ঘুম না আসা, রাতভর এপাশ-ওপাশ করা কিংবা ঘুম ভেঙে বারবার জেগে ওঠা—এসব সমস্যা অনেকেরই নিত্যদিনের সঙ্গী। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক ব্যায়াম অভ্যাস এই সমস্যার সহজ সমাধান হতে পারে।
BMJ Evidence-Based Medicine জার্নালে প্রকাশিত এক পর্যালোচনায় চীনের গবেষকরা ২২টি ক্লিনিকাল ট্রায়াল বিশ্লেষণ করেছেন, যাতে ১,৩৪৮ জন অংশগ্রহণকারী ছিলেন। গবেষণায় সাত ধরনের ব্যায়ামের প্রভাব দেখা হয়—যোগব্যায়াম, তাই চি, হাঁটা বা দৌড়ানো, শুধুমাত্র শক্তি চর্চা, শক্তি ও অ্যারোবিক চর্চার সমন্বয়, থেরাপির সঙ্গে অ্যারোবিক ব্যায়াম এবং অন্যান্য অ্যারোবিক পদ্ধতি।
সবচেয়ে চমকপ্রদ ফল মিলেছে যোগব্যায়ামে। এটি ঘুমের সময় প্রায় দুই ঘণ্টা বাড়াতে পারে এবং ঘুম ভেঙে জেগে থাকার সময় প্রায় এক ঘণ্টা কমিয়ে দিতে পারে।
ঘুমে শরীরচর্চার প্রভাব কীভাবে পড়ে?
মস্তিষ্কে প্রভাব:
নর্থামব্রিয়া ইউনিভার্সিটির ঘুম গবেষক ড. গ্রেগ এলডার বলেন, “ব্যায়াম ঘুমের গভীর ধাপ—অর্থাৎ পুনরুদ্ধারকারী ঘুম—বাড়াতে সাহায্য করে এবং সামগ্রিক ঘুমের সময়ও বাড়ায়।” এর ফলে ঘুম হয় আরও গভীর ও উপকারী।
হরমোনের ভূমিকা:
ব্যায়াম মেলাটোনিন ও কর্টিসলের মতো গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখে। মেলাটোনিন ঘুম ও জাগরণের ছন্দ ঠিক রাখতে সাহায্য করে, আর কর্টিসল হল স্ট্রেস হরমোন—যা বেশি থাকলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।
মনের উপর প্রভাব:
ড. এলডার বলেন, “ব্যায়াম মন ভালো রাখতে সাহায্য করে, যা ঘুমের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। সকালে বাইক চালানো বা দৌড়ানোর মতো ব্যায়াম সূর্যালোকের সংস্পর্শে এনে শরীরের ঘুম-জাগরণ চক্রকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করে।”
যে চার ধরনের ব্যায়াম ঘুম ভালো করতে সাহায্য করে
১. অ্যারোবিক ব্যায়াম (দৌড়ানো, সাইক্লিং):
টাইম৪স্লিপ-এর ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. হানা প্যাটেল বলেন, “এই ধরনের ব্যায়াম রক্তচাপ ও স্ট্রেস কমিয়ে ঘুম সহজ করে তোলে।” তবে ব্যায়ামের সময়টা গুরুত্বপূর্ণ—নাফিল্ড হেলথের স্বাস্থ্য পরামর্শক লুক কাউসিনস বলেন, “ঘুমানোর কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে ব্যায়াম শেষ করা উচিত, কারণ ততক্ষণে অ্যাড্রেনালিন হরমোন কমে যায়।”
২. শক্তি চর্চা (ওজন তোলা বা রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড):
ড. প্যাটেল জানান, “অ্যারোবিকের পাশাপাশি শক্তি চর্চাও কার্যকর হতে পারে। তবে ধাপে ধাপে শুরু করা উচিত—শরীর যতটা সইতে পারে, ততটাই শুরুতে করুন এবং ধীরে ধীরে বাড়ান।”
৩. যোগব্যায়াম:
যোগব্যায়াম মন ও শরীরকে প্রশান্ত করে। গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস ও ধীরে ধীরে স্ট্রেচিং নার্ভ সিস্টেমকে শান্ত করে, মানসিক চাপ কমায় ও ঘুমের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে।
৪. হাঁটা:
সবার জন্য উপযুক্ত একটি ব্যায়াম হলো হাঁটা। বাইরে হাঁটলে কর্টিসল হরমোন কমে যায়, যা ঘুমের গুণমান ও শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা, মানসিক চাপ কমানো ও মন ভালো করার মতো অতিরিক্ত সুবিধাও রয়েছে।
কখন ব্যায়াম করবেন?
শুধু ব্যায়াম করলেই চলবে না—কখন করবেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমানোর ঠিক আগে ভারী ব্যায়াম করলে শরীর সচল অবস্থায় চলে যায়, যা ঘুমে সমস্যা করতে পারে। বিকেল বা সন্ধ্যা বেলা ব্যায়াম করা সবচেয়ে উপকারী।
ভালো ঘুমের দিকে এক ধাপ এগোনো
গবেষণাটি প্রমাণ করে, ব্যায়াম শুধু শরীর বা মনের জন্য নয়, ঘুমের ক্ষেত্রেও অমূল্য। নিয়মিত যোগব্যায়াম, হালকা হাঁটা, অথবা শক্তি চর্চার মতো অভ্যাস আপনাকে ফিরিয়ে দিতে পারে একটানা গভীর ঘুম—যা আপনি বহুদিন ধরে খুঁজে ফিরছেন।