১০:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কেন বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো শহরমুখী, অবহেলিত নারী উদ্যোক্তারা

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত দীর্ঘদিন ধরে শহরকেন্দ্রিক নীতিতে পরিচালিত হচ্ছে। অধিকাংশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শাখা বড় শহরগুলোতে, বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে, ঘনিভূত। এর প্রধান কারণ হলো—শহরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘনত্ব বেশি, বড় ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি, করপোরেট অফিস ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু শহর হওয়া। ব্যাংকগুলো মনে করে শহরে তাদের ব্যবসায়িক মুনাফা ও দ্রুত ঋণ পুনরুদ্ধারের সুযোগ বেশি।

গ্রামীণ অর্থনীতি ও ব্যাংকের অনাগ্রহ

গ্রামে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কৃষি ও নারী উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থাকলেও ব্যাংকগুলো সেখানে আগ্রহ দেখাতে পিছিয়ে থাকে। এর কয়েকটি কারণ হলো—

উচ্চ ঝুঁকি ধরা হয়: গ্রামীণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আয় অনিয়মিত, ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ ফেরত না পাওয়ার শঙ্কা করে।

বন্ধক বা জামানতের অভাব: গ্রামের অনেক নারী উদ্যোক্তার নিজের নামে জমি বা স্থাবর সম্পদ থাকে না, যা ব্যাংকের জন্য নিরাপত্তা হিসেবে প্রয়োজন।

অতিরিক্ত খরচ: প্রত্যন্ত অঞ্চলে শাখা পরিচালনা ও ঋণ পর্যবেক্ষণ করতে অতিরিক্ত প্রশাসনিক খরচ হয়।

প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা: অনলাইন ব্যাংকিং ও ডিজিটাল সেবার প্রসার এখনো গ্রামীণ স্তরে পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।

নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি অবহেলা

বাংলাদেশে মাঝারি স্তরের নারী উদ্যোক্তারা (যেমন গ্রামীণ ক্ষুদ্র শিল্প, কুটির শিল্প, কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ) অনেক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। কিন্তু ব্যাংকগুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ। কারণগুলো হলো—

  • নারী উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে প্রায়শই‘অতিরিক্ত আয়ের উৎস’ হিসেবে দেখা হয়, মূলধারার ব্যবসা হিসেবে নয়।
  • ব্যাংকের ঋণপ্রক্রিয়ায় জটিল কাগজপত্র ও পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত গ্যারান্টির চাহিদা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বড় বাধা।
  • গ্রামীণ নারীদের আর্থিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ সুযোগ কম থাকায় ব্যাংকগুলো তাদের টার্গেট কাস্টমার হিসেবে ধরতে চায় না।

গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা

যদি ব্যাংকগুলো গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও আর্থিক সেবা চালু করে, তাহলে—

  • গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।
  • নারীর কর্মসংস্থান ও পারিবারিক আয় বাড়বে।
  • ব্যাংকের নতুন গ্রাহকভিত্তি তৈরি হবে।
  • শিল্প ও ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রসার ঘটবে,যা জাতীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আনবে।

ব্যবসায়ীদের মন্তব্য

গ্রামীণ ব্যবসায়ী মহল বলছেন, শহরমুখী ব্যাংক নীতি বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এক ব্যবসায়ীর ভাষায়, শুধু শহরকেন্দ্রিক ব্যবসায়িক নীতি দিয়ে ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি মুনাফা পাচ্ছেকিন্তু দীর্ঘমেয়াদে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের গ্রামে ঋণ ও সহায়তা দিলে কৃষিক্ষুদ্র শিল্প ও স্থানীয় ব্যবসা শক্তিশালী হবে। এতে ব্যাংকও স্থায়ী গ্রাহক পাবে।

কেন বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো শহরমুখী, অবহেলিত নারী উদ্যোক্তারা

০৯:৩০:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত দীর্ঘদিন ধরে শহরকেন্দ্রিক নীতিতে পরিচালিত হচ্ছে। অধিকাংশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শাখা বড় শহরগুলোতে, বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে, ঘনিভূত। এর প্রধান কারণ হলো—শহরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘনত্ব বেশি, বড় ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি, করপোরেট অফিস ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু শহর হওয়া। ব্যাংকগুলো মনে করে শহরে তাদের ব্যবসায়িক মুনাফা ও দ্রুত ঋণ পুনরুদ্ধারের সুযোগ বেশি।

গ্রামীণ অর্থনীতি ও ব্যাংকের অনাগ্রহ

গ্রামে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কৃষি ও নারী উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থাকলেও ব্যাংকগুলো সেখানে আগ্রহ দেখাতে পিছিয়ে থাকে। এর কয়েকটি কারণ হলো—

উচ্চ ঝুঁকি ধরা হয়: গ্রামীণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আয় অনিয়মিত, ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ ফেরত না পাওয়ার শঙ্কা করে।

বন্ধক বা জামানতের অভাব: গ্রামের অনেক নারী উদ্যোক্তার নিজের নামে জমি বা স্থাবর সম্পদ থাকে না, যা ব্যাংকের জন্য নিরাপত্তা হিসেবে প্রয়োজন।

অতিরিক্ত খরচ: প্রত্যন্ত অঞ্চলে শাখা পরিচালনা ও ঋণ পর্যবেক্ষণ করতে অতিরিক্ত প্রশাসনিক খরচ হয়।

প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা: অনলাইন ব্যাংকিং ও ডিজিটাল সেবার প্রসার এখনো গ্রামীণ স্তরে পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।

নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি অবহেলা

বাংলাদেশে মাঝারি স্তরের নারী উদ্যোক্তারা (যেমন গ্রামীণ ক্ষুদ্র শিল্প, কুটির শিল্প, কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ) অনেক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। কিন্তু ব্যাংকগুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ। কারণগুলো হলো—

  • নারী উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে প্রায়শই‘অতিরিক্ত আয়ের উৎস’ হিসেবে দেখা হয়, মূলধারার ব্যবসা হিসেবে নয়।
  • ব্যাংকের ঋণপ্রক্রিয়ায় জটিল কাগজপত্র ও পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত গ্যারান্টির চাহিদা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বড় বাধা।
  • গ্রামীণ নারীদের আর্থিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ সুযোগ কম থাকায় ব্যাংকগুলো তাদের টার্গেট কাস্টমার হিসেবে ধরতে চায় না।

গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা

যদি ব্যাংকগুলো গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও আর্থিক সেবা চালু করে, তাহলে—

  • গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।
  • নারীর কর্মসংস্থান ও পারিবারিক আয় বাড়বে।
  • ব্যাংকের নতুন গ্রাহকভিত্তি তৈরি হবে।
  • শিল্প ও ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রসার ঘটবে,যা জাতীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আনবে।

ব্যবসায়ীদের মন্তব্য

গ্রামীণ ব্যবসায়ী মহল বলছেন, শহরমুখী ব্যাংক নীতি বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এক ব্যবসায়ীর ভাষায়, শুধু শহরকেন্দ্রিক ব্যবসায়িক নীতি দিয়ে ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি মুনাফা পাচ্ছেকিন্তু দীর্ঘমেয়াদে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের গ্রামে ঋণ ও সহায়তা দিলে কৃষিক্ষুদ্র শিল্প ও স্থানীয় ব্যবসা শক্তিশালী হবে। এতে ব্যাংকও স্থায়ী গ্রাহক পাবে।