০৭:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
কিছু রাজনৈতিক দলের পদক্ষেপ জনগণের অধিকার বিপন্ন করতে পারে: তারেক রহমান নাইজেরিয়া বন্যপ্রাণী পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আইন পাস করল মাইক্রোসফট ও জি৪২ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ডেটা-সেন্টার বিস্তার ঘোষণা বড় টেকের চাপের মুখে ইইউ এইআই আইন বাস্তবায়ন বিলম্বে বিবেচনায় বাংলাদেশ আমেরিকা থেকে গম কিনছে, বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতে বড় পদক্ষেপ ব্লেক লাইভলির মামলায় সাক্ষী টেইলর সুইফট ও হিউ জ্যাকম্যান; ক্ষতিপূরণের দাবি ১৬১ মিলিয়ন ডলার ডাক রাশ্মিকার ‘দ্য গার্লফ্রেন্ড’ প্রথম দিনেই ব্যর্থতার মুখে ৩ দফা দাবি: শহীদ মিনারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি গাজীপুরে তুলার গুদামে আগুন নিয়ন্ত্রণে

পেশার স্বার্থে নারীর অফিস ও ঘরে আপস: এক অবিরাম ভারসাম্যের লড়াই

আধুনিক সমাজে নারীরা শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নেতৃত্ব ও উদ্যোক্তা ক্ষেত্রে অসামান্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন। কিন্তু এই সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে আছে এক কঠিন বাস্তবতা—অফিস ও পরিবারের দ্বৈত দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে প্রায়ই তাদের নানা ক্ষেত্রে আপস করতে হয়। এই আপস কেবল ব্যক্তিগত নয়, সামাজিক ও কাঠামোগত সমস্যার সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত।

কর্মক্ষেত্রে আপসের বাস্তবতা

পেশাদার নারীরা কর্মক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, যা তাদের ক্যারিয়ার উন্নতিতে বাধা সৃষ্টি করে।

  • • পদোন্নতির সুযোগ থাকলেও দীর্ঘ সময় অফিসে থাকা বা ঘন ঘন ভ্রমণের শর্তে অনেক সময় তারা সেই সুযোগ ত্যাগ করেন।
  • • মাতৃত্বকালীন ছুটি বা শিশু লালন-পালনের কারণে ক্যারিয়ারের ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয়, যা বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতিতে প্রভাব ফেলে।
  • • দক্ষতা প্রমাণের জন্য প্রায়ই পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হয়।

গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা\' শিগগিরই চূড়ান্ত হবে

পরিবারের মধ্যে আপসের চ্যালেঞ্জ

অফিসের দায়িত্ব শেষ করেও নারীদের গৃহস্থালির কাজে সমান সক্রিয় থাকতে হয়।

  • • পরিবারের সদস্যদের খাবার প্রস্তুত, সন্তানদের পড়াশোনা, বয়স্কদের যত্ন নেওয়া—সবই তাদের দায়িত্বের অংশ।
  • • ব্যক্তিগত বিশ্রাম ও বিনোদনের সময় ত্যাগ করে পরিবারের চাহিদা মেটাতে হয়।
  • • আত্মীয়-স্বজন বা পরিবারের প্রত্যাশা থাকে যে নারীরা নিজের পেশাগত লক্ষ্য সীমিত রাখবেন।

মানসিক প্রভাব

দ্বৈত চাপ নারীর মানসিক স্বাস্থ্যে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।

  • • অফিসে সফল হওয়ার চাপ ও ঘরের দায়িত্ব মিলিয়ে মানসিক ক্লান্তি তৈরি হয়।
  • • অপরাধবোধে ভোগেন—অফিসে সময় বেশি দিলে মনে হয় পরিবার অবহেলিত, আর পরিবারে সময় বেশি দিলে মনে হয় পেশায় পিছিয়ে যাচ্ছেন।
  • • দীর্ঘমেয়াদে হতাশা, উদ্বেগ ও কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।

নারীদের গৃহস্থালি কাজের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণের সুপারিশ

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিবর্তনের প্রয়োজন

বাংলাদেশসহ অনেক সমাজে এখনও ধারণা রয়েছে—পরিবারের মূল দায়িত্ব নারীর, আর অর্থ উপার্জন পুরুষের। যদিও এই দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে, তবুও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি।

  • • কর্মক্ষেত্রে নমনীয় সময়সূচি, রিমোট ওয়ার্কের সুযোগ এবং সমান পদোন্নতির নীতি কার্যকর করা জরুরি।
  • • পারিবারিক কাজের সমান বণ্টন নিশ্চিত করতে পুরুষদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞ মতামত

মনোবিজ্ঞানী ডা. ফারাহ নাসরীন বলেন, “দ্বৈত দায়িত্বের কারণে পেশাদার নারীদের বার্নআউট হওয়া স্বাভাবিক। অফিস ও পরিবারের মধ্যে সুস্পষ্ট সীমারেখা তৈরি, পরিবারের সহায়তা গ্রহণ এবং নিজের জন্য সময় রাখা অপরিহার্য।”

নারীর ক্ষমতায়নে সামাজিক কাজের ভূমিকা । খবরের কাগজ

সমাজবিজ্ঞানী ড. মঞ্জুরা হক মনে করেন, “নারীর আপস কেবল ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, বরং সামাজিক কাঠামোর প্রতিফলন। নীতি ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনলেই প্রকৃত ভারসাম্য আসবে।”

