১৫ আগস্ট ১৯৭৫ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয় বলেই অন্তত যারা বাঙালি তারা এই দিনটিকে শোকের দিন হিসেবে মনে করে। তবে বাংলাদেশের শতভাগ মানুষের এই বিশ্বাস নয়। কারণ, বাংলাদেশের শতভাগ মানুষ বাঙালি সংস্কৃতি নির্ভর জাতীয়তাবাদে এমনকি জাতিরাষ্ট্রে বিশ্বাসী নয়। যে কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড হয়তো তাঁর পরিবারের জীবিত সদস্য বা আত্মীয়স্বজনের কাছে একটি নির্মম হত্যাকাণ্ডের দিন ও শোকের দিন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে যারা বাঙালি সংস্কৃতি নির্ভর জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করেন, তাদের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের দিনটি শুধুমাত্র নির্মম হত্যাকাণ্ড ও শোকের দিন নয়, তাদের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ও বাংলাদেশের সংবিধানের মূল চরিত্র হারানোর দিন।
এর ভেতর দিয়ে প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশের মানুষের একটি শ্রেণী বাঙালি সংস্কৃতি নির্ভর জাতিরাষ্ট্র মেনে নেয়নি। এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে বাঙালি যে সংস্কৃতি নির্ভর জাতিরাষ্ট্র তৈরি করেছিল ওই বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দ। বঙ্গবন্ধু নিহত হবার ভেতর দিয়ে ওই বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তন হয়ে বাঙালি সংস্কৃতি নির্ভর জাতিরাষ্ট্র কনসেপ্টটি রাষ্ট্রীয় সংবিধান থেকে বাদ পড়ে গেছে।
এমন একটি ঘটনা যে বাংলাদেশ সৃষ্টি হবার পরে ঘটবে তা কিন্তু খুব অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলো না। ১৬ ডিসেম্বর যখন পাকিস্তানের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান নিয়াজি ভারত ও বাংলাদেশের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান জগজিত সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করে- সে সময়ে কলকাতায় বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের অফিসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বেসামরিক সেক্টর কমান্ডার গাজিউল হক। দুজনেই বন্ধু। গাজিউল হক গিয়ে দেখেন তাজউদ্দিন আহমদ মুখভার করে বসে আছেন। সেখানে দুজনের মধ্যে অনেক কথা হয়, তারমধ্যে তাজউদ্দিন আহমদের কথার একটি অংশ ছিলো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ- তিনি বলেছিলেন, দেখ গাজী, সাধারণত পৃথিবীর যে সব দেশে বিপ্লব হয়েছে- বেশিভাগ দেশেই কিন্তু বিপ্লবীরা বাঁচতে পারেনি। আর সেটা তুমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে আমার থেকে বেশি জানো। তাছাড়া আমরা দেশের সমগ্র মানুষকে এক করে এই বিপ্লব করতে পারিনি বা দেশকে স্বাধীন করতে পারিনি। তাই আজ থেকে আমাদের কাউন্ট ডাউন শুরু হলো- কবে আমরা নিহত হবো। কারণ, কোন বিপ্লবের বড় প্রতিপক্ষ থাকলে বিপ্লবীরা বাঁচতে পারে না।
