রাশিয়ান-আমেরিকান ঔপন্যাসিক গ্যারি শটেইনগার্ট আগে যেমন ছিলেন—দাঁত বের করে হাসা, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, খেয়ালী—তেমনই আছেন আজও, কিন্তু বদল এসেছে তাঁর জীবনযাপনে ও দৃষ্টিভঙ্গিতে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, করোনাকালে শারীরিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর তিনি নিজের জীবনে নতুন রঙ যোগ করেছেন—দামি পোশাক, ভিনটেজ ঘড়ি, ভালো খাবার আর আরামদায়ক জীবনের প্রতি এক নতুন আকর্ষণ।
শৈলীর প্রতি আকর্ষণ ও নতুন জীবনের শুরু
এক সময় পোশাক-আশাক নিয়ে ভাবতেন না শটেইনগার্ট। নিউ ইয়র্কের ‘দ্য আর্মরি’ দোকানে তিনি কিনলেন আয়ারল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী শিলেলি – এক ধরনের পালিশ করা লাঠি। ৫৩ বছর বয়সে তিনি বললেন, “এটাই আমার নতুন জীবন হতে পারে।”
কেতাদুরস্ত স্যুট, মার্টিনি আর ভিনটেজ ঘড়ি – এগুলো এখন তাঁর নিত্যসঙ্গী। যদিও তিনি স্বীকার করেন, এভাবে ২৫০ ডলারের লাঠি কিনলে তিনি তাঁর নিজের উপন্যাসেরই এক চরিত্রের মতো হয়ে যাবেন – আত্মসন্দেহে ভোগা, স্ট্যাটাস নিয়ে বুঁদ ম্যানহাটানবাসী।
লেখক জীবনের টানাপোড়েন
সম্প্রতি প্রকাশিত উপন্যাস ‘ভেরা, অর ফেইথ’ লিখেছেন এক কোরিয়ান-আমেরিকান কিশোরীর দৃষ্টিকোণ থেকে। এর আগে তিনি আরেকটি স্পাই উপন্যাস লিখছিলেন, কিন্তু তাঁর সম্পাদক ডেভিড এবারশফ তা ফিরিয়ে দেন। সেই ধাক্কা সামলে মাত্র ৫১ দিনে নতুন উপন্যাস শেষ করেন শটেইনগার্ট।
“আমি সবসময় ভালো জিনিস পছন্দ করতাম, কারণ ছোটবেলায় কিছুই ছিল না,” বললেন তিনি। তাঁর সংগ্রহে আছে পাটেক ফিলিপ আকোয়ানাট ঘড়ি, যার দাম এক লাখ ডলারের বেশি। তাঁর ভাষায়, “ঘড়িগুলোতে রুচি, ইতিহাস আর শিল্প একসঙ্গে মেলে।”
ব্যক্তিগত রুচি ও পোশাকের বিবর্তন
লেখক হিসেবে নিজের শৈলীর রূপান্তরও স্পষ্ট। আগে পোশাক-আশাকে উদাসীন ছিলেন। একবার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, “যেন ডায়াপার পরে।” এখন তাঁর ওয়ারড্রোবে আছে হংকংয়ে তৈরি ১,০০০ ডলারের আইরিশ লিনেন জ্যাকেট।
গ্রামারসি পার্কের অ্যাপার্টমেন্টে তিনি পরেছেন ১০,০০০ ডলারের ছয়-প্লাই উলের স্যুট, জাপানি দর্জি ইউহেই ইয়ামামোতোর তৈরি। ‘দ্য আটলান্টিক’-এ লেখা বিনিময়ে স্যুটটি নিজের করে পেয়েছেন।
দামি ঘড়ির প্রতি ভালোবাসা
প্রায় ৩০টি ঘড়ি রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। সেগুলো তিনি রাখেন সেফে। যেমন পাটেক ফিলিপ আকোয়ানাট, আবার এক ইতালীয় রেলকর্মীর ব্যবহৃত ইউনিভার্সাল জেনেভ ঘড়ি – যা ঠিকমতো সময় দেখায় না, তবে দারুণ সুন্দর। এ ছাড়া আছে এ. ল্যাঙ্গে অ্যান্ড সোনের ঘড়ি, যা বানায় জার্মানির কারিগররা। শটেইনগার্ট বলেন, “এগুলো এআই নয়। এখানে রুচি, ইতিহাস আর শিল্প মিশে আছে।”
