১০:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কেন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মক্ষেত্র ছাড়ছেন মায়েরা

কর্মরত মায়েদের অংশগ্রহণে বড় পতন

যুক্তরাষ্ট্রে কর্মজীবী মায়েরা, যারা মহামারী-পরবর্তী সময়ে শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন, এ বছর ব্যাপক হারে কর্মক্ষেত্র ছেড়ে যাচ্ছেন। ২৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী শিশু লালন-পালনকারী মায়েদের কর্মক্ষেত্রে থাকার হার জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে প্রায় ৩ শতাংশ কমেছে। এটি গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে।

কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সাবেক সেন্সাস ব্যুরোর প্রধান অর্থনীতিবিদ মিস্টি হেগেনেসের বিশ্লেষণ বলছে, এই পতন মহামারির সময় পাওয়া সাফল্যের বড় অংশ মুছে দিয়েছে। তখন দূরবর্তী কাজ ও নমনীয় সময়সূচির কারণে অনেক নারী পুনরায় শ্রমবাজারে ফিরেছিলেন।

অফিসে ফেরার কড়াকড়ি ও ছাঁটাইয়ের প্রভাব

কিন্তু বর্তমানে বড় কর্পোরেশন ও সরকারি সংস্থাগুলো সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিসে ফেরার নির্দেশ দিচ্ছে। এর ফলে যত্নদায়িত্ব থাকা নারী কর্মীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়ছে। ফেডারেল পর্যায়ে ব্যাপক ছাঁটাইও নারীদের স্থিতিশীল ও নমনীয় চাকরির সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে।

Women, Work, and Family During COVID-19: Findings from the KFF Women's Health Survey | KFF

হেগেনেসের মতে, এই পরিস্থিতি নারীদের জন্য কর্মজীবন টিকিয়ে রাখা আরও কঠিন করে তুলেছে।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও হতাশা

টেক্সাসের এমিলি সান্টোনি তার চাকরি ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, এটি দুর্বলতা নয়, বরং ক্ষমতার প্রকাশ। তিনি জানান, গত বছর তিনি ও তার স্বামী শিশুর যত্নে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার খরচ করেছেন, কিন্তু এত ব্যস্ততায় সন্তানদের মোটে ৩০ মিনিটও দেখা হতো না।

অন্যদিকে, সমাজবিজ্ঞানী ইসাবেল বুলেইগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার চাকরি ছেড়েছেন। তার ভাষায়, “মনে হচ্ছিল কর্মক্ষেত্রে নারীরা আর ততটা মূল্যবান নয়।”

সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভাব

কিছু নারী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণেও চাকরি ছাড়ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় #tradwife আন্দোলন, যা “প্রচলিত স্ত্রী” জীবনধারাকে উৎসাহিত করে, তার প্রভাবও দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনও জনসংখ্যা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ঘরে থাকা মায়েদের গুরুত্ব তুলে ধরছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, ছোট শিশুদের জন্য ঘরে একজন অভিভাবক থাকা বেশি স্বাস্থ্যকর।

Discrimination against moms is rampant in workplaces

কর্মসংস্থানে নারীদের সামগ্রিক সংকট

শ্রম দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে ২ লাখ ১২ হাজার নারী চাকরি ছেড়েছেন বা চাকরির আবেদন বন্ধ করেছেন। এর মধ্যে ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ও কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের মধ্যে হার বেশি। কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের বেকারত্বের হার জুলাইয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৩ শতাংশে, যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

অর্থনীতিবিদদের সতর্কবার্তা

ইনস্টিটিউট ফর উইমেন’স পলিসি রিসার্চের প্রধান অর্থনীতিবিদ কেট বেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গত ২০ বছরে একমাত্র উন্নত দেশ যেখানে নারীদের শ্রমবাজার অংশগ্রহণ কমেছে। সামাজিক নিরাপত্তা ও শিশু-যত্নের সমর্থনের অভাবই এর মূল কারণ।

হেগেনেস সতর্ক করে বলেন, কর্মজীবন থেকে সরে যাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে। নারীরা পরে ফিরলেও কম বেতন ও সীমিত সুযোগ পাবেন। কর্মজীবনের ফাঁক তাদের উচ্চপদে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

Mothers are leaving the workforce, erasing pandemic gains

সিদ্ধান্ত ও নতুন পথ

অনেক নারী দীর্ঘ চাকরি খোঁজার ব্যর্থতায় পেশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যেমন, মিডওয়েস্টের দুই সন্তানের জননী জোভানা ৫০০টির বেশি আবেদন করার পর হাল ছেড়ে এখন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টে নতুন কোর্স করছেন।

অন্যদিকে, এমিলি সান্টোনি এখন সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছেন এবং নিজেকে আরও প্রাণবন্ত মনে করছেন। তার মতে, “এটি দুর্বলতা নয়, বরং শক্তির প্রতিফলন।”

যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার শীতল হয়ে আসছে, আর এর সবচেয়ে বড় আঘাত পড়ছে নারীদের ওপর। মহামারির সময় গড়ে ওঠা অর্জন আজ হুমকির মুখে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যদি অবস্থা এভাবেই চলতে থাকে, তবে নারীদের কর্মজীবন ও আয় ভবিষ্যতে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কেন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মক্ষেত্র ছাড়ছেন মায়েরা