পেশাদার নারীর জীবনে অফিস ও পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা এক অবিরাম সংগ্রাম। প্রতিদিনই তারা কিছু না কিছু ত্যাগ বা আপস করে এগিয়ে যান—কখনো পরিবারের জন্য পেশার সুযোগ হারান, আবার কখনো পেশার জন্য ব্যক্তিগত সময় বিসর্জন দেন। এই ভারসাম্য রক্ষায় পরিবার, কর্মক্ষেত্র ও রাষ্ট্র—সবার দৃষ্টিভঙ্গি ও ভূমিকার পরিবর্তন প্রয়োজন। তবেই একজন নারী তার পেশাগত সাফল্য ও ব্যক্তিগত সুখ—দুটোই সমানভাবে অর্জন করতে পারবেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

কিছু রাজনৈতিক দলের পদক্ষেপ জনগণের অধিকার বিপন্ন করতে পারে: তারেক রহমান

পেশার স্বার্থে নারীর অফিস ও ঘরে আপস: এক অবিরাম ভারসাম্যের লড়াই

০৪:৪৩:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

আধুনিক সমাজে নারীরা শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নেতৃত্ব ও উদ্যোক্তা ক্ষেত্রে অসামান্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন। কিন্তু এই সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে আছে এক কঠিন বাস্তবতা—অফিস ও পরিবারের দ্বৈত দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে প্রায়ই তাদের নানা ক্ষেত্রে আপস করতে হয়। এই আপস কেবল ব্যক্তিগত নয়, সামাজিক ও কাঠামোগত সমস্যার সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত।

কর্মক্ষেত্রে আপসের বাস্তবতা

পেশাদার নারীরা কর্মক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, যা তাদের ক্যারিয়ার উন্নতিতে বাধা সৃষ্টি করে।

  • • পদোন্নতির সুযোগ থাকলেও দীর্ঘ সময় অফিসে থাকা বা ঘন ঘন ভ্রমণের শর্তে অনেক সময় তারা সেই সুযোগ ত্যাগ করেন।
  • • মাতৃত্বকালীন ছুটি বা শিশু লালন-পালনের কারণে ক্যারিয়ারের ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয়, যা বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতিতে প্রভাব ফেলে।
  • • দক্ষতা প্রমাণের জন্য প্রায়ই পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হয়।

গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা\' শিগগিরই চূড়ান্ত হবে

পরিবারের মধ্যে আপসের চ্যালেঞ্জ

অফিসের দায়িত্ব শেষ করেও নারীদের গৃহস্থালির কাজে সমান সক্রিয় থাকতে হয়।

  • • পরিবারের সদস্যদের খাবার প্রস্তুত, সন্তানদের পড়াশোনা, বয়স্কদের যত্ন নেওয়া—সবই তাদের দায়িত্বের অংশ।
  • • ব্যক্তিগত বিশ্রাম ও বিনোদনের সময় ত্যাগ করে পরিবারের চাহিদা মেটাতে হয়।
  • • আত্মীয়-স্বজন বা পরিবারের প্রত্যাশা থাকে যে নারীরা নিজের পেশাগত লক্ষ্য সীমিত রাখবেন।

মানসিক প্রভাব

দ্বৈত চাপ নারীর মানসিক স্বাস্থ্যে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।

  • • অফিসে সফল হওয়ার চাপ ও ঘরের দায়িত্ব মিলিয়ে মানসিক ক্লান্তি তৈরি হয়।
  • • অপরাধবোধে ভোগেন—অফিসে সময় বেশি দিলে মনে হয় পরিবার অবহেলিত, আর পরিবারে সময় বেশি দিলে মনে হয় পেশায় পিছিয়ে যাচ্ছেন।
  • • দীর্ঘমেয়াদে হতাশা, উদ্বেগ ও কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।

নারীদের গৃহস্থালি কাজের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণের সুপারিশ

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিবর্তনের প্রয়োজন

বাংলাদেশসহ অনেক সমাজে এখনও ধারণা রয়েছে—পরিবারের মূল দায়িত্ব নারীর, আর অর্থ উপার্জন পুরুষের। যদিও এই দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে, তবুও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি।

  • • কর্মক্ষেত্রে নমনীয় সময়সূচি, রিমোট ওয়ার্কের সুযোগ এবং সমান পদোন্নতির নীতি কার্যকর করা জরুরি।
  • • পারিবারিক কাজের সমান বণ্টন নিশ্চিত করতে পুরুষদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞ মতামত

মনোবিজ্ঞানী ডা. ফারাহ নাসরীন বলেন, “দ্বৈত দায়িত্বের কারণে পেশাদার নারীদের বার্নআউট হওয়া স্বাভাবিক। অফিস ও পরিবারের মধ্যে সুস্পষ্ট সীমারেখা তৈরি, পরিবারের সহায়তা গ্রহণ এবং নিজের জন্য সময় রাখা অপরিহার্য।”

নারীর ক্ষমতায়নে সামাজিক কাজের ভূমিকা । খবরের কাগজ

সমাজবিজ্ঞানী ড. মঞ্জুরা হক মনে করেন, “নারীর আপস কেবল ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, বরং সামাজিক কাঠামোর প্রতিফলন। নীতি ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনলেই প্রকৃত ভারসাম্য আসবে।”

পেশাদার নারীর জীবনে অফিস ও পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা এক অবিরাম সংগ্রাম। প্রতিদিনই তারা কিছু না কিছু ত্যাগ বা আপস করে এগিয়ে যান—কখনো পরিবারের জন্য পেশার সুযোগ হারান, আবার কখনো পেশার জন্য ব্যক্তিগত সময় বিসর্জন দেন। এই ভারসাম্য রক্ষায় পরিবার, কর্মক্ষেত্র ও রাষ্ট্র—সবার দৃষ্টিভঙ্গি ও ভূমিকার পরিবর্তন প্রয়োজন। তবেই একজন নারী তার পেশাগত সাফল্য ও ব্যক্তিগত সুখ—দুটোই সমানভাবে অর্জন করতে পারবেন।