০৯:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৪০)

চক্ষু সেবনের জন্য আলাদা জায়গা ছিল। পূর্ববঙ্গে সিলেট, বরিশাল ও ময়মনসিংহে ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চন্ডুখোর , তবে বেশি ছিল ঢাকায়।

গুলিস্তান

পুরনো ঢাকার শেষ যেখানে অর্থাৎ নওয়াবপুর রেললাইনে, আর নতুন ঢাকার শুরুতে, বঙ্গভবনের ঠিক উল্টোদিকে গড়ে ওঠে ঢাকার আধুনিক সিনেমা হল গুলিস্তান। ঐ মোড় ও আশেপাশের জায়গা পরিচিত হয়ে ওঠে গুলিস্তান নামে।

১৯৬০- এর দশকে গুলিস্তান 

কলকাতার চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী খান বাহাদুর ফজল আহমদ ১৯৪৭ সালে পর কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় বিনোদনের অভাব দেখে এখানে ঐ সময়ের তুলনায় অতি আধুনিক এই সিনেমা হলটি গড়ে তোলেন ১৯৫০ সালে। তখন এর নাম ছিল লিবার্টি। পরে নাম রাখা হয় গুলিস্তান। গুলিস্তানকে কেন্দ্র করে একটি শপিং কমপ্লেক্সও গড়ে তোলা হয়। ঢাকার আদি চীনে খাবার দোকান চু চিন চৌ এর ওপর তলায়ই ছিল। কিছুদিন আগে এটি ভেঙে ফেলে নতুন শপিং কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হয়। [অর্ন্তজাল থেকে]

চন্ডুখোর 

অষ্টাদশ ও উনিশ শতকে ভারতবর্ষ ছিল আফিম উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র। ইংরেজ বণিকরা ভারতবর্ষের আফিম চিনে রফতানি করে প্রভূত অর্থ উপার্জন তো করত, চিনা জাতিরই সর্বনাশ করে দিয়েছিল আফিম। স্বভাবতই পূর্ববঙ্গে আফিম এসেছে বিশেষ করে ঢাকায়। আফিমকে বলা হতো চণ্ডু। শব্দটি এসেছিল মালয়ী ভাষা থেকে। উচ্চবর্গ থেকে নিম্নবর্গের অনেকেই ছিল আফিমে আসক্ত। এদের বলা হতো চন্ডুখোর । চক্ষু সেবনের জন্য আলাদা জায়গা ছিল। পূর্ববঙ্গে সিলেট, বরিশাল ও ময়মনসিংহে ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চন্ডুখোর , তবে বেশি ছিল ঢাকায়। টেলর উল্লেখ করেছেন, উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ঢাকায় মসলিনের যেসব রিফুকাররা ছিলেন, তারা আফিম না খেলে কাজ করতে পারতেন না।’ গত শতকের ষাটের দশকে নওয়াবপুরে একটি আফিমের দোকান ছিল।

১৮৬০-এ তোলা ঢাকার চন্ডুখোরদের ছবি

রাস্তায় আসা যাওয়াকালে তা নজরে পড়ত। মীজানুর রহমান সেটির একটি বর্ণনা দিয়েছেন-

“গন্ধবণিকের পাশেই ছিল ওই দোকান। আলাদা ভবনে, একটু উঁচু ছিল তার ভিত। বেশ কয়েক ধাপে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে হতো। ছোট্ট এক চিলতে দোকান। ভেতরটা আধো আলো আধো অন্ধকার। দোকানের সামনে পেতলের শিক দেওয়া কাউন্টার। কাউন্টারের ওপর একটি ঝুলন্ত টিনের প্লেট। তাতে ইংরেজি-বাংলায় লেখা:

OPIUM SHOP: আফিমের দোকান। এক কুচেল ফতুয়াধারী হিন্দু দোকানিকে কাগজে মোড়া আফিমের বড়ি নিয়ে সকাল-বিকাল বসে থাকতে দেখতাম। তা দোলাতে দোলাতে ফোকলা মুখে কথা বলতেন। আমি কখনো ঐ দোকান ক্রেতাশূন্য দেখিনি।

সবসময় দু’একজন গুলিখোরকে কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতাম। কখনো বা নয়-দশজনের লাইনও চোখে পড়ত। বা সবাই আফিম কিনতে পেত না। সরকার থেকে যারা পারমিট পেতেন তারাই পেতেন, নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট পরিমাণ আফিম।” আগে এই নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আফিমখোর বা চত্তুখোরকে গুলিখোরও বলা হতো।

(চলবে)

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৩৯)

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৩৯)

 