০৪:১৫:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

কর্মরত মায়েদের অংশগ্রহণে বড় পতন

যুক্তরাষ্ট্রে কর্মজীবী মায়েরা, যারা মহামারী-পরবর্তী সময়ে শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন, এ বছর ব্যাপক হারে কর্মক্ষেত্র ছেড়ে যাচ্ছেন। ২৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী শিশু লালন-পালনকারী মায়েদের কর্মক্ষেত্রে থাকার হার জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে প্রায় ৩ শতাংশ কমেছে। এটি গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে।

কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সাবেক সেন্সাস ব্যুরোর প্রধান অর্থনীতিবিদ মিস্টি হেগেনেসের বিশ্লেষণ বলছে, এই পতন মহামারির সময় পাওয়া সাফল্যের বড় অংশ মুছে দিয়েছে। তখন দূরবর্তী কাজ ও নমনীয় সময়সূচির কারণে অনেক নারী পুনরায় শ্রমবাজারে ফিরেছিলেন।

অফিসে ফেরার কড়াকড়ি ও ছাঁটাইয়ের প্রভাব

কিন্তু বর্তমানে বড় কর্পোরেশন ও সরকারি সংস্থাগুলো সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিসে ফেরার নির্দেশ দিচ্ছে। এর ফলে যত্নদায়িত্ব থাকা নারী কর্মীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়ছে। ফেডারেল পর্যায়ে ব্যাপক ছাঁটাইও নারীদের স্থিতিশীল ও নমনীয় চাকরির সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে।

Women, Work, and Family During COVID-19: Findings from the KFF Women's Health Survey | KFF

হেগেনেসের মতে, এই পরিস্থিতি নারীদের জন্য কর্মজীবন টিকিয়ে রাখা আরও কঠিন করে তুলেছে।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও হতাশা

টেক্সাসের এমিলি সান্টোনি তার চাকরি ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, এটি দুর্বলতা নয়, বরং ক্ষমতার প্রকাশ। তিনি জানান, গত বছর তিনি ও তার স্বামী শিশুর যত্নে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার খরচ করেছেন, কিন্তু এত ব্যস্ততায় সন্তানদের মোটে ৩০ মিনিটও দেখা হতো না।

অন্যদিকে, সমাজবিজ্ঞানী ইসাবেল বুলেইগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার চাকরি ছেড়েছেন। তার ভাষায়, “মনে হচ্ছিল কর্মক্ষেত্রে নারীরা আর ততটা মূল্যবান নয়।”

সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভাব

কিছু নারী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণেও চাকরি ছাড়ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় #tradwife আন্দোলন, যা “প্রচলিত স্ত্রী” জীবনধারাকে উৎসাহিত করে, তার প্রভাবও দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনও জনসংখ্যা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ঘরে থাকা মায়েদের গুরুত্ব তুলে ধরছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, ছোট শিশুদের জন্য ঘরে একজন অভিভাবক থাকা বেশি স্বাস্থ্যকর।

Discrimination against moms is rampant in workplaces

কর্মসংস্থানে নারীদের সামগ্রিক সংকট

শ্রম দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে ২ লাখ ১২ হাজার নারী চাকরি ছেড়েছেন বা চাকরির আবেদন বন্ধ করেছেন। এর মধ্যে ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ও কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের মধ্যে হার বেশি। কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের বেকারত্বের হার জুলাইয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৩ শতাংশে, যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

অর্থনীতিবিদদের সতর্কবার্তা

ইনস্টিটিউট ফর উইমেন’স পলিসি রিসার্চের প্রধান অর্থনীতিবিদ কেট বেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গত ২০ বছরে একমাত্র উন্নত দেশ যেখানে নারীদের শ্রমবাজার অংশগ্রহণ কমেছে। সামাজিক নিরাপত্তা ও শিশু-যত্নের সমর্থনের অভাবই এর মূল কারণ।

হেগেনেস সতর্ক করে বলেন, কর্মজীবন থেকে সরে যাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে। নারীরা পরে ফিরলেও কম বেতন ও সীমিত সুযোগ পাবেন। কর্মজীবনের ফাঁক তাদের উচ্চপদে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

Mothers are leaving the workforce, erasing pandemic gains

সিদ্ধান্ত ও নতুন পথ

অনেক নারী দীর্ঘ চাকরি খোঁজার ব্যর্থতায় পেশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যেমন, মিডওয়েস্টের দুই সন্তানের জননী জোভানা ৫০০টির বেশি আবেদন করার পর হাল ছেড়ে এখন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টে নতুন কোর্স করছেন।

অন্যদিকে, এমিলি সান্টোনি এখন সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছেন এবং নিজেকে আরও প্রাণবন্ত মনে করছেন। তার মতে, “এটি দুর্বলতা নয়, বরং শক্তির প্রতিফলন।”

যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার শীতল হয়ে আসছে, আর এর সবচেয়ে বড় আঘাত পড়ছে নারীদের ওপর। মহামারির সময় গড়ে ওঠা অর্জন আজ হুমকির মুখে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যদি অবস্থা এভাবেই চলতে থাকে, তবে নারীদের কর্মজীবন ও আয় ভবিষ্যতে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।