গাজীউল হকের সঙ্গে পরবর্তী এ বিষয় নিয়ে অনেক ব্যক্তিগত আলাপ হয়েছে, আলাপ হয়েছে আব্দুস সামাদ আজাদের সঙ্গেও। তাঁকেও একই কথা বলেছিলেন, তাজউদ্দিন আহমদ। কিন্তু তাদের দু’জনের চিন্তা সেদিন ভিন্ন ছিলো, তাদের মত ছিলো বাঙালি সংস্কৃতি নির্ভর জাতীয়তাবাদী শক্তিটি শুধু বড় নয় তারা অনেক বেশি ডেডিকেটেড। তাই এই শক্তির ওপর আঘাত হানা শক্ত হবে। পরবর্তীতে গাজীউল হক ও সামাদ আজাদ দুজনেই বলতেন, তাদের চিন্তা আংশিক সত্য হয়েছে। আবার তাজউদ্দিনের চিন্তাও আংশিক সত্য হয়েছে। তাজউদ্দিন আহমদের চিন্তার সত্য অংশ হলো বঙ্গবন্ধু সহ বিপ্লবের অনেক নেতা বাঁচতে পারেননি। রাষ্ট্র ও সংবিধান থেকে বাঙালি সংস্কৃতি নির্ভর জাতীয়তাবাদকে বাদ দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে গাজীউল হক ও সামাদ আজাদের চিন্তার যে অংশ সঠিক হয়েছে তাহলো, বাংলাদেশে এককভাবে বাঙালি সংস্কৃতি নির্ভর জাতীয়তাবাদী শক্তিই বড় শক্তি। তাই বঙ্গবন্ধু , সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, মনসুর আলী সহ মূল নেতাদের হত্যা করেও বাঙালি সংস্কৃতি নির্ভর জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করা যায়নি।
বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষেত্রে যে এমন ঘটনা ঘটবে তা সেদিন অনেকেই নানানভাবে বলেন। যেমন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বজনমত গড়ার ক্ষেত্রে, ও জাতিসংঘে ভারতীয় দলের নেতা হিসেবে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৭১ সালের বিরোধী দলীয় নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ীর অনেক বড় ভূমিকা। তিনি বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্যে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইন্দিরা গান্ধীর দৃঢ় নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দেন- ইন্দিরা গান্ধীকে দেবী দুর্গার সঙ্গে তুলনা করে। আবার তিনি একথাও বলেন, ইউর ফাদার ক্রিয়েটেড ওয়ান পাকিস্তান ইউ ( ইন্দিরা গান্ধী) ক্রিয়েটেড টু পাকিস্তান।
অর্থাৎ বাংলাদেশ যে বদলে যাবে তা সে সময়ে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন অনেক নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের চিন্তায় ছিলো। যেমন ঐতিহাসিক সাঈদুর রহমান তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, হাজার বছরে কেউ বাঙালি জাতিকে এক করতে পারেনি- শেখ মুজিবই সেটা পেরেছেন কিন্তু তাকে যদি সহায়তা না করা হয় তাহলে এই ঐক্য থাকবে না। এবং তিনি ঐক্যের ও বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন ১৯৭২ সাল থেকেই।
ঠিকই একই ধরনের কথা বলেন, ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার, ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে। অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরার পরে কলকাতার মানুষের আমন্ত্রণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেদিন কলকাতায় গিয়েছিলেন। সেদিন কলকাতা আবেগে ভরপুর ছিলো। সেদিনের ওই আবেগের অর্থ ওই সময়ে বুঝতে পারেনি- এখন বুঝি। বাঙালির ঘরে আসলে তিনজন শীর্ষ নেতা জন্মে, চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাষ চন্দ্র বসু ও শেখ মুজিবুর রহমান। এদের ভেতর একমাত্র ওই সময় অবধি বিজয়ী ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাই আবেগ নির্ভর বাঙালি, এমনকি যারা পূর্ববাংলা থেকে ভিটে মাটি ছেড়ে নিঃস্ব অবস্থায় ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে তারাও সেদিন আবেগে টইটম্বুর ছিলেন। কিন্তু ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র ওই দিন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ( আকাশবানী) আবেগের বাইরে গিয়ে ভিন্ন কথা বলেছিলেন। একই ধরনের কথা বলেছিলেন, বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু ( সৈয়দ মুজতবা আলী বাংলাদেশের