অনলাইন সাক্ষাৎকারের যুগে নতুন ঝুঁকি
গত কয়েক বছরে দূরবর্তী কাজের প্রসারের ফলে অনলাইন সাক্ষাৎকার চাকরি নিয়োগের স্বাভাবিক ধারা হয়ে উঠেছে। তবে নিয়োগকারীরা বলছেন, অনেক প্রার্থী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) টুল ব্যবহার করে পরীক্ষায় প্রতারণা করছে—বিশেষত প্রযুক্তিগত সাক্ষাৎকারে পর্দার বাইরে থেকে উত্তর সরবরাহ করিয়ে। আরও কিছু ক্ষেত্রে, এআই-নির্ভর প্রতারকরা ভুয়া প্রার্থী সেজে নিয়োগের পর কোম্পানির তথ্য বা অর্থ চুরি করছে।
বড় কোম্পানির পুরনো পদ্ধতিতে ফেরা
এই ঝুঁকি ঠেকাতে গুগল, সিসকো, ম্যাককিন্সি-সহ অনেক বড় কোম্পানি পুনরায় সরাসরি মুখোমুখি সাক্ষাৎকার চালু করেছে। গুগল এ বছর কিছু পদে অন্তত একটি রাউন্ড সশরীরে সাক্ষাৎকার বাধ্যতামূলক করেছে, যাতে প্রার্থীর মৌলিক দক্ষতা, যেমন কোডিং, বাস্তবে যাচাই করা যায়। গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই জানিয়েছেন, সরাসরি সাক্ষাৎকার প্রার্থীর আসল দক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি।
সফটওয়্যার ও প্রোগ্রামিং খাতে প্রতারণার আশঙ্কা বেশি
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রোগ্রামিং পদের সাক্ষাৎকারে তাৎক্ষণিক কোডিং পরীক্ষাই সাধারণ পদ্ধতি। ছোট প্রযুক্তি কোম্পানির অধিকাংশ এই পদগুলো দূরবর্তী হওয়ায় সাক্ষাৎকারও অনলাইনে হয়। নিয়োগকারীরা বলছেন, প্রার্থীরা সহজেই এআই ব্যবহার করে পর্দার বাইরে কোড লিখিয়ে নিতে পারছে, যা পরীক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত করছে।
এআই প্রতিযোগিতায় নতুন অধ্যায়
গত বছর মার্কিন ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) সতর্ক করেছিল—হাজার হাজার উত্তর কোরিয়ান নাগরিক আমেরিকান পরিচয় নিয়ে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিতে দূরবর্তী চাকরি করছে এবং বেতন পাচ্ছে। গার্টনারের এক জরিপে দেখা গেছে, ৩,০০০ চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে ৬ শতাংশ সাক্ষাৎকারে প্রতারণা করেছে—অন্য কারও পরিচয় নিয়ে অংশ নিয়েছে বা অন্য কাউকে দিয়ে নিজের জায়গায় পরীক্ষা দিয়েছে। সংস্থাটি অনুমান করছে, ২০২৮ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী চার ভাগের এক ভাগ চাকরিপ্রার্থীর প্রোফাইল ভুয়া হবে।
বিশ্বাস ও যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য মুখোমুখি সাক্ষাৎ জরুরি
ম্যাককিন্সি প্রায় দেড় বছর আগে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অন্তত একবার সরাসরি সাক্ষাৎ বাধ্যতামূলক করেছে। প্রার্থীর আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা, আস্থা গড়ার ক্ষমতা ও গ্রাহকের সঙ্গে সরাসরি কাজের যোগ্যতা যাচাই এভাবে সহজ হয়। এখন এআই জালিয়াতির ঝুঁকি বাড়ায় তারা আরও বেশি করে সশরীরে সাক্ষাৎকারের ওপর নির্ভর করছে।
ফেক প্রোফাইল চিহ্নিতকরণ
এআই-চালিত মর্টগেজ ঋণদাতা টোমো-সহ অনেক প্রতিষ্ঠান দেখছে, কিছু প্রার্থী প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজের পরিচয় পরিবর্তন করছে বা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। ভিডিও সাক্ষাৎকারে অস্বাভাবিক বিরতি, কীবোর্ডের শব্দ বা পেছন থেকে ফিসফিস শোনা গেলে জালিয়াতির সন্দেহ হয়। সিসকো বায়োমেট্রিক পরিচয় যাচাইকরণ সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে, যাতে প্রার্থীর পরিচয় নিশ্চিত হয়।
প্রতারণা ঠেকাতে সরাসরি সাক্ষাৎকারের মনস্তাত্ত্বিক চাপ
অনেক সময় সরাসরি সাক্ষাৎকারের প্রস্তাব দেওয়া মাত্রই সম্ভাব্য প্রতারকরা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সিসকোর মানবসম্পদ প্রধান কেলি জোন্স জানিয়েছেন, চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেও প্রার্থীর আচরণ অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় মুখোমুখি সাক্ষাৎকারে জালিয়াতি ধরা পড়েছে।
সারসংক্ষেপ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে যেমন বদলে দিচ্ছে, তেমনি জালিয়াতির সুযোগও তৈরি করছে। ফলে বড় কোম্পানিগুলো প্রার্থীর আসল যোগ্যতা যাচাই, আস্থা তৈরি এবং প্রতারণা ঠেকাতে আবারও পুরনো কৌশল—সরাসরি সাক্ষাৎকারে—ফিরে যাচ্ছে।