প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে রংপুরের গঙ্গাচড়ার হিন্দু পরিবারগুলোকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে দেখা যাচ্ছে। আর সামাজিক মাধ্যমে সবাই তাদের বাড়িঘর, নারী নির্যাতন, সবকিছুর ছবি দেখেছেন।
খবর যারা আরও গভীরে গিয়ে নিয়েছেন, তারা সকলে জেনেছেন—এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত। প্রায় দুই হাজার ভোটার সেখানে।
আর যেহেতু বর্তমান সরকার বলে দিয়েছেন, বাংলাদেশে যে হিন্দু নির্যাতন হচ্ছে তার কোনওটাই সাম্প্রদায়িক কারণে নয়, সবই রাজনৈতিক বিবেচনায়। তাই সেখানেও যারা অত্যাচার করছে, তারা গুণী সরকারের বিজ্ঞ মতামত মেনেই করছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক বিবেচনায়, দুই হাজার ভোটারের হিসেবে। আর যাদের ভোট সাধারণত কোনও উদার ও অসাম্প্রদায়িক দলের পক্ষে যেতে পারে। তাই রাজনৈতিক বিবেচনায় তাদেরকে উৎখাত করা হয়েছে।
সারাক্ষণে একটি রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। সেই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, এক সময়ে যশোরে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার বানর ছিল। ১৯৪৭‑এর পর থেকে হিন্দুরা সেখান থেকে ধারাবাহিকভাবে চলে যাওয়ার পরে ওই বানরদের প্রতি সহনশীল মানুষের সংখ্যা কমে যায়। যার ফলে তাদের সংখ্যাও কমতে থাকে। বর্তমানে সমগ্র গ্রেটার যশোরে ৭‑৮টি গ্রুপ বানর আছে। প্রতি গ্রুপে ৮টি থেকে বিশটি বানর।
বাংলাদেশের রাষ্ট্র, সমাজ ও মিডিয়ার হিন্দুদের প্রতি সহানুভূতির যে স্কেল দেখা যাচ্ছে, এই স্কেলে দেশ চললে বাংলাদেশের হিন্দুদের দশা দ্রুতই যশোরের বানরের মতো হবে।
তবে তার পরেও বাংলাদেশের মাটির ওপরে ভরসা রাখতে হয়। এ মাটি ’৫২ থেকে ’৭১‑এর জন্ম দিয়েছে। এ সমাজ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন, বেগম সুফিয়া কামালের জন্ম দিয়েছে। জন্ম দিয়েছে সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো সন্তানকে। এ দেশের মিডিয়াতেও মানিক মিঞা, জহুর হোসেন চৌধুরী ছিলেন। এ দেশের মিডিয়া এক যোগে সম্পাদকীয় লিখেছে— “পূর্ব বাংলা রুখিয়া দাঁড়াও”।
তাই গঙ্গাচড়ার পরেও এ মাটি ও সমাজের ওপরে ভরসা রাখা যেতে পারে, বাংলাদেশের হিন্দুদের সংখ্যা যশোরের বানরের মতো হবে না। গঙ্গাচড়ার ভাঙা ঘরের সামনে পড়ে থাকা শাঁখা–সিঁদুর পরা নারীর ছবি নিশ্চয়ই যশোরের বানরের দিকে তাকাতে বলছে না এখনও।