জেনারেশন জেডের জন্য, ‘লিটল ট্রিট’ বাজেট ছাড়ালেও সার্থক
যুবকদের জন্য নিজেকে পুরস্কৃত করার অজুহাতের অভাব হয় না—পরীক্ষায় খারাপ করলে, বসের কাছ থেকে “ভালো কাজ” শুনলে, কিংবা শুধু বাসন ধুয়ে ফেললেও অনেকে নিজেকে ছোট্ট কোনো ট্রিট দেন।
নাওমি বারালেসের সবচেয়ে কম দরকার ছিল ট্রেন ত্রিশ মিনিট দেরি করা। সামনে তার নিউ জার্সির মাঝামাঝি এলাকায় বাড়ি—দুই ঘণ্টার পথ। সময় কাটাতে তিনি নিজেকে দুটো ভেগান বার্থডে কেক কুকি খাওয়ালেন।
এরপর তা রুটিন হয়ে যায়। ফ্যাশন লেবেলে ২৫ বছর বয়সী মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েট বারালেস অফিসে ভালো দিন কাটালেই—বসের প্রশংসা বা প্রেজেন্টেশন ঠিকঠাক হলে—সেই একই কুকি দিয়ে নিজেকে ট্রিট দিতেন। পরে তার তালিকায় ১ ডলার ৫০ সেন্ট দামের ‘পপ্পি’ নামের একটি পানীয়ও যোগ হয়। অফিসের ভেন্ডিং মেশিনে না থাকলে পাশের ডেলি থেকে দ্বিগুণ দামে কিনতেও ভাবতেন না—কারণ, তার ভাষায়, “আমি এটা প্রাপ্য।”
তিনি বলেন, “এটা এমন কিছু, যা আমি খেতে পারি; বেশি ভাবতে হয় না, পয়সা কড়ি গুনে গুনে ধরতে হয় না।”

বারালেসসহ জেনারেশন জেডের অনেকেই এখন ‘ট্রিট কালচার’-এ মুগ্ধ—ছোটখাটো বিলাসে নিজেকে পুরস্কৃত করা বা আত্ম-যত্নের অংশ হিসেবে ১২ ডলারের জুম্বো কফি, ৫ ডলারের বেকড ডেজার্ট, কিংবা ৩০ ডলারের ‘লাবুবু’ নামের চাবির রিং কেনা—যদিও তা বাজেটের বাইরে পড়ে। আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও ব্যাংক অব আমেরিকার ‘বেটার মানি হ্যাবিটস’ দলের প্রায় এক হাজার জেন জেড প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে করা একটি নতুন জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি মানুষ অন্তত সপ্তাহে একবার নিজেকে ছোট কোনো ট্রিট দেন।
ট্রিট দিয়ে দুঃখ ভুলে থাকা বা সাফল্য উদ্যাপনের ধারণা নতুন নয়। তবে ২০১১ সালে ‘পার্কস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন’ সিরিজের এক পর্বে “ট্রিট ইয়োরসেলফ” স্লোগান দিয়ে নিজেকে পুরস্কৃত করার দিন দেখানো হলে বিষয়টি জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে নতুন গতি পায়।
জেনারেশন জেডকে আলাদা করেছে—তারা এই অভ্যাসকে ঘিরে অনলাইনে একধরনের কমিউনিটি গড়ে তুলেছে। অনিশ্চিত সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার উপায় হিসেবে তারা এটি সোশ্যাল ফিডে প্রচার করে। টিকটকে তারা পরীক্ষায় খারাপ করলে, ঘরের কাজ করলে বা শুধু ‘দেখাতে’—তাদের সর্বশেষ ‘লিটল ট্রিট’ কেনাকাটার ভিডিও শেয়ার করে।
টিকটকের ‘সুইট লিটল ট্রিট’ মিম ট্যাগে ২৩ মিলিয়নের বেশি ভিডিও হয়েছে। এটি এখন এক ধরনের ভাগাভাগি করা, স্বাভাবিক ও উদ্যাপিত অভিজ্ঞতা—যা অন্যদেরও অংশ নিতে উৎসাহিত করে বা অন্তত অন্তর্ভুক্তির অনুভূতি দেয়—বললেন প্রজন্ম-গবেষক ও ‘জিকোনমি’ বইয়ের সহলেখক জেসন ডরসি।
