০৬:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫
ট্রাম্পের শুল্ক ভারতের ৪০ বিলিয়ন ডলারের রফতানির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে ফেডারেল তহবিল কাটা যাওয়ায় পাবলিক ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন বন্ধ, স্থানীয় গণমাধ্যমে বড় ধাক্কা ট্রেড আলোচনা স্থবির, শুল্ক হুমকি বাড়ছে: যুক্তরাষ্ট্র–ভারত অংশীদারিত্বে টানাপোড়ন  বাংলাদেশে দুই কোটি হিন্দুর ও প্রগতিশীল মুসলিমদের ভবিষ্যত কি? জলঢাকা নদী: ইতিহাস, পথচলা ও বর্তমান বাস্তবতা বাংলাদেশে কার্প মাছ চাষ: দেশি মাছের বৈচিত্র্য ধ্বংসের হুমকি ও করণীয় বম জনগোষ্ঠীর তিন সদস্যের কারা মৃত্যু—বিচারবিভাগীয় তদন্ত ও নিরপরাধ বন্দিদের মুক্তির দাবিতে ১৫৫ নাগরিকের বিবৃতি উন্নত দেশগুলোর জন্য কৃষিপণ্যের বাজার উন্মুক্ত করা কি সুবিবেচনার কাজ? এ.টি.এম. শামসুজ্জামান: অভিনয়ের কিংবদন্তি এক জীবনগাথা বাংলাদেশের চা উৎপাদন, বাড়তি স্থানীয় চাহিদা ও লাভজনকতা

উন্নত দেশগুলোর জন্য কৃষিপণ্যের বাজার উন্মুক্ত করা কি সুবিবেচনার কাজ?

বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। ধান, পাট, গম, সবজি, ফলমূল, মাছ ও প্রাণিসম্পদ—এই সবকিছু মিলিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ ছাড়াও রপ্তানির ক্ষেত্রে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই কৃষিপণ্যের বাজার কি উন্নত দেশের জন্য উন্মুক্ত করা উচিত? বিষয়টি নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণ প্রয়োজন।

বাংলাদেশের কৃষি খাতের বাস্তবতা

বাংলাদেশের কৃষি খাত ছোট ও প্রান্তিক কৃষকের ওপর নির্ভরশীল। আধুনিক প্রযুক্তি ও উৎপাদন ব্যবস্থার দিক থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সার ও বীজের দামের ঊর্ধ্বগতি, কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া — এসব মিলিয়ে কৃষকেরা অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হন। অথচ কৃষিই দেশের খাদ্য নিরাপত্তার মূল ভিত্তি।

উন্নত দেশের বাজার উন্মুক্ত করা মানে কী?

যদি বাংলাদেশ সরকার কৃষিপণ্যের বাজার উন্নত দেশগুলোর জন্য উন্মুক্ত করে, তাহলে বিদেশি কৃষিপণ্য কম দামে দেশীয় বাজারে প্রবেশ করতে পারবে। এতে বাংলাদেশের কৃষকেরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না। কারণ উন্নত দেশগুলোর কৃষকেরা সরকার থেকে ভর্তুকি পায়, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং উৎপাদন খরচ কম হয়। ফলে তারা খুব কম দামে উচ্চমানের পণ্য রপ্তানি করতে পারে।

Agricultural products account for nearly 11% of non-oil exports in 5 months  - Tehran Times

সম্ভাব্য বিপদ

১. দেশীয় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন: কম দামে বিদেশি কৃষিপণ্য বাজারে আসলে দেশীয় কৃষিপণ্যের চাহিদা কমে যাবে। এতে কৃষকের আয় কমবে এবং কৃষিকাজে অনীহা তৈরি হবে।

২. খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে: দেশে খাদ্য উৎপাদন কমে গেলে একসময় আমদানিনির্ভরতা বাড়বে। বৈশ্বিক সংকটের সময় তখন খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

৩. গ্রামীণ অর্থনীতি দুর্বল হবে: কৃষির ওপর নির্ভরশীল লাখো পরিবার আয় হারাবে। এতে দারিদ্র্য ও বৈষম্য বাড়বে।

সম্ভাব্য সুফল (যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা হয়)

১. প্রযুক্তি হস্তান্তর: বিদেশি বিনিয়োগ ও প্রতিযোগিতার কারণে দেশে কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন হতে পারে।

২. রপ্তানির সুযোগ: যদি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে বাজার উন্মুক্ত হয়, তবে বাংলাদেশও উন্নত দেশে কৃষিপণ্য রপ্তানির সুযোগ পাবে।

৩. মান নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি: প্রতিযোগিতার কারণে কৃষিপণ্যের মান ও প্যাকেজিং উন্নত হতে পারে।

কৌশলগত সুপারিশ

১. অগ্রাধিকার দেশীয় কৃষকদের: যেকোনো বাজার উন্মুক্ত করার আগে দেশীয় কৃষকদের ভর্তুকি, সহায়তা ও প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হবে।

২. ধাপে ধাপে উন্মুক্ত করা: পুরো বাজার একবারে উন্মুক্ত না করে, নির্দিষ্ট পণ্য ও অঞ্চলভিত্তিক ধাপে ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

৩. রপ্তানিমুখী কৃষি নীতিমালা: উন্নত দেশগুলোতে রপ্তানির সুবিধা বিবেচনায় দেশের কৃষিপণ্যকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে।