পূর্বদেশ পত্রিকায় ১৯৭২ সালের এক কলামে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ করে ব্রাকেটে লিখেছিলেন, উনি বহু ভাষাবিদ ও ভাষা বিশেষজ্ঞ ও ব্যাকরণবিদ ছিলেন – সৈয়দ মুজতবা আলীকে অনুকরণ করে তাই এখানে বলতে হয়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু- বোস অ্যান্ড আইনস্টাইন থিয়োরি ও বোসন কণা আবিষ্কারক বাঙালি বিজ্ঞানী) সেদিন ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার অল ইন্ডিয়া রেডিওতে যা বলেন, তা দীর্ঘদিন পরে ঐতিহাসিক মুনতাসীর মামুন তার বই “সুবিমল সময়ে” যুক্ত করেছেন- “ ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ঢাকায় কাটিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন, উপাচার্যও ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। তিনি ( রমেশচন্দ্র মজুমদার) বলেন, “ ওখানকার মানুষকে ভালো করে জানি, ওখানকার ইতিহাসও আমি বিশেষভাবে চর্চা করেছি। আমি যদি কিছুমাত্র ইতিহাস বুঝে থাকি তা’হলে বলব বাংলাদেশের পরিবেশ বেশিদিন শান্ত থাকবে না। নিজেদের মধ্যে কলহ করবে, সাম্প্রদায়িকতা মাথা চাড়া দেবে, অসাম্প্রদায়িক যে মনোভাব প্রাথমিকভাবে আছে তা নষ্ট হয়ে যাবে। বাংলাদেশে মিলিটারি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, বাংলাদেশের মাটি রক্তাক্ত হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর আক্রমণ আসবে। তাঁর জীবনও চলে যেতে পারে”। মুনতাসীর মামুনের সুবিমল সময়ে বিজ্ঞানী সত্যেন বসুর কথা এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে“বিজ্ঞানী সত্যেন বসু বলেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন পড়িয়েছেন, সেদেশের মানুষকে বিলক্ষণ চেনেন। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে না। ওই দেশেরই একদল মানুষ ওদেশের মানুষের জীবনে অশান্তি ডেকে আনবে”।
৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২, পরিবারের অনেকে একসঙ্গে বসে এই অনুষ্ঠান শুনেছিলাম, রমেশচন্দ্র মজুমদারের কথায় বাড়িতে একমাত্র একমত ছিলেন জ্যাঠামহাশয়। পক্স আক্রান্ত অবস্থায় মশারির ভেতর বসে তিনি মনোযোগ দিয়ে শুধু রমেশচন্দ্র মজুমদারের কথা শুনেছিলেন। এবং একমত ছিলেন।
সেদিনের সে কথা সত্যি ভুলে গিয়েছিলাম। মুনতাসীর মামুনের সুবিমল সময় পড়ার পরে নতুন করে আবার মনে পড়লো। মনে পড়লো একই ধরণের কথা বলেছিলেন আঁদ্রে মালরো। তিনিও এমনই বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু তার স্বদেশীদের হাতে নিহত হতে পারে। বলেছিলেন ফিদেল কাস্ত্রোও। এম আর আখতার মুকুল ও তোয়াব খানের কাছে শুনেছি, জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে গাদ্দাফিও নাকি বঙ্গবন্ধুকে একই কথা বলেছিলেন।
তবে আজ এ জীবনের প্রান্তের দিকে হেঁটে চলার বয়সে এসে অতি সামান্য পড়াশোনার মাধ্যমে বুঝি, আসলে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরে নিজের মূল ভিত্তি অর্থাৎ বাঙালি সংস্কৃতি নির্ভর জাতীয়তাবাদের ধারকদের ভিত্তিকে শক্তিশালী করার জন্যে কোন রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক কর্মসূচি নেননি। বরং তিনি প্রতিপক্ষকে তুষ্ট করতে চেয়েছিলেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনি তুষ্ট করতে চেয়েছিলেন, বাঙালি সংস্কৃতি নির্ভর এই স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলিম বিশ্বের যে দেশগুলো পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন তাদেরকেও । যে কারণে বাংলাদেশের সংবিধানকে অস্বীকার করে তিনি পাকিস্তানে ওআইসিতে যোগ দেন। এমনকি পাকিস্তান ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি না হওয়া, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত নেওয়ায় অস্বীকার করা, এমনকি ক্ষমা না চাওয়া সত্ত্বেও তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক করেন।