ডরসির মতে, ব্যয়বৃদ্ধি, টলমলে চাকরির বাজার এবং বাড়ি কেনার মতো বড় আর্থিক লক্ষ্য দূরে সরে যাওয়ায় ছোট কেনাকাটা তরুণদের ক্ষণিকের নিয়ন্ত্রণবোধ বা বিলাসের স্বাদ দেয়।

বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েস্ট্রোম স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক গ্রেগরি স্টলার বলেন, “আমি যদি পড়াশোনা শেষ করে চাকরির বাজারে এগোতে না পারতাম, আমিও নিজেকে ট্রিট দিতাম।” তিনি প্রতি সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাঁচটির বেশি ক্যারিয়ার-পরামর্শের ইমেইল পান।
তবে এসব ট্রিট তাৎক্ষণিক আনন্দ দিলেও বাজেট সামলাতে না পারলে অতিরিক্ত খরচের ঝুঁকি থাকে। সপ্তাহে তিনবার করে প্রায় এক মাস নিজেকে ট্রিট দেওয়ার পর বারালেস খেয়াল করলেন—তার চেকিং অ্যাকাউন্টে আগের তুলনায় প্রায় ৫০ ডলার কম। বিষয়টি তাকে সতর্ক করল।
“শুরুতে মনে হচ্ছিল, ক্ষতি কী—মাত্র ৬ ডলার,” বললেন বারালেস। “কিন্তু তা জমতে থাকে, আর তখনই বুঝি—এটা আমার আর্থিক অবস্থায় কামড় বসাচ্ছে।”
যারা ট্রিট কেনেন, তাদের মধ্যে ৫৯ শতাংশই বলেছেন—এতে অতিরিক্ত খরচ হয়—ব্যাংক অব আমেরিকার জরিপে এমনটাই দেখা গেছে। “এখন কিনুন, পরে পরিশোধ” ধাঁচের অ্যাপ এবং তাৎক্ষণিক ডেলিভারি সেবা হঠাৎ খরচ করা আরও সহজ করে দিয়েছে—বললেন স্টলার। বেশিরভাগ ‘লিটল ট্রিট’ই কেনা হয় আবেগের তাড়নায়—বেকারি বা পোশাকের দোকানের মতো জায়গায়—তিনি যোগ করেন।
অ্যাঞ্জেলিনা বেকারির মালিক টনি পার্ক বলেন, ম্যানহাটন ও আশপাশে তাদের আটটি শাখা খুলতে জেনারেশন জেড বড় ভূমিকা রেখেছে। ৩০ ডলারের জায়ান্ট ক্রসাঁ কিংবা এমন কেক—যার ওপরের স্তর পুড়িয়ে দিলে ভেতরের লুকানো বার্তা দেখা যায়—এ ধরনের নজরকাড়া পণ্যে তিনি এই প্রজন্মের ট্রিট কালচারের সঙ্গেই তাল মেলান।

তার সাপ্তাহিক প্রায় ১১ হাজার ক্রেতার অর্ধেকের বেশি জেন জেড—বললেন পার্ক। তরুণদের ব্যাংক হিসাবে হয়তো খুব বেশি টাকা নেই, কিন্তু “অভিজ্ঞতার জন্য তারা খরচ করবে।”
তবে ৩ ডলারের ক্রসাঁ দিয়ে শুরু হয়ে কখনো কখনো ২০০ ডলারের শপিং স্প্রি বা কনসার্টের সামনের সারির টিকিট পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায়। আইলিনের ক্ষেত্রে তা ছিল ৩৫০ ডলারের ‘সেল্ফ-কেয়ার’ সাপ্লিমেন্ট।
২০২৩ সালে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রথম চাকরি পেয়ে আইলিন ভাবছিলেন—হলমার্ক সিনেমার মতো জীবন: নতুন অ্যাপার্টমেন্ট, আর্থিক বিশ্লেষক হিসেবে রোমাঞ্চকর ক্যারিয়ার, সপ্তাহান্তে আপস্টেটে হাইকিং।
কিন্তু কাজের প্রত্যাশা আর পেশাগত উন্নতি নিয়ে লাগাতার আত্মসমালোচনা তাকে গ্রাস করতে থাকে। অফিসে সবাই ভালো করছে—এমন মনে হলে তিনি ভাবতেন, সমস্যা বুঝি তারই। সমাধান খুঁজতে রুটিন পাল্টান—দিনের নিয়মিত ক্যাফেইন বাদ দেন, যেটাকে তিনি মুড-সুইংয়ের কারণ মনে করতেন।
কাজ হলো না। প্রিয় এক ইউটিউবারের সাপ্লিমেন্ট রুটিন নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখার পর তিনি চেষ্টা করে দেখেন—উদ্বেগ কমানো ও শক্তি বাড়ানোর দাবি থাকা কয়েকটি সাপ্লিমেন্ট কেনেন।
এক মাস পর সাবস্ক্রিপশনের বাক্সগুলো আবার এলে তার ‘বায়ার্স রিমোর্স’ হয়। তিনি দ্রুত কিছু সাবস্ক্রিপশন বাতিল করেন এবং আত্ম-যত্নে নরম পন্থা নেন—মাসে দুবার কাজের পর ম্যানিকিউর বা ম্যাসাজের মতো ছোট ট্রিট।
এসব ট্রিট তাকে স্থির থাকতে সাহায্য করে। “এগুলো আমাকে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করে,” বললেন আইলিন—যিনি এখন একটি বিউটি কোম্পানির প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার।

আলানিস কস্ত্রো-পাচেকোও ট্রিট কালচারে ঢুকেছিলেন তাৎক্ষণিক আবেগে—২০২২ সালে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে। সাতজন রুমমেটের সঙ্গে থাকা ডরমে টানটান পরিস্থিতি; এক রুমমেট নিয়মিত তার সঙ্গীকে নিয়ে আসত, অন্যদের অস্বস্তি সত্ত্বেও।
চাপ থেকে মুক্তি পেতে তিনি নিজের শহর পেনসিলভানিয়ার ইনোলায় একটি গিটার দোকানে যান। হঠাৎ সিদ্ধান্তে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে প্রায় ৫০০ ডলারে একটি বেজ গিটার ও অ্যাম্প কেনেন। সঙ্গে সঙ্গেই আফসোস হয়, তবে বড়দিনে পাওয়া অর্থ আর রেড হট চিলি পেপার্সের ‘ক্যালিফর্নিকেশন’ বাজাতে শেখা সেই ধাক্কা সামলে দেয়।
“এখনও রুমে ওটা দেখে ভাবি—আচ্ছা, টাকার সঠিক মূল্যটা আদায় করতে হবে,” বলেন কস্ত্রো-পাচেকো। এখন তার বয়স ২২, এবং তিনি সাম্প্রতিক সময়ে দুই সপ্তাহ পরপর ৭৫ ডলারে গিটার শেখা শুরু করেছেন।
ট্রিট নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে: আগে যা ছিল মোকাবিলার হাতিয়ার, এখন তা উদ্যাপনের রীতি। জুলাইয়ে একটি সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিতে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপস ম্যানেজার হিসেবে নতুন চাকরি শুরুর উপলক্ষে তিনি কোচ ব্র্যান্ডের একটি টোট ব্যাগ কিনেছেন—টার্গেট থেকে কেনা পুরোনো ব্যাগের আপগ্রেড হিসেবে।
ব্যাংক অব আমেরিকার কনজিউমার, রিটেইল অ্যান্ড প্রেফার্ড বিভাগের প্রেসিডেন্ট হলি ও’নীল পরামর্শ দেন—ট্রিট কালচারে অংশ নিলে বাস্তবসম্মত বাজেট ঠিক করা বা বেশি টেকসই বিকল্প খোঁজা ভালো—যেমন লাইব্রেরি থেকে বই ধার নেওয়া—যাতে অভ্যাসটি আবেগের খরচে না গড়ায়।
বারালেসের ক্ষেত্রে এখন মিষ্টি ট্রিট বাজেটের অংশ। তিনি দুই সপ্তাহ পরপর বেতনের মধ্যে থেকে ২৫ ডলার আলাদা রাখেন।
তিনি বলেন, “আমি কি কখনও কখনও মিষ্টি ট্রিট বাজেট ছাড়িয়ে যাই? হ্যাঁ, যাই। কিন্তু অভ্যাসটা বুঝে—ওটার চারপাশে পরিকল্পনা করাই ভালো।”
কেইলিন রোন 


















