০২:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের জন্য যে ধ্বংসাত্মক কৌশল বানিয়েছিল, এখন তার শিকার নিজেই যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করবে: ট্রাম্প যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর কঠোরতা বাড়ছে ট্রাম্পের শুল্ক সিদ্ধান্ত ১০০ কোটি ডলারের ফিলিপাইনি কৃষিপণ্যে ‘পারস্পরিক’ শুল্ক বাদ তাইওয়ানে প্রাক্তন টিএসএমসি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তদন্ত রাশিয়ার ড্রোন-কেন্দ্রিক সামরিক নীতি: আধুনিক যুদ্ধের নতুন মানদণ্ড এসসিও বৈঠকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’র আহ্বান ভারতের আরও পরিষ্কার সুরে ফিরে আসা: বেঁচে ওঠা সুইডিশ র‍্যাপার ইয়াং লিন পানীয়, পালক আর রহস্যময় খুন: ‘পাম রয়্যাল’ সিজন টু-তে জমে উঠছে আরও নাটক যুক্তরাজ্যে যৌনসহিংসতার উদ্বেগজনক চিত্র: অর্ধেকের কাছাকাছি কিশোর যৌনসম্পর্কে শ্বাসরোধের অভিজ্ঞতা

ঢাবি ডাকসু নির্বাচন: সহিংসতা, প্রক্রিয়া ও সুষ্ঠু ভোটের প্রশ্ন

নির্বাচনের ঘোষণা ও প্রেক্ষাপট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন দীর্ঘ ৬ বছরের বিরতির পর আবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ২৯ জুলাই ২০২৫ আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ডাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনের এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে আবারও শিক্ষাঙ্গনে উত্তেজনা ও রাজনৈতিক আলোচনার সূচনা হয়েছে। ছাত্ররাজনীতির মাঠে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠন একে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের বড় সুযোগ হিসেবে দেখছে।

ভোটার তালিকা প্রকাশ ও প্রস্তুতি

ঘোষণার পরপরই নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়।

  • • ৩০ জুলাই প্রকাশিত হয় খসড়া ভোটার তালিকা।
  • • ৬ আগস্ট পর্যন্ত আপত্তি ও অভিযোগ গ্রহণের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।
  • • ১১ আগস্ট প্রকাশিত হয় চূড়ান্ত ভোটার তালিকা।

এর ফলে ছাত্ররা জানতে পারে কে ভোট দেওয়ার যোগ্য এবং নির্বাচনী পরিবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে গড়ে উঠতে থাকে।

আবেদন-নিবেদন ব্যর্থ, নির্বাচনের বাইরেই থাকছে ১৮-১৯ সেশন

মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা

মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময়সীমা ছিল ১২ আগস্ট থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত। এ সময়ে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা তাদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শুরু করেন। ১৯ আগস্ট বিকেল ৩টার মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।

২০ আগস্ট মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই (স্ক্রুটিনি) সম্পন্ন হবে। ২১ আগস্ট দুপুর ১টায় প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর ২৫ আগস্ট দুপুর ১টার মধ্যে প্রার্থীরা চাইলে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারবেন। অবশেষে ২৬ আগস্ট বিকেল ৪টায় চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।

প্রার্থীদের ঘোষণা ও রাজনৈতিক উত্তেজনা

নির্বাচনের আগে থেকেই বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন নিজেদের প্রার্থী তালিকা বা প্যানেল ঘোষণা করতে থাকে। জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ইতোমধ্যেই পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় আছে।

কিন্তু এ সময়ই ঘটে সহিংসতার ঘটনা। ছাত্রদলের নেত্রী মালিন বিনতা খান ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে গিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে যান। কিন্তু সেখানে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়। সহিংসতার কারণে তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারেননি। একই সময়ে ভিন্ন মতাদর্শের অন্য প্রার্থীরাও আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে স্বাভাবিকভাবে ফরম তুলতে পারেননি।

কোন পদ্ধতিতে ভোট দেবেন প্রবাসীরা, যেসব ঝুঁকি প্রক্সিতে

ভোটগ্রহণ ও ফলাফল

সমস্ত প্রক্রিয়া শেষে আগামী ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট শেষ হওয়ার পরপরই গণনা শুরু হবে এবং সেদিনই ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

সহিংসতা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্ন

মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় থেকেই সহিংসতা ও দমন-পীড়নের ঘটনা ঘটতে শুরু করায় প্রশ্ন উঠছে—এ পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ও ভয়মুক্ত নির্বাচন আদৌ সম্ভব কি না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক আধিপত্য ও সহিংসতায় জর্জরিত। প্রতিটি হলে ছাত্রসংগঠনের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত, যার ফলে ভিন্নমতের শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এই বাস্তবতায় নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করা নিঃসন্দেহে বড় চ্যালেঞ্জ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন শুধু শিক্ষার্থীদের ভোটের লড়াই নয়, বরং এটি জাতীয় রাজনীতির প্রতিফলন। তবে সহিংসতা, ভীতি ও দমন-পীড়নের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হয়ে পড়বে।

নির্বাচন নির্ধারিত তারিখে যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হলেও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—সত্যিই কি শিক্ষার্থীরা তাদের ভোটাধিকার স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করতে পারবেন? নাকি সহিংসতার ছায়ায় ডাকসুর নির্বাচন আবারও আস্থাহীনতার প্রতীক হয়ে উঠবে?

