০২:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
তিন বছরের বিরতি শেষে মামামুর গ্রুপ প্রত্যাবর্তন, আসছে বিশ্ব ট্যুর বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ঢেউ, হাসপাতালে চাপ বাড়ছে স্ট্রেঞ্জার থিংস থেকে সেভেন্টিন: নভেম্বরে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে কী আসছে বাংলা সাহিত্য অবলম্বিত চলচ্চিত্র, সাইবারক্রাইম থ্রিলার ও আন্তর্জাতিক কনটেন্টে জমজমাট সপ্তাহ ক্যাটসআই: আধুনিক গার্ল গ্রুপের নতুন নকশা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাত ১০টার পর সব অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ পরিস্থিতি ভয়াবহ মোড় নিচ্ছে:রাজধানীর জনবহুল এলাকায় ধারাবাহিক ককটেল বিস্ফোরণ— আগুনে মোটরসাইকেল পুড়ে গেল গাজীপুরে চলন্ত বাসে হঠাৎ আগুন: অল্পের জন্য রক্ষা পেল যাত্রীরা গ্রেফতার ও বিচার থেকে আজীবন দায়মুক্তি পেলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান অফিসকেন্দ্রিক জীবনযাপন ও স্ট্রেস একসঙ্গে বাড়াচ্ছে ডায়াবেটিসের বিস্তার

গভীর সংকটে বাংলাদেশের পাঁচ-তারকা হোটেল

বাংলাদেশের আতিথেয়তা শিল্পের প্রতীক হিসেবে পরিচিত পাঁচ-তারকা হোটেল একসময় বিদেশি পর্যটক, কূটনৈতিক প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী ও উচ্চবিত্ত দেশীয় অতিথিদের জন্য ছিল প্রধান গন্তব্য। ঢাকার বিলাসবহুল লবিতে ব্যস্ত রিসেপশন, চট্টগ্রামের সমুদ্রপাড়ে বিদেশি অতিথির ভিড় ছিল নিত্যদিনের চিত্র। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দা, আমদানি জটিলতা ও দক্ষ জনবল সংকটের কারণে এই সেক্টর গভীর সংকটে পড়েছে। বুকিং কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক মানের সেবা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং অনেক হোটেল লোকসান গুনছে। এই পরিস্থিতি দেশের পর্যটন ও বিনিয়োগ ভাবমূর্তির জন্যও বড় হুমকি।

BIHA gets new committee | News | Bangladesh Sangbad Sangstha (BSS)

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভ্রমণ সতর্কতা

২০২৪ সালের মাঝামাঝি কোটা আন্দোলন, সহিংসতা ও অবরোধের ফলে দেশে ভ্রমণকারীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। বিদেশি দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণ সীমিত করতে বলে। ফলে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের লাক্সারি হোটেলগুলোর বুকিং প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, ইভেন্ট ও কর্পোরেট ট্রাভেল বাতিল হওয়ায় হোটেল আয়ে তীব্র ধস নামে।

বুকিং ও আয়ের পতনকিন্তু ব্যয় অপরিবর্তিত

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন (BIHA) জানিয়েছে, অনেক হোটেলের বোডারের হার নেমে এসেছে মাত্র ২০-৩০ শতাংশে। অথচ হোটেল পরিচালনার নিরবচ্ছিন্ন খরচ—কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ-পানি বিল, ঋণের সুদ, রক্ষণাবেক্ষণ—কমানো সম্ভব হয়নি। ফলে আয়-ব্যয়ের ব্যবধান বেড়ে গিয়ে একাধিক হোটেল বাধ্য হয়ে লোকসান মেনে চলছে।

আগামী বছর শেষ হওয়ার আগে মূল্যস্ফীতি কমছে না: অর্থ মন্ত্রণালয় | The Business Standard

আমদানিনির্ভর সরবরাহ ব্যবস্থা ও ব্যয় বৃদ্ধি

আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে পাঁচ-তারকা হোটেলগুলো অনেকাংশে আমদানিনির্ভর। স্থানীয় বাজারে মানসম্মত পণ্য থাকা সত্ত্বেও তারা Wagyu বা Angus গরুর মাংস, স্যামন মাছ, বিদেশি চিজ ইত্যাদি আমদানি করে। কিন্তু ডলার সংকট, এলসি খোলার জটিলতা ও আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির কারণে সরবরাহ চেইনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক উপকরণ সময়মতো আসছে না, আর এলেও দাম বেড়ে যাওয়ায় মেনুর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দক্ষ জনবলের ঘাটতি

আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে প্রশিক্ষিত কর্মীর প্রয়োজন, কিন্তু বাংলাদেশে দক্ষ জনবল সংকট গুরুতর। সমীক্ষা বলছে, প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ কর্মীর যোগাযোগ দক্ষতা ও সেবা প্রদানের মান আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছায় না। বিদেশি ভাষাজ্ঞান, আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা ও পেশাদার রান্নার দক্ষতার অভাব হোটেলের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান দুর্বল করছে, ফলে বিদেশি অতিথিরা অনেক সময় হতাশ হচ্ছেন।

অর্থনৈতিক মন্দা ও দেশীয় অতিথি হ্রাস

মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে দেশীয় ধনী ও মধ্যবিত্তদের পাঁচ-তারকা হোটেলে যাতায়াত কমে গেছে। আগে যারা সাপ্তাহিক ছুটি বা অবকাশে বিলাসবহুল হোটেলে থাকতেন, তারা এখন খরচ বাঁচাতে বিকল্প বেছে নিচ্ছেন। ফলে দেশীয় বাজারও সংকুচিত হয়েছে।

রিজার্ভ বাড়াতে ১১ ব্যাংক থেকে ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রভাব

এই সংকটের প্রভাব শুধু মালিকদের নয়, বরং হাজার হাজার কর্মী ও সংশ্লিষ্ট সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর পড়ছে। অনেক কর্মী চাকরি হারাচ্ছেন বা বেতন কম পাচ্ছেন। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, পর্যটন পরিবহন, লন্ড্রি, ফুল ও খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে বাংলাদেশের সুনাম কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যা ভবিষ্যতের বিনিয়োগ ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

সম্ভাব্য সমাধান

 রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ভ্রমণ পরিবেশ তৈরি করা।
দেশীয় মানসম্মত পণ্যের ব্যবহার বাড়িয়ে আমদানিনির্ভরতা কমানো।
দক্ষ জনবল তৈরিতে প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম চালু করা।
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রমোশনাল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নিরাপদ ও আকর্ষণীয় গন্তব্য  হিসেবে তুলে ধরা।
কর ও শুল্কে বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে হোটেলের খরচ কমানো।

পাঁচ-তারকা হোটেল খাত দেশের পর্যটন, বিনিয়োগ পরিবেশ ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সংকট দীর্ঘ হলে তা শুধু অর্থনীতিতেই নয়, বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থানেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই সরকার, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগে এই খাতকে রক্ষা করা জরুরি।

জনপ্রিয় সংবাদ

তিন বছরের বিরতি শেষে মামামুর গ্রুপ প্রত্যাবর্তন, আসছে বিশ্ব ট্যুর

গভীর সংকটে বাংলাদেশের পাঁচ-তারকা হোটেল

০৩:৪১:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

বাংলাদেশের আতিথেয়তা শিল্পের প্রতীক হিসেবে পরিচিত পাঁচ-তারকা হোটেল একসময় বিদেশি পর্যটক, কূটনৈতিক প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী ও উচ্চবিত্ত দেশীয় অতিথিদের জন্য ছিল প্রধান গন্তব্য। ঢাকার বিলাসবহুল লবিতে ব্যস্ত রিসেপশন, চট্টগ্রামের সমুদ্রপাড়ে বিদেশি অতিথির ভিড় ছিল নিত্যদিনের চিত্র। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দা, আমদানি জটিলতা ও দক্ষ জনবল সংকটের কারণে এই সেক্টর গভীর সংকটে পড়েছে। বুকিং কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক মানের সেবা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং অনেক হোটেল লোকসান গুনছে। এই পরিস্থিতি দেশের পর্যটন ও বিনিয়োগ ভাবমূর্তির জন্যও বড় হুমকি।

BIHA gets new committee | News | Bangladesh Sangbad Sangstha (BSS)

