১১:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

ভারতের কাছে আমেরিকান কৃষিপণ্যের শুল্ক ৩৫ শতাংশ কমানোর দাবি যুক্তরাষ্ট্রের

সোমবার (ওয়াশিংটন সময়) শুরু হওয়া চার দিনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র‑ভারত সম্পর্কের কেন্দ্রীয় ইস্যু হয়ে উঠেছে আমেরিকান কৃষিপণ্যে শুল্ক হ্রাসের প্রশ্ন। ওয়াশিংটনের দাবি, ভারতকে গড় ৪০ শতাংশ প্রযোজ্য শুল্ক কমিয়ে মাত্র ৫ শতাংশে আনতে হবে, যাতে দু‑দেশের শুল্ক কাঠামোর মধ্যে সমতা আনা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান

যুক্তরাষ্ট্র বলছে, নিজেদের বাজারে কৃষিপণ্যে গড় শুল্ক মাত্র ৫ শতাংশ হওয়ায় “ইকুয়িটি ও রিসিপ্রোসিটি” নীতির আওতায় ভারতের কাছেও একই মাত্রার শুল্ক প্রত্যাশিত। এতে উভয় দেশের জন্য “পারস্পরিক লাভজনক ও টেকসই বাণিজ্য” নিশ্চিত হবে বলে মার্কিন আলোচকরা মনে করেন।

The road to 2047 for Indian agriculture - The Hindu

ভারতের উদ্বেগ

দিল্লির দৃষ্টিতে এ ধরনের শুল্ক কাটছাঁট দেশটির ছোট ও মাঝারি কৃষকদের জন্য অসম প্রতিযোগিতার ঝুঁকি তৈরি করবে। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ বাণিজ্যিক খামারের সঙ্গে পাল্লা দিতে তাঁদের পক্ষে এখনই এমন চাপ সহ্য করা সম্ভব নয়—সোমবার আলোচনার প্রাথমিক পর্যায়েই ভারতীয় কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দেন, শুল্ক হ্রাসের দাবিটি “তাৎক্ষণিকভাবে মেনে নেওয়া কঠিন”।

শুল্ক বাড়ানোর সময়সীমা ও চাপ

  • যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ৯ জুলাই থেকে দেশভিত্তিক অতিরিক্ত ১৬ শতাংশ শুল্ক কার্যকরের পরিকল্পনা করেছিল; এর আগে থেকেই ১০ শতাংশ মৌলিক শুল্ক বহাল রয়েছে।
  • নতুন সময়সীমা পিছিয়ে ১ আগস্ট ধার্য করা হয়েছে। এ তালিকায় ২৫–৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি শুল্কের মুখে পড়তে পারে ২০টির বেশি দেশ, যদিও আপাতত ভারত বাদ পড়েছে।
  • এই চাপের মধ্যেই “প্রাথমিক চুক্তি” সেরে ফেলার লক্ষ্যে দ্রুত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে দু‑পক্ষই।

মোদীট্রাম্প মিশন ৫০০

চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দ্বিগুণের বেশি—সাড়ে পাঁচশ’ বিলিয়ন ডলার—এ উন্নীত করার লক্ষ্য ঠিক করেন। এর প্রথম ধাপ হিসেবে প্রস্তাবিত ‘দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি (বিটিএ)’ নিয়ে এবারও জোর আলোচনা চলছে।

আলোচনার সূচি

ওয়াশিংটনে পাঁচ দফা বৈঠকের পঞ্চম তথা শেষ পর্যায়ে ভারতের প্রধান আলোচক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সচিব রাজেশ আগরওয়াল বুধবার দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। বৈঠক শেষ হওয়ার কথা বৃহস্পতিবার।

বিশ্লেষকদের সতর্কবার্তা

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের অজয় শ্রীবাস্তব স্মরণ করিয়ে দেন, মার্কিন প্রশাসন প্রায়ই বাণিজ্যনীতি হঠাৎ বদলে ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, ভিয়েতনামের সঙ্গে আলোচনার সময় ট্রাম্প ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেও শেষ অবধি হ্যানয় ১১ শতাংশে রাজি হয়েছিল—এ বিতর্ক আজও মেটেনি। তাঁর পরামর্শ, দিল্লিকে আগ্রহী হলেও অত্যন্ত হিসেব‑কষে পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষিখাতে শুল্ক সমতা, কৃষকদের সুরক্ষা ও পারস্পরিক স্বার্থ—এই ত্রিমুখী সমীকরণ মিলিয়ে নিতে পারলে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর ও স্থায়ী রূপ পাবে। তবে আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের চাপ আর ভারতের স্বার্থরক্ষার কৌশলের দ্বন্দ্বেই নির্ধারিত হবে আলোচনার গতি ও ফলাফল।

