১০:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
কানাডায় অনিরাপদ বোধ করছেন ভারতীয়রা, উদ্বেগ জানালেন নয়াদিল্লির হাইকমিশনার নির্বাচন বানচালে হঠাৎ আক্রমণও হতে পারে জেএমবির তৎপরতার সময় বোয়ালমারীতে নির্মম হত্যাকাণ্ড—পলাতক চার আসামির অনুপস্থিতিতে আদালতের দণ্ডাদেশ সিলেটে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের ১১ দফা দাবি—ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়ক অবরোধ বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি সহযোগিতা ঘিরে ট্রাম্প–লি বৈঠক; বৃহস্পতিবার চীনা প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাৎ রেকর্ড বৃষ্টিপাতে ভিয়েতনামে ভয়াবহ বন্যা—নয়জনের মৃত্যু, নিখোঁজ পাঁচজন নেপাল ও তিব্বতে প্রচণ্ড তুষারঝড়ের কবলে হাজারো ট্রেকার; হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা, পর্যটন বন্ধ ঘোষণা সুপার হেডলাইন: ফটিকছড়িতে রহস্যজনক মৃত্যু— মা ও শিশুর মরদেহ উদ্ধার ছয় মাসেই সম্পন্ন হবে আইপিও প্রক্রিয়া—ডিএসইর ডিজিটাল রূপান্তরের ঘোষণা ডেঙ্গুতে আরও দুইজনের মৃত্যু; ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৯৬৪ জন

ভারতে বাংলাদেশি পাটপণ্য রপ্তানি কি বন্ধ হওয়ার পথে

ভারতে বাংলাদেশি পাটের চাহিদা আছে

ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে চার ধরনের পাটপণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করায় দেশটিতে বাংলাদেশি পাটপণ্য রপ্তানি কার্যত বন্ধ হয়ে গেলো কি-না সেই প্রশ্ন উঠছে।

এর আগে গত জুনে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর স্থলবন্দর ব্যবহার করে বেশ কিছু পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করায় এমনিতেই বাংলাদেশি পাট রপ্তানি সংকুচিত হয়ে এসেছিল।

সোমবার ভারত নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে করে এসব পণ্য ভারতে রপ্তানি করতে হলে সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ের নভসেবা বন্দর দিয়ে পাঠাতে হবে। যদিও সাশ্রয়ী হওয়ায় এসব পণ্যের প্রায় ৯৮ ভাগই স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হতো।

গত কয়েক বছর ধরে পোশাকের পর পাট ও পাটজাত পণ্যই ভারতে বেশি যাচ্ছিলো বাংলাদেশ থেকে। কিন্তু এখন শুধু সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানি কতটা অব্যাহত থাকে- তা নিয়ে উদ্বেগ আছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

পাটখাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে স্থলবন্দর ব্যবহার করে পাটপণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। তারা বলছেন, ভারতের এ সিদ্ধান্তের ফলে ‘যেটুকু পাটপণ্য ভারতে যাচ্ছিলো সেটাও এবার প্রায় বন্ধ হয়ে গেল’।

তবে ব্যবসায়ীদের একাংশ আবার মনে করেন, ভারত স্থলবন্দর ব্যবহার করে আমদানি নিষিদ্ধ করায় তাদের আমদানিকারকদের ব্যয় বাড়বে। এর ফলে পাটপণ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করছেন তারা।

অর্থনীতিবিদ ডঃ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনে খরচ অনেক বেশি হওয়ায় ভারতে বাংলাদেশি এসব পণ্যের চাহিদা কমবে এবং বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদেরও পণ্য মূল্যে বেশি ছাড় দিয়ে রপ্তানি করতে হবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন অবশ্য আজই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রায় তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।

নৌকায় পাটের বেল তুলছে শ্রমিকরা

ভারত প্রজ্ঞাপনে যা বলেছে

সোমবার দেয়া এই প্রজ্ঞাপনে চার ধরনের পাটপণ্য স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারতে আমদানি করা যাবেনা এবং এর ফলে শুধুমাত্র মুম্বাইয়ের নভসেবা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানি করতে হবে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশের যে চারটি পণ্যের ওপর ভারত আমদানি বিধিনিষেধ আরোপ করলো সেগুলো হলো: পাট ও পাটজাতীয় পণ্যের কাপড়, পাটের দড়ি বা রশি, পাটজাতীয় পণ্য দিয়ে তৈরি দড়ি বা রশি এবং পাটের বস্তা বা ব্যাগ।

ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য দফতরের এ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে।

এর আগে জুন মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে নয় ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো ভারত।