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভ্রমণ সতর্কতা

২০২৪ সালের মাঝামাঝি কোটা আন্দোলন, সহিংসতা ও অবরোধের ফলে দেশে ভ্রমণকারীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। বিদেশি দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণ সীমিত করতে বলে। ফলে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের লাক্সারি হোটেলগুলোর বুকিং প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, ইভেন্ট ও কর্পোরেট ট্রাভেল বাতিল হওয়ায় হোটেল আয়ে তীব্র ধস নামে।

বুকিং ও আয়ের পতনকিন্তু ব্যয় অপরিবর্তিত

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন (BIHA) জানিয়েছে, অনেক হোটেলের বোডারের হার নেমে এসেছে মাত্র ২০-৩০ শতাংশে। অথচ হোটেল পরিচালনার নিরবচ্ছিন্ন খরচ—কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ-পানি বিল, ঋণের সুদ, রক্ষণাবেক্ষণ—কমানো সম্ভব হয়নি। ফলে আয়-ব্যয়ের ব্যবধান বেড়ে গিয়ে একাধিক হোটেল বাধ্য হয়ে লোকসান মেনে চলছে।

আগামী বছর শেষ হওয়ার আগে মূল্যস্ফীতি কমছে না: অর্থ মন্ত্রণালয় | The Business Standard

আমদানিনির্ভর সরবরাহ ব্যবস্থা ও ব্যয় বৃদ্ধি

আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে পাঁচ-তারকা হোটেলগুলো অনেকাংশে আমদানিনির্ভর। স্থানীয় বাজারে মানসম্মত পণ্য থাকা সত্ত্বেও তারা Wagyu বা Angus গরুর মাংস, স্যামন মাছ, বিদেশি চিজ ইত্যাদি আমদানি করে। কিন্তু ডলার সংকট, এলসি খোলার জটিলতা ও আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির কারণে সরবরাহ চেইনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক উপকরণ সময়মতো আসছে না, আর এলেও দাম বেড়ে যাওয়ায় মেনুর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দক্ষ জনবলের ঘাটতি

আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে প্রশিক্ষিত কর্মীর প্রয়োজন, কিন্তু বাংলাদেশে দক্ষ জনবল সংকট গুরুতর। সমীক্ষা বলছে, প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ কর্মীর যোগাযোগ দক্ষতা ও সেবা প্রদানের মান আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছায় না। বিদেশি ভাষাজ্ঞান, আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা ও পেশাদার রান্নার দক্ষতার অভাব হোটেলের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান দুর্বল করছে, ফলে বিদেশি অতিথিরা অনেক সময় হতাশ হচ্ছেন।

অর্থনৈতিক মন্দা ও দেশীয় অতিথি হ্রাস

মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে দেশীয় ধনী ও মধ্যবিত্তদের পাঁচ-তারকা হোটেলে যাতায়াত কমে গেছে। আগে যারা সাপ্তাহিক ছুটি বা অবকাশে বিলাসবহুল হোটেলে থাকতেন, তারা এখন খরচ বাঁচাতে বিকল্প বেছে নিচ্ছেন। ফলে দেশীয় বাজারও সংকুচিত হয়েছে।

রিজার্ভ বাড়াতে ১১ ব্যাংক থেকে ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রভাব

এই সংকটের প্রভাব শুধু মালিকদের নয়, বরং হাজার হাজার কর্মী ও সংশ্লিষ্ট সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর পড়ছে। অনেক কর্মী চাকরি হারাচ্ছেন বা বেতন কম পাচ্ছেন। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, পর্যটন পরিবহন, লন্ড্রি, ফুল ও খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে বাংলাদেশের সুনাম কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যা ভবিষ্যতের বিনিয়োগ ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

সম্ভাব্য সমাধান

 রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ভ্রমণ পরিবেশ তৈরি করা।
দেশীয় মানসম্মত পণ্যের ব্যবহার বাড়িয়ে আমদানিনির্ভরতা কমানো।
দক্ষ জনবল তৈরিতে প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম চালু করা।
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রমোশনাল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নিরাপদ ও আকর্ষণীয় গন্তব্য  হিসেবে তুলে ধরা।
কর ও শুল্কে বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে হোটেলের খরচ কমানো।

পাঁচ-তারকা হোটেল খাত দেশের পর্যটন, বিনিয়োগ পরিবেশ ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সংকট দীর্ঘ হলে তা শুধু অর্থনীতিতেই নয়, বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থানেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই সরকার, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগে এই খাতকে রক্ষা করা জরুরি।