মতে, বাড়তি শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রের পাইকারি বাজারে বাংলাদেশের দাম প্রতিযোগিতার বাইরে চলে যেতে পারে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের বাজার
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (EPB) তথ্য বলছে, ২০২৩‒২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রই ছিল বাংলাদেশের বৃহত্তম তৈরি পোশাক গন্তব্য—মূল্য ৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সব খাত মিলিয়ে রপ্তানি ১১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। শুল্ক ৫০ শতাংশ হলে রপ্তানি আয় ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে যেতে পারে—এমন আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
বাণিজ্য-অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান বলেন, “এত উচ্চ শুল্কে আমাদের পণ্যের প্রতিযোগিতা নষ্ট হবে। যেসব দেশ জিএসপি সুবিধা পায়, তারা সুবিধা নেবে।” তাঁর মতে, শ্রম অধিকার ইস্যুতে দ্রুত দৃশ্যমান সংস্কার না আনলে ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই চাপ দিতে পারে।
সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আলোচনাকে অচল হতে দেওয়া হবে না; সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আরেক দফা বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হবে। শ্রম নিরাপত্তা, ইউনিয়নস্বাধীনতা ও ট্রেসিবিলিটি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়ে কাজ শুরু করার কথাও ভাবা হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১ আগস্ট থেকে শুল্ক কার্যকর হলে ক্ষতি সামাল দিতে অনেক কারখানাকে উৎপাদন কমাতে হতে পারে।
উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তা
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ আলোচনার অগ্রগতি না হওয়ায় ১ আগস্ট থেকে কার্যকর নতুন শুল্ক তৈরি পোশাকসহ কয়েকটি প্রধান রপ্তানি খাতকে বড় ধাক্কা দেবে। সরকারের আলোচনাচেষ্টা চললেও ব্যবসায়ীদের সামনের দিনগুলো পেরোতে হবে অনিশ্চয়তা আর উদ্বেগের মধ্য দিয়ে।