তখন স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করা এসব বাংলাদেশি পণ্যে মূলত পাট ও পাটজাত পণ্য বেশি। এর মধ্যে কাঁচা পাট, পাটের রোল, পাটের সুতা, একাধিক ভাঁজের বোনা কাপড়, একক শণ সুতা, পাটের একক সুতা ও বিশেষ ধরনের কাপড় রয়েছে এই তালিকায়।

ভারত এ ধরনের যে নয়টি পণ্যের ওপর স্থলবন্দর নিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে, এসব পণ্য থেকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় ছিলো প্রায় পনের কোটি ডলারের কাছাকাছি, যার প্রায় সবটাই স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পাঠানো হয়েছিলো।

রাজস্ব বোর্ডের হিসেবে, এই পনের কোটি ডলারের রফতানির মধ্যে মাত্র বিশ লাখ ডলারের রফতানি স্থলবন্দর দিয়ে হয়নি।

এর আগে গত মে মাসে স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়সহ কিছু পণ্যে আমদানিতে বিধিনিষেধ দিয়েছিল ভারত।

তারও আগে এপ্রিলের শুরুতে ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল ভারত।

এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ভারত সরকারের কাছে চিঠি পাঠালেও ভারত সরকার তাতে কোনো সাড়া দেয়নি।

বাংলাদেশে একটি পাটের বাজার

প্রভাব কেমন হবে?

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত একের পর এক বিধিনিষেধ দিয়ে বাংলাদেশের জন্য নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কারণ এখন সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য পাঠাতে হলেও সেগুলো কলম্বো বা সিঙ্গাপুর বন্দর হয়ে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে মুম্বাইয়ের বন্দরে যাবে।

ফলে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। আবার পাটভিত্তিক শিল্প কোলকাতা কেন্দ্রিক হওয়ায় বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য আবার মুম্বাই থেকে কলকাতা নিতে হবে। অথচ এতদিন বেনাপোল হয়ে সরাসরি কলকাতায় যাওয়ার সুযোগ ছিলো।

বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স এসোসিয়েশনের ডিরেক্টর ও রাজবাড়ী জুট মিলসের চেয়ারম্যান শেখ শামসুল আবেদিন বলছেন, জুনের নিষেধাজ্ঞার পরেও কিছু পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে যাচ্ছিলো, যা সোমবারের প্রজ্ঞাপনে বন্ধ হয়ে গেলো।

“আসলে যেটুকু যাচ্ছিলো সেটাও বন্ধ করে দেয়া হলো। এতে আমাদের ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হবে। আবার বাংলাদেশ থেকে পাটপণ্য নিয়ে নতুন করে পণ্য উৎপাদন করে তা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করতো ভারত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর ভারতে রপ্তানি হুমকির মুখে পড়ায় এমনি আমদানি কমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তবে বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফরহাদ আহমেদ আকন্দ বলছেন, ভারত এতদিন তাদের রপ্তানিকারকদের সুবিধা দিয়ে আসছিলো বলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছিলো না।

“এখন ওদের আমদানিকারকদের খরচ বাড়বে। ফলে ওদের জন্যই দাম বাড়বে। বেনাপোল দিয়ে নিলে তাদের এত খরচ বাড়তো না। তারা অন্য দেশে যেই পাটপণ্য বিক্রি করে সেসব জায়গায় বাংলাদেশের ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। নতুন বাজার সম্প্রসারণের জন্য একটি সুযোগ এসেছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

ভারতের সবশেষ প্রজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, সাধারণত পাট কিংবা পাটপণ্য পরিবহনে খরচ এমনিতেই তুলনামূলক বেশি হয় বলে স্থলপথে ভারতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি উভয় পক্ষের জন্য সুবিধাজনক বলে বিবেচিত হচ্ছিলো।

অর্থনীতিবিদ ডঃ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে আমদানি করলে ভারতীয় উৎপাদকদের ব্যয় ও পণ্য মূল্য বাড়বে।

“আবার এ খরচ বিবেচনায় নিলে কিছুটা মূল্য ছাড় দিতে হতে পারে রপ্তানিকারকদের। বাংলাদেশি পাটের মান ভালো হওয়ায় ভারতে এর চাহিদা আছে। ফলে ভারতের নতুন বিধিনিষেধের ফলে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি কমবে কিন্তু একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে হয় না,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তার মতে, ভারতের এসব বিধিনিষেধের নেতিবাচক প্রভাব থাকবে, তবে এর সমাধানের জন্য রাজনৈতিক সম্পর্কে স্থিতিশীলতা আসা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

“আমার ধারণা নির্বাচিত সরকার আসলে হয়তো নতুন করে এগুলো নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে স্থলপথে পণ্য রপ্তানি ও আমদানির পথ তৈরি হবে। এখন হয়তো সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি নেই। এ কারণে রাজনৈতিক পরিস্থিতির উত্তরণ জরুরি,” বলছিলেন মি. মোয়াজ্জেম।