কৃষকদের রক্ষা

বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর উন্নয়নশীল দেশ। তাই কৃষিপণ্যের বাজার উন্নত দেশগুলোর জন্য হঠাৎ করে উন্মুক্ত করা কোনো বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত হবে না। বরং এ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, গবেষণা এবং দেশীয় কৃষকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষকের স্বার্থ এবং জাতীয় অর্থনৈতিক ভারসাম্য — এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখেই যেকোনো বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।

বাংলাদেশের কৃষিকে উন্নত করতে চাইলে প্রথমে দেশের কৃষকদের রক্ষা করতে হবে। তারপর বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে হবে। বাজার উন্মুক্ত করার বিষয়টি তখনই বিবেচনায় আনা যেতে পারে, যখন দেশীয় কৃষি খাত প্রস্তুত থাকবে এই প্রতিযোগিতার জন্য।

জনপ্রিয় সংবাদ

ট্রাম্পের শুল্ক ভারতের ৪০ বিলিয়ন ডলারের রফতানির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে

উন্নত দেশগুলোর জন্য কৃষিপণ্যের বাজার উন্মুক্ত করা কি সুবিবেচনার কাজ?

০৩:৩৫:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫

বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। ধান, পাট, গম, সবজি, ফলমূল, মাছ ও প্রাণিসম্পদ—এই সবকিছু মিলিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ ছাড়াও রপ্তানির ক্ষেত্রে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই কৃষিপণ্যের বাজার কি উন্নত দেশের জন্য উন্মুক্ত করা উচিত? বিষয়টি নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণ প্রয়োজন।

বাংলাদেশের কৃষি খাতের বাস্তবতা

বাংলাদেশের কৃষি খাত ছোট ও প্রান্তিক কৃষকের ওপর নির্ভরশীল। আধুনিক প্রযুক্তি ও উৎপাদন ব্যবস্থার দিক থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সার ও বীজের দামের ঊর্ধ্বগতি, কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া — এসব মিলিয়ে কৃষকেরা অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হন। অথচ কৃষিই দেশের খাদ্য নিরাপত্তার মূল ভিত্তি।

উন্নত দেশের বাজার উন্মুক্ত করা মানে কী?

যদি বাংলাদেশ সরকার কৃষিপণ্যের বাজার উন্নত দেশগুলোর জন্য উন্মুক্ত করে, তাহলে বিদেশি কৃষিপণ্য কম দামে দেশীয় বাজারে প্রবেশ করতে পারবে। এতে বাংলাদেশের কৃষকেরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না। কারণ উন্নত দেশগুলোর কৃষকেরা সরকার থেকে ভর্তুকি পায়, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং উৎপাদন খরচ কম হয়। ফলে তারা খুব কম দামে উচ্চমানের পণ্য রপ্তানি করতে পারে।

Agricultural products account for nearly 11% of non-oil exports in 5 months  - Tehran Times

সম্ভাব্য বিপদ

১. দেশীয় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন: কম দামে বিদেশি কৃষিপণ্য বাজারে আসলে দেশীয় কৃষিপণ্যের চাহিদা কমে যাবে। এতে কৃষকের আয় কমবে এবং কৃষিকাজে অনীহা তৈরি হবে।

২. খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে: দেশে খাদ্য উৎপাদন কমে গেলে একসময় আমদানিনির্ভরতা বাড়বে। বৈশ্বিক সংকটের সময় তখন খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

৩. গ্রামীণ অর্থনীতি দুর্বল হবে: কৃষির ওপর নির্ভরশীল লাখো পরিবার আয় হারাবে। এতে দারিদ্র্য ও বৈষম্য বাড়বে।

সম্ভাব্য সুফল (যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা হয়)

১. প্রযুক্তি হস্তান্তর: বিদেশি বিনিয়োগ ও প্রতিযোগিতার কারণে দেশে কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন হতে পারে।

২. রপ্তানির সুযোগ: যদি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে বাজার উন্মুক্ত হয়, তবে বাংলাদেশও উন্নত দেশে কৃষিপণ্য রপ্তানির সুযোগ পাবে।

৩. মান নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি: প্রতিযোগিতার কারণে কৃষিপণ্যের মান ও প্যাকেজিং উন্নত হতে পারে।

কৌশলগত সুপারিশ

১. অগ্রাধিকার দেশীয় কৃষকদের: যেকোনো বাজার উন্মুক্ত করার আগে দেশীয় কৃষকদের ভর্তুকি, সহায়তা ও প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হবে।

২. ধাপে ধাপে উন্মুক্ত করা: পুরো বাজার একবারে উন্মুক্ত না করে, নির্দিষ্ট পণ্য ও অঞ্চলভিত্তিক ধাপে ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

৩. রপ্তানিমুখী কৃষি নীতিমালা: উন্নত দেশগুলোতে রপ্তানির সুবিধা বিবেচনায় দেশের কৃষিপণ্যকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে।

কৃষকদের রক্ষা

বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর উন্নয়নশীল দেশ। তাই কৃষিপণ্যের বাজার উন্নত দেশগুলোর জন্য হঠাৎ করে উন্মুক্ত করা কোনো বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত হবে না। বরং এ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, গবেষণা এবং দেশীয় কৃষকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষকের স্বার্থ এবং জাতীয় অর্থনৈতিক ভারসাম্য — এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখেই যেকোনো বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।

বাংলাদেশের কৃষিকে উন্নত করতে চাইলে প্রথমে দেশের কৃষকদের রক্ষা করতে হবে। তারপর বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে হবে। বাজার উন্মুক্ত করার বিষয়টি তখনই বিবেচনায় আনা যেতে পারে, যখন দেশীয় কৃষি খাত প্রস্তুত থাকবে এই প্রতিযোগিতার জন্য।