ভারতের রপ্তানি সিদ্ধান্ত ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
চাল রপ্তানিতে অন্যতম প্রধান দেশ ভারত এই বছর চাল রপ্তানি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের খবর প্রথমে প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংবাদমাধ্যমগুলো, যারা বলছে—এই রপ্তানি হ্রাসের কারণে বৈশ্বিক বাজারে চালের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে বিশ্বের অন্যান্য বড় রপ্তানিকারক দেশ যেমন থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার চালের ওপর চাপ বেড়ে যাবে এবং এসব দেশে চালের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেতে পারে।
রপ্তানিকারক দেশগুলোর চালের দাম বাড়ার সম্ভাবনা
বিশ্বের খাদ্যবাজারে চালের চাহিদা দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চ মাত্রায় রয়েছে। ভারতের রপ্তানি কমে যাওয়ার ফলে বিশ্ববাজারে সরবরাহ ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘাটতি পূরণে অন্যান্য রপ্তানিকারক দেশ—থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া—চালের মূল্য বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে শুধু বৈশ্বিক বাজারেই নয়, এসব দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা প্রবল।
বাংলাদেশের চালের বাজারে চলমান সংকট
এরই মধ্যে বাংলাদেশে চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষিপণ্য বাজারে সব ধরনের চালের দাম প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে গত কয়েক সপ্তাহে। সাধারণ মানুষ ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ সংকট, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও মজুতদারদের ভূমিকা মিলিয়ে এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে।
বৈশ্বিক বাজারের প্রতিক্রিয়া: বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ
বিশ্ববাজারে যদি থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার চালের দাম আরও বৃদ্ধি পায়, তবে বাংলাদেশে আমদানিকৃত চালের খরচও বাড়বে। বাংলাদেশ প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টন চাল আমদানি করে থাকে, বিশেষ করে যখন ঘাটতির সময় হয় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানি ঘটে। ভারতের চালের ওপর বাংলাদেশ অনেকাংশে নির্ভরশীল। তবে ভারত থেকে আমদানিতে বিঘ্ন ঘটলে বিকল্প উৎস হিসেবে অন্য দেশগুলোর প্রতি নির্ভরতা বাড়বে, যেখানে দাম ইতিমধ্যেই ঊর্ধ্বমুখী।
নীতিনির্ধারকদের করণীয়
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এখনই সরকারকে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে—যেমন জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিত করা, কালোবাজারি ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং দরিদ্র শ্রেণির জন্য ভর্তুকির মাধ্যমে ওএমএস কার্যক্রম জোরদার করা। পাশাপাশি বিকল্প আমদানিকারক দেশের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে চালের সরবরাহ নিশ্চিত করার পরিকল্পনাও জরুরি। ধান সংগ্রহ মৌসুমে কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে ক্রয়মূল্য পুনর্মূল্যায়ন এবং গুদাম ও শীতলসংরক্ষণ সক্ষমতা আধুনিকায়নের দিকেও নজর দিতে হবে।
ভারতের চাল রপ্তানি সীমিতকরণ বৈশ্বিক বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে চলেছে এবং এর ছায়া ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বাজারে পড়তে শুরু করেছে। এই সংকট মোকাবিলায় দ্রুত, কার্যকর ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়া বাংলাদেশের সামনে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখা কঠিন হতে পারে। জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা রক্ষায় এখনই সময় সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার।