যে দিনটিতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির সৃষ্টির মূল নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, সেই দিনটিকে শোক দিবস না বলার কোনো কারণ নেই। পনেরোই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যার দিন চিরকালই এ ভূখণ্ডে প্রকৃত শোকের দিন।
কারণ, পদ্মা, মেঘনা, যমুনার পলিবিধৌত এই বাংলাদেশের মাটি যেমন সত্য, তেমনি এই দেশটির স্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমানও সত্য। ইতিহাস প্রকৃতির মতোই সৌরমণ্ডলীর গতিপথ ধরেই চলে। প্রকৃতির কোনো নিয়মকে যেমন কখনো কোনো শক্তি প্রয়োগে কক্ষচ্যুত করা যায় না, তেমনি ইতিহাসকেও কখনো শক্তি প্রয়োগে অতিরঞ্জিত, খণ্ডিত, বিকৃত বা কক্ষচ্যুত করা যায় না।
শেখ মুজিবুর রহমান নিজে যেমন ইতিহাসের স্রষ্টা, তেমনি ইতিহাস তাঁকে ইতিহাসের গেম চেঞ্জার হিসেবে তাঁর প্রাপ্য আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। ইতিহাস যুগে যুগে এমনই গেম চেঞ্জারদের নিজ হাতে তাঁদের প্রাপ্য আসনে বসিয়ে দেয়। তাঁকে কক্ষচ্যুত করার ক্ষমতা আর কারও থাকে না—যেমন থাকে না প্রভাত হলে সূর্যের আলো ঢেকে রাখা।

যে কোনো জাতির ইতিহাসে গেম চেঞ্জার শত শত বছর পর একজনই হন। ঐ জাতির জীবনে প্রতিদিন, মাসে, বছরে, দশকে অনেক ঘটনা ঘটে। সেগুলো পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে চলা নুড়ির মতো—যার সঙ্গে বিশাল পর্বতের তুলনা করার কোনো অবকাশ থাকে না। নুড়িগুলো গর্বিত হয়, কারণ তারা ঐ পাহাড় থেকে সৃষ্টি। নুড়ি যেমন পাহাড়কে আঁকড়ে ধরে নিজের অস্তিত্বকে বৃহতের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়, তেমনি যে কোনো জাতির প্রতিটি প্রজন্মের মানুষ ঐ জাতির গেম চেঞ্জারের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে নিজের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে নেয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার আজ ৫০তম বছর। এই অর্ধশত বছর পরে নতুন প্রজন্ম নিজের অস্তিত্বকে বৃহতের সঙ্গে যোগ করার জন্য তাঁর মৃত্যুর নির্মম ঘটনাকে মনে করে হৃদয়কে ব্যথিত করবে। তেমনি নিজ জাতির এই গেম চেঞ্জারের অংশ হিসেবে নিজেকে মিলিয়ে নিয়ে ইতিহাসের আগামী সত্যের পথে পা রাখবে। যার ভেতর দিয়ে কোনো একদিন সত্যিই বেরিয়ে আসবে সেই লক্ষ্য, যে লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই দেশ সৃষ্টি হয়েছিল—সেই লক্ষ্যেরই প্রকৃত বাংলাদেশ।
Sarakhon Report 


