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৪০)

০৭:০০:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

চক্ষু সেবনের জন্য আলাদা জায়গা ছিল। পূর্ববঙ্গে সিলেট, বরিশাল ও ময়মনসিংহে ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চন্ডুখোর , তবে বেশি ছিল ঢাকায়।

গুলিস্তান

পুরনো ঢাকার শেষ যেখানে অর্থাৎ নওয়াবপুর রেললাইনে, আর নতুন ঢাকার শুরুতে, বঙ্গভবনের ঠিক উল্টোদিকে গড়ে ওঠে ঢাকার আধুনিক সিনেমা হল গুলিস্তান। ঐ মোড় ও আশেপাশের জায়গা পরিচিত হয়ে ওঠে গুলিস্তান নামে।

১৯৬০- এর দশকে গুলিস্তান 

কলকাতার চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী খান বাহাদুর ফজল আহমদ ১৯৪৭ সালে পর কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় বিনোদনের অভাব দেখে এখানে ঐ সময়ের তুলনায় অতি আধুনিক এই সিনেমা হলটি গড়ে তোলেন ১৯৫০ সালে। তখন এর নাম ছিল লিবার্টি। পরে নাম রাখা হয় গুলিস্তান। গুলিস্তানকে কেন্দ্র করে একটি শপিং কমপ্লেক্সও গড়ে তোলা হয়। ঢাকার আদি চীনে খাবার দোকান চু চিন চৌ এর ওপর তলায়ই ছিল। কিছুদিন আগে এটি ভেঙে ফেলে নতুন শপিং কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হয়। [অর্ন্তজাল থেকে]

চন্ডুখোর 

অষ্টাদশ ও উনিশ শতকে ভারতবর্ষ ছিল আফিম উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র। ইংরেজ বণিকরা ভারতবর্ষের আফিম চিনে রফতানি করে প্রভূত অর্থ উপার্জন তো করত, চিনা জাতিরই সর্বনাশ করে দিয়েছিল আফিম। স্বভাবতই পূর্ববঙ্গে আফিম এসেছে বিশেষ করে ঢাকায়। আফিমকে বলা হতো চণ্ডু। শব্দটি এসেছিল মালয়ী ভাষা থেকে। উচ্চবর্গ থেকে নিম্নবর্গের অনেকেই ছিল আফিমে আসক্ত। এদের বলা হতো চন্ডুখোর । চক্ষু সেবনের জন্য আলাদা জায়গা ছিল। পূর্ববঙ্গে সিলেট, বরিশাল ও ময়মনসিংহে ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চন্ডুখোর , তবে বেশি ছিল ঢাকায়। টেলর উল্লেখ করেছেন, উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ঢাকায় মসলিনের যেসব রিফুকাররা ছিলেন, তারা আফিম না খেলে কাজ করতে পারতেন না।’ গত শতকের ষাটের দশকে নওয়াবপুরে একটি আফিমের দোকান ছিল।

১৮৬০-এ তোলা ঢাকার চন্ডুখোরদের ছবি

রাস্তায় আসা যাওয়াকালে তা নজরে পড়ত। মীজানুর রহমান সেটির একটি বর্ণনা দিয়েছেন-

“গন্ধবণিকের পাশেই ছিল ওই দোকান। আলাদা ভবনে, একটু উঁচু ছিল তার ভিত। বেশ কয়েক ধাপে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে হতো। ছোট্ট এক চিলতে দোকান। ভেতরটা আধো আলো আধো অন্ধকার। দোকানের সামনে পেতলের শিক দেওয়া কাউন্টার। কাউন্টারের ওপর একটি ঝুলন্ত টিনের প্লেট। তাতে ইংরেজি-বাংলায় লেখা:

OPIUM SHOP: আফিমের দোকান। এক কুচেল ফতুয়াধারী হিন্দু দোকানিকে কাগজে মোড়া আফিমের বড়ি নিয়ে সকাল-বিকাল বসে থাকতে দেখতাম। তা দোলাতে দোলাতে ফোকলা মুখে কথা বলতেন। আমি কখনো ঐ দোকান ক্রেতাশূন্য দেখিনি।

সবসময় দু’একজন গুলিখোরকে কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতাম। কখনো বা নয়-দশজনের লাইনও চোখে পড়ত। বা সবাই আফিম কিনতে পেত না। সরকার থেকে যারা পারমিট পেতেন তারাই পেতেন, নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট পরিমাণ আফিম।” আগে এই নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আফিমখোর বা চত্তুখোরকে গুলিখোরও বলা হতো।

(চলবে)

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৩৯)

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৩৯)