জনপ্রিয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের জন্য যে ধ্বংসাত্মক কৌশল বানিয়েছিল, এখন তার শিকার নিজেই

ঢাবি ডাকসু নির্বাচন: সহিংসতা, প্রক্রিয়া ও সুষ্ঠু ভোটের প্রশ্ন

০৩:৪৪:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

নির্বাচনের ঘোষণা ও প্রেক্ষাপট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন দীর্ঘ ৬ বছরের বিরতির পর আবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ২৯ জুলাই ২০২৫ আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ডাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনের এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে আবারও শিক্ষাঙ্গনে উত্তেজনা ও রাজনৈতিক আলোচনার সূচনা হয়েছে। ছাত্ররাজনীতির মাঠে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠন একে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের বড় সুযোগ হিসেবে দেখছে।

ভোটার তালিকা প্রকাশ ও প্রস্তুতি

ঘোষণার পরপরই নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়।

  • • ৩০ জুলাই প্রকাশিত হয় খসড়া ভোটার তালিকা।
  • • ৬ আগস্ট পর্যন্ত আপত্তি ও অভিযোগ গ্রহণের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।
  • • ১১ আগস্ট প্রকাশিত হয় চূড়ান্ত ভোটার তালিকা।

এর ফলে ছাত্ররা জানতে পারে কে ভোট দেওয়ার যোগ্য এবং নির্বাচনী পরিবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে গড়ে উঠতে থাকে।

আবেদন-নিবেদন ব্যর্থ, নির্বাচনের বাইরেই থাকছে ১৮-১৯ সেশন

মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা

মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময়সীমা ছিল ১২ আগস্ট থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত। এ সময়ে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা তাদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শুরু করেন। ১৯ আগস্ট বিকেল ৩টার মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।

২০ আগস্ট মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই (স্ক্রুটিনি) সম্পন্ন হবে। ২১ আগস্ট দুপুর ১টায় প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর ২৫ আগস্ট দুপুর ১টার মধ্যে প্রার্থীরা চাইলে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারবেন। অবশেষে ২৬ আগস্ট বিকেল ৪টায় চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।

প্রার্থীদের ঘোষণা ও রাজনৈতিক উত্তেজনা

নির্বাচনের আগে থেকেই বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন নিজেদের প্রার্থী তালিকা বা প্যানেল ঘোষণা করতে থাকে। জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ইতোমধ্যেই পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় আছে।

কিন্তু এ সময়ই ঘটে সহিংসতার ঘটনা। ছাত্রদলের নেত্রী মালিন বিনতা খান ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে গিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে যান। কিন্তু সেখানে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়। সহিংসতার কারণে তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারেননি। একই সময়ে ভিন্ন মতাদর্শের অন্য প্রার্থীরাও আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে স্বাভাবিকভাবে ফরম তুলতে পারেননি।

কোন পদ্ধতিতে ভোট দেবেন প্রবাসীরা, যেসব ঝুঁকি প্রক্সিতে

ভোটগ্রহণ ও ফলাফল

সমস্ত প্রক্রিয়া শেষে আগামী ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট শেষ হওয়ার পরপরই গণনা শুরু হবে এবং সেদিনই ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

সহিংসতা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্ন

মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় থেকেই সহিংসতা ও দমন-পীড়নের ঘটনা ঘটতে শুরু করায় প্রশ্ন উঠছে—এ পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ও ভয়মুক্ত নির্বাচন আদৌ সম্ভব কি না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক আধিপত্য ও সহিংসতায় জর্জরিত। প্রতিটি হলে ছাত্রসংগঠনের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত, যার ফলে ভিন্নমতের শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এই বাস্তবতায় নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করা নিঃসন্দেহে বড় চ্যালেঞ্জ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন শুধু শিক্ষার্থীদের ভোটের লড়াই নয়, বরং এটি জাতীয় রাজনীতির প্রতিফলন। তবে সহিংসতা, ভীতি ও দমন-পীড়নের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হয়ে পড়বে।

নির্বাচন নির্ধারিত তারিখে যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হলেও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—সত্যিই কি শিক্ষার্থীরা তাদের ভোটাধিকার স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করতে পারবেন? নাকি সহিংসতার ছায়ায় ডাকসুর নির্বাচন আবারও আস্থাহীনতার প্রতীক হয়ে উঠবে?