ভারতের কাছে আমেরিকান কৃষিপণ্যের শুল্ক ৩৫ শতাংশ কমানোর দাবি যুক্তরাষ্ট্রের

১২:৫৭:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

সোমবার (ওয়াশিংটন সময়) শুরু হওয়া চার দিনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র‑ভারত সম্পর্কের কেন্দ্রীয় ইস্যু হয়ে উঠেছে আমেরিকান কৃষিপণ্যে শুল্ক হ্রাসের প্রশ্ন। ওয়াশিংটনের দাবি, ভারতকে গড় ৪০ শতাংশ প্রযোজ্য শুল্ক কমিয়ে মাত্র ৫ শতাংশে আনতে হবে, যাতে দু‑দেশের শুল্ক কাঠামোর মধ্যে সমতা আনা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান

যুক্তরাষ্ট্র বলছে, নিজেদের বাজারে কৃষিপণ্যে গড় শুল্ক মাত্র ৫ শতাংশ হওয়ায় “ইকুয়িটি ও রিসিপ্রোসিটি” নীতির আওতায় ভারতের কাছেও একই মাত্রার শুল্ক প্রত্যাশিত। এতে উভয় দেশের জন্য “পারস্পরিক লাভজনক ও টেকসই বাণিজ্য” নিশ্চিত হবে বলে মার্কিন আলোচকরা মনে করেন।

The road to 2047 for Indian agriculture - The Hindu

ভারতের উদ্বেগ

দিল্লির দৃষ্টিতে এ ধরনের শুল্ক কাটছাঁট দেশটির ছোট ও মাঝারি কৃষকদের জন্য অসম প্রতিযোগিতার ঝুঁকি তৈরি করবে। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ বাণিজ্যিক খামারের সঙ্গে পাল্লা দিতে তাঁদের পক্ষে এখনই এমন চাপ সহ্য করা সম্ভব নয়—সোমবার আলোচনার প্রাথমিক পর্যায়েই ভারতীয় কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দেন, শুল্ক হ্রাসের দাবিটি “তাৎক্ষণিকভাবে মেনে নেওয়া কঠিন”।

শুল্ক বাড়ানোর সময়সীমা ও চাপ

  • যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ৯ জুলাই থেকে দেশভিত্তিক অতিরিক্ত ১৬ শতাংশ শুল্ক কার্যকরের পরিকল্পনা করেছিল; এর আগে থেকেই ১০ শতাংশ মৌলিক শুল্ক বহাল রয়েছে।
  • নতুন সময়সীমা পিছিয়ে ১ আগস্ট ধার্য করা হয়েছে। এ তালিকায় ২৫–৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি শুল্কের মুখে পড়তে পারে ২০টির বেশি দেশ, যদিও আপাতত ভারত বাদ পড়েছে।
  • এই চাপের মধ্যেই “প্রাথমিক চুক্তি” সেরে ফেলার লক্ষ্যে দ্রুত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে দু‑পক্ষই।

মোদীট্রাম্প মিশন ৫০০

চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দ্বিগুণের বেশি—সাড়ে পাঁচশ’ বিলিয়ন ডলার—এ উন্নীত করার লক্ষ্য ঠিক করেন। এর প্রথম ধাপ হিসেবে প্রস্তাবিত ‘দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি (বিটিএ)’ নিয়ে এবারও জোর আলোচনা চলছে।

আলোচনার সূচি

ওয়াশিংটনে পাঁচ দফা বৈঠকের পঞ্চম তথা শেষ পর্যায়ে ভারতের প্রধান আলোচক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সচিব রাজেশ আগরওয়াল বুধবার দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। বৈঠক শেষ হওয়ার কথা বৃহস্পতিবার।

বিশ্লেষকদের সতর্কবার্তা

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের অজয় শ্রীবাস্তব স্মরণ করিয়ে দেন, মার্কিন প্রশাসন প্রায়ই বাণিজ্যনীতি হঠাৎ বদলে ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, ভিয়েতনামের সঙ্গে আলোচনার সময় ট্রাম্প ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেও শেষ অবধি হ্যানয় ১১ শতাংশে রাজি হয়েছিল—এ বিতর্ক আজও মেটেনি। তাঁর পরামর্শ, দিল্লিকে আগ্রহী হলেও অত্যন্ত হিসেব‑কষে পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষিখাতে শুল্ক সমতা, কৃষকদের সুরক্ষা ও পারস্পরিক স্বার্থ—এই ত্রিমুখী সমীকরণ মিলিয়ে নিতে পারলে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর ও স্থায়ী রূপ পাবে। তবে আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের চাপ আর ভারতের স্বার্থরক্ষার কৌশলের দ্বন্দ্বেই নির্ধারিত হবে আলোচনার গতি ও ফলাফল।