চলচ্চিত্র নির্মাণের জগতে, বিশেষ করে স্বাধীন ও নতুন নির্মাতাদের জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়াই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। একদিকে প্রয়োজন অর্থ, অন্যদিকে প্রমাণ করতে হয় যে আপনি সেই অর্থ বিনিয়োগের যোগ্য। জাপানকে যদিও অনেক সময় স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য স্বর্গ বলা হয়, বাস্তবে প্রথম কয়েক ধাপের বাধা এখানেও বিশ্বের অন্য প্রান্তের মতোই কঠিন।
১৯৯০-এর দশকের গোড়ায় অর্থনৈতিক বুদবুদ ভেঙে পড়ার পর থেকে জাপানে চলচ্চিত্রের বাজেট ধারাবাহিকভাবে কমছে। বিজ্ঞাপনদাতাদের টেলিভিশনে বিনিয়োগ হ্রাস এবং থিয়েটারে মুক্তি পাওয়া কাজ থেকে অনলাইন কনটেন্টে ঝোঁক বাড়ায়, গত দশ বছরে গড় বাজেট ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। বর্তমানে ছোট বাজেটের অধিকাংশ চলচ্চিত্র প্রায় তিন লাখ মার্কিন ডলারে নির্মিত হয়। নতুন কোনো নির্মাতার জন্য হাতে এ পরিমাণ অর্থ থাকা বিরল।
এ অবস্থায় ইন্টারনেটের সবচেয়ে বিতর্কিত প্রযুক্তি—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই—অনেক স্বাধীন নির্মাতার কাছে নতুন আশা নিয়ে এসেছে। কারণ, চলচ্চিত্র একা বানানো যায় না; চিত্রনাট্যের পাশাপাশি লাগে শিল্প নির্দেশনা, লোকেশন, পোশাক, অভিনেতা এবং টেকনিক্যাল টিম। বন্ধুবান্ধব দিয়ে হয়তো এক-দুটি প্রকল্প করা যায়, কিন্তু মূলধারায় প্রবেশ করতে আরও অনেক কাজের প্রয়োজন হয়, যা নতুন স্পনসর না পেলে অসম্ভব।

তবে এআই এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ধারাবাহিক চরিত্র তৈরি, ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল নির্বাচন বা টাইমিং ঠিক করার মতো জটিলতা এখনো পুরোপুরি সমাধান হয়নি। কিন্তু সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে—অনেকেই তাঁদের পুরনো চিত্রনাট্য ঝেড়ে-মুছে প্রস্তুত করছেন ভবিষ্যতের জন্য।
অবশ্যই, এআই নিয়ে আপত্তি যথেষ্ট যৌক্তিক। সম্প্রতি চ্যাটজিপিটি যেকোনো ছবি ‘গিবলি’ স্টাইলে রূপান্তর করার ক্ষমতা দেখালে শিল্পীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কিংবদন্তি পরিচালক হায়াও মিয়াজাকি একসময় এআই-নির্মিত একটি জম্বি অ্যানিমেশনকে ‘আলসেমির কাজ’ বলে সমালোচনা করেছিলেন। অভিনেতাদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে—তাঁদের কণ্ঠস্বর ও চেহারা অনুমতি ছাড়া ব্যবহার হতে পারে, যা তাঁদের কাজের সুযোগ ও পারিশ্রমিক কমিয়ে দিতে পারে। একইভাবে বিশেষ প্রভাবশিল্পী, ক্যামেরা অপারেটর এবং ঐতিহ্যবাহী অ্যানিমেশন শিল্পীরাও কর্মসংস্থান হারানোর ভয় পাচ্ছেন।
আমার দৃষ্টিতে, আসল সমস্যা এআই নয়—বরং চুরি ও অসততা। এই সমস্যার সমাধান নৈতিক নীতি মেনে চলার মাধ্যমে সম্ভব। প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য স্পষ্ট নৈতিক মানদণ্ড থাকা জরুরি; মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে; এবং এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
মানুষের রুচি ও বিচারবোধই এখানে শেষ কথা। দর্শক সহজেই বুঝতে পারে কোনটি মৌলিক সৃজনশীলতা এবং কোনটি নিছক নকল। যখন এআইকে মৌলিকতা বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তখন তা দর্শকের জন্য আনন্দ ও অনুপ্রেরণা বয়ে আনে। জাপানে এখনো টোকুসাতসু ধরনের প্র্যাকটিক্যাল ইফেক্ট-ভিত্তিক শোগুলোর জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে, অনেকেই স্পর্শযোগ্য ও বাস্তব প্রযোজনা পছন্দ করেন।

বর্তমানে আমি যে চলচ্চিত্রে কাজ করছি, তাতে আংশিকভাবে এআই ব্যবহার করা হচ্ছে। সব পোশাক, সেট ও প্রপস হাতে আঁকা ডিজিটাল শিল্পকর্ম, যা আলাদাভাবে কম্পিউটারে ইনপুট দেওয়া হয়। লাইভ-অ্যাকশন দৃশ্যে যখন কোনো অভিনেতা চেয়ারে বসেন, এআই সেই চেয়ারকে পূর্বনির্ধারিত শিল্পকর্মে রূপ দেয়। এই পদ্ধতিতে কোনো চুরি হয় না, এবং মানবশিল্পী, অভিনেতা, সংগীতশিল্পী—সবাই অপরিহার্য সদস্য হিসেবে কাজ করেন।
আমার পরবর্তী স্বপ্ন একটি জিদাইগেকি (ঐতিহাসিক) চলচ্চিত্র নির্মাণ, যা হেইয়ান যুগে (৭৯৪–১১৮৫) প্রেক্ষাপটে হবে। বড় বাজেটের প্রয়োজন হলেও, একই বন্ধ-চক্র এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি সম্ভব হতে পারে। বিজ্ঞান কল্পকাহিনি, মৎস্যকন্যা বা শারীরিক পরিবর্তনের মতো জটিল গল্প বলার জন্য এ পদ্ধতি স্বাধীন নির্মাতাদের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে।
চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মাথায় অসংখ্য গল্প থাকে, কিন্তু সময় ও অর্থ সীমিত। যত দ্রুত এবং কম খরচে একটি চিত্রনাট্যকে চলচ্চিত্রে রূপ দেওয়া যায়, তত দ্রুত দর্শক তা দেখতে পাবেন এবং আমরা পরবর্তী প্রকল্পে যেতে পারব। আমার বর্তমান প্রকল্প প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় এক-চতুর্থাংশ সময়ে শেষ হবে। মান যে অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত তা অস্বীকার করছি না—কিন্তু সেটি নির্ধারণের ক্ষমতা দর্শকের হাতে থাকা উচিত। আর আমাদের উচিত সব ধরনের সম্ভাব্য প্রযুক্তি, অবশ্যই নৈতিকভাবে, ব্যবহার করে তাঁদের জন্য নতুন সৃষ্টিকর্ম উপহার দেওয়া।
লেখক: রিকি ওকান্ডা, টোকিও-ভিত্তিক পুরস্কারজয়ী টিভি ও চলচ্চিত্র পরিচালক
রিকি ওকান্ডা 


