প্রসঙ্গত, পাট অধিদফতরের হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ১২টি দেশে প্রায় ১০৯৭ কোটি টাকার কাঁচাপাট রপ্তানি হয়েছিলো। এর মধ্যে ভারতেই রপ্তানি হয়েছে ৭০৯ কোটি টাকার পাট।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আজ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সচিবালয়ে বলেছেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলেও ভারত সরকার তাতে কোনো সাড়া দেয়নি।

বিবিসি নিউজ বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

কানাডায় অনিরাপদ বোধ করছেন ভারতীয়রা, উদ্বেগ জানালেন নয়াদিল্লির হাইকমিশনার

ভারতে বাংলাদেশি পাটপণ্য রপ্তানি কি বন্ধ হওয়ার পথে

০৩:২৩:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫

ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে চার ধরনের পাটপণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করায় দেশটিতে বাংলাদেশি পাটপণ্য রপ্তানি কার্যত বন্ধ হয়ে গেলো কি-না সেই প্রশ্ন উঠছে।

এর আগে গত জুনে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর স্থলবন্দর ব্যবহার করে বেশ কিছু পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করায় এমনিতেই বাংলাদেশি পাট রপ্তানি সংকুচিত হয়ে এসেছিল।

সোমবার ভারত নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে করে এসব পণ্য ভারতে রপ্তানি করতে হলে সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ের নভসেবা বন্দর দিয়ে পাঠাতে হবে। যদিও সাশ্রয়ী হওয়ায় এসব পণ্যের প্রায় ৯৮ ভাগই স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হতো।

গত কয়েক বছর ধরে পোশাকের পর পাট ও পাটজাত পণ্যই ভারতে বেশি যাচ্ছিলো বাংলাদেশ থেকে। কিন্তু এখন শুধু সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানি কতটা অব্যাহত থাকে- তা নিয়ে উদ্বেগ আছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

পাটখাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে স্থলবন্দর ব্যবহার করে পাটপণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। তারা বলছেন, ভারতের এ সিদ্ধান্তের ফলে ‘যেটুকু পাটপণ্য ভারতে যাচ্ছিলো সেটাও এবার প্রায় বন্ধ হয়ে গেল’।

তবে ব্যবসায়ীদের একাংশ আবার মনে করেন, ভারত স্থলবন্দর ব্যবহার করে আমদানি নিষিদ্ধ করায় তাদের আমদানিকারকদের ব্যয় বাড়বে। এর ফলে পাটপণ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করছেন তারা।

অর্থনীতিবিদ ডঃ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনে খরচ অনেক বেশি হওয়ায় ভারতে বাংলাদেশি এসব পণ্যের চাহিদা কমবে এবং বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদেরও পণ্য মূল্যে বেশি ছাড় দিয়ে রপ্তানি করতে হবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন অবশ্য আজই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রায় তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।

নৌকায় পাটের বেল তুলছে শ্রমিকরা

ভারত প্রজ্ঞাপনে যা বলেছে

সোমবার দেয়া এই প্রজ্ঞাপনে চার ধরনের পাটপণ্য স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারতে আমদানি করা যাবেনা এবং এর ফলে শুধুমাত্র মুম্বাইয়ের নভসেবা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানি করতে হবে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশের যে চারটি পণ্যের ওপর ভারত আমদানি বিধিনিষেধ আরোপ করলো সেগুলো হলো: পাট ও পাটজাতীয় পণ্যের কাপড়, পাটের দড়ি বা রশি, পাটজাতীয় পণ্য দিয়ে তৈরি দড়ি বা রশি এবং পাটের বস্তা বা ব্যাগ।

ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য দফতরের এ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে।

এর আগে জুন মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে নয় ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো ভারত।

তখন স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করা এসব বাংলাদেশি পণ্যে মূলত পাট ও পাটজাত পণ্য বেশি। এর মধ্যে কাঁচা পাট, পাটের রোল, পাটের সুতা, একাধিক ভাঁজের বোনা কাপড়, একক শণ সুতা, পাটের একক সুতা ও বিশেষ ধরনের কাপড় রয়েছে এই তালিকায়।

ভারত এ ধরনের যে নয়টি পণ্যের ওপর স্থলবন্দর নিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে, এসব পণ্য থেকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় ছিলো প্রায় পনের কোটি ডলারের কাছাকাছি, যার প্রায় সবটাই স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পাঠানো হয়েছিলো।

রাজস্ব বোর্ডের হিসেবে, এই পনের কোটি ডলারের রফতানির মধ্যে মাত্র বিশ লাখ ডলারের রফতানি স্থলবন্দর দিয়ে হয়নি।

এর আগে গত মে মাসে স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়সহ কিছু পণ্যে আমদানিতে বিধিনিষেধ দিয়েছিল ভারত।

তারও আগে এপ্রিলের শুরুতে ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল ভারত।

এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ভারত সরকারের কাছে চিঠি পাঠালেও ভারত সরকার তাতে কোনো সাড়া দেয়নি।

বাংলাদেশে একটি পাটের বাজার

প্রভাব কেমন হবে?

