পারিবারিক রুটিনে একটু পরিবর্তন
সপ্তাহের পাঁচটি দিন কর্মব্যস্ততায় কেটে যায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাবা অফিসে, মা বাসার কাজে ব্যস্ত, সন্তান স্কুল আর কোচিংয়ে ছুটছে। এমতাবস্থায় পরিবারের একত্র সময় কাটানোটা ক্রমশ কমে আসে। তাই অনেক ছোট পরিবার সপ্তাহান্তে একটু স্বস্তির সময় কাটাতে চায় বাইরে কোথাও—হোক তা পার্কে, সিনেমা হলে কিংবা কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে একসাথে খাওয়াদাওয়া করে।
এই প্রতিবেদনটি এমনই এক মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প, যারা ঢাকার ভেতরে একটি ভালো হোটেলে ডিনারের পরিকল্পনা করেছে এক শনিবার সন্ধ্যায়। পরিকল্পনার পেছনের যুক্তি, খরচের হিসাব ও হোটেল বাছাই এবং সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি—সব কিছুই তুলে ধরা হয়েছে।
চরিত্র পরিচিতি: একটি তিন সদস্যের পরিবার
ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর এলাকার একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকেন মাসুদ হোসেন (৩৯), পেশায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ। স্ত্রী ফারহানা কবির (৩৫) একজন গৃহিণী ও অনলাইন বুটিক ব্যবসায়ী। তাদের একমাত্র সন্তান আদিবা (৯), ক্লাস ফোরে পড়ে। সারাদিন ব্যস্ততার পর সপ্তাহান্তে কিছু আনন্দের মুহূর্ত চায়, তাই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শনিবার রাতে ঢাকার কোনো ভালো মানের হোটেলে ডিনার করবেন।
পরিকল্পনার সূচনা: শুক্রবার সন্ধ্যার পারিবারিক আলোচনা
শুক্রবার রাতে, ডিনারের টেবিলে বসেই আলোচনাটি শুরু হয়। মাসুদ বলেন,
“অনেক দিন একসাথে বাইরে খাওয়া হয় না। কাল সন্ধ্যায় কোথাও ডিনার করলে কেমন হয়?”
ফারহানা সঙ্গে সঙ্গেই সাড়া দেন,
“ভালোই তো হবে। কোথায় যাওয়া যায় বলো?”
আদিবা তাড়াতাড়ি বলে ওঠে,
“আমি ‘পান্থপথের পিপলস হোটেলে’ যেতে চাই! ওখানে বাচ্চাদের প্লে-জোনও আছে।”
সবার মতামত নিয়ে ঠিক হয়, পরদিন সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর থেকে পান্থপথে গিয়ে পিপলস হোটেলের রুফটপ রেস্টুরেন্টে ডিনার করা হবে।
হোটেল নির্বাচন: মান, বাজেট ও দূরত্বের হিসাব
তিনটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই হোটেল বাছাই করে মাসুদ ও ফারহানা—
১. পরিবেশ ও খাবারের মান: তারা চায় এমন জায়গা যেখানে নিরিবিলি পরিবেশ থাকবে, এবং উচ্চমানের খাবার পাওয়া যাবে।
২. বাজেট: মাসুদ বলেন,
“তিন জনের জন্য বাজেট পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার ভেতরে রাখব। বেশি হলে মাসের হিসাব গড়বড় হয়ে যাবে।”
৩. লোকেশন ও যাতায়াত: ঢাকার ভীষণ জ্যাম মাথায় রেখেই মোহাম্মদপুর থেকে বেশি দূরে নয় এমন জায়গা নির্বাচন করেন তারা। পান্থপথ, ধানমণ্ডি, নীলক্ষেত—এই এলাকাগুলোর হোটেল তারা গুগলে দেখে। অবশেষে পান্থপথের পিপলস হোটেল বেছে নেয় কারণ সেখানে ছাদে খোলা পরিবেশে বসার ব্যবস্থা রয়েছে।
রিজার্ভেশন ও প্রস্তুতি
শনিবার সকালেই ফারহানা ফোন করে রিজার্ভেশন করে নেন। তিনি হোটেলের স্টাফের কাছে বাচ্চা ফ্রেন্ডলি জায়গার ব্যবস্থা চেয়ে নেন। বিকেল চারটার দিকে সবাই গোছগাছ শুরু করে। আদিবা তার প্রিয় পোশাক পরে নেয়, ফারহানা হালকা সাজে সজ্জিত হন। মাসুদ ট্রাফিক এড়াতে উবার প্রি-বুক করে রাখেন।
ডিনার অভিজ্ঞতা: পরিবারের একসাথে সময় কাটানো
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় তারা হোটেলে পৌঁছে যায়। হোটেলের রুফটপে বসে ঢাকার আলো ঝলমলে রাতের দৃশ্য দেখতে দেখতে খাবারের অর্ডার দেয়—বিরিয়ানি, চিকেন ক্যাসারোল, কাবাব প্লেট আর আদিবার জন্য পাস্তা ও জুস।
খাবার আসতে কিছুটা সময় নেয়, তাই ফারহানা আর মাসুদ নিজেদের অফিস-বাসার নানা গল্প করেন, আদিবা পাশের প্লে-জোনে গিয়ে কয়েকজন বাচ্চার সঙ্গে খেলতে থাকে। এক ঘণ্টার মধ্যে খাবার এসে যায় এবং সবাই খুশিমনে খাওয়া শেষ করে।
খরচের হিসাব
তিন জনের খাবার ও সার্ভিস চার্জসহ বিল আসে মোট ৪৮০০ টাকা। মাসুদ বলেন,
“খরচটা একটু বেশি হলেও মনের প্রশান্তি পেয়েছি। আদিবার হাসিটা আজ সবকিছুর চেয়ে বড়।”
ডিনারের পরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি
হোটেল থেকে বের হয়ে নিকটবর্তী সায়েন্স ল্যাব মোড়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে তারা। এরপর উবারে করে রাত ৯টা ৩০ মিনিটে বাসায় ফেরে।
ছোট পরিকল্পনাতেও বড় আনন্দ
ছোট একটি পরিকল্পনাই যদি সবার মন ভালো করে দেয়, তাহলে সেটাই তো সবচেয়ে বড় পাওয়া। মাসুদ, ফারহানা ও আদিবার মতো অনেক ছোট পরিবারই ঢাকায় ছুটির দিনে রেস্তোরাঁয় ডিনার করে নিজেদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেন।
অর্থনীতি যত কঠিনই হোক, মাঝেমধ্যে একসাথে সময় কাটানোর এই মুহূর্তগুলোই পরিবারে ভালোবাসার আসল ভিত্তি তৈরি করে।
ঢাকার ব্যস্ত জীবনে ছোট একটি পরিবার সপ্তাহান্তে বাইরে ডিনার করে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আবার নতুন সপ্তাহ শুরু করে। হোটেল নির্বাচনের বুদ্ধিমত্তা, খরচ সচেতনতা ও পারিবারিক সমঝোতার মাধ্যমে এই ডিনার হয়ে ওঠে একটি মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা।
একটি পরিবার যদি আন্তরিক হয়, তবে ব্যস্ত শহর ঢাকার মাঝেও সামান্য পরিকল্পনায় পাওয়া যায় অমূল্য সুখ।