তার এই শেষোক্ত কাজ দেশের ভেতরের বাঙালি সংস্কৃতি নির্ভর জাতীয়তাবাদের বিপরীত শক্তিকে দ্রুত বেড়ে উঠতে ও তাঁকে হত্যা করতে সহায়তা করে। যে কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার পরে এক বছরও বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
যে শক্তির বলে বলিয়ান হয়ে তিনি দেশ স্বাধীন করেছিলেন কেন তিনি তাদেরকে সুসংগঠিত না করে প্রতিপক্ষ শক্তিকে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেন তা আজও অজানা। ভবিষ্যতের কোন গবেষক হয়তো সেটা খুঁজে বের করবে। তবে তার এই নিহত হওয়ার ঘটনা, ও সেই ঘটনার ভেতর দিয়ে দেশের সংবিধান ও রাষ্ট্রের চরিত্র বদলে যাবার ভেতর দিয়ে এই সত্য প্রমাণিত- বাঙালি সংস্কৃতি নির্ভর জাতীয়তাবাদী শক্তি যখনই দুর্বল হবে তখনই সাম্প্রদায়িক শক্তি মরণ আঘাত হানবে তাদের ওপর।
বিভক্ত এই জনগোষ্ঠী বা জাতিগোষ্ঠীতে তাই ১৫ আগস্ট কখনো জাতীয় শোক দিবস হয়, কখনও নাজাত দিবস হয়, কখনও ১৫ আগস্ট কেউ শোক পালন করলে শাস্তি পাবে- এ ফরমানও আসে। আর এটাই স্বাভাবিক। তার সঙ্গে সঙ্গে এই দেশ ও জাতিগোষ্ঠীতে এটাও স্বাভাবিক যে- এখানে যেমন ১৫ আগস্ট হয়েছে, তাঁর ভাস্কর্য ভাঙ্গা হয়েছে, তাঁর বাড়ি পুড়েছে, বুলডোজারে তাঁর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আবার এখনও এদেশের কোটি কোটি মানুষ তাঁর জন্যে চোখের পানি ফেলে। সর্বোপরি কেউ তাকে ডিঙাতে পারে না। তিনিই এ গাঙ্গেয় বঙ্গের একমাত্র হিরো।
তাঁকে নিয়ে লেখা নিউজউইকের পোয়েট অফ পলিটিক্স শিরোনামের রিপোর্টের একটি লাইন যার বাংলানুবাদ, “ সাধারণ বাঙালিদের থেকে তিনি অনেক বেশি দীর্ঘকায়” । আসলে রাজনীতি, নিজদেশ ও নিজে দেশের মানুষকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে তিনি অনেক বেশি দীর্ঘকায়- তার দিকে সত্যিকার চোখ মেলে যতই তাকানো যায় ততই তিনি এ ভূখণ্ডের মানুষের চরিত্রের তুলনায় অনেক বেশি দীর্ঘ হতে থাকেন নিজ চরিত্রগুণে। তাকে অতিক্রম করার আসলে কোন পথ নেই। তাকে ধ্বংস করারও কোন পথ নেই। তেমনি ধ্বংস করার কোন পথ নেই -তিনি যে সংস্কৃতি নির্ভর জাতীয়তাবাদী শক্তির পথরেখা তৈরি করে গেছেন- ওই পথরেখা এবং ওই শক্তিকে।
তবে এর পাশাপাশি এও সত্য, এ ভূখন্ডে আগামী এক হাজার বছরেও সকলে মিলে তার মৃত্যু দিবসে শোক পালন করতে পারবে- এ কথা কেউ বলবে না। তারপরেও সত্য হলো, এ ভূখন্ডের বাঙালি সংস্কৃতি নির্ভর জাতীয়তাবাদী ও মানবতাবাদী মানুষের কাছে তার মৃত্যু দিন- শোকের দিন।
আর রাষ্ট্রীয় চরিত্র ও রক্তের মাধ্যমে পাওয়া সংবিধানের জন্যে সত্য হলো, তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এর চরিত্র পরিবর্তন হয়ে গেছে- এর থেকে ফেরার পথ কবে আসবে তা এ মুহূর্তে কোন ইতিহাসবিদের পক্ষে বলা সম্ভব কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।
লেখক: সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক, সারাক্ষণ, The Present Word.

স্বদেশ রায় 


