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত একের পর এক বিধিনিষেধ দিয়ে বাংলাদেশের জন্য নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কারণ এখন সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য পাঠাতে হলেও সেগুলো কলম্বো বা সিঙ্গাপুর বন্দর হয়ে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে মুম্বাইয়ের বন্দরে যাবে।

ফলে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। আবার পাটভিত্তিক শিল্প কোলকাতা কেন্দ্রিক হওয়ায় বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য আবার মুম্বাই থেকে কলকাতা নিতে হবে। অথচ এতদিন বেনাপোল হয়ে সরাসরি কলকাতায় যাওয়ার সুযোগ ছিলো।

বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স এসোসিয়েশনের ডিরেক্টর ও রাজবাড়ী জুট মিলসের চেয়ারম্যান শেখ শামসুল আবেদিন বলছেন, জুনের নিষেধাজ্ঞার পরেও কিছু পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে যাচ্ছিলো, যা সোমবারের প্রজ্ঞাপনে বন্ধ হয়ে গেলো।

“আসলে যেটুকু যাচ্ছিলো সেটাও বন্ধ করে দেয়া হলো। এতে আমাদের ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হবে। আবার বাংলাদেশ থেকে পাটপণ্য নিয়ে নতুন করে পণ্য উৎপাদন করে তা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করতো ভারত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর ভারতে রপ্তানি হুমকির মুখে পড়ায় এমনি আমদানি কমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তবে বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফরহাদ আহমেদ আকন্দ বলছেন, ভারত এতদিন তাদের রপ্তানিকারকদের সুবিধা দিয়ে আসছিলো বলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছিলো না।

“এখন ওদের আমদানিকারকদের খরচ বাড়বে। ফলে ওদের জন্যই দাম বাড়বে। বেনাপোল দিয়ে নিলে তাদের এত খরচ বাড়তো না। তারা অন্য দেশে যেই পাটপণ্য বিক্রি করে সেসব জায়গায় বাংলাদেশের ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। নতুন বাজার সম্প্রসারণের জন্য একটি সুযোগ এসেছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

ভারতের সবশেষ প্রজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, সাধারণত পাট কিংবা পাটপণ্য পরিবহনে খরচ এমনিতেই তুলনামূলক বেশি হয় বলে স্থলপথে ভারতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি উভয় পক্ষের জন্য সুবিধাজনক বলে বিবেচিত হচ্ছিলো।

অর্থনীতিবিদ ডঃ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে আমদানি করলে ভারতীয় উৎপাদকদের ব্যয় ও পণ্য মূল্য বাড়বে।

“আবার এ খরচ বিবেচনায় নিলে কিছুটা মূল্য ছাড় দিতে হতে পারে রপ্তানিকারকদের। বাংলাদেশি পাটের মান ভালো হওয়ায় ভারতে এর চাহিদা আছে। ফলে ভারতের নতুন বিধিনিষেধের ফলে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি কমবে কিন্তু একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে হয় না,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তার মতে, ভারতের এসব বিধিনিষেধের নেতিবাচক প্রভাব থাকবে, তবে এর সমাধানের জন্য রাজনৈতিক সম্পর্কে স্থিতিশীলতা আসা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

“আমার ধারণা নির্বাচিত সরকার আসলে হয়তো নতুন করে এগুলো নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে স্থলপথে পণ্য রপ্তানি ও আমদানির পথ তৈরি হবে। এখন হয়তো সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি নেই। এ কারণে রাজনৈতিক পরিস্থিতির উত্তরণ জরুরি,” বলছিলেন মি. মোয়াজ্জেম।

প্রসঙ্গত, পাট অধিদফতরের হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ১২টি দেশে প্রায় ১০৯৭ কোটি টাকার কাঁচাপাট রপ্তানি হয়েছিলো। এর মধ্যে ভারতেই রপ্তানি হয়েছে ৭০৯ কোটি টাকার পাট।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আজ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সচিবালয়ে বলেছেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলেও ভারত সরকার তাতে কোনো সাড়া দেয়নি।

বিবিসি নিউজ বাংলা