করোনাকালীন শারীরিক সংকট থেকে নতুন রূপে ফেরা
শটেইনগার্টের এই পরিবর্তনের শুরু হয় করোনা মহামারিতে। তাঁর শৈশবে সোভিয়েত ইউনিয়নে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী খৎনা হয়নি। পরে যুক্তরাষ্ট্রে অপূর্ণরূপে হওয়া খৎনা তাঁকে বড় বিপদে ফেলেছিল। ২০২০ সালে একটি চুল ফাঁসের মতো হয়ে তাঁর বাড়তি ত্বকে জড়িয়ে যায়, যার ফলে মারাত্মক সংক্রমণ ও ব্যথা শুরু হয়।
অসহ্য যন্ত্রণায় তিনি আত্মহত্যার কথাও ভাবেন। নিউ ইয়র্কের এক প্লাস্টিক সার্জন বন্ধুর সহায়তায় এবং ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা ক্রিমে ধীরে ধীরে তিনি সেরে ওঠেন। “লিভিং ওয়েল ইজ দ্য রিভেঞ্জ ট্যুর,” বললেন শটেইনগার্ট।
মৃত্যুচিন্তা আর জীবন উপভোগ
সেরে ওঠার পরই তিনি স্থির করলেন – ভালো করে বাঁচবেন। “আমি জানি, আমি শিগগিরই মরে যাব। চলুন, ঠিকমতো করি সবকিছু।” এখন তিনি ন্যাশনাল আর্টস ক্লাবে নেগ্রোনি, রেস্টুরেন্ট বোর্গোতে মার্টিনি উপভোগ করেন।
ছোটবেলায় নিউ ইয়র্কে তাঁর জীবন ছিল অভাবের – ভুল মাপের জামা, অভিভাবকদের বিরক্তি, বাবার মারধর, স্কুলে বুলিদের অত্যাচার। ১৯৮৭ সালে ভর্তি হন স্টাইভেসান্ট হাই স্কুলে, পরে ওবারলিন কলেজে। ওবারলিন নিয়ে তাঁর উপন্যাসে রসিকতা থাকলেও, লেখালিখির দিকে তাঁকে চালনা করেছিলেন সেখানকার শিক্ষক ডায়ান ভ্রুলস।
লেখক জীবনের উত্থান
১৯৯৫ সালে গ্র্যাজুয়েশন করে তিনি নিউ ইয়র্ক অ্যাসোসিয়েশন ফর নিউ আমেরিকান্সে চাকরি করতেন, সেখানেই লিখেছিলেন প্রথম উপন্যাস ‘দ্য রাশিয়ান ডেবুট্যান্টস হ্যান্ডবুক’ (২০০২)। এরপর এসেছে ‘অ্যাবসার্ডিস্তান’ ও ‘সুপার স্যাড ট্রু লাভ স্টোরি’।
তাঁর লেখায় মেলে উদ্বিগ্নতা আর হাস্যরস। “আমার দুশ্চিন্তা চলে যায় হাসিতে, এটাই আমাকে বাঁচিয়ে রাখে লেখক হিসেবে।” করোনাকালে লেখা ‘আওয়ার কান্ট্রি ফ্রেন্ডস’ ছিল আরও বেশি ধীর ও গভীর।
নিউ ইয়র্ক থেকে গ্রাম
ম্যানে হাটান তাঁর জন্য আনন্দের জায়গা হলেও এখন আর অনুপ্রেরণা নয়। “এখন এটা ইনস্টাগ্রামের সেট।” তাই লেখার জন্য তিনি চলে যান আপস্টেটে নিজের বাড়িতে। সাত একরের সবুজ জমি আর কাঠের কাজ করা বাড়ি – এটাই তাঁর স্বর্গ।
মানসিক চাপ পুরোপুরি যায়নি। “কয়েকদিন আগে খুব ভয়ংকর দেখতে একটা গাড়ি এসেছিল। ছবি তুলে এসথারকে পাঠাতে চেয়েছিলাম, যদি কিছু হয়।” তবুও, গ্যারি শটেইনগার্ট বেঁচে আছেন, লিখছেন আর ভালো জীবনযাপন করছেন।